DoinikBarta-Eid Greetings2015

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৭ জুলাই ২০১৫ : সিয়াম-সাধনার মধ্যে দিয়ে এক মাস রোজা পালনের পর শনিবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতরের আনন্দে মাতবে সবাই। সন্ধ্যায় জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির পক্ষ থেকে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার কথা জানানোতেই এ আনন্দ; যদিও সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে শুক্রবার পবিত্র ঈদ-উল-ফিতর উদযাপিত হওয়ার পর অনেকটাই নিশ্চিত ছিল যে, বাংলাদেশসহ এ অঞ্চলে শনিবারই উদযাপিত হবে ঈদ। শুক্রবার বিকেল থেকে অগণিত দৃষ্টি আকাশে খুঁজেছে এক ফালি বাঁকা চাঁদ। অবশেষে কাঙ্ক্ষিত সেই চাঁদের দেখা মিলেছে। দেশবাসী মেতেছেন ঈদের আনন্দে। সরকারি ঘোষণার পাশাপাশি টিভি- বেতারে বাজতে শুরু করেছে জাতীয় কবি কাজী নজরুলের কালজয়ী সেই গানের সুর ‘ও মন রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ…’। পাড়া-মহল্লার মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ‘ঈদ মোবারক’ ধ্বনি।ঈদের দিনটি ধনী-গরিব, আশরাফ-আতরাফ-নির্বিশেষে সবাইকে এক কাতারে দাঁড় করায়। এদিক থেকে ঈদ কেবল আনন্দের বার্তাই নিয়ে আসে না, উদ্ভাসিত হয় ইসলামের সাম্যের এক বড় পরিচয়।

চাঁদ দেখার পর ঘরে ঘরে উপাদেয় খাবারের আয়োজনে তোড়জোড় শুরু হয়েছে।সেমাইয়ের ঈদ’ নামে প্রচলিত এই ঈদে নানা রকম সেমাইয়ের সঙ্গে থাকছে ফিরনি, পিঠা, পায়েস, পোলাও-কোরমাসহ সুস্বাদু খাবারের আয়োজন। বিশেষ আয়োজন থেকে বাদ যাবেন না রোগী, বন্দী বা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত কর্মীরাও।হাসপাতাল, এতিমখানা ও বন্দীদের জন্য কারাগারগুলোতে উন্নতমানের খাবারের ব্যবস্থা থাকবে। সরকারি শিশু সদন, ছোটমণি নিবাস, সামাজিক প্রতিবন্ধী কেন্দ্র, আশ্রয়কেন্দ্র, বৃদ্ধাশ্রম, ভবঘুরে কল্যাণকেন্দ্র ও দুস্থ কল্যাণকেন্দ্রেও থাকবে বিশেষ খাবার ও বিনোদনের ব্যবস্থা।

