দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ জুলাই: বর্তমান সরকারের মন্ত্রিসভায় নতুন পাঁচজন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী আজ মঙ্গলবার সন্ধ্যায় শপথ নিয়েছেন।বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ নতুন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীদের শপথ পড়ান।পূর্ণমন্ত্রী হিসেবে শপথ নিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান এবং চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি।এ ছাড়া নতুন প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন সংরক্ষিত নারী আসনের সাংসদ তারানা হালিম ও লালমনিরহাটের সাংসদ নুরুজ্জামান আহমেদ। নতুন পাঁচ মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর শপথের পর দপ্তর বণ্টনে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রণালয় পেয়েছেন নুরুল ইসলাম বিএসসি।খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন নুরুজ্জামান, যে মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী কামরুল ইসলাম ব্রাজিলের গম আমদানি নিয়ে সমালোচনার মধ্যে রয়েছেন।
ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব পেয়েছেন তারানা হালিম। আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীকে বাদ দেওয়ার পর এই মন্ত্রণালয়ে ৯ মাস ধরে কোনো মন্ত্রী কিংবা প্রতিমন্ত্রী ছিল না।প্রতিমন্ত্রী থেকে পূর্ণ মন্ত্রী হওয়া আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং ইয়াফেস ওসমানের দপ্তরের বদল হয়নি। কামাল এখন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী হিসেবে কাজ করবেন ইয়াফেস ওসমান।মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতির কাছে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা শপথ নেওয়ার পর মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দপ্তর বণ্টনের প্রজ্ঞাপন হয়।নুরুল ইসলাম বিএসসি প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আসায় ভার কমেছে খন্দকার মোশাররফ হোসেনের।গত ৯ জুলাই সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বাদ দেওয়ার পর খন্দকার মোশাররফ স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পেলেও তার আগের দপ্তর প্রবাসী কল্যাণের অতিরিক্ত দায়িত্বও পালন করছিলেন তিনি।
নতুন করে পাঁচজনকে নিলেও পুরনো কাউকে বাদ দেননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, দপ্তরও বদলাননি কারও।নতুন মন্ত্রী নুরুল ইসলাম বিএসসি চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি। সানোয়ারা গ্র“পের মালিক তিনি।চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগে এ বি এম মহিউদ্দিন চৌধুরী বিরোধী শিবিরের নেতা নুরুল ইসলাম বিএসসি নৌকা প্রতীকে বন্দর নগরীর একটি আসনে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিজয়ী হয়েছিলেন। দশম সংসদ নির্বাচনে ওই আসনটি জাতীয় পার্টির জিয়াউদ্দিন বাবলুকে ছেড়ে দিতে হয় তাকে।নবম সংসদে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য নুরুল ইসলাম বিএসসি এনসিসি ব্যাংকের উদ্যোক্তা পরিচালক।নতুন প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার আত্মীয়।
বাংলাদেশ টেলিভিশনের প্রতিযোগিতামূলক অনুষ্ঠান নতুন কুঁড়িতে চ্যাম্পিয়ন হয়ে কৈশোরেই পরিচিতি পাওয়ার পর তারানা হালিম অভিনেত্রী হিসেবেও নাম কুড়ান। তারানা হালিম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময় যুবলীগের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ছিলেন। সংসদে সংরক্ষিত মহিলা আসনে এনিয়ে দ্বিতীয়বার সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন তিনি।লালমনিরহাট-২ আসন থেকে নুরুজ্জামান আহমেদ এবারই প্রথম জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন।
