Gournadi Pic16-07-15

দৈনিকবার্তা-গৌরনদী (বরিশাল), ১৬ জুলাই ২০১৫: বরিশালের গৌরনদীতে দুবৃত্তদের ছোড়া পেট্্েরাল বোমায় অগি্নদগ্ধ হয়ে নিহত ট্রাক চালক নুরহোসেনের ঘরে ঈদের আনন্দ নেই৷ তার শিশু পুত্র আবুবকর (৬), কন্যা নুরতাজ (৪) ও ৩ মাস বয়সের সুমাইয়াকে কে দেবে নুতন কাপর ? শিশু আবুবকর ও নুরতাজ মায়ের কাছে ঈদের নুতন পোষাকের জন্য বায়না ধরেছে৷ নুরহোসেনের স্ত্রী মেরিনা বেগম (২৫) গত কয়েকদিন ধরে স্বামীর কথা মনে করে নিরবে কাঁদেছেন৷ তার কান্না দেখে তার অবুঝ শিশুরা বাবার শুন্যতা বুঁঝতে পেরে মাকে জড়িয়ে তারাও কাঁদছে৷ গত ঈদেও নুরহোসেন পুত্র কন্যাসহ তার পরিবারের সবাইকে নুতন পোষাক কিনে দিয়েছিলেন৷ কিন্তু এবার তিনি বেঁচে নেই, দুবৃত্তদের ছোড়া পেট্রোল বোমায় তিনি অগি্নদগ্ধ হয়ে মারা যাবার কারণে তাদের সব স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়েগেছে৷ বর্তমানে অভাব অনাটনের মধ্যে তাদের দিন কাটছে৷ গত ২ ফেব্রুয়ারী নুরহোসেন পেট্রোল বোমায় অগি্নদগ্ধ হয়ে নিহত হবার পর তার স্ত্রী মেরিনা বেগম প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আর্থিক সহয়তা পাবার আশায় আবেদন করেছিলেন ৷ কিন্তু দীর্ঘ ৬ মাস পরেও তিনি কোন আর্থিক সহয়তা না পেয়ে বর্তমানে তিনি নাবালক ৩টি শিশুকে নিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছেন৷

গত ২ ফেব্রুয়ারী রাতে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের গৌরনদীর সুন্দরদী নামক স্থানে একটি লবন বোঝাই ট্রাকে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপের ঘটনায় ট্রাক চালক নুর হোসেন শিকদার (৩৫) ও হেলপার জাফর রাঢ়ী (২৫) ঘটনাস্থলেই নিহত হন৷ নিহত নুর হোসেনের বাড়ি পটুয়াখালীর বাউফল থানার আয়নাবাদ গ্রামে৷ সে ওই গ্রামের মৃত আব্দুর রব শিকদারের পুত্র৷ নিহত হেলপার জাফর রাঢ়ী ড্রাইভার নুর হোসেনের মামাতো ভাই৷ জাফর রাঢ়ী দশমিনা উপজেলার বহরামপুর গ্রামের হতদরিদ্র কৃষক শাহজাহান রাঢ়ীর পুত্র৷ সে ২ ভাই ও ৩ বোনের মধ্যে সবার ছোট এবং সে ছিল অবিবাহিত৷ নিহত ড্রাইভার নুর হোসেনের ১ পুত্র ও ২ কন্যা সন্তান রয়েছে৷ তার বড় পুত্র আবুবকর ছিদ্দিক (৬ ) কালাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেনীর ছাত্র৷ কন্যা নুরতাজ (৪ ) মেঝ ও ৩ মাস বয়সের সুমাইয়া ছোট৷ নুরহোসেন যখন মারা যান তখন তার স্ত্রী মেরিনা বেগম ৮ মাসের অন্তঃসত্তা ছিলেন৷ নুরহোসেনের মৃত্যূর ২ মাস পর সুমাইয়ার জন্ম হয়৷

নুরহোসেনের স্ত্রী মেরিনা বেগমের সাথে গতকাল মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি কান্না জড়িত কন্ঠে জানান,গত ঈদে আমার স্বামী বাইচ্চা আছিলেন৷ সবাইরে নুতন জামা-কাপর কিইন্না দিছিল৷ এবার পোলা মাইয়ারে কিছু কিন্না দিতে পারি নাই৷ কষ্টে বুকটা ফাইট্টা যায়৷ তিনি আরো জানান, ২ মাস আগে হেলপার জাফর রাঢ়ীর বাবাকে তাগো এলাকার এমপি একলাখ টাকা দিছে৷ কিন্তু মোগো এমপি মোরে কিছুই দেয়নাই৷ পোলা-মাইয়াগো লইয়া বড় কষ্টে আছি, মোগরে কেউ দ্যাহেনা৷
জানাগেছে,নিহত নুরহোসেনের স্ত্রী মেরিনা বেগম ও জাফর রাঢ়ীর বাবা শাহজাহান রাঢ়ী আর্থিক সহয়তা পাবার আশায় গত মার্চ মাসে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে আবেদন করেছিলেন ৷ কিন্তু এ ব্যাপারে কোন সাড়া মিলছেনা বলে তারা জানান৷