দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৫ জুলাই ২০১৫: মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে বুধবার সকাল থেকেই রাজধানী ঢাকায় থেমে থেমে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। আর এ অবস্থা চলে সারাদিনই ।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হলেও, সকাল সাড়ে ১১টার দিকে শুরু হয় ভারী বৃষ্টি। ঈদের একদম আগ মুহূর্তে আবহাওয়ার এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছেন ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা।রোজকার মতো সকাল থেকে দোকানপাট খোলার অপেক্ষায় ছিলেন তারা। তবে রাজধানীর মালিবাগ, মৌচাক, পুরানা পল্টন, বায়তুল মোকাররম, গুলিস্তান এলাকায় সরেজমিনে দেখা যায়, হালকা বৃষ্টি উপেক্ষা করে সামিয়ানা টাঙিয়ে বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী তাদের পসরা নিয়ে বসেছেন।এছাড়া অধিকাংশ ব্যবসায়ীকে পলিথিন দিয়ে জিনিসপত্র ঢেকে দোকানের পাশে বসে থাকতে দেখা যায়।ঈদের আগে আবহাওয়ার এ অবস্থা বহাল থাকলে প্রত্যাশা অনুযায়ী বেচাকেনা হবে না বলে মনে করছেন তারা। আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র এ তথ্য জানিয়েছে। সকাল থেকেই নগরীতে স্বস্থির বৃষ্টিপাত হলেও ঈদের সময় নাকাল হয়ে পড়েছেন রাজধানীবাসী।আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মৌসুমী বায়ু বাংলাদেশের ওপর সক্রিয় থাকায় বুধবার সারাদেশে থেমে থেমে বৃষ্টি হবে। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
অধিদফতরের পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, আগামী ২৪ ঘণ্টায় ঢাকা, রংপুর, রাজশাহী ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ী দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারী বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারী থেকে ভারী বর্ষণও হতে পারে।তবে কোনো সর্তক বার্তা বা সর্তকবাণী নেই। এছাড়া নিম্নচাপের কোনো সম্ভাবনা নেই বলেও জানিয়েছে অধিদফতর সূত্র।মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) দিবাগত রাতে সর্বোচ্চ ৯৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে সিলেট জেলায়। এছাড়া টাঙ্গাইলে ৬৩ মিলিমিটার, সন্দ্বীপে ৬০, হাতিয়ায় ৬৬, শ্রীমঙ্গলে ৫১, কুমিল্লায় ৪৩, সাতক্ষীরায় ৩২ মিলিমিটার বৃষ্টিপাতের খবর পাওয়া গেছে।একই সময়ে রাজধানীতে ১৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে আবহাওয়া অধিদফতর।
এদিকে, শবেকদরের ছুটির কারণে অফিসগামী লোকজনের তেমন কোনো তাড়া না থাকলেও বিভিন্ন মার্কেটের ব্যবসায়ীরা বৃষ্টিতে আটকা পড়েছেন। নগরীতে জানবাহনের সংখ্যা কম। তার পরও যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েছেন।নগরীর শান্তিনগরের টুইন টাওয়ারের সামনের রাস্তায়,রাজারবাগ, মৌচাক, মালিবাগ, গাউসিয়া, নিউমার্কেট, বঙ্গবাজার, গুলিস্তান, রাজধানী মার্কেট, টিকাটুলি, মতিঝিল, কাপ্তান বাজার, চকবাজার, নাজিম উদ্দিন রোড, আজিমপুর, মিরপুরসহ নগরীর বিভিন্ন এলাকার মার্কেটগুলোর সামনে পানি থই থই করছেন। অনেক দোকান ঈদের মার্কেট হিসেবে খোলা হলেও দোকানগুলো কোন ক্রেতার সমাগম নেই বলে জানা গেছে।সকাল থেকেই রাজধানীতে থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে। বিভিন্ন এলাকা ও রাস্তায় পানি জমে চিরাচরিত দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে নগরবাসীকে। বৃষ্টির কারণে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন অফিসগামী ও ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা। অল্প বৃষ্টিতে নগরীতে জলাবদ্ধতার সমস্যা দীর্ঘদিনের হলেও সমাধানের অংক শূন্য!
