doinikbarta-ba

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জুলাই ২০১৫: কয়েকদিনের টানা বর্ষণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতির অপরিবর্তিত রয়েছে৷ফেনী, চট্টগ্রাম, বান্দরবান, নোয়াখালী ও ভোলায় পানিবন্দি রয়েছে কয়েক হাজার মানুষ৷ এদিকে, বন্যার অবস্থা অপরিবর্তিত রয়েছে ফেনীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গাতেও৷ বন্যা দুর্গত এলাকাগুলোতে ডায়রিয়া ও পানিবাহিত অন্যান্য রোগ ছড়িয়ে পড়েছে৷ এছাড়াও দেখা দিয়েছে বিশুদ্ধ পানীয় জলের অভাব৷গত কয়েকদিনের ভারি বৃষ্টি আর পাহাড়ি ঢলে বন্দরনগরী চট্টগ্রামের বিসর্্তীণ এলাকায় বিশেষ করে দক্ষিণ চট্টগ্রামের বেশ কিছু এলাকায় বন্যা দেখা দিয়েছে৷ পানি বন্দি হয়ে পড়েছে সাতকানিয়া, চন্দনাইশ ও বাঁশখালী উপজেলার মানুষ৷এরমধ্যে ৪ দিন থেকে সাতকানিয়া বিদ্যুত্‍ বিচ্ছিন্ন হয়ে রয়েছে৷ এদিকে, চকবাজার, বহদ্দারহাট, ডিসি রোড ও হালিশহরের বিভিন্ন জায়গায় পানি নামতে শুরু করেছে৷বন্যা পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে নোয়াখালীতেও৷ জেলার প্রায় ৫০টি স্কুল বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে৷উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্‍সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থানরত মৌসুমি নিম্নচাপটি ঘণীভূত হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে৷ এটি বর্তমানে উত্তর-পূর্ব বঙ্গোপসাগর ও তত্‍সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থান করছে৷

নিম্নচাপটি বুধবার দুপুর ১২টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১৮০ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, কঙ্বাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ১৩৫ কি. মি. দক্ষিণপশ্চিমে, মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১৯০ কি. মি. দক্ষিণপূর্বে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২৫ কি. মি. দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছিল৷এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তত্‍সংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্রবন্দগুলো উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে৷নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কি. মি. এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘন্টায় ৫০ কি. মি.৷ যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৬০ কি. মি. পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে৷ নিম্নচাপ কেন্দ্রের কাছে সাগর উত্তাল রয়েছে৷চট্টগ্রাম, কঙ্বাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ০৩ (তিন) নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে৷গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উপকূলীয় জেলা কঙ্বাজার, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, চাঁদপুর, ভোলা, বরিশাল, পটুয়াখালী, বরগুনা, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা এবং তাদের অদূরবর্তী দ্বীপ ও চরের নিম্নাঞ্চল স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ৩-৪ ফুট বেশি উচ্চতার জলোচ্ছ্বাসে প্লাবিত হতে পারে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর৷উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারগুলোকে অবিলম্বে নিরাপদ আশ্রয়ে যেতে বলা হয়েছে৷ পরবতী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত নিরাপদ আশ্রয়ে থাকতে বলা হয়েছে৷

