দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২৪ জুলাই: ঈদুল ফিতর শেষ হলেও কাটেনি তার রেশ।ঈদের প্রভাব রাজধানীর কাঁচাবাজারে। ঈদ শেষে ইতোমধ্যে রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে কর্মব্যস্ত মানুষ। সরকারি আধাসরকারি অফিস খোলা হয়েছে সোমবার থেকেই। তবে এখনো রাজধানীর কাঁচাবাজারগুলো জমে উঠেনি।রাজধানীর বাজারগুলোতে প্রতিকেজি কাঁচামরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ থেকে ১৫০ টাকায়। এছাড়া প্রতিকেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ১০০ টাকায়। ঈদকে সামনে রেখে কাঁচাপণ্যসহ বেশিরভাগ মসলারই দর বেড়েছে।শুক্রবার রাজধানীর কয়েকটি বাজার ঘুরে এমনটিই জানা গেছে।
রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, খিলগাঁও,মালিবাগ, শান্তিনগরসহ কয়েকটি বাজারে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, ঈদকে সামনে রেখে কয়েকদিন ধরেই বাজারে কাঁচামরিচের দর বাড়ছে। একদিকে চাহিদা বেশি অন্যদিকে আমদানি কম থাকায় দর বাড়ছে।শুক্রবার খুচরা বাজারে মান ভেদে প্রতি কেজি শসা ৬০ থেকে ৭০ টাকায়, গাজর ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, ধনিয়া পাতা ৪০০ থেকে ৫০০ টাকায়, পেঁপে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়, করলা ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, ঢেঁড়স ৩৫ থেকে ৪০ টাকায়, কাকরোল ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়, ঝিঙ্গা ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, সাদা গোল আলু ২৫ টাকায়, লাল গোলআলু ৩০ টাকায়, ধোন্দল ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়, চিচিঙ্গা ৩৫ টাকা থেকে ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি লিটার সয়াবিল তেল (লুজ) ৮০ টাকা থেকে ৮৫ টাকা, পাঁচ লিটার বোতল ৪৫০ টাকা থেকে ৪৮৬ টাকায়, এক লিটার বোতল ৯৩ টাকা থেকে ১১০ টাকায়, পাম অয়েল (লুজ) প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে ৬৮ টাকায়, পাম অয়েল সুপার প্রতি লিটার ৬৫ টাকা থেকে ৭০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।এদিকে বাজারে সবচেয়ে ভালো মানের এরফানের পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা থেকে ৮০ টাকায়; যা কয়েকদিন আগে ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি খোলা পোলাও চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৫ থেকে ৭০ টাকায়। সেই সঙ্গে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়।
এদিকে ঈদকে সামনে রেখে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়েছে। খুচরা বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির (সাদা) দাম বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকা; যা আগে ১৬৫ টাকা থেকে ১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। ব্রয়লার লাল মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা থেকে ২১৫ টাকায়; যা আগে ১৮০ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।
বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির লাল ডিমের পাইকারী দাম ২৭ টাকা ৫০ পয়সা; যা খুচরা বাজারে ৩০ থেকে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি সাদা ডিমের দাম ২৭ থেকে সাড়ে ২৭ টাকা; যা খুচরা বাজারে ২৮ থেকে ৩০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। হাঁসের ডিমের দাম প্রতি হালি ৩৬ টাকা; যা পাইকারী বাজারে ৩২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
