Bogra Pic-25

দৈনিকবার্তা-বগুড়া , ২৫ জুলাই ২০১৫: বগুড়ার করতোয়া নদীর দু’পাড়ে অবৈধ দখল মুক্ত অভিযান শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের নওয়াব বাড়ি ঘাট সংলগ্ন এলাকায় গড়ে ওঠা একটি ভবনের প্রাচীর ভেঙে ফেলার মাধ্যমে উচ্ছেদ অভিযান শুরু করা হয়। তবে এই অভিযানে ২৮ জনের অবৈধ দখলের স্থলে মাত্র ৬ জনের স্থাপনা উচ্ছেদ করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রশাসনের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা। উচ্ছেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেওয়া নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট হাবিবুল হাসান রুমি জানিয়েছেন, অবৈধ দখলদারের তালিকা ধরে উচ্ছেদ অভিযান আগামীতেও অব্যাহত থাকবে।অনুসন্ধান করে জানা গেছে, স্বাধীনতার পর থেকেই করতোয়া নদীর জায়গা অবৈধভাবে দখল করা শুরু হয়। স্থানীয়দের অভিযোগ, বগুড়া পৌরসভা ও প্রশাসনের সঠিক নজরদারির অভাব এবং দখলদারদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা না নেওয়ার কারণেই করতোয়া ক্রমশই হারিয়ে যেতে বসেছে।জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্র জানায়, করতোয়া নদীদখলের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে সর্বশেষ গত বছরের জুলাই মাসে ২৮ দখলদারের নামের তালিকা তৈরি করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে একটি জরিপ দল গঠন করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়। সেই দল জরিপ করে চলতি বছরের জুন মাসে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসকের (রাজস্ব) কাছে ২৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে দখলদার হিসেবে চিহ্নিত করে প্রতিবেদন দাখিল করেন।.

দখলদারদের তালিকায় শীর্ষে রয়েছে বেসরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস)। তারা প্রায় ৫ একর জমিদখল করে রেখেছে। এর মধ্যে বগুড়া শহরের নবাববাড়ী মৌজায় ১৭১৬ দাগে পৌনে এক শতক করতোয়া নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছে। বগুড়া সদরের মহিষবাথান মৌজায় ১৫৫৩ দাগে ৪ দশমিক ৯০ একর অবৈধ ভাবে দখল করে পুকুর, ছাত্রাবাস ও ক্যান্টিন নির্মাণ করেছে।বগুড়া জেলা প্রশাসনের রাজস্ব শাখা সূত্রে জানা গেছে, করতোয়া নদীর ভূমি অবৈধ দখলকারীদের একটি জরিপ সম্প্রতি সমাপ্ত করা হয়েছে। এতে বগুড়া শহর ,শহরতলীর ২৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান মিলে ৫ একর ২৫ শতাংশ করতোয়া নদীর জমি অবৈধভাবে দখল করে নিয়েছে। এদের মধ্যে বগুড়ার ঠেঙ্গামারা মহিলা সবুজ সংঘ (টিএমএসএস) একাই প্রায় ৫ একর জমি দখল করে পুকুর হিসেবে ব্যবহার করছে। পুকুর পাড়ের দক্ষিণ ও পূর্ব পাশে ৩ টি টিনশেড ছাত্রাবাস এবং ১ টি ক্যান্টিন নির্মাণ করেছে।

এছাড়া অন্যান্য অবৈধ দখলকারীদের মধ্যে বগুড়া ডায়াবেটিক সমিতি ৮ শতাংশ, সুত্রাপুরের আবুল কালাম আজাদ, ফুলবাড়ীর আলহাজ্ব খয়রত জ্জামান, চেলোপাড়ার শ্রী রাধা বাবু, রাজা বাজারের আব্দুস সোবাহান, রাজাবাজারের কানাইলাল ও শংকর বাবু, নবাববাড়ী সড়কের একে এম ফজলুর রহমান, জোবায়দুল ইসলাম, মতিয়ার রহমান, মাজেদ হোসেন,গুপিনাথ মন্দির, টিএমএসএস এর বিসিএল মার্কেটের টিনের চালা, চেলোপাড়া রাজভর বিহানী ওরফে রাজু মারোয়ারীর ছেলে সঞ্জীব কুমার বিহানী, প্রদীপ কুমার রায়, আব্দুল জলিল, ফরিদ উদ্দিন, সাইফুল ইসলাম, চান্দু মিয়ার স্ত্রী লাভলী, নাটাই পাড়ার আবুল হাসেম আলী, বজলার রহমান, কাশেম আলী, গোলাম মোস্তফা, কৃঞ্চা সাহা, ও শ্রীমতি আরতী ।সূত্র জানায়, দীর্ঘ দিন ধরে করতোয়া নদীর ভূমি অবৈধ দখলে ভূমি অফিসের কতিপয় দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা কর্মচারী সহযোগিতা করে আসছেবগুড়ার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) হায়াত-উদ-দৌলা খান বলেন, করতোয়া নদীর দখলদারদের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া উচ্ছেদ মামলা হওয়ার পর শুনানির জন্য সবাইকে নোটিশ দেওয়া হয়েছিলো। ইতিমধ্যে কয়েকজনের শুনানি করা হয়েছে। কেউ কেউ আবার মাপজোকের আবেদন করেছিলেন। আবার কেউ নদী দখলের অভিযোগ অস্বীকারও করেছেন। সবকিছু যাচাই-বাছাই করে দখলদার প্রমাণিত হয়েছে যারা তাদের বিরুদ্ধেই উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।