ফেনী প্রতিনিধি জানানঃ ফেনীর ফুলগাজীতে সপ্তাহ ব্যাপী টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলের পানিতে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি৷ বন্যা দুর্গত এলাকায় অপর্যাপ্ত ত্রান বিতরণ, ওষুধ ও সুপেয়জল সংকটে জনজীব বিপর্যস্থ হয়ে পড়েছে৷ দীর্ঘদিন ধরে বন্যার পানি থাকায় নানা ধরণের পানিবাহিত রোগ দেখা দিয়েছে৷জানা যায়, টানা বর্ষণ ও ভারতীয় পাহাড়ী ঢলে সৃষ্ট বন্যায় মুহুরী-কহুয়া বাধের ৬ টি স্থানে ভাঙন দেখা দেয়৷ বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে উপজেলার উত্তর দৌলতপুর, দক্ষিণ দৌলতপুর, শাহা পাড়া, বিজয়পুর, ঘনিয়ামড়া, জয়পুর, গোসাইপুর, বরইয়া, করইয়া, জগতপুর, বাশুড়া, উত্তর বরইয়া, দক্ষিণ বরইয়া গ্রামসহ উপজেলার অন্তত ৩০ গ্রাম প্লাবিত হয়৷ পানিবন্ধী হয়ে পড়ে ওই উপজেলার ৫০ হাজার মানুষ৷ বন্যার পানিতে পাশ্ববর্তী উপজেলা পরশুরাম উপজেলার কহুয়া নদীর বৈরাগপুর নামক স্থানে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ ভেঙে বৈরাগপুর ও কহুয়া, টেটেশ্বর গ্রাম প্লাবিত হয়েছে৷ অধিকাংশ গ্রামের মানুষ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি ঘরে আশ্রয় নিয়েছেন৷ মাছের ঘের, ফসলী জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে৷ সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ইতেমধ্যে ফুলগাজী উপজেলায় ১০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ ও এক লাখ টাকার শুকনা খাবার ও নগদ ৫০ হাজার টাকা দেয়া হয়েছে৷বন্যা দুর্গত আমেনা বেগম জানান, বন্যার পানিতে এক সপ্তাহ ধরে আটকে আছি৷ ছেলে-মেয়ে না খেয়ে আছে৷ কিন্তু এখন পর্যন্ত কোন ত্রান পাইনি৷এ ব্যাপারে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তফা জানান, ফেনীতে পর্যাপ্ত ত্রাণ সামগ্রী মজুদ রয়েছে৷ বন্যা দূর্গত এলাকায় পরিমাণ ত্রাণ সামগ্রী দেয়া হবে৷দাগনভূঞায় ৬৫০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণএদিকে, ফেনীর দাগনভূঞায় ৬৫০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছে উপজেলা প্রশাসন৷ গতকাল বুধবার সকালে রাজাপুর স্কুল এন্ড কলেজে বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রান বিতরণ করা হয়৷সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, সপ্তাহ ব্যাপী টানা বৃষ্টিতে দাগনভূঞা উপজেলার সিন্দুরপুর ইউনিয়নের শরীফপুর, কৈখালী, নারায়নপুর, গৌতমখালী, দিলপুর, নশরতপুর৷ রাজাপুর ইউনিয়নের জয়নারায়নপুর, রাজাপুর বাজার, সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ করিমপুর, জগতপুর, ফাজিলেরঘাট বাজার, মাতুভূঞা ইউনিয়নের মোমারিজপুর, আশ্রাফপুর, সালামনগর, পূর্ব চন্দ্রপুর মডেল ইউনিয়নের ওমরাবাদ, গজারিয়া, কেরনিয়া, দরাপপুর, জায়লস্কর ইউনিয়নের উত্তর লালপুর, ধর্মপুর, মাছিমপুর, আলমপুর, বারাহিগুনী, উত্তর জায়লস্কর এবং দাগনভূঞা পৌরসভার আলাইয়াপুর, উদরাজপুর, আমান উল্লাপুর গ্রাম প্লাবিত হয়৷

৬৫০ পরিবারের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করেছেন উপজেলা চেয়ারম্যান দিদারুল কবির রতন৷ এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) জামশেদুর রহমান, উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মেশকাতুর রহমান ও স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন ভূঞা প্রমূখ৷স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের উপ-পরিচালক আবু দাউদ মো. গোলাম মোস্তাফা জানান, ফেনী সদর ও দাগনভূঞাতে ১২ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷

