forkan mollik20150714141125

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ জুলাই ২০১৫: পটুয়াখালীর রাজাকার ফোরকান মল্লিকের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার রায় আগামী বৃহস্পতিবার ঘোষণা করা হবে।বৃহস্পতিবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এর চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল এ আদেশ দেয়। গত ১৪ জুন ফোরকান মল্লিকের মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় যুক্তিতর্ক শেষে যে কোন দিন রায় (সিএভি) ঘোষণার জন্য রাখা হয়েছিল।মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধে জড়িতদের বিচারে গঠিত আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে এ পর্যন্ত ১৯ মামলায় ২১ আসামির বিরুদ্ধে রায় হয়েছে। এর মধ্যে ট্রাইব্যুনাল-১ এ ৯টি ও ট্রাইব্যুনাল-২-এ ১০টি মামলার রায় ঘোঘণা করা হয়েছে। ফোরকান মল্লিকের রায় হবে ট্রাইব্যুনালের ২০ তম ও ট্রাইব্যুনাল-২ এ ১১ তম রায়।

প্রসিকিউটর মোখলেছুর রহমান বাদল বলেন, আসামি ফোরকানের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ৫টি ঘটনায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দিয়েছিল ট্রাইব্যুনাল। প্রসিকিউশন বিচারকালে এসব অভিযোগের পক্ষে সাক্ষ্য ও তথ্য-প্রমাণ পেশ করেছে। এ আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ প্রমাণে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন।ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে গত বছর ১৮ ডিসেম্বর এ অভিযোগ গঠন করা হয়। ফোরকান মল্লিক হত্যা-গণহত্যা, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগ, ধর্মান্তরকরণ ও দেশান্তরকরণের মতো ৫টি মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্ত। তার বিরুদ্ধে ৫টি অভিযোগের মধ্যে রয়েছে ৮ জনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরকরণ, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরকরণ, ৬৪টি বসতঘর ও দোকানপাটে লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের সুনির্দিষ্ট অভিযোগ। ফোরকানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের পক্ষে ১৪ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৭ মে পর্যন্ত ফোরকান মল্লিকের পক্ষে সাক্ষ্য দিয়েছেন চারজন সাফাই সাক্ষী।

২০১০ সালের ২৫ মার্চ ট্রাইব্যুনাল গঠনের মধ্য দিয়ে যুদ্ধাপরাধের বহু প্রতীক্ষিত বিচার শুরুর পর এটি হবে বিংশতম রায়।গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল ফোরকান মল্লিকের যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরু করে। একাত্তর সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, ধর্ষণ ও অগ্নিসংযোগের দায়ে ২০০৯ সালে ২১ জুলাই ফোরকানের বিরুদ্ধে মির্জাগঞ্জ থানায় আবদুল হামিদ নামে এক ব্যক্তি মামলা করেন। এরপর পটুয়াখালীর গোয়েন্দা পুলিশ ২০১৪ সালের ২৫ জুন ফোরকানকে বরিশালের রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার করে।৩ জুলাই ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার গ্রেপ্তার দেখিয়ে ফোরকান মল্লিককে করাগারে পাঠানো হয়। তার বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত করেন প্রসিকিউশনের তদন্ত র্কমর্কতা সত্যরঞ্জণ রায়।

এরপর ২ ডিসেম্বর ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আমলে নেয় ট্রাইব্যুনাল-২। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় আটজনকে হত্যা ও গণহত্যা, ৪ জনকে ধর্ষণ, ৩ জনকে ধর্মান্তরে বাধ্য করা, ১৩টি পরিবারকে দেশান্তরে বাধ্য করা, ৬৪টি বসতবাড়ি ও দোকানে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মোট পাঁচটি অভিযোগ অভিযুক্ত করা হয় তাকে।প্রসিকিউশনের প্রারম্ভিক বক্তব্যের মধ্য দিয়ে ১৯ জানুয়ারি শুরু হয় সাক্ষ্যগ্রহণ। প্রসিকিউশনের পক্ষে এ মামলায় মোট ১৪ জন সাক্ষ্য দেন। অন্যদিকে ফোরকান মল্লিকের পক্ষে সাফাই সাক্ষ্য দেন চারজন।পরে আসামিপক্ষে আব্দুস সালাম খান ও প্রসিকিউটর মোখলেসুর রহমান বাদল আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন। বিচারিক কার্যক্রম শেষে মামলাটি রায়ের পর্যায়ে আসে।

অভিযোগ ১: ১৯৭১ সালে বাংলা আষাঢ় মাসের মাঝামাঝি সময়ে (২৭ জুন থেকে ৩ জুলাইয়ের মধ্যে) কোনো একদিন সন্ধ্যা ৬টার দিকে ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী রাজাকার সদস্যরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন কাকড়াবুনিয়া গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে হাওলাদার বাড়ির মো. কাঞ্চন আলী হাওলাদার, হাজী আবুল হাশেম হাওলাদারসহ মোট সাতজনকে আটক, নির্যাতন এবং বাড়িঘর লুটপাট করে তারা। তাদের কাছ থেকে জোর করে অর্থ আদায় করে একমাস আটকে রেখে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়।অভিযোগ ২: ১৯৭১ সালের আষাঢ় মাসের শেষদিকে (২ জুলাই থেকে ১৭ জুলাইয়ের মধ্যে) একদিন ফোরকান মল্লিক ও তার রাজাকার সঙ্গীরা একদল পাকিস্তানি সেনাকে পথ দেখিয়ে গানবোট ও স্পিডবোটে করে মির্জাগঞ্জ থানাধীন দেউলী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা আলতাফ হায়দারসহ মোট ছয়জনের বাড়িতে লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে তারা।

অভিযোগ ৩: একাত্তরের ১২ অগাস্ট থেকে ৩১ অগাস্টের মধ্যে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা পাকিস্তানি সেনাদের পথ দেখিয়ে মির্জাগঞ্জের সুবিদখালী গ্রামে নিয়ে যায়। সেখানে মুক্তিযোদ্ধাদের সংবাদবাহক কাকড়াবুনিয়া গ্রামের হাফিজ উদ্দিন খলিফা, মির্জাগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আব্দুল কাদের জমাদ্দার, সুবিদখালী বাজারের ডাক্তার দেবেন্দ্রনাথ সরকার ও তার স্ত্রী বিভা রাণীকে আটক করে তারা। ওই গ্রামে তারা হত্যা, গণহত্যা, লুটপাট, ধর্ষণ, ধর্মান্তরিতকরণ ও দেশত্যাগে বাধ্য করার মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।অভিযোগ ৪: ভাদ্র মাসের ৫ থেকে ৮ তারিখ পর্যন্ত (২২ থেকে ২৫ অগাস্ট) ফোরকান মল্লিক ও তার রাজাকার সহযোগীরা পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে নিয়ে কাকড়াবুনিয়া বাজারে যায় এবং হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের মতো মানবতাবিরোধী অপরাধ ঘটায়।অভিযোগ ৫: ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি (২৯ থেকে ৫ সেপ্টেম্বর) সময়ে একদিন ভোরে ফোরকান মল্লিক ও রাজাকার সদস্যরা মির্জাগঞ্জ থানাধীন দক্ষিণ কলাগাছিয়া গ্রামের যায় এবং মুক্তিযোদ্ধা মো. আবুল হোসেন মৃধার বাড়িতে লুটপাট ও নির্যাতন চালায়।