কাকরাইল-শান্তিনগর এলাকায় সকালে অল্প বৃষ্টিতে সড়কে যানবাহন আটকে পড়ে। হাঁটু পানিতে তলিয়ে যায় সড়ক। জলাবদ্ধাতায় অনেকগুলো সিএনজিচালিত অটোরিকশা রাস্তায় বিকল হয়ে পড়ে। অটোরিকশা পরিবর্তন করে অনেককে গন্তব্যে যেতে হয়েছে। দ্রুত পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় মানুষকে অসহনীয় দুর্ভোগ পোহাতে দেখা গেছে।অল্প বৃষ্টিতে মগবাজার, মৌচাক হয়ে মালিবাগ রেলগেট, রামপুরা ব্রিজ, মেরুল বাড্ডা, মধ্য বাড্ডা এলাকায় হাঁটুপানি জমে যায়।জমে যাওয়া পানির কারণে অটোরিকশা ও অন্য যানবাহন রাস্তায় আটকে পড়ে। মধ্য বাড্ডায় রাস্তার ওপর ময়লার ভাগাড় পানিতে মিশে একাকার হয়ে সড়কে চলাচলকারী যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়।ঢাকায় দীর্ঘদিন ধরে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলেও সিটি কর্পোরেশন দৃশ্যমান কোনো উদ্যোগ নেয় না বলে অভিযোগ করেন দুর্ভোগে পড়া যাত্রীরা।নর্দ্দা, কালাচাঁদপুর থেকে বারিধারা পর্যন্ত প্রায় দেড় কিলোমিটার সড়কে অল্প বৃষ্টিতেই হাঁটু পরিমাণ পানি জমে যায়। এতে যানবাহন আটকে পড়ে। দুর্ভোগে পড়ে অফিসগামী যাত্রীরা। ফলে রিকশায় বাড়তি ভাড়া দিয়ে অনেককে অফিস ও কর্মস্থলে যেতে দেখা গেছে। তবে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতার জন্য সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকে দায়ী করেন যাত্রীরা।বৃষ্টিতে উত্তরার জসিম উদ্দিন রোড, এয়ারপোর্ট সড়ক, মহাখালী ফ্লাইওভারের নিচে, আইসিসিডিডিআরবি থেকে মহাখালী বাসস্টান্ড পর্যন্ত পানি জমে যায়।পানির সাথে রাস্তায় পড়ে থাকা ময়লা-আর্বজনা মিলে দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। বিশেষ করে ভোর থেকে ঈদে ঘরমুখো যাত্রীরা স্বপরিবারে বের হওয়া চরম দুর্ভোগে পড়েন।বৃষ্টির কারণে কোথাও কোথাও তীব্র যানজট, কোথাও গাড়ি না থাকায় যাত্রীদের ময়লা পানির মধ্য দিয়ে হেঁটে চলাচল করতে দেখা যায়।
বৃষ্টিতে কমলাপুর রেলস্টেশন এলাকার সব সড়ক ও স্টেশনের প্রবেশ মুখ হাঁটুপানিতে তলিয়ে যায়। দুর্ভোগে পড়ে মালামাল নিয়ে আসা যাত্রীরা। তবে পানি দ্রুত নেমে না যাওয়ায় যাত্রীরা চরম বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। ভিক্টোরিয়া পার্ক থেকে সদরঘাট টার্মিনাল পর্যন্ত, ঢাকা মেডিকেলের সামনে রাস্তা, গোলাপ শাহ মাজারের সামনে পানি জমে যায়।রাস্তায় থাকা ময়লা বৃষ্টির পানিতে মিশে দুর্ভোগ আরও বাড়িয়ে দেয়। সদরঘাটমুখী যাত্রীদের ময়লা পানি মাড়িয়ে ও বৃষ্টিতে ভিজে যেতে দেখা গেছে।কাকরাইল থেকে নয়াপল্টন হয়ে কমলাপুর পর্যন্ত পুরো রাস্তা ও আশপাশের গলি বৃষ্টিতে হাঁটু পরিমাণ পানি জমে আছে।