যাত্রাবাড়ী কাঁচাবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী মানিক মিয়া জানান, মানভেদে দেশি পেঁয়াজ প্রতিকেজি ৪০ টাকা থেকে ৪৫ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। বিদেশি পেঁয়াজ ৩৫ টাকা থেকে ৩৬ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া চায়না থেকে আমদানি করা রসুন প্রতিকেজি ১১৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায় এবং দেশি রসুন প্রতিকেজি ৭০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এদিকে শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে মানভেদে প্রতিকেজি দেশি আদা ক্রয় ১২৫ টাকা, বিক্রয় ১৪০ টাকায় এবং চায়না আদা ১৬০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া প্রতিকেজি রসুনের ক্রয় ৯৫ টাকা, বিক্রয় ১০৫ টাকা; দেশি মসুর ডাল ক্রয় ১০৮ টাকা, বিক্রয় ১১৫ টাকা; দেশি মুগ ডাল ক্রয় ১০৪ টাকা, বিক্রয় ১১২ টাকা; বুটের ডাল ক্রয় ৬৮ টাকা, বিক্রয় ৭৫ টাকা।
এ বাজারের দেশ জেনারেল স্টোরের সত্ত্বাধিকারী জামাল হোসেন বলেন, ঈদের সময় কিছু পণ্যের দর ওঠানামা করেছে। তবে খুব বাড়েনি, সামান্য বেড়েছে। দোকানের সামনে মূল্য তালিকা টানানো রয়েছে। ইচ্ছে করলেই যে কেউ মূল্য তালিকা দেখে পণ্য খরিদ করতে পারছেন।যাত্রাবাড়ী বাজারে ক্রেতা মনির হোসেনের সঙ্গে আলাপকালে তিনি জানান, ঈদের সময় কাঁচাবাজারে মরিচসহ অন্যান্য অতিপ্রয়োজনীয় মসলা বেশি দামে কিনতে হচ্ছে। প্রতিকেজি মরিচ বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকা এবং দুই দিন আগেও পোলাও মসলা আলু বোখরার প্রতি কেজি ছিল ৪০০ টাকা, এখন তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০০ টাকা। অথচ সরকারের তদারকির কোনো খবর নেই।
যাত্রাবাড়ী পাইকারী কাঁচাবাজার ব্যবসায়ী সমিতির নেতা নূরু হাজী বলেন, ঈদের সময় যানজটের কারণে কাঁচাপণ্য আমদানিতে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা তৈরি হয়। আর এ কারণে পণ্যের দর একটু ওঠানামা করছে। তবে কোনো পণ্যই খুব বেশি দর বাড়ছে না।মশলা: ঈদের কয়েকটি মসলার দর অতিরিক্ত বেড়েছে। এর মধ্যে পোলাওয়ের অনুষঙ্গ হিসেবে খ্যাত আলু বোখরার দও প্রতিকেজি ৮০০ টাকা। তিন দিন আগেও ছিল ৪০০ টাকা কেজি। এ নিয়ে মশলার দর ঈদের আগের দুই দফা বাড়ল।
খুচরা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, রমজান শুরুর আগে একবার পাইকারী বাজারে দর বাড়ার কারণে মশলার দর খুচরা বাজারে বেড়েছে। ঈদকে সামনে রেখে আবারও নিত্য প্রয়োজনীয় মসলার দর পাইকারী বাজারে বাড়ায় খুচরা বাজারে প্রভাব পড়েছে।কাওরানবাজারে মাছ বিক্রিতা আলী আজগর বলেন, মাছের যোগান কম, মাছ নাই বললেই চলে, ভারত থেকে কিছু কার্প জাতীয় মাছ আসছে বলেই বাজার মোটামুটি স্বাভাবিক। আমদানি কম হওয়ায় দাম একটু বেশিই পরছে।কাওরান বাজারে প্রতি কেজি রুই (বড়) সাড়ে ৩০০ থেকে ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
তবে রুই (ছোট) ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা কেজি দরেই বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া কাতলা (বড়) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকা। টেংরা প্রতি কেজি ৮০০ টাকা থেকে ১ হাজার টাকা, চিংড়ি (বড়) ৬৫০ টাকা থেকে ৮০০ টাকা, বাইলা মাছ (বড়) প্রতি কেজি ৪৫০ টাকা থেকে ৫০০ টাকা কেজিতে বিক্রি হচ্ছে।তবে বর্ষা মৌসুম হলেও জাতীয় মাছ ইলিশের দাম ধরা ছোঁয়ার বাইরেই। কাওরান বাজারে এক হালি (৪টা) ইলিশ প্রতিটি ৮০০ গ্রাম থেকে ১ কেজি ওজনের বিক্রি হচ্ছে ৩২০০ টাকা ৪০০০ টাকায়।