দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৯ জুলাই: একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে সর্বোচ্চ আদালতের দেয়া ফাঁসির রায় শুনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন কাদের চৌধুরী বলেনছেন, তিনি ফেলনা লোক নন, আইনের সর্বোচ্চ লড়াই তিনি লড়বেন। তার আশা, রিভিউয়ে তিনি ন্যায়বিচার পাবেন।
বুধবার আপিল বিভাগ থেকে দেয়া রায়ের পর তাকে মৃত্যৃদণ্ড বহালের বিষয়টি জানানো হয়। এ সময় কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-১ এ বন্দি সালাহ উদ্দিন কাদের চৌধুরী এমন প্রতিক্রিয়া দেখান।বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন কাশিমপুর কারাগারের পার্ট-১ এর জেলার ফরিদুর রেজা রুবেল। প্রসঙ্গত, মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরী। চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের চার অভিযোগে তাকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত। প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ বুধবার এ রায় ঘোষণা করেন।
নিজেকে নির্দোষ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করে সাকা চৌধুরী আরও বলেন, আমি দেশের জন্য, জনগণের জন্য রাজনীতি করেছি। আমিতো ফেলনা লোক নই। আজ হয়তো আমার কিছু কথার কারণে অনেকেই ক্ষুব্ধ। আজ আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।ফরিদুর রেজা রুবেল জানান, ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ২০১২সালের ২৩ অক্টোবর থেকে এ কারাগারে অন্তরীণ রয়েছেন। হাইকোর্টের দেয়া ফাঁসির রায়ের পর তাকে কনডেম সেলে রাখা হয়। সকালে জেলখানায় বসেই রেডিওতে আপিল বিভাগের দেয়া নিজের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকার সংবাদ শোনেন তিনি।
জেলার আরও জানান, এর আগে তিনি স্বাভাবিকভাবে সকালের নাস্তা সারেন। পরে সকাল ১০টার দিকে সেলে গিয়ে তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কথা জানানো হয়। তবে মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনার পরও সাকা ছিলেন বেশ হাসি-খুশি।এদিকে,এ রায়কে কেন্দ্র করে কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে হয়েছে বলেও জানা জেলার ফরিদুর রেজা রুবেল।
২০১০সালের ১৬ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাকা চৌধুরী ২০১২সালের ২৩ অক্টোবর থেকে গাজীপুরের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার-১ এ বন্দি। সকালে জেলখানায় বসেই রেডিওতে নিজের সর্বোচ্চ সাজা বহাল থাকার রায় শোনেন এ যুদ্ধাপরাধী।এ কারাগারের সুপার সুব্রত কুমার বলেন, সকাল ৯টায় রায় হওয়ার পর জেলার মো. ফরিদুর রহমান রেজা সাড়ে ১০টার দিকে সাকা চৌধুরীর সেলে যান এবং রায়ের কথা জানান। এর আগে সাকা চৌধুরী রেডিওর মাধ্যমে নিজেও রায় শোনেন।কারাবিধি অনুযায়ী, কারাবন্দি আসামিরা তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে দেওয়া এক ব্যান্ডের রেডিও সঙ্গে রাখতে পারেন।জেলার ফরিদুর রহমান রেজা বলেন, মৃত্যুদণ্ডের রায় শোনার পরও সাকা ছিলেন ‘হাসি-খুশি’।তিনি বলেছেন, তিনি আইনের সর্বোচ্চ লড়াই লড়বেন; রিভিউ আবেদন করবেন। বলেছেন, তিনি আশাবাদী, রিভিউয়ে ন্যায়বিচার পাবেন।
সাকা চৌধুরী আমাদের বলেছেন,আমি দেশের জন্য, জনগণের জন্য রাজনীতি করেছি। আমিতো ফেলনা লোক নই। আজ হয়তো আমার কিছু কথার কারণে অনেকেই ক্ষুব্ধ। আজ আমাকে হয়রানি করা হচ্ছে।মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের (ফকা) চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরীর সর্বোচ্চ সাজার রায় এসেছে চট্টগ্রামের রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর এক আওয়ামী লীগ নেতা ও তার ছেলেকে অপহরণ করে খুনের চার অভিযোগে।তবে এরশাদ আমালের এই মন্ত্রী নিজেকে নির্দোষ এবং ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসার শিকার বলে দাবি করেছেন জেলারের সামনে। সাকা দাবি করেছেন, তাকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
জেলার ফরিদুর রেজা বলেন, এ রায়কে কেন্দ্র করে আমরা আগে থেকেই সজাগ রয়েছি। কারাগার এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। নজরদারিও বাড়ানো হয়েছে।অভিব্যক্তিতে ব্যঙ্গ, আচরণে ঔদ্ধত্য আর প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাধরদের বিদ্রুপ-এক কথায় এইসব কারণে আশির দশক থেকে সংবাদের শিরোনামে থাকতেন মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যার দায়ে সর্বোচ্চ সাজাপ্রাপ্ত রাজনীতিক সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী।চূড়ান্ত বিচারে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত এই যুদ্ধপরাধী সাকা চৌধুরী নামেই খবরে এসেছেন বেশি।
শুধু গণহত্যাই নয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে চট্টগ্রামের রাউজান, রাঙ্গুনিয়া, হাটহাজারী, বোয়ালখালী ও চট্টগ্রাম শহরে ধর্ষণ, লুটপাট, হিন্দুদের বাড়ি দখল এবং তাদের দেশান্তরে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন সাকা চৌধুরী। সেসময় পুরো চট্টগ্রামজুড়ে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিলেন মুসলিম লীগ নেতা ফজলুল কাদের চৌধুরীর ছেলে সাকা চৌধুরী।ফজলুল কাদের চৌধুরী ছিলেন পাকিস্তান মুসলিম লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতা।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ফজলুল কাদের চৌধুরী ফকা চৌধুরী নামে পরিচিত ছিলেন। ষাটের দশকে তিনি পাকিস্তানের জাতীয় পরিষদের স্পিকারও হয়েছিলেন।পিতার রাজনৈতিক আদর্শ অনুসরণ করে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীও রাজনীতি শুরু করেন মুসলিম লীগের মাধ্যমে। মুক্তিযুদ্ধের শুরু থেকেই মুসলিম লীগ সরাসরি পাকিস্তানের পক্ষে এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতার বিপক্ষে অবস্থান নেয়।
২০১৩ সালের ১ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল রাউজানে কুণ্ডেশ্বরী ঔষধালয়ের মালিক নূতন চন্দ্র সিংহকে হত্যা, সুলতানপুর ও ঊনসত্তরপাড়ায় হিন্দু বসতিতে গণহত্যা এবং হাটহাজারীর আওয়ামী লীগ নেতা শেখ মুজাফফর ও তার ছেলে শেখ আলমগীরকে অপহরণ করে খুনের দায়ে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেয়।ট্রাইব্যুনালের রায় বহাল রেখেছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।সংসদ সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সাকা চৌধুরীর জন্ম ১৯৪৯ সালের ১৩ মার্চ চট্টগ্রামের রাউজান থানার গহিরা গ্রামে। রাজনীতি মুসলিম লীগ থেকে শুরু করলেও পরে জাতীয় পার্টি ও এনডিপি হয়ে বিএনপিতে যোগ দেন প্রচণ্ড ভারত বিদ্বেষী এই রাজনীতিক।