দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জুলাই: আপিল বিভাগে যুদ্ধাপরাধী সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর চূড়ান্ত রায়কে ঘিরে বিচারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিবন্ধ প্রকাশ করায় দৈনিক জনকন্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদককে তলব করেছে আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে মামলা চলাকালে বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে।
জনকণ্ঠে প্রকাশিত ওই নিবন্ধের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে জনকণ্ঠ সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নিবন্ধের লেখক স্বদেশ রায়কে ৩ অগাস্ট আদালতে হাজির হতে হবে।প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সাকা চৌধুরীর ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার রায় দিয়ে স্বপ্রণোদিত হয়ে এ রুল জারি করেছে।গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকন্ঠে, একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল বিভাগে চূড়ান্ত রায় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে একটি নিবন্ধ প্রকাশ করা হয়। ওই নিবন্ধে বিচারকদের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন তোলা হয়।
বলা হয়, বিচারকাজে সংশ্লিষ্ট একজন বিচারপতির সঙ্গে দেখা করেছে সাকা চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা।বুধবার প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন ৪ সদস্যের আপিল বেঞ্চ চূড়ান্ত রায়েও সালাউদ্দিন কাদেরের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখার পাশাপাশি স্বপ্রণোদিত হয়ে একটি রুলও জারি করেন।রুলে, ওই নিবন্ধের বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে জনকন্ঠের সম্পাদক আতিকুল্লাহ খান মাসুদ ও নিবন্ধের লেখক স্বদেশ রায়কে আগামী ৩ আগস্ট আদালতে হাজির হতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি এ রুলে মামলা চলাকালীন সময়ে বিভিন্ন মন্তব্য করায় গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে।
এদিকে, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা ও আইনজীবীরা বলেন, আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায় নিয়ে অনেকে সংশয় প্রকাশ করলেও, সাকা চৌধুরীর অপরাধ বিবেচনায় সর্বোচ্চ শাস্তির রায় নিয়ে কোনো সংশয় ছিলো না।আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর তুরিন আফরোজ বলেন, আপিল বিভাগের এই রায়ের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়েছে অপরাধ করে কেউ পার পাবে না।
সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর চূড়ান্ত রায় ঘিরে বিচারকদের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলে নিবন্ধ প্রকাশ করায় দৈনিক জনকণ্ঠ সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে অবমাননার রুল জারি করেছে সর্বোচ্চ আদালত।এছাড়া মামলা চলাকালে বিভিন্ন মন্তব্যের কারণে গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকারের বিষয়েও আপিল আদালত বিস্তারিত তথ্য জানতে চেয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন।
সাকার পরিবারের তৎপরতা/পালাবার পথ কমে গেছে শিরোনামে গত ১৬ জুলাই দৈনিক জনকণ্ঠে স্বদেশ রায়ের লেখা একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়।এর একটি অংশে বলা হয়, ৭১-এর অন্যতম নৃশংস খুনী সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী। নিষ্পাপ বাঙালীর রক্তে যে গাদ্দারগুলো সব থেকে বেশি হোলি খেলেছিল এই সাকা তাদের একজন। এই যুদ্ধাপরাধীর আপিল বিভাগের রায় ২৯ জুলাই। পিতা মুজিব! তোমার কন্যাকে এখানেও ক্রশে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হচ্ছে। তাই যদি না হয়, তাহলে কিভাবে যারা বিচার করছেন সেই বিচারকদের একজনের সঙ্গে গিয়ে দেখা করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের লোকেরা? তারা কোন পথে বিচারকের কাছে ঢোকে, আইএসআই ও উলফা পথে না অন্য পথে? ভিকটিমের পরিবারের লোকদেরকে কি কখনও কোনো বিচারপতি সাক্ষাত দেয়।
বিচারকের এথিকসে পড়ে! কেন শেখ হাসিনার সরকারকে কোন কোন বিচারপতির এ মুহূর্তের বিদেশ সফর ঠেকাতে ব্যস্ত হতে হয়।সাকার রায়ের পর এক সংবাদ সম্মেলনে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, বিচার বিভাগকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্যই এ লেখা। আদালত মনে করে, এতে নানারকম মন্তব্য করে আদালতের বিরুদ্ধে কুৎসা রটানো এবং ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছে।এ ধরনের নিবন্ধ প্রকাশ করায় কেন তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না’- আদালত তা জানতে চেয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল জানান।
একই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধের সর্বোচ্চ বিচারের দাবিতে গড়ে ওঠা গণজাগরণ মঞ্চের মুখপাত্র ইমরান এইচ সরকার সম্পর্কে আদালত তথ্য চেয়েছে বলে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা জানান।মাহবুবে আলম বলেন, আপিল বিভাগ ইমরান সরকারের পার্টিকুলার্স জানতে চেয়েছেন। আমি তার বিস্তারিত সংগ্রহ করে আদালতে উপস্থাপন করব।সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিলের চূড়ান্ত রায় নিয়ে ষড়যন্ত্রের আশঙ্কা প্রকাশ করে ইমরান এইচ সরকার গত ২৬ জুলাই বলেন, এই যুদ্ধাপরাধীর সর্বোচ্চ শাস্তি ছাড়া অন্য কোনো কোনো রায় মেনে নেওয়া হবে না। যুদ্ধাপরাধের বিচার চলার সময় ইমরানের বিভিন্ন মন্তব্য ও বক্তব্যের কারণে আদালত ইমরান সম্পর্কে জানাতে চেয়েছে বলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন।