দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৬ জুলাই ২০১৫: কারামুক্তির পর হাসপাতালে চিকিত্সা নিয়ে বাসায় ফিরেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতাল ছেড়ে উত্তরার বাসায় গেছেন বিএনপির এ নেতা৷ঈদের পর চিকিত্সার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে ফখরুলের৷এরইমধ্যে তিনি ও তার স্ত্রী রাহাত আরা বেগম সিঙ্গাপুর ও যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসে ভিসার আবেদন করেছেন৷নাশকতার ৭ মামলায় ছয় মাসের বেশি সময় কারাগারে থাকার পর সর্বোচ্চ আদালত থেকে জামিন পান ফখরুল৷এরপর মঙ্গলবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে তাকে মুক্তি দেয়া হয়৷ কারাবাসের সময় সেখানেই চিকিত্সা নেন তিনি৷ রাজধানীর গুলশানে ইউনাইটেড হাসপাতাল ছেড়ে উত্তরার বাসায় গেছেন বিএনপির এ নেতা৷ঈদের পর চিকিত্সার জন্য বিদেশে যাওয়ার কথা রয়েছে ফখরুলের৷মুক্তি পাওয়ার পর তাকে গুলশানের ইউনাইটেড হাসপাতালে চিকিত্সা নেন মির্জা ফখরুল ইসলাম ৷মির্জা ফখরুল জানান, ঈদের পরপরই তিনি যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার চেষ্টা করছেন৷ ওই দেশের ওহাইও অঙ্গরাজ্যের একটি বিশেষায়িত হাসপাতালে তাঁর গলার রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতার চিকিত্সার জন্য পরিবারের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়া সম্ভব না হলে তিনি সিঙ্গাপুরে চিকিত্সা নেবেন৷মির্জা ফখরুলের চিকিত্সক ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, ফখরুলের হৃদ্যন্ত্রে চারটি ব্লক ধরা পড়ে, এর তিনটিতে রিং বসানো হয়েছে৷ নতুন করে তাঁর গলার রক্তনালিতে প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়েছে৷ গত ছয় মাসে কারাগারে তাঁর ওজন কমেছে ১২ কেজি৷ এখন তাঁর শরীরে অপুষ্টি দেখা দিয়েছে৷ বিএনপির দায়িত্বশীল একাধিক নেতা দাবি করেন, সরকার দল ভাঙার চেষ্টার পাশাপাশি বিএনপিকে দুর্বল করার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছে৷ এরই অংশ হিসেবে নেতাদের কারও কারও মামলার গতি বাড়ানো বা কমানো এবং তাঁদের জামিন নিয়েও মাঝেমধ্যে নানা কৌশল নিচ্ছে, যাতে সংশ্লিষ্ট নেতাদের নিয়ে দলে সন্দেহ-সংশয় তৈরি হয়৷প্রসঙ্গত, ছয় মাস কারাভোগের পর সুপ্রিম কোটের্র আপিল বিভাগ ফখরুলকে ছয় সপ্তাহের জন্য জামিন দেন৷ গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় তিনি মুক্তি পান৷ ৬ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে থেকে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর৷ মঙ্গলবার ইফতারের সময় তিনি মুক্তি পান৷ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে বের হন তিনি৷ ছয় মাসের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি ফখরুল গত এক মাস এ হাসপাতালেই চিকিত্সাধীন ছিলেন৷ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ফরমান আলী জানান, জামিনের কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অস্থায়ী প্রিজন সেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেওয়া হয়৷
মুক্তির পর পঞ্চম তলার প্রিজন সেল থেকে ফখরুল বেরিয়ে এলে বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদসহ বিএনপি নেতা-কর্মী ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে স্বাগত জানান৷ স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন৷এরপর মির্জা ফখরুলকে হুইল চেয়ারে করে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের ইউনাটেড হাসপাতালে৷
তার মা ফাতেমা আমিন ওই হাসপাতালে চিকিত্সাধীন৷ ফখরুলও সেখানেই চিকিত্সা নেবেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান৷বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিত্সাধীন ছিলেন তিনি৷ জামিন পাওয়ার পর সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি৷ফখরুল বলেন, আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জনাই৷ আমার অন্ত্যরীণ অবস্থায় আমার অসুস্থতার খবর তুলে ধরেছেন৷ এ ৬ মাসে আামার ১২ কেজি ওজন কমেছে৷ অন্তুত কিছুদিনের জন্য হলেও মুক্ত হয়েছে৷ চিকিত্সা নিয়ে দেশে ফিরে আসবো৷ফখরুলকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ সোমবার বহাল রাখেন আপিল বিভাগ৷ সে মোতাবেক ৬ সপ্তাহের জামিন পেলেন তিনি৷ এই সময়ের মধ্যে ফখরুল চাইলে উন্নত চিকিত্সার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন৷দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আটক হন মির্জা ফখরুল৷ এরপর গাড়ি ভাঙচুর, পোড়ানো ও নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়ের করা সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ৷ এইচএসসি পরীক্ষা ও সিটি নির্বাচনের হাওয়ায় বিএনপি অবরোধ-হরতাল থেকে সরে এলে কমে আসে রাজনৈতিক উত্তাপ৷ সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়ে এখন দল পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছে দলটি৷ কারাগার থেকে মুক্তি পেলে মির্জা ফখরুল বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে৷ ২০১১ সালের ১৬ মার্চ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃতু্যর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন ফখরুল৷ফখরুলের আইনজীবী ও তার পরিবারের সদস্যরা বলেছিলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের হৃদযন্ত্রে চারটি ব্লক রয়েছে, এর তিনটিতে রিং বসানো হয়েছে৷ অর্থাত্ ৮০ ভাগ ব্লক হয়ে গেছে তার৷ এখন তার গলার ধমনিতে (নার্ভ) প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়েছে৷
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার হন ফখরুল৷ এরপর নাশকতার সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়৷এর মধ্যে পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো, অগি্নসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের এক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান মির্জা ফখরুল৷এরপর পল্টন থানার দুটি এবং মতিঝিল থানার এক মামলায় ১৮ জুন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট৷ রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে সেখানেও ফখরুলের জামিন বহাল থাকে৷আর পল্টন থানার তিন মামলায় গত ২১ জুন হাই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফখরুলের জামিন মঞ্জুর করে৷ রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে আদালত পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড করে ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেয়৷সেই মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সোমবার আপিল বিভাগ ফখরুলের জামিন বহাল রাখে৷পল্টন থানার এই তিন মামলায় ছয় সপ্তাহের জামিনের মেয়াদ শেষে ফখরুলকে আবার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে৷