ঈদ উপলক্ষে দৈনিক পত্রিকাগুলো ইতিমধ্যে প্রকাশ করেছে বিশেষ ক্রোড়পত্র।এই আনন্দ বাড়িয়ে দিতে আছে বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল ও এফএম রেডিওর ঈদের বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।পবিত্র ঈদুল ফিতর উপলক্ষে পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, ডধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ। এসব বাণীতে তাঁরা শুভেচ্ছা জানানোর পাশাপাশি দেশবাসীর মঙ্গল কামনা করেছেন।পবিত্র শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে। বছর ঘুরে আবার এসেছে খুশির ঈদ। এক মাস সিয়াম সাধনার পর শনিবার এই খুশির ঈদ উদযাপনের জন্য প্রস্তুত বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মুসলমনরা। বাংলাদেশের প্রতিটি মুসলমানের হৃদয়ে অনুরণিত হচ্ছে জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সেই কালজয়ী গান ‘রমজানের ঐ রোজার শেষে এল খুশির ঈদ।মাহে রমজান শেষে ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণের জন্য সন্ধ্যায় বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ বৈঠক থেকেই শনিবার ঈদের কথা জানানো হয়।এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান। সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার মন্ত্রী আনুষ্ঠানিকভাবে শনিবার ঈদ উদযাপিত হওয়ার ঘোষণা দেন। এরপর সকলের মঙ্গল কামনায় দোয়া পড়া হয়।পরিবার-পরিজন নিয়ে ঈদ উদযাপনের মধ্যে ইতোমধ্যে মানুষ ফিরে গেছেন নিজ নিজ গ্রামের বাড়িতে। এখনো অনেকে আছেন পথে। কেউ কেউ আবার এখনো রওনা দিতে পারেননি।শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা যাওয়ার পরপরই মুসলিম পরিবারগুলোতে লেগে যায় খুশির ধুম। ঘরে ঘরে বেজে ওঠে, রমজানের ওই রোজার শেষে এল খুশির ঈদ। নানা রকমের সেমাই, পোলাও থেকে শুরু করে সামর্থ অনুযায়ী হরেক রকমের খাবার রান্নার আয়োজনও শুরু হয় ঘরে ঘরে। ঈদের শেষ প্রস্তুতির কেনাকাটাতেও বেরিয়ে যান অনেকে।শনিবার সকালে ঘুম থেকে উঠে মুসল্লিরা গোসল করে, মিষ্টি মুখ করে আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে বেরিয়ে যাবেন জামাতের সঙ্গে ঈদের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ পড়তে। নামাজ শেষে একে অপরের সঙ্গে কোলাকুলি করবেন তারা। ছোটরা বড়দের পা ছুঁয়ে সালাম করবেন। বড়রা ছোটদের দেবেন সেলামি।ঈদের নামাজ পড়ে অনেকে কবরস্থানে যান মৃত স্বজনের কবর জিয়ারত করতে। সেখান থেকে ফিরে এসে আত্মীয়-স্বজনের বাড়ি বাড়ি ঘুরে মিষ্টি মুখ করে শুভেচ্ছা বিনিময় করেন তারা। শিশু থেকে শুরু করে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণীরা নতুন জামা-কাপড় পড়ে বেরিয়ে যায় ঈদানন্দে মাততে। রঙ- বেরঙের পোশাকে পাড়া-মহল্লার রাস্তাগুলো হয়ে ওঠে সজীব, উচ্ছ্বল।শনিবার বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকায় এভাবেই খুশির ঈদ উদযাপিত হলেও কিছু এলাকায় ব্যতিক্রমও রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে মিল রেখে চাঁদপুরসহ দেশের কয়েকটি জেলার শতাধিক গ্রামে আজই উদযাপিত হয়েছে ঈদ-উল-ফিতর। দেশের আকাশে শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখা গেছে।

শুক্রবার (সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত জানানো হয়।এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় ইসলামিক ফাউন্ডেশন বায়তুল মোকাররম সভাকক্ষে হিজরি ১৪৩৬ সনের পবিত্র ঈদুল ফিতরের তারিখ নির্ধারণ ও শাওয়াল মাসের চাঁদ দেখার সংবাদ পর্যালোচনার জন্য বৈঠকে বসে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটি। বৈঠক শেষে ধর্মমন্ত্রী মতিউর রহমান চাঁদ দেখা যাওয়ার বিষয়টি ঘোষণা করেন।এতে সভাপতিত্ব করেন ধর্মমন্ত্রী ও জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভাপতি অধ্যক্ষ মতিউর রহমান।এছাড়াও ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক শামীম মোহাম্মদ আফজাল,বায়তুল মোকাররম মসজিদের সিনিয়র পেশ ইমাম মিজানুর রহমানসহ ধর্ম মন্ত্রণালয়, তথ্য মন্ত্রণালয়, আবহাওয়া অধিদফতর এবং মহাকাশ গবেষণা এবং দূর অনুধাবন কেন্দ্রের (স্পার্সো) কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।ঈদের চাঁদ উঠেছে এমন খবর শোনার পর পরই ঘরে-ঘরে জনে-জনে শুরু হয়েছে ঈদের আনন্দ। শনিবার সকালে ঈদুল ফিতরের নামাজের পরই কোলাকুলিতে ঘোষিত হবে সৌহার্দ্য আর ভ্রাতৃত্বের মহিমা।শুক্রবার বিকেল থেকেই এক ফালি বাঁকা চাঁদের আশায় পশ্চিমাকাশে বারবার তাকিয়েছিল মুসলিম সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় এই আনন্দ-উৎসব সামাজিক সম্প্রীতি আর সাম্যচেতনায় ভাস্বর। ধনী-গরিবনির্বিশেষে সবাই ঈদের আনন্দে শামিল হবে- এটাই এই উৎসবের মূল মর্মবাণী। মাসজুড়ে রোজা পালনের মাধ্যমে সংযম আর ত্যাগের শিক্ষা অর্জন এই আনন্দের জন্য প্রস্তুত করেছে প্রতিটি মুসলমানকে।ধনী-গরিব সবাই সাধ্যমতো চেষ্টা করছে স্বজন-পরিজন নিয়ে দিনটি উদযাপনের। ঈদের কেনাকাটা সেরে তাই সবাই ছুটেছে মাটি ও নাড়ির টানে শহর ছেড়ে গ্রামে। স্বজন-পরিজন, বন্ধু-বান্ধবের সঙ্গে মিলনের বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস দেখা গেছে পথে পথে।এখন ঘরে ঘরে চলছে পিঠা-পায়েস বানানোর তোড়জোড়। শিশু-তরুণ-বৃদ্ধ সবাই প্রস্তুতি নিচ্ছে ঈদগায়ে গিয়ে নামাজ আদায়ের। কিশোরী-তরুণীরা বসছে মেহেদিতে হাত রাঙাতে।

