দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৫ জুলাই ২০১৫: ছাত্রলীগই পারবে বাংলাদেশকে বদলাতে আর দেশকে বদলাতে হলে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদেরও তাদের আচার-আচরণ পরিবর্তন করতে হবে। শনিবার রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনে এ কথা বলেন আওয়ামী লীগের নেতারা। নেতারা বলেন, আগামীতে দেশের যেকোনো নির্বাচন, আন্দোলনে ছাত্রলীগই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। ছাত্রলীগকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে দেশ গড়তে ভূমিকা রাখতে হবে।ছাত্রলীগের সম্মেলনে নিজ নিজ বক্তব্যে ছাত্রলীগকে উৎসাহ দেয়ার পাশাপাশি দিকনির্দেশনাও দেন আওয়ামী লীগ নেতারা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সম্মেলন উদ্বোধন করতে গিয়ে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য হতে না পারার বেদনাবোধের কথা আবারও বলেছেন শেখ হাসিনা।
শনিবার ছাত্রলীগের ২৮তম সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তব্যের এক পর্যায়ে হাসতে হাসতে নিজের দুঃখের কথাটি বলেন সবচেয়ে বেশি সময় বাংলাদেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব পালন করা শেখ হাসিনা।বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই ছাত্র সংগঠনটির সম্মেলন বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে উদ্বোধনের পর সাবেক ও বর্তমান নেতাদের বক্তৃতা শুনে নিজে কথা বলতে দাঁড়ান প্রধান অতিথি শেখ হাসিনা।৪১ মিনিটের বক্তব্যের শুরুর দিকে ছাত্র আন্দোলনে নেতৃত্বের গুরুত্ব তুলে ধরে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী বলেন, আমরা ছাত্রলীগ করেই আজ এই নেতৃত্বে এসেছি।আমি নিজেও ছাত্রলীগের একজন কর্মী ছিলাম। নেতা হওয়ার সুযোগ আমার হয়নি কখনও, হাসতে হাসতে বলেন তিনি।ছাত্রলীগের সেন্ট্রাল কমিটিতে আমাকে কখনও একটা সদস্য পদ দেওয়া হয়নি। এটা আমার একটা দুঃখ। আমি প্রতিবারই বলি।
বঙ্গবন্ধুকন্যা হাসিনা আওয়ামী লীগ সমর্থিত ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের বিভিন্ন অনুষ্ঠানে বক্তৃতায় এর আগেও নিজের এই দুঃখবোধ প্রকাশ করেছিলেন। শেখ মুজিবুর রহমানের সন্তান হিসেবে রাজনীতি সচেতন হিসেবে গড়ে ওঠার কথাও বলেন শেখ হাসিনা; পরে যিনি বাবাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক এবং নতুন রাষ্ট্রের নায়ক হিসেবেও দেখেছেন। দেশের চরম দুঃসময়ে প্রতিটি আন্দোলনেই রাজপথে ছিলাম। সেই স্কুল জীবন থেকে।আজিমপুর গার্লস স্কুলের পড়ার সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার কথা তুলে ধরে শেখ হাসিনা বলেন, স্কুলের গেট বা ওয়াল টপকে মিছিলে যোগ দিতাম। কলেজেও সেভাবেই যোগ দিয়েছি।স্বাধীনতার আগে কলেজ সংসদের ভিপি হওয়ার স্মৃতিচারণ করে শেখ হাসিনা বলেন, আজকে যেটা বদরুন্নেসা কলেজ, সেটা ইডেন ইন্টারমিডিয়েট গার্লস কলেজ ছিল। সে কলেজে আমি ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলাম এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিটির একজন সামান্য সদস্য ছিলাম।১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর প্রবাস থেকে বৈরী পরিবেশে দেশে ফিরে ছাত্রলীগ গোছানোয় নিজের তৎপরতার কথাও এই প্রজন্মের নেতা-কর্মীদের কাছে তুলে ধরেন তিনি।আমি দেশে ফিরে এই সংগঠনের নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনি। এই নিয়ম-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার মধ্যে বহু প্রতিকূলতা মোকাবেলা করতে হয়েছে। অনেক সময় ভাঙনের সম্মুখীন হতে হয়েছে। শেখ হাসিনা বিদেশে থাকা অবস্থায়ই ১৯৮১ সালে তাকে আওয়ামী লীগের সভানেত্রী নির্বাচিত করা হয়। ওই বছরের ১৭ মে শেখ হাসিনা দেশে ফেরেন।
