দৈনিকবার্তা-কলাপাড়া, ১৫ জুলাই ২০১৫: সরকারি হিসাবে রামনাবাদ নদীর ভাঙ্গনসহ প্রাকৃতিক দূর্যোগে চার হাজার দুই শ’ ২৯টি পরিবার গৃহহীন হয়েছে। কিন্তু বাস্তবে এর সংখ্যা আরও বেশি। ভাঙ্গন আর দূর্যোগে এখন কলাপাড়ার অর্ধশত গ্রামের মানুষ চরম দুরাবস্থায় পড়েছে। এসব পরিবারে নেমে এসেছে চরম দুর্দিন। চাল-চুলা সব হারানো মানুষগুলো ফের এ বছর আমন ফসল হারানোর নতুন শঙ্কায় পড়েছেন। বাড়িঘর আবাদি জমি সব ডুবে থাকে জোয়ারের পানিতে। পানিবন্দী এসব মানুষ এখন আর সইতে পারছে না এ বিপদশঙ্কুল দশা।রামনাবাদ ও আন্ধার মানিক নদীর উত্তাল ঢেউয়ের তান্ডবে এসব গ্রামের বেড়িবাঁধ ভেসে গেছে বহু আগেই। এখন জোয়ার-ভাটার সঙ্গেই বসবাস। ঘরের চৌকিতে রান্না। খাওয়াও একই জায়গায়। সব যেন পানিতে ভাসছে। কর্মক্ষম হাজার হাজার মানুষ হয়ে গেছেন বেকার। তিনবেলা খাবার জোটাতে পারছেন না এখন আর। এদের সংখ্যা অন্তত ২৫ শ’ পরিবার।
বিপদাপন্ন এসব মানুষের অধিকাংশের বসবাস লালুয়া ও মহিপুর ইউনিয়নে। এদের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধ তিন বছর আগে বিধ্বস্ত হয়ে গেছে। সেই থেকে তাদের জীবন-জীবিকা বিপন্ন। উপরোক্ত দু’টি ইউনিয়ন ছাড়া ডালবুগঞ্জ, মিঠাগঞ্জ, বালিয়াতলী ও ধূলাসারের অন্তত ৪০টি গ্রামে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে মানবসৃষ্ট। গাববাড়িয়া নদীতে ক্লোজার করায় তাদের পানি নামার অন্তত ২২টি স্লুইস অকেজো হওয়ায় এরা সবাই পুরো মৌসুমে পানিবন্দী হয়ে আছেন। এসব কৃষকের আমন আবাদ রয়েছে অনিশ্চয়তার মধ্যে।
চারিপাড়া গ্রামের ইউপি মেম্বার মজিবর রহমান জানান, তিনটি বছর আমন ফসল ফলাতে পারেন নি। সর্বত্র এখন হাহাকার। সব পানিতে থৈ থৈ করছে। খেয়ে না খেয়ে জীবন চলছে সেখানকার অন্তত ছয় শ’ পরিবারের। উপার্জন বন্ধ। স্কুলে যেতে পারছেনা শিশুরা। কলার ভেলায় কিংবা নৌকায় চলাচল করতে হয়। নিরাপদ পানির সঙ্কট চলছে প্রত্যেক বাড়িতে। রোজার মাসে ঠিকমতো পেটপুরে কেউ খেতে পারছে না। তার হিসাবে অন্তত অর্ধশত পরিবার এলাকা ছেড়েছে। কেউবা আশ্রয় নিয়েছে বেড়িবাঁধে। গবাদিপশু পালন করতে পারছেন না। একই দশা মহিপুর ইউনিয়নের নিজামপুর, সুধিরপুর, কমরপুর গ্রামের কৃষকের। ডালবুগঞ্জ ইউপি চেয়ারম্যান আঃ সালাম শিকদার বলেন, ডালবুগঞ্জ ক্লোজারের কারনে গোটা এলাকাই ডুবে আছে।
লালুয়া ইউপি চেয়ারম্যান মীর তারিকুজ্জামান তারা বলেন, এখন এলাকার যে অবস্থা তাতে ভবিষতে লালুয়া ইউনিয়নটিই মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাবে। মানুষ যে দূর্ভোগ পোহাচ্ছে তা চোখে দেখা যায় না। কলাপাড়া পাউবোর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবুল খায়ের জানান, তারা দূর্গত এলাকা পরিদর্শন করে ঢাকায় ক্ষয়ক্ষতির তথ্য পাঠিয়েছেন।