রাজন হত্যার মূলহোতা কামরুল আটক সৌদিতে

দৈনিকবার্তা-সৌদি আরব, ১৩ জুলাই : সামিউল ‍আলম রাজন হত্যাকাণ্ডের মূল হোতা কামরুল ইসলামকে সৌদি আরবে আটক করে পুলিশে দিয়েছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। সোমবার (১৩ জুলাই) বাংলাদেশ সময় রাত আটটার দিকে জেদ্দার জামেয়া এলাকা থেকে তাকে আটক করে সৌদি পুলিশের হাতে সোপর্দ করা হয়।   বর্তমানে সৌদি আরব সফররত বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের আহবানে সাড়া দিয়ে প্রবাসীরা তাকে আটক করেন। বাংলাদেশ দূতাবাসের ভারপ্রাপ্ত কনসাল জেনারেল (জেদ্দা) মোকাম্মেল হোসেন দৈনিকবার্তাকে এ খবর নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, যেহেতু কামরুলের নামে সৌদি আরবে কোনো মামলা নেই, তাই সৌদি পুলিশ তাকে আটকে রাখবে না। তাকে বাংলাদেশে পাঠানোর প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

‘ভাইয়াপ মারাইসনা, যা এখান থেকে’

রাজন হত্যার হোতা কামরুল আটক সৌদিতেশিশু সামিউল ইসলাম রাজনকে পানি পান করাতে গ্লাসভর্তি পানি নিয়ে গিয়েছিলেন স্থানীয় বাসিন্দা আছমা বেগম। তখন নির্যাকারীদের অন্যতম কামরুল তাকে বলেন, ‘তোর দুঃখ লাগি গেছেনি! ভাইয়াপ মারাইসনা। যা এখান থেকে।’ এখনও ক্ষোভ বিরাজ করছে আছমা বেগমের বুকে। বর্বর নির্যাতনের দৃশ্য প্রত্যক্ষ করেছেন তিনি ও তার পরিবারের সদস্যরা। যেখানে রাজনকে নির্যাতন করা হয়েছিল, সেই গ্যারেজের পাশেই একটি ঝুঁপড়িঘরে পরিবার-পরিজন নিয়ে থাকেন তিনি। আছমা বেগম বলেন, স্বামী রাজমিস্ত্রির কাজে ভোরেই বেরিয়ে গেছেন। আমি বাসায় বাসায় ঝিয়ের কাজ করি। এদিনও সকালে উঠে কাজে যাচ্ছিলাম। তখন দেখতে পাই, কামরুল আর চৌকিদার ময়নাসহ ৫/৬ জন মিলে গ্যারেজের একটি খুঁটির সাথে বেঁধে বেধড়ক পেটানো হচ্ছে বাচ্চাটারে। তিনি বলেন, বাচ্চাটা আমায় দেখে খালা ডেকে বলে- ও খালা, একটু পানি খাওয়াও নাহ। তখন আমি গ্লাসে করে পানি নিয়ে যাই। কিন্তু কামরুল আমায় লাঠি দেখিয়ে বলে, ‘ভাইয়াপ মারাইসনা, যা এখান থেকে।’

এরপর আমার হাতের গ্লাস ছুড়ে ফেলে দেয়। বাচ্চাটারে নির্যাতনের খবর বিভিন্ন লোকজন ও পথচারীদের জানাই। কিন্তু ওরে বাঁচাতে কেউই এগিয়ে আসেনি। ঘটনাটির বর্ণনা পুলিশকেও দিয়েছেন উল্লেখ করে আছমা বেগম বলেন, আমারে মারে, মেরে ফেলুক। কিন্তু যা দেখেছি, তা পুলিশকেও বলেছি। হতে পারতো এই শিশুটি আমারই সন্তান। এদিকে, হত্যাকাণ্ডের পর ঘটনাস্থলের আশপাশ এলাকায় সুনসান নীরবতা বিরাজ করছে। বন্ধ রয়েছে দোকানপাটও। এলাকার লোকজনের সঙ্গেই কথা বলে জানা যায়, আতঙ্কে অনেকেই ওই এলাকা ত্যাগ করেছেন। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে চোর সন্দেহে ১৩ বছরের শিশু সামিউল আলম রাজনকে গত বুধবার (০৯ জুলাই) নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়। হত্যার পর ওইদিন দুপুরে একটি মাইক্রোবাসে করে (ঢাকা মেট্রো-চ-৫৪-০৫১৬) তার মরদেহ গুম করার চেষ্টা হয়। এ সময় শহরতলীর কুমারগাঁও এলাকা থেকে স্থানীয়দের সহায়তায় মুহিত আলমকে আটক করে জালালাবাদ থানা পুলিশ। সোমবার (১৩ জুলাই) মুহিত আলমকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন সিলেটের মহানগর হাকিম আদালত-২ -এর বিচারক ফারহানা ইয়াসমিন।

এর আগে আটকের পর মুহিত পুলিশের কাছে ১৬১ ধারায় জবানবন্দিতে রাজন হত্যার রোমহর্ষক বর্ণনা দেন। নির্যাতনকারীরাই শিশুটিকে পেটানোর ভিডিও ধারণ করেন এবং ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেন। ২৮ মিনিটের ওই ভিডিও ক্লিপ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়লে শুরু হয় তোলপাড়। সিলেটের কুমারগাঁওয়ে শিশু শেখ সামিউল আলম রাজনকে পিটি হত্যার অন্যতম আসামি মুহিত আলমের স্ত্রী লিপি বেগমকে আটক করেছে পুলিশ। সোমবার সন্ধ্যায় ইফতারের পর সদর উপজেলার বাদেয়ালী ভাইয়ারপাড় এলাকা থেকে আটক করা হয়। সিলেট সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) আলমগীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। রাজনকে হত্যার পর দিন (০৯ জুলাই) বাংলাদেশ বিমানের ফ্লাইট বিজি ৪০৪ করে সৌদিতে পালিয়ে যান কামরুল। এরপর বাংলাদেশের অনুরোধে সেখানে তাকে আটক করা হয় বলে জানিয়েছেন সিলেট ওসমানী আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের ইমিগ্রেশন কর্মকর্তারা।