এ সময় আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামণ্ডলীর সদস্য বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া সংগঠন ছাত্রলীগকে তাদের পুরোনো ঐতিহ্য ফিরিয়ে আনতে হবে।এ জন্য বঙ্গবন্ধুর আদর্শে ঐক্যবদ্ধভাবেদেশকে এগিয়ে নিতে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের আহ্বান জানান তোফায়েল আহমেদ।বাংলাদেশের প্রোপটে ছাত্ররাজনীতির প্রয়োজন আছে উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক- জনপ্রশাসনমন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, ছাত্রলীগ মুক্তিযুদ্ধের সময় যেমন ভূমিকা রেখেছে তেমনি আগামীর বাংলাদেশ গড়তেও সবচেয়ে বড় ভূমিকা পালন করবে।আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই দেশের চেঞ্জমেকার হবে।এ জন্য ছাত্রলীগকে তাদের আচরণে পরিবর্তন আনার আহবান জানান ওবায়দুল কাদের।
এছাড়াও সম্মেলনে ছাত্রলীগের বিদায়ী সভাপতি বদিউজ্জামান সোহাগ ও সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম ছাত্রলীগ নিয়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্নজন সমালোচনা করায় খেদ প্রকাশ করে বলেন, ছাত্রলীগ একটি ঐক্যবদ্ধ পরিবার।সম্মেলনে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সামনে নিজের খেদ প্রকাশ করেছেন ছাত্রলীগের বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক সিদ্দিকী নাজমুল আলম। সংগঠনের ২৮তম সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিজের প্রতিবেদন তুলে ধরে নাজমুল আবেগঘন কণ্ঠে বলেন, ছাত্রলীগ এতিমদের সংগঠন। ছাত্রলীগ পলিটিক্যালি এতিমদের সংগঠন। কেউ ছাত্রলীগের খোঁজ-খবর রাখে না। নেত্রী (শেখ হাসিনা) আপনি ছাড়া ছাত্রলীগের কেউ খোঁজ রাখেন না।এসময় মঞ্চে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, যিনি ছাত্রলীগ থেকে বদরুন্নেসা কলেজ ছাত্র সংসদের ভিপি ছিলেন।ছাত্রলীগের সম্মেলনকে কেন্দ্র করে সাবেক নেতাদের তৎপরতার কথা উল্লেখ করে নাজমুল বলেন, সম্মেলনকে কেন্দ্র করে অনেকের ব্যক্তিত্বের প্রতিযোগিতা শুরু হয়। এরপর দুধের মাছিরা আবার দুধে মিলিয়ে যায়।
ছাত্রলীগের ২৭তম সম্মেলনে সংগঠনটির সাবেক নেতা সৈয়দ আশরাফ বলেছিলেন, ছাত্রলীগ থেকে যেমন বীর নেতৃত্বের সৃষ্টি হয়েছে, তেমনি বিশ্বাসঘাতকেরও সৃষ্টি হয়েছে।আশরাফের ওই বক্তব্য উদ্ধৃত করে নাজমুল বলেন, আমি আশরাফ ভাইয়ের কথার প্রথমটা হতে চেয়েছি।এসময় মঞ্চে পাশাপাশি বসে থাকা আশরাফ তাকিয়ে ছিলেন নাজমুলের দিকে।কাউন্সিলকে কেন্দ্র করে অনুপ্রবেশকারীরাই গণমাধ্যমে নেতিবাচক খবর পরিবেশন করে বলে দাবি করেন বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরনো এই সংগঠনের এই নেতা।নাজমুল আরও বলেন, ছাত্রলীগ কখনও কখনও কলম সন্ত্রাসের শিকার হয়েছে।আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয় হল দখল, দরপত্র নিয়ে সন্ত্রাসের নানা ঘটনায় সমালোচনার মুখে পড়তে হয় ছাত্রলীগকে।নাজমুল বলেন, বিভিন্ন সময় অনুপ্রবেশকারীরা সংগঠনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। গত চার বছরে ৬০০ সদস্যকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে।চার বছরে দায়িত্ব পালনে সংগঠনের কোনো ব্যর্থতা থাকলে তার দায় নিজের বলে স্বীকার করে নেন নাজমুল।সভাপতি এইচ এম বদিউজ্জামান সোহাগের সভাপততিত্বে অনুষ্ঠানে সম্মেলনের প্রস্তুতি কমিটির আহ্বায়ক জয়দেব নন্দী এবং অভ্যর্থনা কমিটির আহ্বায়ক আবদুল কাদের মহিউদ্দিন মাহী বক্তব্য রাখেন। শোক প্রস্তাব উপস্থাপন করেন সংগঠনের দপ্তর সম্পাদক শেখ রাসেল। শোক প্রস্তাবের পর সবাই দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করেন।এর আগে শেখ হাসিনা বেলুন ও পায়রা উড়িয়ে সম্মেলন উদ্বোধন করেন।