দৈনিকবার্তা-নওগাঁ, ২৯ জুলাই ২০১৫: নওগাঁ-চাঁপাইনবাবগঞ্জ-রাজশাহী আন্ত:জেলা যোগাযোগের মাধ্যম মহাসড়কটির বর্তমান বেহাল দশা। এর বিভিন্ন জায়গায় ছোট বড় খানা-খন্দের সৃষ্টি হয়ে তাতে বর্ষার পানি জমে যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর পরও ঝুঁকি নিয়ে প্রতিনিয়ত চলছে বিভিন্ন যানবাহন। ফলে প্রতিদিনই ঘটছে বিভিন্ন ধরনের সড়ক দূর্ঘটনা। বিশেষ করে রাশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের উদ্দেশ্যে চিকিৎসা নিতে যাওয়া সাপাহার, পোরশা, নিয়ামতপুর ও নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে রেফার্ড করা রোগীরা পড়ছেন চরম বিপাকে। পথিমধ্যে এ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে ঘটছে অনাকাঙ্খিত ঘটনা। অথচ দীর্ঘদিন থেকে সড়কটির এমন অবস্থা চলতে থাকলেও কর্তৃপক্ষ চুপচাপ।সড়কটি রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলা থেকে শুরু করে চাঁপাইনবাবঞ্জের আমনুরা, নাচোল ও গোমস্তাপুর উপজেলা হয়ে নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর, পোরশা ও সাপাহারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। বিশেষ করে বরেন্দ্র অঞ্চলের মানুষকে বিভাগীয় শহর রাজশাহীর সাথে যোগাযোগ ও মুমূর্ষ রোগীদের দ্রুত রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিতে এ সড়কটিই একমাত্র মাধ্যম।
সংস্কারের অবাবে ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ সড়কটির বিভিন্ন জায়গায় ইট বালি উঠে গিয়ে ছোট-বড় বিভিন্ন গর্তের সৃষ্টি হয়ে তাতে বর্ষার পানি জমে ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে আমনুরার লক্ষ্মীপুর থেকে শুরু করে নাচোল উপজেলার নেজামপুর, নাচোল, ভোলার মোড়, বেনীপুর। নিয়ামতপুর উপজেলার টগরইল, ঘুঘুডাংগা, ধানসুরা, সিরাজপুর হয়ে পারবর্তীপুর আড্ডা পর্যন্ত প্রায় ৩০ কিলোমিটার সড়কের মধ্যখানে ছোট-বড় বিভিন্ন গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে একটু বৃষ্টি হলেই সৃষ্ট এ সকল গর্তে পানি জমে থাকে দিনের পর দিন। এ অবস্থায় ঝুঁকি নিয়েই চলে যানবাহন। ফলে প্রায়ই ঘটছে প্রানহানির মত সড়ক দূর্ঘটনা।নিয়ামতপুর উপজেলার রসুলপুর ইউনিয়নের দামপুরা গ্রামের শিক্ষক আব্বাস আলী চাকুরী করেন পোরশা উপজেলার ছাওড় ইউনিয়নের একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে। তিনি প্রতিদিন মটর বাইকে করে আসা যাওয়া করেন। তিনি জানান, সড়কটিতে খনাখন্দের সৃষ্টি হয়ে খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে বৃষ্টির পর সড়কটির এমন দশা হয় যে প্রায় দূর্ঘটনার শিকার হন তিনি। এমন কথা জানালেন, টগরইল গ্রামের সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা শিউলি খাতুন। তিনি প্রতিদিন বাসযোগে এ পথেই নিয়ামতপুরের গনপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যাওয়া-আসা করেন।কথা হয় সাপাহার-রাশাহী বিআরটিসি বাস ড্রাইভার সেলিমের সাথে। তিনি প্রতিদিন বাস চালান এ রুটে। তিনি জানান, বর্তমানে সড়কটি যানবাহন চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এর পরও ঝুঁকি নিয়েই বাস চালাচ্ছেন। এতে করে মাঝে মাঝেই সড়কের মধ্যে সৃষ্ট গর্তে গাড়ি আটকে যায় তার। বিভিন্ন যন্ত্রাংশ ভেঙ্গে যাত্রা পথেই বাস বিকল হয়ে পড়ে থকে মাঝে মাঝে। যাত্রীরা তখন পড়েন চরম ভোগান্তিতে।
চাঁপাইনবাগঞ্জ-নওগাঁ মেইল সার্ভিস মহানন্দা পরিবহনের গাড়ী চালক এন্তাজ জানান, সড়কটির অবস্থা খুবই খারাপ তারপরও ঝুঁকি নিয়েই তাকে নিয়মিত যাওয়া আসা করতে হয়। সড়কের বেহাল দশায় সময়ের মধ্যে কখনও পৌঁছতে পারেন না তিনি। এতে করে তাকে যাত্রীদের কথা শোনা ছাড়াও চেইন মেনটেন করতে না পারায় জরিমানার টাকা গুনতে হয় প্রতিদিন। একই রকম অভিব্যক্তি ব্যক্ত করেন আড্ডা-রাজশাহী মেইল সার্ভিস তুহিন পরিবহনের ড্রাইভঅর কার্তিক চন্দ্র।সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার শাহাবুদ্দীন জানান, রাস্তায় খানা-খন্দের সৃৃষ্টি হয়ে এতটায় ঝুঁকিপূর্ণ হয়েছে যে, তিনি এখন রোগী নিয়ে নজিপুর-মহাদেবপুর হয়ে রাজশাহী যান। এত সময় বেশী লাগলেও রুগী শান্তিতে থাকেন। কিন্তু জরুরী রুগী হলে তখন সময়টা একটা ব্যাপার হয়ে দাঁড়ায়।পোরশা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বীর মুক্তিযোদ্ধা কাওসার আলী মোল্লা জানান, মুমূর্ষ রুগী নিয়ে মাঝে মাঝেই তাকে দীর্ঘ এ সড়ক পার হয়ে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যেতে হয়। সড়কের বিভিন্ন জায়গায় ইট, বালি উঠে গর্তের সৃষ্টি হওয়ায় সময় মত রুগী নিয়ে রাজশাহী হাসপাতালে পৌঁছতে পারেননা তিনি। মাঝে মাঝে এ্যাম্বুলেন্স বিকল হয়ে পড়ে থাকে রাস্তায়। এমন সময় খুব দু:শ্চিন্তায় পড়েন রুগীর স্বজনরা। এ ছাড়াও ভাংগা-চুরা এ সড়কের খনা-খন্দে গাড়ীর লাফালাফিতে সন্তান সম্ভাবনা রোগীসহ বিভিন্ন রোগীরা সড়কের এ বেহাল দশাই আরো মুমূর্ষ হয়ে পড়েন বলে মন্তব্য করেন তিনি ও নাচোল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এ্যাম্বুলেন্স ড্রাইভার বারিক।নওগাঁ জেলা সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো: আব্দুল আলীম খানের সাথে কথা বললে তিনি সড়কের বর্তমান অবস্থার কথা স্বীকার করেন এবং বলেন চলতি বছরেই টেন্ডারের মাধ্যমে সড়কের সংস্কার করা হবে।