11665405_1617825751828599_1968296956668505173_n

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ জুলাই: বর্ষাকালে মহানগরী ঢাকা ভয়াবহ জলাবদ্ধতার শিকার হয়। হাজার হাজার কোটি টাকার মালামালের ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি জনদুর্ভোগ চরমে উঠে। কর্তৃপক্ষ ধানমন্ডি, গুলশান, বনানীর মতো অভিজাত এলাকার সেবা সরবরাহে মনোযোগী থাকলেও বিশাল ঢাকাবাসীর জলাবদ্ধতা দূরীকরণে পরিকল্পিত কোন কার্যক্রম পরিচালনা করে না। অথচ জলাবদ্ধতা একটি সামগ্রিক সমস্যা।

এর সমাধানও করতে হবে সামগ্রিক বিবেচনায়। জলাবদ্ধতা দূরীকরণে কেবল অভিজাত এলাকার জন্য নয় বরং সকল এলাকার জন্য সমন্বিত কার্যকর উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। শনিবার সকাল ১১টায় নগর ভবনের সামনে পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা), নাগরিক অধিকার সংরক্ষণ ফোরাম (নাসফ), আইনের পাঠশালা ও পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটি এর যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত মানববন্ধন থেকে উক্ত দাবী জানানো হয়।

পবার চেয়ারম্যান আবু নাসের খানের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন নাসফের সভাপতি হাফিজুর রহমান ময়না, আইনের পাঠশালার সভাপতি সুব্রত দাস খোকন, পবার নির্বাহী সদস্য প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ, এ কে এম সেরাজুল ইসলাম, সহ-সম্পাদক মো: সেলিম, সমন্বয়কারী আতিক মোরশেদ, পরিবেশ উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি বুরহান উদ্দিন আহমেদ, পুরান ঢাকা নাগরিক উদ্যোগের সভাপতি নাজিম উদ্দিন, মডার্ণ ক্লাবের সভাপতি আবুল হাসনাত প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, সামান্য বৃষ্টিতেই মহানগরী ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় পানি জমে যায় এবং ভারি বর্ষণে শহরের অধিকাংশ এলাকা জলাবদ্ধতায় প্রায় অচল হয়ে পড়ে। ড্রেনেজ লাইনের সাথে সুয়্যারেজের বর্জ্য মিশে দুর্বিসহ পরিস্থিতি তৈরি হয়। অসংখ্য বাড়ী ঘর ও দোকানপাটে দূষিত পানি উঠে যায়, রাস্তায় যান চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়ে এবং পাইকারী বাজারে লক্ষ লক্ষ মন চাল ডালসহ অনেক দ্রব্য-সামগ্রী নষ্ট হয়ে যায়।

সব মিলিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ নষ্ট হয়। জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। আর পরিস্থিতি সামাল দিতে সিটি কর্পোরেশন, ওয়াসা কিংবা অন্যান্য সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান খন্ড খন্ডভাবে খুঁড়াখুড়ি চালায়। জোড়াতালি দিয়ে পরিস্থিতি সাময়িকভাবে সমাধান করতে চায়। অবশ্য এ বিষয়ে প্রাধান্য পায় অভিজাত এলাকাগুলি। অথচ এই জলাবদ্ধতা একটি সামগ্রিক সমস্যা এর বিক্ষিপ্ত কোন সমাধান নেই। জলাবদ্ধতা নিরসনে সমগ্র ঢাকা মহানগরীকে পরিকল্পনায় নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

ঢাকার এই ভয়াবহ জলাবদ্ধতার অন্যতম কারণ মহানগরীর অধিকাংশ খাল, জলাশয়সমূহ দখল ভরাট ও স্থাপনা তৈরি করে প্রাকৃতিক পানি নিষ্কাশন ব্যবস্থা ধ্বংস করা। পাশাপাশি বিদ্যমান ড্রেনেজ ব্যবস্থার অপ্রতুলতা, অপরিকল্পিত ড্রেন ও নিন্মমানের কাজ। এছাড়া বিদ্যমান অধিকাংশ ড্রেন পলিথিন প্লাস্টিক ও অন্যান্য বর্জ্য দ্বারা আংশিক বা সম্পূর্ন বন্ধ থাকে।

তাছাড়া মেরামতের অভাবে কিংবা ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় ড্রেনের ভিতরে পানি প্রবেশ করতে পারে না ফলে পানি প্রথমে রাস্তায়, পরে বাড়ি ঘরে ঢুকে পড়ে এবং স্থানীয়ভাবে জলাবদ্ধতা ব্যাপক আকার ধারণ করে। ইমারত নির্মাণ বিধিমালাও একটি ব্যবসায়িক পক্ষপাতদুষ্ট নীতি। নতুন ইমারত নীতিমালায় জনঘনত্ব বাড়ছে। জনঘনত্ব বাড়ার ফলে নিত্য দিনের ব্যবহারের জন্য পানির ব্যবহার অনেক বাড়ছে।

কিন্তু সেই প্রয়োজনকে মাথায় রেখে ড্রেনেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে না। একটি এলাকায় আগামি বছরগুলোতে কত লোক বাস করবে সে বিষয়ে নীতি নির্ধারকদের কোন ধারণা নাই। ফলে প্রয়োজনের সাথে পরিকল্পনার মিল থাকছে না। যেভাবে সাবসিডি দেয়া হচ্ছে তাতে বৈষম্য তৈরি হচ্ছে। সমস্ত সাবসিডি ঢাকা কেন্দ্রিক হচ্ছে। ঢাকায়ও আবার এলাকাভেদে এই সাবসিডির অনেক তারতম্য হচ্ছে।

অভিজাত এলাকাগুলোতে সাবসিডির সিংহভাগ ব্যয় করা হচ্ছে। যেহেতু এটি জনগণের টাকা সুতরাং এই বিশাল অংকের টাকার সুবিধার সুষম বন্টন থাকতে হবে। কেবল বাসা মালিক কিংবা বিশেষ এলাকার সুবিধা বৃদ্ধিতে এই ব্যয় করা হলে তা হবে রাষ্ট্রের মূলনীতির পরিপন্থী এবং অন্যায়। বর্তমান ধারায় ঢাকা কেন্দ্রিক নীতির ফলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার এই গতি অব্যাহত থাকলে মহানগরী ঢাকায় মহাবিপর্যয় নেমে আসবে।