দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ২৩ জুলাই ২০১৫: রাজশাহীর মহানগরীর নওদাপাড়া বাস্ট্যান্ড দখল করে ফের শুরু হয়েছে মাসব্যাপী আনন্দ মেলার নামে জুয়া ও র্যাফেল ড্র-৷ এ উপলক্ষে ঈদের পরদিন থেকেই শুরু হয়েছে ফেরি করে টিকিট বিক্রির নামে সাধারণ মানুষের সঙ্গে প্রতারণা৷ প্রতিদিন সকাল থেকে শতাধিক লটারির মাইকে কান ঝালাপাল করে দিচ্ছে নগরবাসীর৷ আবার অটোরিকশায় করে বিক্রি করা সেই টিকিট কেনার পেছনে ছুটছে নগরীসহ জেলার বিভিন্ন-শ্রেণিপেশার মানুষ৷ এর তালিকায় পিছিয়ে নেই খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে যুবক সমাজও৷ লটারী বা র্যাফেল ড্র’র সঙ্গে চলা হাউজির মাধ্যমে জুয়া খেলায় বিপথগামী হয়ে ধ্বংসের পথে যাচ্ছে যুবসমাজ৷ তারা জড়িয়ে পড়ছেন নানা অপরাধ কর্মকান্ডে৷ পাশাপাশি প্রতারণার মাধ্যমে প্রতিদিন অনত্মত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে অর্থনৈতিকভাবে পঙ্গুত্ব করে দেওয়া হচ্ছে রাজশাহীকে৷ অথচ প্রশাসন যেন নির্বাক৷ ঈদের আগেও তারা এ জুয়ার আসর নিয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি৷ আবার ঈদের পরেও একই অবস্থা৷
অভিযোগ উঠেছে, খোদ পুলিশের মদদেই চলছে এই জুয়ার আসর৷ প্রতি রাতে পুলিশকেও এর জন্য মোটা অংকের টাকা গুনছেন মেলার আয়োজকরা৷ সে কারণেই দিনের পর দিন চলা জুয়ার আসরের কারণে সাধারণ মানুষ সর্বশানত্মহলেও পুলিশ এটি বন্ধের ব্যবস্থা না করে উল্টো তারাই পাহারা দিচ্ছে৷ এক রিকশাচালক জানান, যেদিন একটু বেশি আয় হয়, সেদিন আরও বেশি টিকিট কাটেন তিনি৷ শুধু বড় কিছু পাবার আশায়৷ যেন রাতারাতি লাখোপতি হতে পারেন৷ এটি করতে গিয়ে গত দুই দিনে প্রায় এক হাজার টাকার টিকিট কিনেছেন তিনি৷ অথচ এই দুই দিনে তার আয় হয়েছে সর্বোচ্চ ১২ শ টাকা৷ এর মধ্যে রিকশার জমা খরচ দিতে হয়েছে আরও ৩০০ টাকা৷ ফলে লটারির টিকিট ও রিকশার জমা খরচ বাবদই তার সব টাকা শেষ হয়ে গেছে৷
মুনসুরের ভাষায়, টিভিতে দেখানো হচ্চে অনেকেই হুন্ডা পাচ্ছে৷ টাকাও পাচ্ছে৷ হয়তো আমিও পেতে পারি৷ তাই টিকিট কাটছি৷ কিন্তু এই গরিবের কপালে কি আর আছে, যে পাবো৷’ তাহলে লটারির টিকিটের পেছনে ছুটছেন কেন, ‘এমন প্রশ্নের জবাবে তার ফের সাফ জবাব, ‘যদি পাই৷ তাই৷’ অনুসন্ধানে জানা গেছে, শুধু রিকশা চালক মনুসুরই নন, তার মতো রাজশাহী নগরীসহ জেলা এবং আশেপাশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার লাখ লাখ মানুষ ছুটছেন নগরীর নওদাপাড়া বাস্ট্যান্ড দখল করে চলা মাসব্যাপী আনন্দ মেলার নামে র্যাফেল ড্র-এর টিকিটের পেছনে৷ আর এসব খেটে খাওয়া মানুষ থেকে শুরু করে স্কুল-কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও ছুটছেন প্রলোভনের ওই লটারি ও হাউজির পেছনে৷ ফলে দুটি স্থানের লটারি কর্তৃপক্ষ প্রতিদিন অনত্মত কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে৷ আর লোক দেখানো ড্র-এর নামে কিছুসংখ্যক পুরস্কার দিয়ে প্রতারিত করছে লাখ লাখ মানুষকে৷ এভাবে গোটা রাজশাহী অঞ্চলকে অর্থনিতকভাবে পঙ্গুত করে দিচ্ছে এ মেলা৷
রাজশাহী কলেজের ছাত্র সোহেল রানা বলেন, ‘রাজশাহীর যুবসমাজকে ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে মেলায় র্যাফেল ড্র’সহ না প্রকার জুয়ার আসর৷ এভাবে চলতে দেওয়া যায় না৷ এর জন্য যুবকদেরই আন্দোলনে নামা উচিত৷’ এরই মধ্যে ঈদের আগে র্যাফেল ড্র-এর টিকিট কেনাকে কেন্দ্র করে নগরীর ছোট বনগ্রাম এলাকায় এক গৃহবধূ আত্মহত্যা করেন৷ ওই গৃহবধূর নাম কুমকুম বেগম৷ তিনি একই এলাকার রফিজ উদ্দিনের স্ত্রী৷ এইভাবে জুয়ার টাকা নিয়ে নগরীসহ গোটা জেলা আশেপাশের জেলাগুলোতেও দেখা দিয়েছে পারিবারিক কলোহ থেকে শুরু করে সামাজিক বিশৃঙ্খলা৷
প্রসঙ্গত, গত ২২ মে থেকে নগরীর নওদাপাড়া বাস্ট্যান্ড দখল করে মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নিজস্ব হাসপাতাল চালুর নামে মাসব্যাপী আনন্দ মেলা শুরু হয়৷ কিন্তু এখানে চলছে অশিস্নল নৃত্য হাউজি এবং লটারির নামে অবৈধ জুয়ার আসর৷ ওইদিন এ মেলার আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রাজশাহী মহানগর পুলিশ কমিশনার মো: শামসুদ্দিন৷ মাঝে রোজা শুরু হওয়ার পর এক মাস বন্ধ থাকলেও ঈদের পরের দিন থেকে ফের একই অবস্থা শুরু হয়েছে৷ এসব প্রসঙ্গে জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের উপকমিশনার তানভির হায়দার চৌধূরী বলেন, ‘পুলিশ পাহারা দিচ্ছে এটা ঠিক নয়৷ তবে জুয়া চলছে কি না জানি না৷ লটারি চলছে শ্রমিক হাসপাতাল চালু করার জন্য৷’