তামিম-মাহমুদুল্লাহ_34693

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২২ জুলাই ২০১৫: জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের উইকেট বুধবার ব্যাটসম্যানদের পক্ষে যে কথা বলেছে, সেটা জোর গলায় বলা যাবে না। কিন্তু তৃতীয় উইকেট তামিম ইকবাল আর মাহমুদউল্লাহ সব প্রতিকূলতাকে পেছনে ফেলে যে দারুণ একটা জুটি গড়েছিলেন, বাংলাদেশের ইনিংসে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা বলতে এটিই। এই দুজনের ৮৯ রানের জুটিই দক্ষিণ আফ্রিকার সংগ্রহকে ছুঁয়ে ফেলার পথে অনেক দূর হাঁটিয়েছে বাংলাদেশকে। কিন্তু পঞ্চাশের ইনিংসকে বড় করতে পারার ব্যাপারে তামিম-মাহমুদউল্লাহর ব্যর্থতা আর শেষ বিকেলে বৃষ্টর উৎপাত এখনো প্রতিপক্ষের চেয়ে ৬৯ রানে পিছিয়ে রাখছে বাংলাদেশকে।বৃষ্টি-বিঘিœত দ্বিতীয় দিন শেষে মুশফিক-বাহিনীর সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৭৯। মাহমুদউল্লাহ ও তামিম ইকবালের অর্ধশতকে চট্টগ্রাম টেস্টে ভালো অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। ডেল স্টেইন, ভার্নন ফিল্যান্ডার ও মর্নে মরকেলকে ভালোভাবে সামলালেও অনিয়মিত দুই বোলারকে উইকেট না দিলে দ্বিতীয় দিন স্বাগতিকরা আরও দৃঢ় অবস্থানে থাকতে পারত। বৃষ্টি বিঘিœত দ্বিতীয় দিনের খেলা শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৪ উইকেটে ১৭৯ রান। এখনও ৬৯ রানে পিছিয়ে রয়েছে স্বাগতিকরা। উইকেটে আছেন অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম ও আইসিসি টেস্ট র‌্যাংঙ্কিংয়ের শীর্ষ অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান।চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে বিনা উইকেটে ৭ রান নিয়ে দিনের খেলা শুরু করে বাংলাদেশ। প্রথম ঘণ্টায় স্টেইন-ফিল্যান্ডার-মরকেলকে দেখেশুনে খেলে দলকে এগিয়ে নিতে থাকেন তামিম ও ইমরুল কায়েস। এই সময়ে ১৫ ওভারে ৩৪ রান যোগ করেন তারা।দ্বিতীয় ঘণ্টার শুরুতেই উইকেট হারায় বাংলাদেশ। অনিয়মিত বোলার স্টিয়ান ফন জিল ভাঙেন ৪৬ রানের সাবধানী উদ্বোধনী জুটি।

মিডিয়াম পেসার ফন জিলের লেগ স্টাম্পের বাইরে বল খেলতে গিয়ে ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি ইমরুল। ভারসাম্য হারিয়ে একটু এগিয়ে যান তিনি। দ্রুত ফেরার চেষ্টা করেছিলেন ক্ষণিকের জন্য মনোযোগ হারানো এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। কিন্তু তার আগেই কুইন্টন ডি কক স্টাম্প ভেঙে দিলে থামে ১৮.২ ওভার স্থায়ী জুটি। টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে ধারাবাহিক ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক দ্রুত বিদায় নেন বাজে শট খেলে। অফ স্পিনার সাইমন হারমারের সোজা একটি বল কাট করতে গিয়ে ব্যাটেই লাগাতে না পেরে বোল্ড হয়ে যান এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ৫৫ রানে দুই ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশকে টেনে তোলার কৃতিত্ব তামিম-মাহমুদউল্লাহর।দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আগের চার টেস্টে ভালো করতে পারেননি তামিম। অতিথিদের বিপক্ষে প্রথমবারের মতো টেস্ট খেলা মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে গড়েন ৮৯ রানের জুটি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টেস্টে এটি বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের জুটি।ছোট ছোট স্পেলে বারবার ফিরেও তামিম-মাহমুদউল্লাহকে বিচ্ছিন্ন করতে পারেননি আইসিসি টেস্ট র‌্যাংঙ্কিংয়ে শীর্ষ দশে থাকা তিন পেসার স্টেইন-ফিল্যান্ডার-মরকেল। উইকেট থেকে বেশ টার্ন পাওয়া হারমারকেও সহজেই খেলছিলেন স্বাগতিকদের দুই ব্যাটসম্যান।বিপজ্জনক হয়ে উঠা তৃতীয় উইকেট জুটি ভাঙেন আরেক অনিয়মিত বোলার ডিন এলগার। অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর বাঁহাতি স্পিনার এলগারের বল সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান তামিম। তার বিদায়ে ভাঙে ৩১.৪ ওভার স্থায়ী জুটি।