বান্দরবান: টানা কয়েক দিনের ভারি বর্ষণে বান্দরবানের বসন্ত পাড়া এলাকায় রুমা-থানচি সড়কে ভয়াবহ ধস দেখা দিয়েছে৷ এতে বান্দরবান শহরের সঙ্গে রুমা, চিম্বুক, নীলগিরি ও থানচি উপজেলার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে৷ গত তিন দিন ধরে এ সড়কে যোগাযোগ বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগে পড়েছেন স্থানীয় লোকজন ও পর্যটকরা৷এলাকাবাসী জানান, ভারি বর্ষণে বান্দরবান-থানচি সড়কের বসন্ত পাড়া এলাকার প্রায় আড়াই থেকে তিনশ’ মিটার সড়ক ধসে পড়েছে৷স্থানীয় রিংইয়ং মুরুং জানান, তার ৫০ বছর বয়সে সড়কে এমন ধস আর দেখেননি৷ এখানে যে আগে রাস্তা ছিল তা বোঝাই যাচ্ছে না৷ সড়ক ধসে পড়ায় তাদের যাতায়াত করতে খুবই কষ্ট হচ্ছে৷ যান চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা বিভিন্ন মালামাল নিয়ে শহরে আসতে না পারায় সবজিসহ বিভিন্ন কাঁচামাল নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷রুমা উপজেলার চেয়ারম্যান অংথোয়াই চিং মারমা বাংলামেইলকে জানান, রুমা-থানচি সড়কের বিভিন্ন স্থানে ও বসন্ত পাড়া এলাকায় পাহাড় ধসে রাস্তা ভেঙে যাওয়ায় পর্যটকরা আসতে পারছেন না৷ এতে পর্যটনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাবসায়ীদের লোকসান গুণতে হচ্ছে৷এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর প্রকৌশল শাখার ১৯ ইসিবির টুআইসি মেজর সাদেক মাহমুদ জানান, ভারি বৃষ্টির কারণে রুমা-থানচি সড়কের ১০ মাইল এলাকার প্রায় ২শ’ মিটার রাস্তা ধসে পড়েছে৷ এস ডবি্লউ স্পেশাল ওয়ার্ক অরগানাজাইশন চট্টগ্রাম এবং ১৯ ইঞ্জিনিয়ারিং ব্যাটালিয়ানের অধিনায়ক লে. কর্নেল তানবীর এবং পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ওহাব সড়কটি পরিদর্শন করেছেন৷ দ্রুত সড়কটি মেরামতের চেষ্টা করা হচ্ছে৷

শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি: নাব্যতা সঙ্কট ও চ্যানেলে পানি কম হওয়ায় শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের ফেরি বহরে থাকা তিনটি রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রয়েছে৷মঙ্গলবার দিনগত রাত থেকে রো রো ফেরিগুলো চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়৷বর্তমানে এই নৌরুটে ১৪টি ফেরি চলাচল করছে৷ চালু থাকা ফেরিগুলো হচ্ছে-ডাম্প ফেরি, মিডিয়াম ফেরি ও কে-টাইপ ফেরি৷বিআইডবি্লউটিসির মাওয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক মো. গিয়াসউদ্দিন পাটোয়ারি জানান, নাব্যতা সঙ্কট ও শিমুলিয়া-কাওড়াকান্দি নৌরুটের লৌহজং-হাজরা চ্যানেলে ডুবোচর জেগে ওঠা এবং পানি কম হওয়ায় রো রো ফেরি চলাচল করতে পারছে না৷এ জন্য মঙ্গলবার রাত থেকে তিনটি রো রো ফেরি চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে৷ চ্যানেলে পানি বৃদ্ধি পেলে আবারও রো রো ফেরি চলাচল করবে৷ তবে এ তিনটি বন্ধ থাকলেও অপর ১৪টি ফেরি চলাচল করছে৷বিআইডবি্লউটিসি সূত্র জানায়, রো রো ফেরি চলাচল করতে হলে পানির গভীরতা থাকতে হবে অন্তত সাড়ে সাত ফুট৷ সে অনুযায়ী নৌরুটের লৌহজং-হাজরা চ্যানেলে পানির গভীরতা কোথাও সাত ফুট আবার কোথাও তার চেয়ে কম৷ তাই চলাচল করতে গিয়ে রো রো ফেরিগুলো আটকে যাচ্ছে৷