পবিত্র ঈদুল ফিতরের জামাতের জন্য প্রস্তুত রাজধানীসহ দেশের ঈদগাহগুলো। বরাবরের মতো দেশের বৃহত্তম ঈদের জামাতের জন্য প্রস্তুত কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া ঈদগাহ ময়দান। রাজধানীতে তিন শতাধিকেরও বেশি স্থানে ঈদ জামাতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর সিটি করপোরেশন।রাজধানীতে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হবে জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে।এ ছাড়া বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মাঠ ও মসজিদে ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে।প্রধানমন্ত্রী: কোনো আড়ম্বর ছাড়াই সাদামাটাভাবে ঈদ উদযাপন করবেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদের দিন সরকারি বাসভবন গণভবনে থাকবেন তিনি। সকাল সাড়ে নয়টায় গণভবনে সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।পরে বেলা সাড়ে ১১টায় বিচারপতি ও কূটনীতিকদের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন তিনি। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় ও আওয়ামী লীগ সূত্রে জানা যায়, এবারের ঈদে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়, ছেলের বউ ক্রিস্টিন ওয়াজেদ এবং নাতনি সোফিয়া ওয়াজেদ তার কাছে না থাকলেও মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল,জামাই এবং মেয়ের ঘরের নাতি-নাতনিরা তার কাছে থাকবেন।খালেদা জিয়া: বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া ঈদের দিন বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন। বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সোয়া ১২টা পর্যন্ত কূটনীতিকদের সঙ্গে তার শুভেচ্ছা বিনিময়ের কথা রয়েছে। এরপর দুপুর সোয়া ১২টা থেকে পৌনে ১টা পর্যন্ত বিশিষ্ট নাগরিক, দলীয় নেতাকর্মী ও সর্বস্তরের মানুষের সঙ্গে শুভেচ্ছা বিনিয়ম করবেন তিনি।বিগত বছরগুলোতে রাজধানীর লেডিস ক্লাবে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করলেও এবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন খালেদা জিয়া। বিএনপির প্রেস উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবীর খান জানান, ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় শেষে শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের কবর জিয়ারত ও ফাতেহা পাঠ করবেন খালেদা জিয়া।এরপর বনানী কবর স্থানে যাবেন ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর কবর জিয়ারত করার জন্য। ছেলে হারানোর পর এইটিই প্রথম ঈদ খালেদা জিয়ার।এরশাদ: জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ গুলশান আজাদ মসজিদে ঈদের নামাজ আদায় করবেন।নামাজ শেষে সকাল সাড়ে ১০টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত বনানী কার্যালয়ে পার্টি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মী, অন্যান্য রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, বন্ধু-বান্ধব, শুভানুধ্যায়ীদের সঙ্গে ঈদ শুভেচ্ছা বিনিময় করবেন।