পানির কারণে প্রয়োজনে বের হওয়া যাত্রীরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন। অধিকাংশ স্থানে ম্যানহোলের ঢাকনা খোলা ও গর্ত থাকায় যানবাহন চলাচলে সমস্যা হচ্ছে। অনেক জায়গায় যাত্রীদের সড়কে পড়ে ভিজে যেতে দেখা গেছে। তবে সিটি কর্পোরেশনকে কোনো উদ্যোগ নিতে দেখা যায়নি।
এছাড়া রাজধানীর অন্যান্য এলাকায়ও সামান্য বৃষ্টিতে সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়, সৃষ্টি হয় সেই চিরাচরিত দুর্ভোগ। তাৎক্ষণিকভাবে পানি নেমে না যাওয়ায় সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা।
রাজধানীর ধানমন্ডি হকার্স মার্কেটের ভেতরে নোংরা হাঁটুপানি। বসার টুল দোকানে তুলে রেখেছেন অনেক দোকানদার। ক্রেতা যাঁরা আসছেন হাঁটুপানিতে েেনমেই করছেন কেনাকাটা। তাঁদের মুখে বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট। এমনই একজন রুম্পা খান। এসেছেন উত্তরা থেকে। তিনি জানান, ২৭ রোজার পর ভিড় কমবে এই আসাতেই কেনাকাটা করেননি এত দিন। বুধবার সকাল ১২টার দিকে এসেছেন এই মার্কেটে। হাঁটুপানিতে নেমেই সারছেন কেনাকাটা।দুর্ভোগের কথা বলতে গিয়ে রুম্পা বললেন, ‘কিছুই কেনাকাটা হয়নি। মার্কেটে এসে দেখি হাঁটুপানি। এখন বাধ্য হয়ে পানিতে নেমেই কিনতে হচ্ছে। নোংরা পানিতে পা চুলকাচ্ছে।
এই মার্কেটের দোকানদার শাড়ি সেন্টারের ব্যবস্থাপক আবদুল করিম বলেন, এটা নতুন কিছু না। বৃষ্টি হলেই এই মার্কেট ডোবে। আমাদের দোকান গুটিয়ে বসে থাকতে হয়।ক্রেতারা আসতে চায় না। সমস্যাটার কেউ সমাধানও করে না। খালি আমাদের লস হয়।সকাল থেকে টানা বৃষ্টিতে এই মার্কেটে অনেকেই কেনাকাটা সেরেছেন এভাবে সীমাহীন ভোগান্তি নিয়ে পানিতে ভিজে। তবে বিক্রেতাদের ভাষ্য, জলাবদ্ধতার কারণে বেশির ভাগ ক্রেতাই ফিরে গেছেন কেনাকাটা না করে।শুধু হকার্স মার্কেট নয়। আজকের বৃষ্টিতে পানি উঠেছে আশপাশের মার্কেটগুলোতেও। বাদ যায়নি নিউমার্কেট, গাউছিয়া ও, চাঁদনিচক কোনোটাই। তবে এর মধ্যেই চলছে ঈদের কেনাকাটা। বিক্রেতারা বলেন, টানা বৃষ্টির কারণে অনেকে বাসা থেকে বের হতে পারেননি। তাই প্রত্যাশার তুলনায় ক্রেতা কম।
দুপুর ১টার দিকে নিউ মার্কেটের ১ নম্বর গেট দিয়ে ভেতরে ঢুকতেই দেখা গেল, অনেক ক্রেতা ছাদের নিচে দাঁড়িয়ে আছেন। দোকানগুলোতেও নেই তেমন ভিড়।নিউমার্কেটের ১ নম্বর গেটের সামনে রাস্তায় ও মার্কেটের ভেতরে বেশ কিছুটা জায়গায় গতকাল জলাবদ্ধতা তৈরি হয়।ভোগান্তিতে পড়ে ওই এলাকার মানুষ ও মার্কেটে আসা লোকজন।