1437548398

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জুলাই ২০১৫: আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারপতিদের নিয়ে কটূক্তি করায় পুনরায় আদালত অবমাননার অভিযোগে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে আগামী ৫ আগস্টের মধ্যে ব্যাখ্যা প্রদানের নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল।বুধবার এক আবেদনের শুনানি শেষে চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এই আদেশ দেন।এর আগে ট্রাইব্যুনালে ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীর পক্ষে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য ২ সপ্তাহের সময় আবেদন করেন তার আইনজীবী আব্দুল বাসেত মজুমদার। পরে ট্রাইব্যুনাল আবেদনটি মঞ্জুর করে জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে ব্যাখ্যা প্রদানের জন্য আগামী ৫ আগস্ট পর্যন্ত দিন নির্ধারণ করেন।এসময় বাদি পক্ষে উপস্থিত ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ ও আবেদনকারী মনোরঞ্জন ঘোষাল।বিচারককে মানসিক অসুস্থ বলায় আদালত অবমাননার অভিযোগে কেন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না, তা জানাতে আরও দুই সপ্তাহ সময় পেয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক জাফরুল্লাহ চৌধুরী।তার পক্ষে মামলা লড়ার জন্য বুধবার ওকালতনামা দাখিল করে অ্যাডভোকেট বাসেদ মজুমদার শুনানির প্রস্তুতির জন্য সময়ের আবেদন করলে বিচারপতি ওবায়দুল হাসান নেতৃত্বাধীন ট্রাইব্যুনাল-২ তা মঞ্জুর করে। ব্রিটিশ নাগরিক ডেভিড বার্গম্যানের সাজায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ‘অবমাননাকর’ বিবৃতি দেওয়ায় গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত।শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

তবে জাফরুল্লাহর আবেদনে সুপ্রিম কোর্টের চেম্বার আদালত পরে জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয়। বিষয়টিএখন আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির অপেক্ষায় রয়েছে।ট্রাইব্যুনালের রায়ের দিন আদালত সাজা ঘোষণার পর জাফরুল্লাহ চৌধুরী রায়ের অনুলিপি হাতে না পাওয়া পর্যন্ত কাঠগড়ায় যাবেন না বলে দীর্ঘসময় অনড় থাকেন। পরে রায়ের কপি হাতে দেওয়া হলে স্বেচ্ছায় কাঠগড়ায় গিয়ে সাজাভোগ করেন এবং পরে আদালতের বাইরে এসে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হন। সে সময় তিনি বলেন, আজকের আদালত অবমাননার রায়টা তিনজন বিচারকের মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। তিনজন বিচারপতির মানসিক অসুস্থতার প্রমাণ। যেখানে বিচারপতিরা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, সেখানে ন্যায়বিচার হয় না।যখন তারা সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না, তখন যুক্তি থাকে না বলেই তারা আইনের আড়ালে আত্মগোপন করেন। এখানে এই মামলাটার বোঝার বিষয় আছে। আদালত অবমাননার মামলায় তিনটির একটি বিষয় প্রমাণ করতে হয়। স্ক্যান্ডালাইজিং দ্য কোর্ট, কোর্টের বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা, অবস্ট্রাকশন অব দ্য অ্যাডমিনিস্ট্রেশন অব দ্য জাস্টিস, বিচারের প্রক্রিয়াকে বাধাগ্রস্ত করা, আদালতের ডিগনিটি ক্ষুন্ন করা।

আদেশের সময় এজলাসকক্ষে অভিযুক্তদের দাঁড় করিয়ে রাখাটা ‘অভদ্রতা’ মন্তব্য করে জাফরুল্লাহ বলেন, যখন রায় পড়েন তখন সকল অভিযুক্ত ব্যক্তিদের দাঁড় করিয়ে রাখা অর্থহীন। এটা প্রাগৈতিহাসিক, মধ্যযুগীয় ঘটনা। কিন্তু তারা দাঁড় করিয়ে রেখেছেন। তারপর বলেছেন বয়স, কিন্তু বয়সের সম্মান আমি তাদের কাছে কামনা করি না।এরপর স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পী মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আজগর ও নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের সংগঠক কামাল পাশা চৌধুরী ও এফ এম শাহীন গত ৬ জুলাই আদালত অবমাননার এই অভিযোগ দায়ের করেন।অভিযোগের বিষয়ে গত ১২ জুলাই প্রাথমিক শুনানি করে ট্রাইব্যুনাল জাফরুল্লাহকে ২২ জুলাই আদালতে হাজির হয়ে নিজের আচরণের ব্যাখ্যা দিতে বলে।এর আগে টকশো’তে মন্তব্যের কারণে আরও একবার অবমাননার অভিযোগে জাফরুল্লাহকে ট্রাইব্যুনালে জবাব দিতে হয়েছিল।এর আগে গত ৬ জুলাই ডা. জাফরুল্লার বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগ এনে আবেদনটি জানান স্বাধীন বাংলা বেতারকেন্দ্রের শিল্পী মুক্তিযোদ্ধা মনোরঞ্জন ঘোষাল, মুক্তিযোদ্ধা আলী আসগর, মুক্তিযোদ্ধা শেখ নজরুল ইসলাম এবং গণজাগরণ মঞ্চের একাংশের আহবায়ক কামাল পাশা চৌধুরী ও কর্মী এফ এম শাহীন।এরপর গত ৭ জুলাই এ আবেদনের শুনানি করেন আইনজীবী ব্যারিস্টার খান মোহাম্মদ শামিম আজিজ ও আবেদনকারী মনোরঞ্জন ঘোষাল।শুনানি শেষে ট্রাইব্যুনাল বুধবার জাফরুল্লাহাকে ব্যাখ্যা প্রদানের দিন নির্ধারণ করেছিলেন। কিন্তু আবেদনের প্রেক্ষিতে সে সময় আরো বৃদ্ধি করা হয়েছে।উল্লেখ্য,গত ১০ জুন জাফরুল্লাহ চৌধুরীকে সাজা দেয় আদালত। শাস্তি হিসাবে তাকে এক ঘণ্টা আসামির কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। সেইসঙ্গে পাঁচ হাজার টাকা জরিমানা, অনাদায়ে একমাসের কারাদণ্ড দেয়া হয়। পরে জাফরুল্লাহর এক আবেদনে সুপ্রিমকোর্টের চেম্বার আদালত ওই জরিমানার আদেশের কার্যকারিতা স্থগিত করেন।