দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ২০ জুলাই, ২০১৫ : রাজধানীর মধ্যবাড্ডায় আগুন লেগে একটি মেসবাড়ি,একটি ভবনে থাকা কয়েকটি দোকান এবং ঝিলের ওপর বাঁশ পুঁতে গড়ে তোলা শতাধিক টংঘর ভস্মীভূত হয়েছে। রাজধানীর বাড্ডায় বস্তিতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় অনেকেই তাদের স্বজনদের খুঁজে পাচ্ছেন না। সেখানে তাদের আহাজারিতে এলাকার পরিবেশ ভারী হয়ে উঠেছে। সোমবার ১২টা ৫০ মিনিটে রাজধানীর মধ্যবাড্ডার লায়ন চক্ষু হাসপাতালের উল্টো পাশের বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে।আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৬টি ইউনিট কাজ করে।তবে আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু জানা যায়নি।বস্তিবাসীদের কেউ কেউ জানিয়েছেন, বস্তির সামনে থাকা ফুচকার দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত হয়েছে। ঘটনার সময় ওই দোকানে ফুচকা তৈরি করা হচ্ছিল। রাজধানীর মধ্য বাড্ডায় লাগা আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে ফায়ার সার্ভিস। ফায়ার সার্ভিসের ঢাকা বিভাগের উপপরিচালক নুরুল হক জানান- ১৬টি ইউনিট চেষ্টা চালিয়ে দুপুর পৌনে ১টায় লাগা আগুন দুপুর ২টা ২০ মিনিটে নিয়ন্ত্রণে আনে। এতে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া না গেলেও দুটি শিশু নিখোঁজ আছে।
আগুনে টিনসেড ছয়টি দোতলা ঘর, ছয় থেকে সাতটি মুদির দোকান, হোটেল, সেলুনসহ মোবাইল ফোনের একটি দোকানও পুড়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত ঘর ও দোকানগুলোর মালিক স্থানীয় ২১ নম্বর ওয়ার্ড কমিশনার ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ওসমান গনি।এ ঘটনায় হতাহতের কোনো খবর পাওয়া না গেলেও দুটি শিশু নিখোঁজ আছে বলে জানান উপপরিচালক নুরুল হক।একটি মেসবাড়িতে আগুন লাগার পর তা ছড়িয়ে পড়ে বলে জানায় স্থানীয়রা। আবার কেউ কেউ বলছেন একটি দোকান থেকে আগুনের সূত্রপাত। তবে ফায়ার সার্ভিস আগুনের সূত্রপাত সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেনি।ফায়ার ব্রিগেড কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষের পরিদর্শক মোহাম্মদ আলী জানান, সোমবার বেলা ১২টা ৫৫মিনিটে ব্যাংক এশিয়া ও সিডিসিএল সিএনজি স্টেশনের পাশের গলিতে ওই টিনশেড বাড়িতে আগুনের সূত্রপাত হয়। খবর পেয়ে ফায়ার ব্রিগেডের ১৬টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। প্রায় দেড় ঘণ্টা পর বেলা সোয়া ২টায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।আগুনের শিখা অনেক উঁচু পর্যন্ত উঠে যাওয়ায় চারপাশের আবাসিক ভবনগুলোতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। এক পর্যায়ে গ্রগতি সরণীর এক পাশে যান চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয়।এই পরিস্থিতিতে পাশের ভেনাস কমপ্লেক্স নামের একটি বহুতল ভবন থেকে বাসিন্দাদের নামিয়ে আনা হয়। আশেপাশের এলাকা থেকে বহু মানুষ জড়ো হওয়ায় তাদের সামলাতে হিমশিম খেতে হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের।বারিধারা ফায়ার স্টেশনের কর্মী আমানত হোসেন বলেন, ওই মেসবাড়িতে আগুন লাগার পর তা পেছনের বস্তিতে ছড়িয়ে পড়ে।এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়েছেন কি না, সে বিষয়ে ফায়ার ব্রিগেড কর্মীরা কোনো তথ্য দিতে না পারলেও গিয়াসউদ্দিন রানা নামের এক মাইক্রোবাস চালক তার দুই মেয়ে ও স্ত্রীর কোনো খোঁজ না পাওয়ার কথা জানিয়েছেন।
