দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৪ জুলাই: ৬ মাসেরও বেশি সময় কারাগারে থেকে অবশেষে জামিনে মুক্তি পেলেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। মঙ্গলবার ইফতারের সময় তিনি মুক্তি পান। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রিজন সেল থেকে বের হন তিনি। ছয় মাসের বেশি সময় ধরে কারাবন্দি ফখরুল গত এক মাস এ হাসপাতালেই চিকিৎসাধীন ছিলেন।ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সুপার ফরমান আলী জানান, জামিনের কাগজপত্র হাতে পাওয়ার পর বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের অস্থায়ী প্রিজন সেল থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টায় মির্জা ফখরুলকে মুক্তি দেওয়া হয়।
মুক্তির পর পঞ্চম তলার প্রিজন সেল থেকে ফখরুল বেরিয়ে এলে বিএনপির সহ দপ্তর সম্পাদক শামীমুর রহমান শামীম, সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক সাঈদ আহমেদসহ বিএনপি নেতা-কর্মী ভারপ্রাপ্ত মহাসচিবকে স্বাগত জানান। স্ত্রী রাহাত আরা বেগমও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।এরপর মির্জা ফখরুলকে হুইল চেয়ারে করে নামিয়ে অ্যাম্বুলেন্সে করে নিয়ে যাওয়া হয় গুলশানের ইউনাটেড হাসপাতালে।
তার মা ফাতেমা আমিন ওই হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। ফখরুলও সেখানেই চিকিৎসা নেবেন বলে পরিবারের সদস্যরা জানান।বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি। জামিন পাওয়ার পর সেখানেই সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন তিনি।ফখরুল বলেন, আমি দেশবাসীকে ধন্যবাদ জনাই। আমার অন্ত্যরীণ অবস্থায় আমার অসুস্থতার খবর তুলে ধরেছেন। এ ৬ মাসে আামার ১২ কেজি ওজন কমেছে। অন্তুত কিছুদিনের জন্য হলেও মুক্ত হয়েছে। চিকিৎসা নিয়ে দেশে ফিরে আসবো।
ফখরুলকে দেয়া হাইকোর্টের জামিন আদেশ সোমবার বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। সে মোতাবেক ৬ সপ্তাহের জামিন পেলেন তিনি। এই সময়ের মধ্যে ফখরুল চাইলে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বছরপূর্তিকে কেন্দ্র করে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে আটক হন মির্জা ফখরুল। এরপর গাড়ি ভাঙচুর, পোড়ানো ও নাশকতার অভিযোগে রাজধানীর পল্টন ও মতিঝিল থানায় দায়ের করা সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখায় পুলিশ।
এইচএসসি পরীক্ষা ও সিটি নির্বাচনের হাওয়ায় বিএনপি অবরোধ-হরতাল থেকে সরে এলে কমে আসে রাজনৈতিক উত্তাপ। সরকার পতনের আন্দোলনে নেমে ব্যর্থ হয়ে এখন দল পুনর্গঠনে মনোযোগী হয়েছে দলটি। কারাগার থেকে মুক্তি পেলে মির্জা ফখরুল বিএনপির পূর্ণাঙ্গ মহাসচিব হচ্ছেন বলে গুঞ্জন রয়েছে। ২০১১ সালের ১৬ মার্চ খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের মৃত্যুর পর থেকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব হিসেবে রয়েছেন ফখরুল। ফখরুলের আইনজীবী ও তার পরিবারের সদস্যরা বলেছিলেন, মির্জা ফখরুল ইসলামের হৃদযন্ত্রে চারটি ব্লক রয়েছে, এর তিনটিতে রিং বসানো হয়েছে। অর্থাৎ ৮০ ভাগ ব্লক হয়ে গেছে তার। এখন তার গলার ধমনিতে (নার্ভ) প্রতিবন্ধকতা ধরা পড়েছে।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার হন ফখরুল। এরপর নাশকতার সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এর মধ্যে পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের এক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান মির্জা ফখরুল।এরপর পল্টন থানার দুটি এবং মতিঝিল থানার এক মামলায় ১৮ জুন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে সেখানেও ফখরুলের জামিন বহাল থাকে।আর পল্টন থানার তিন মামলায় গত ২১ জুন হাই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফখরুলের জামিন মঞ্জুর করে। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে আদালত পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড করে ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেয়।
সেই মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে সোমবার আপিল বিভাগ ফখরুলের জামিন বহাল রাখে।পল্টন থানার এই তিন মামলায় ছয় সপ্তাহের জামিনের মেয়াদ শেষে ফখরুলকে আবার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।