কুড়িগ্রামঃকুড়িগ্রামের চিলমারী উপজেলার ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে অসংখ্য পরিবার গৃহহারা হয়েছে৷ ঘরবাড়ী, গাছ পালাসহ বিভিন্ন প্রকার মৌসুমী ফসল ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনের ফলে সর্বশান্ত হয়ে পড়েছে হজারো মানুষ৷ পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়ে কর্মহীন মানুষগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে অতিকষ্টে দিন যাপন করছে৷সরেজমিনে গিয়ে জানাগেছে, চিলমারীর নৌবন্দর ও রমনা ইউনিয়নের টোনগ্রামের ২৫টি পরিবার, ব্যাপারী পাড়া ৫ শত টি পরিবার, হিন্দু পাড়ার ২৫ টি পরিবার, মাষ্টার পাড়ার ১০ টি পরিবার, মুদাফত্‍ ৩ শত টি পরিবার, বাসনত্মী গ্রামের ১শত টি পরিবার, জোড়গাছ বাজার ৭০ টি পরিবার ও ঝলোপাড়া ৫০টি পরিবারসহ অনেকেই ব্রহ্মপুত্র নদের ভাঙ্গনে সর্বহারা হয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ডের বাঁধে আশ্রয় নিয়ে কর্মহীন মানুষগুলো পরিবার পরিজন নিয়ে দিনযাপন করছে৷ ভাঙ্গনের স্বীকার জলিল, কালাম, মনেয়ার, আলেপ উদ্দীন, জয়নাল, জেলেখা বলেন,নদী ভাঙ্গনে আমরা ভিটে মাটি হারিয়েছি৷ ভাঙ্গন অব্যাহত থাকায় বাঁধের দিকে এগিয়ে আসছে ব্রহ্মপুত্রের কিনারা৷ চিলমারী ও নৌবন্দর রক্ষার দাবীতে একাধিকবার মানব বন্ধন বিক্ষোভ সমাবেশ হওয়ার পরেও সরকারিভাবে ভাঙ্গনরোধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হয় নাই৷ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ আসলাম মোলস্না বলেন, নদী ভাঙ্গন কবলিত মানুষের সহায়তার জন্য উর্দ্ধতন কর্মকর্তাকে জানানো হয়েছে৷ খুব দ্রম্নত পাউবোর মাধ্যমে সমস্যা নিরসন করা হচ্ছে৷ কুড়িগ্রাম পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজার রহমান বলেন, আমরা ভাঙ্গন কবলিত এলাকা পরিদর্শন করেছি৷ ভাঙ্গন রোধের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে৷ এছাড়াও চিলমারী বন্দর রক্ষার জন্য জরম্নরীভাবে জিও ব্যাগ ফেলানো হচ্ছে৷

সাতক্ষীরা : টানা কয়েক দিেিনর বর্ষনে সাতক্ষীরা জেলার বিভিন্ন স্থানে জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হয়েছে৷ এতে জলাবদ্ধতায় জেলার ৭টি উপজেলায় ৪৪ লাখ টাকার আউশ ধান ও আমন ধানের বীজতলা ৰতিগ্রস্থ হয়েছে৷ অন্যদিকে পাট, সবজির ৰতি হয়েছে আরো ১০ লাখ টাকার৷ সম্প্রতি জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এ তথ্য দিয়ে জানিয়েছে, জলাবদ্ধতা দ্রুত নিরসন করা না গেলে ব্যপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হবে কৃষকরা৷ তবে তালা, দেবহাটা ও কালিগঞ্জ উপজেলার ধানের ফসল পানিতে নিমজ্জিত হলেও কোন ক্ষতি হয়নি বলে সম্প্রতি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদনে উলেস্নখ করা হয়৷ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সূত্র জানায়, সদর উপজেলায় ৩ হাজার ১৪০ হেক্টর জামিতে আউশ ও ৭৭০ হেক্টর জামিতে আমন বীজতলার চাষ হয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বর্ষায় ৪৫ হেক্টর জামির আউশ ও ১০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ যার মূল্য ২১ লাখ ৭৭ হাজার টাকা৷