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম অর্ধশতক পাওয়া তামিম ফিরেন ৫৪ রান করে। প্রায় চার ঘণ্টা স্থায়ী ১২৯ বলের ধৈর্যশীল ইনিংসটি এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সাজান মাত্র তিনটি চারে।দুই রান থেকে দুই অঙ্কে পৌঁছাতে স্টেইনের বলে পরপর দুটি চার হাঁকান তামিম। অর্ধশতকে পৌঁছানোর পর হারমারের বলে তৃতীয়বার সীমানার বাইরে বল পাঠান এই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান।প্রথম সেশনের মতো দ্বিতীয় সেশনেও ৭৩ রান যোগ করে বাংলাদেশ। মধ্যাহ্ন-বিরতির আগে ইমরুল-মুমিনুলকে হারানো বাংলাদেশ চা-বিরতির আগে হারায় কেবল আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান তামিমের উইকেট।তামিমের বিদায়ের পর বেশিক্ষণ টেকেননি চোট কাটিয়ে ফেরা মাহমুদউল্লাহ। ফিল্যান্ডারের বলে এলবিডিব্লিউর ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন এই ডানহাতি ব্যাটসম্যান। ১৩৮ বলে খেলা তার ৬৭ রানের ইনিংসটি ১০টি চারে গড়া।মাহমুদউল্লাহর বিদায়ের চার বল পর বৃষ্টি নামলে খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ৫৩ মিনিট পর খেলা শুরু হলে অসমাপ্ত ওভারের শেষ বলটিই কেবল করতে পারেন ফিল্যান্ডার। এরপর আবার বৃষ্টি শুরু হলে সেখানেই দিনের খেলার সমাপ্তি হয়। বৃষ্টির কারণে এই দিন ২৫ ওভার কম খেলা হয়।বুধবার সকাল থেকেই আকাশ মেঘে ঢাকা ছিল। কিছু সময় রোদের দেখা মিললেও দ্বিতীয় সেশনের শেষ সময় থেকে জ্বলে উঠে ফ্লাডলাইট।এর আগে মুস্তাফিজুর রহমান ও জুবায়ের হোসেনের নৈপুণ্যে প্রথম ইনিংসে দক্ষিণ আফ্রিকাকে ২৪৮ রানে বেধে রাখে বাংলাদেশ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:দক্ষিণ আফ্রিকা: ৮৩.৪ ওভারে ২৪৮ (এলগার ৪৭, ফন জিল ৩৪, দু প্লেসি ৪৮, আমলা ১৩, বাভুমা ৫৪, দুমিনি ০, ডি কক ০, ফিল্যান্ডার ২৪,হারমার ৯, স্টেইন ২, মরকেল ৩*; মুস্তাফিজ ৪/৩৭, জুবায়ের ৩/৫৩,মাহমুদউল্লাহ ১/৯, সাকিব ১/৪৫, তাইজুল ১/৫৭)

বাংলাদেশ: ৬৭ ওভারে ১৭৯/৪ (তামিম ৫৭, ইমরুল ২৬, মুমিনুল ৬, মাহমুদউল্লাহ ৬৭, মুশফিকুর ১৬*, সাকিব ১*; এলগার ১/৬, ফন জিল ১/১৩, ফিল্যান্ডার ১/২২, হারমার ১/৫৯) ।