নিউমার্কেটের বিক্রেতারা জানান, বৃষ্টিতে সব সময় এই রাস্তায় পানি ওঠে। বৃষ্টি বেশি হলে মার্কেটে পানি ঢোকে। তখন ক্রেতারা ১ নম্বর গেট দিয়ে ঢুকতে পারেন না। বেচাকেনায় ভাটা পড়ে।মহাখালী থেকে ঈদের কেনাকাটা সারতে নিউ মার্কেটে এসেছিলেন নাজমুন নাহার। তিনি বলেন, উত্তরা থেকে বাসে করে এসেছি। এখানে এসে দেখি মার্কেটে পানি উঠেছে। আর প্রচণ্ড বৃষ্টি। তাই দাঁড়িয়ে আছি। বৃষ্টি কমলে কেনাকাটা করব। পানি ওঠার কারণে আজ সব কেনাকাটা করতে পারবেন না, তাইবৃহস্পতিবারও আসবেন বলে জানালেন।
নিউ মার্কেটের পোশাকসহ নানা সামগ্রী বিক্রেতা লিলি স্টোরের মালিক মোহাম্মদ মঈনুদ্দিন বলেন, এই ঈদে দোকানে যে ভিড় হইতো তা সামাল দেওয়ার কথা না। কিন্তু দেখেন বেচা কেনা নাই। বৃষ্টির লাইগ্যা মানুষ বাড়ি থেকে বাইর হয় নাই।নিউমার্কেটের বাইরে ফুটপাতেও বসেছে অনেক দোকান। কিন্তু টানা বৃষ্টির কারণে সেই দোকানগুলো ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। পাশেই দোকানদাররা বসে অলস সময় কাটাচ্ছেন। অনেক দোকান বন্ধ। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দোকানদার মুরাদ মিয়া বলেন, অখনও বনি করি নাই, বেচা কেনা নাই, দোকান যেই খুললাম বৃষ্টি শুরু হইলো।একই রকম জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে পাশের গাউছিয়া মার্কেটের কিছু অংশেও। দীর্ঘ সময় ধরে পানি থাকায় এই মার্কেটের উত্তর দিকে রাস্তার পাশের দোকানদারেরা দোকান খুলতে পারেননি। ময়লা পানি মাড়িয়ে রাস্তা চলাচল করতে হয়েছে মানুষকে।
গাউছিয়া মার্কেটের সামনে কথা হয় ধানমন্ডির বাসিন্দা আইনুন আসাদের সঙ্গে। তিনি জানান, ঈদের কেনাকাটা অনেকটাই করেছেন। তবে গহনাসহ আনুষঙ্গিক কিছু জিনিস কেনা বাকি। এ দিকে আবার বৃহস্পতিবারই ঢাকার বাইরে চলে যাবেন দেশের বাড়ি রংপুরে। তাই বাধ্য হয়েই কেনাকাটা করছেন নোংরা পানিতে হেঁটে হেঁটে। তিনি বলেন, ‘এমনিতে নোংরা পানি এড়িয়ে চলি। এখন বাধ্য হয়েই হাঁটতে হচ্ছে। চাঁদনিচক মার্কেটের সামনেও দেখা গেল, মানুষের ভিড় কম। অনেকে দোকানের সামনে পানিতে দাঁড়িয়ে কেনাকাটা সারছেন। আজিমপুরের বাসিন্দা মলি বেগম জানান, দুই ঘণ্টা ভিজে আর পানিতে হেঁটে কেনাকাটা সারলাম। আরও অনেক কিছু কেনার ছিল। কিন্তু যা অবস্থা মনে হয় জ্বর আসবে। তাই বাসা চলে যাচ্ছি।সকাল সাড়ে ১১টার দিকে গ্রিন রোড ও পান্থপথ সড়কে ছিল কোমরসমান পানি। পানির ওপর দিয়ে রিকশা চললেও পানির উচ্চতার কারণে রিকশার পাটাতনে পানি চলে আসে। এ সময় কিছুক্ষণ ওই সড়কে রিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। পরে দ্বিগুণ, তিন গুণ বেশি ভাড়ায় রিকশায় চড়ে মানুষ। রিকশা স্বল্পতায় অনেককে কোমরপানিতে হেঁটেই গন্তব্যে যেতে দেখা গেছে।