হেলেনা বেগম নামের এক নারী জানান, তার মেয়ে শিল্পী ২ বছরের ছেলে আদিব ও ২ মাসের ছেলে আতিককে নিয়ে ওই বাড়িতে থাকেন। আর তিনি নিজে থাকেন বাছে আরেকটি বস্তিতে। ফোনে মেয়ের কাছ থেকে আগুন লাগার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হলেও আগুনের কারণে ভেতরে ঢুকতে না পেরে কান্নাকাটি করতে দেখাস যায় হেলেনা বেগমকে। পাশের খান মার্কেটের ব্যবসায়ী মনিরুল ইসলাম জানান, তার একজন কর্মচারী ওই বোর্র্ডিংয়ে থাকতেন। আগুন লাগার সঙ্গেসঙ্গে তিনি বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন।ফায়ার ব্রিগেডের উপ পরিচালক নুরুল হক বলেন, জনতার ভীড় আর কাছে কোনো ওয়াটার সোর্স না থাকায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে সময় লেগেছে। না হলে আরও আগে নেভানো সম্ভব হত।কয়েক বিঘার বর্গাকৃতি জমির ওপর গড়ে তোলা ভাই ভাই বোর্ডিংয়ের মালিক স্থানীয় কাউন্সিলর ওসমান গণি। তবে অগ্নিকাণ্ডের পর তার সঙ্গে কথা বলা সম্ভব হয়নি।এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় রামপুরা ব্রিজ থেকে বাড্ডা লিংক রোড পর্যন্ত পশ্চিমাংশে গাড়ি চলাচল বন্ধ রাখা হয়। আগুনের ভয়াবহতার মধ্যে অনেকেই তাদের স্বজনদের খুঁজে পাচ্ছেন না। এমনই একজন হচ্ছেন, হেলেনা বেগম। তিনি মধ্য বাড্ডার মোল্লাপাড়া এলাকায় থাকেন। ঘটনার পর থেকে তিনি তার মেয়ে শিল্পী ও দুই নাতিকে খুঁজে পাচ্ছেন না।তিনি বলেন, বস্তিতে আগুন লাগার পর তার মেয়ে শিল্পী ফোন করে বলেন, মা, আমাদের বস্তিতে আগুন ধরেছে। আমাদের বাঁচাও। আগুনের অনেক তাপ।
এরপর থেকে তাদের আর কোনো খোঁজ পাচ্ছেন না হেলেনা বেগম। এখন তিনি শুধুই আহাজারি করছেন। তার বিলাপে উপস্থিত সবাই হতবিহ্বল হয়ে যাচ্ছেন।শিল্পীর স্বামী ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের একজন পরিচ্ছন্ন কর্মী। খবর পেয়ে তিনি হন্তদন্ত হয়ে বস্তিতে ছুটে এসেছেন। পাগলের মতো তার স্ত্রী শিল্পী ও দুই সন্তান আতিক (০২ বছর) ও আবিরকে (০২ মাস) খুঁজে ফিরছেন।এ ছাড়া মা সায়রা বেগম (৫০) এবং দুই সন্তান শামীম (০৬ বছর) ও রূপাকে (০১ বছর) খুঁজে বেড়াচ্ছেন রীমা। তিনি রামপুরা ব্রিজের ওখানে পান-সিগারেট বিক্রি করেন। ঘটনার সময় তিনি বস্তির ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। আগুনের তাপে বস্তি থেকে দৌড়ে বের হয়ে এলেও তার মা সায়রা বেগম ও দুই সন্তানের খবর জানেন না।তিনি জানান, তিনি ঘটনার সময় ঘুমিয়েছিলেন। আগুনের তাপে ঘর থেকে বাইরে চলে এলেও অন্যদের খবর জানেন না।পাগলপ্রায় রীমা এখন শুধু এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করে বেড়াচ্ছেন। এখন পর্যন্ত কারোরই খবর জানেন না তিনি।এদিকে, অগ্নিকাণ্ডের পর প্রগতি সরণীর একপাশের রাস্তায় যানচলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। উৎসুক জনতাকে সামাল দেয়ার জন্য ঘটনাস্থলে পুলিশ ও র্যাব মোতায়েন করা হয়। মানুষকে সরিয়ে দেয়ার জন্য পুলিশ লাঠিচার্জও করতেও দেখা গেছে।
এছাড়া রাজধানীর মধ্যবাড্ডার লায়ন চক্ষু হাসপাতালের উল্টো পাশের বস্তিতে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় সংসদ সদস্য রহমত উল্লাহ। সোমবার বিকেলের দিকে অগ্নিকাণ্ডের স্থল পরিদর্শনে এসে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।সংসদ সদস্য বলেন, এটি নিতান্তই একটি দুর্ঘটনা। কেন-কী জন্য হঠাৎ এতো বড় একটি দুর্ঘটনা ঘটলো তা বলা যাচ্ছে না। তবে খতিয়ে দেখা হচ্ছে।রহমত উল্লাহ বলেন, আগুনে ক্ষতিগ্রস্তদের ব্যাংক ঋণের ব্যবস্থা করা হবে। প্রয়োজনে রাস্তা বড় করা হবে।ঘটনাস্থলে এসে বাংলাদেশ ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ আলী বলেন,যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেখানে রাস্তা অনেক ছোট। সে কারণে আমাদের যেতে দেরি হয়েছে। এখনও আমরা কাজ করছি, ক্ষয়ক্ষতির বিষয়ে খুঁজে বের করা হবে ।