কলোরোয়া উপজেলায় ২ হাজার ৭৭০ হেক্টর জামিতে আউশ ও ১০০ হেক্টর জামিতে আমন বীজতলার চাষ হয়৷ কিন্তু সাম্প্রতিক বর্ষায় ৪০ হেক্টর জামির আউশ ও ১০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ যার মূল্য ১৪ লাখ ৩৪ হাজার টাকা৷আশাশুনি উপজেলায় ১৭০ হেক্টর জামিতে আউশ ও ১৩৫ হেক্টর জামিতে আমন বীজতলার চাষ হয়৷ কিন্তু বর্ষায় শুধুমাত্র ৫ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ যার মূল্য ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা৷শ্যামনগর উপজেলায় ১০৫ হেক্টর জামিতে আউশ ও ৪২ হেক্টর জামিতে আমন বীজতলার চাষ হয়৷ কিন্তু ৭০ হেক্টর জামির আউশ ও ৩০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা নিমজ্জিত হয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হয়৷ যার মূল্য ৬ লাখ ৭২ হাজার টাকা৷কৃষি সম্প্রসারণ বিভাগের হিসেব অনুযায়ী তালা উপজেলায় আউশ ৫০ হেক্টর, আমন বীজতলা ১৫ হেক্টর, দেবহাটা উপজেলায় আউশ ধানের ৫ হেক্টর ও ৫ হেক্টর জমির আমন বীজতলা এবং কালিগঞ্জ উপজেলার আউশ ধানের কোন ৰতি না হলেও ৫০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা আংশিক ৰতিগ্রস্থ হয়েছে৷ কিন্তু সেখানে ৰতির পরিমাণ দেখানো হয়নি৷ অন্যদিকে জেলায় বিভিন্ন এলাকায় পাট, বেগুন, করলা, ঝিঙেসহ বিভিন্ন সবজি ফসলের ক্ষতি হয়েছে অনত্মত আরো ১০ লক্ষ টাকার৷সূত্র জানায়, চলতি মৌসুমে জলাবদ্ধতায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে সদর, কলারোয়া, তালা উপজেলার বিলগুলো৷ কৃষি বিভাগের রিপোর্টে তালা উপজেরার কোন ৰতির পরিমাণ উলেস্নখ করা হয়নি৷ একটি নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়, জেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে কর্মরত বস্নক সুপারভাইজাররা ইউনিয়নে না গিয়ে মনগড়া রিপোর্ট প্রদান করে৷ তারা অফিসে বসে একটি তথ্য সরবরাহ করেন বলে অনেক কৃষক অভিযোগ করেন৷ তারা অভিযোগ করেন, জেলার অধিকাংশ বিল পানিতে ভরপুর হলেও তাদের দেখা যায় না৷ আমরা এখন কিভাবে চাষ করব, উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করে কিভাবে দ্রুত ফসল উত্‍পাদন করব তার কোন তথ্য তারা প্রদান করেন না৷ তারা আরো জানায়, সদর উপজেলা বিভিন্ন বিলে জলাবদ্ধতা থাকে৷ সেখানে কোন ধান চাষ করলে কৃষকরা সুবিধা পাবে তার কোন খোঁজ পাননা তারা৷ জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কাজী আব্দুল মান্নান জানান, ক্ষতির পরিমাণ নিরুপনের কাজ চলছে৷ দ্রুত পানি না কমলে ক্ষতির পরিমাণ আরো বাড়তে পারে৷ তিনি পানি নিষ্কাশন হওয়ার সাথে সাথে ক্ষতিগ্রস্থ কৃষকদের উঁচু জমিতে আমন ধানের বীজতলা তৈরির পরামর্শ প্রদান করেন৷

ফরিদপুর: ফরিদপুরের ডিক্রির চর ইউনিয়নের ধলারমোড় এলাকায় শহর রক্ষা বাঁধ আবারও ধসে গেছে৷ পদ্মার তীরে নির্মাণ করা বাঁধের অন্তত ৫০ মিটার নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে৷ একের পর এক ধসের ঘটনায় ঝুঁকিতে রয়েছে নদীপাড়ের মানুষ ও শহরবাসী৷বুধবার ভোরে শহর রক্ষা বাঁধের বিশাল অংশে ফাটল দেখতে পায় এলাকাবাসী৷ বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে নদীগর্ভে বিলীন হতে থাকে ফাটল অংশের ব্লকগুলো৷ একইসঙ্গে ধসে যাওয়া অংশের ১৫-২০ মিটার দূরে আরও একটি ফাটল দেখা দেয়৷ পরে আতঙ্কিত এলাকাবাসী খবর দেয় পানি উন্নয়ন বোর্ডে৷ খবর পেয়ে ছুটে আসেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা৷এলাকাবাসীর দাবি, অবিলম্বে বাঁধ সংস্কার না করা হলে বিলীন হয়ে যাবে বিস্তীর্ণ অঞ্চল৷ ক্ষতিগ্রস্ত বাঁধ মেরামত ও ধস ঠেকাতে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়া না হলে শুধু পদ্মাপাড়ের বাসিন্দাদেরই নয় বড় ধরনের মূল্য দিতে হবে ফরিদপুর শহরবাসীকেও৷ফরিদপুর সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান খন্দকার মোহতেশাম হোসেন বাবর জানান, কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির ফলে নদীপাড়ের মাটি নরম হয়ে যাওয়ায় বাঁধ ধসে পড়েছে৷ নতুন কোনো স্থানে যাতে ধস না হয় সেজন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডকে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে৷ডিক্রির চর ইউপি চেয়ারম্যান সাদেকুজ্জামান মিলন পাল জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের উদাসীনতার কারণেই বার বার বাঁধ ধসের ঘটনা ঘটছে৷

ঘটনাস্থলে উপস্থিত পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-সহকারী প্রকৌশলী নিখিল চন্দ্র হালদার জানান, ৫০ মিটার এলাকা ধসে গেছে৷ তবে পানির নিচে ধসের পরিমান নিশ্চিত করতে পারেননি তিনি৷ ধস ঠেকাতে বালুর বস্তা ফেলারও ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলেও জানান তিনি৷