নিজ মেধা, সততা ও মূল্যবোধ নিয়ে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন সদ্য শপথ নেওয়া মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীরা।মঙ্গলবার (১৪ জুলাই) সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে শপথগ্রহণ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন তারা।সদ্য শপথ নেওয়া মন্ত্রী নূরুল ইসলাম বিএসসি বলেছেন, যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয়, সেখানে সমস্যাগুলো চিহ্নিত করে তা সমাধানের করবো।প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ নেওয়া অ্যাডভোকেট তারানা হালিম বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমার ওপর যে আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করেছেন, নিজের সমস্ত শক্তি, শ্রম, মেধা, মূল্যবোধ ও সততা দিয়ে কাজ করে সেই বিশ্বাসের মর্যাদা রক্ষা করবো।এজন্য সবার সহযোগিতা চেয়েছেন তিনি।
তারানা হালিম বলেন, আমাকে যে মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বই দেওয়া হয়, প্রথম কাজই হবে সে মন্ত্রণালয়কে দুর্নীতিমুক্ত করা।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মানুষের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। আমরাও তার সঙ্গে মানুষের জন্য কাজ করে যেতে চাই, বলছিলেন নতুন প্রতিমন্ত্রী নূরুজ্জামান আহমেদ।এর আগে সন্ধ্যায় প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা নূরুল ইসলাম বিএসসি, স্থপতি ইয়াফেস ওসমান, স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল মন্ত্রী হিসাবে শপথ নেন।
আর অ্যাডভোকেট তারানা হালিম এবং নূরুজ্জামান আহমেদকে প্রতিমন্ত্রী হিসাবে শপথ পড়ান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিতিতে বঙ্গভবনে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠান হয়। আবুল মাল আবদুল মুহিত, আমির হোসেন আমু, তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী এসময় উপস্থিত ছিলেন।সংক্ষিপ্ত আয়োজনে দরবার হলে অনুষ্ঠিত নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের শপথ অনুষ্ঠানে তাদের পরিবারের সদস্য ছাড়া অন্য কাউকে দেখা যায়নি। মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞার পরিচালনায় অনুষ্ঠিত শপথ অনুষ্ঠানে মুখ্যসচিব আবুল কালাম আজাদ, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম উপস্থিত ছিলেন।গত কয়েকদিন ধরে মন্ত্রিসভায় রদবদলের গুঞ্জন চললেও কারা কারা শপথ নিচ্ছেন, সে বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে কিছু বলা হচ্ছিল না।মঙ্গলবার বিকালে বঙ্গভবনে শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতিতে নতুন মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীদের জন্য রাখা চেয়ারে নাম দেখে পাঁচজনের নাম নিশ্চিত হওয়া যায়।
শপথ নিতে বিকাল ৪টার দিকে বঙ্গভবনে ঢোকেন নুরুল ইসলাম বিএসসি। তার এক ঘণ্টা পর একে একে যান নুরুজ্জামান, তারানা হালিম ও ইয়াফেস ওসমান। সাড়ে ৫টার দিকে ঢোকেন আসাদুজ্জামান কামাল।গত বছর সরকার গঠনের পর শেখ হাসিনার মন্ত্রিসভায় এটাই কার্যত প্রথম রদবদল।২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মাধ্যমে টানা দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসার পর ওই বছরের ১২ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে নতুন মন্ত্রিসভা শপথ নেয়। তখন অধিকাংশ পুরোনো মন্ত্রীকে বাদ দিয়ে অপেক্ষাকৃত নতুন ও আগের সরকারের সময় দলের বাদ পড়া জ্যেষ্ঠ নেতাদের নিয়ে সরকার গঠন করা হয়।
ওই বছরের ২৬ ফেব্র“য়ারি প্রধানমন্ত্রী আরেক দফা তাঁর মন্ত্রিসভা সম্প্রসারণ করেন। সে সময় এ এইচ মাহমুদ আলীকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং নজরুল ইসলামকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া হয়। হজ নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্যের জন্য গত বছরের ১২ অক্টোবর আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে অপসারিত হন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন করা হয়।প্রসঙ্গত, বর্তমান মন্ত্রিসভায় ৩২ জন মন্ত্রী, মন্ত্রীর পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর একজন বিশেষ দূত ও পাঁচজন উপদেষ্টা, ২০ জন প্রতিমন্ত্রী এবং দুজন উপমন্ত্রী রয়েছেন।