দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১৩ জুলাই: রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা নাশকতার তিন মামলায়ও বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে দেওয়া হাইকোর্টের জামিন বহাল রেখেছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। ছয় সপ্তাহের মধ্যে তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।এর আগে অন্য তিন মামলায়ও জামিন বহাল থাকায় মুক্তি পেতে আর কোনো বাধা থাকলো না বলে জানিয়েছেন মির্জা ফখরুলের আইনজীবীরা। সোমবার (১৩ জুলাই) এ আদেশ দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ।
এর আগে আদালতের নির্দেশে ফখরুলের চিকিৎসায় গঠিত মেডিকেল বোর্ডের দেওয়া প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। তার উন্নত চিকিৎসা প্রয়োজন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন চিকিৎসকরা। নাশকতার কাজে উস্কানি, প্ররোচনা ও পরিকল্পনা অনুযায়ী পল্টন এলাকায় হরতালের মধ্যে গাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় গত ৪ ও ৬ জানুয়ারি এসব মামলা দায়ের করে পল্টন থানা পুলিশ।হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিতের আবেদন নিষ্পত্তি করে প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন চার সদস্যের আপিল বেঞ্চ সোমবার এই আদেশ দেয়।
এর ফলে এই বিএনপির নেতার মুক্তি পেতে আর কোনো আইনি বাধা নেই বলে তার আইনজীবীরা জানিয়েছেন।বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঁচ সদস্যের মেডিকেল বোর্ডের সুপারিশ অনুযায়ী স্বাস্থ্যগত অবস্থা বিবেচনায় নিয়ে চিকিৎসার জন্য ফখরুলকে ছয় সপ্তাহের এই জামিন দেওয়া হয়েছে।
পল্টন থানার এই তিন মামলায় জামিনের মেয়াদ শেষে ফখরুলকে আবার বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।ছয় মাস ধরে কারাবন্দি ফখরুল বর্তমানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে চিকিৎসাধীন।দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার হন ফখরুল। এরপর নাশকতার সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এর মধ্যে পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের এক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান মির্জা ফখরুল।
এরপর পল্টন থানার দুটি এবং মতিঝিল থানার এক মামলায় ১৮ জুন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে গেলে সেখানেও ফখরুলের জামিন বহাল থাকে।আর পল্টন থানার এই তিন মামলায় গত ২১ জুন হাই কোর্ট রুল নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত ফখরুলের জামিন মঞ্জুর করে। রাষ্ট্রপক্ষ এর বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে গেলে আদালত পাঁচ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড করে ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার নির্দেশ দেয়।
সে অনুযায়ী পীরক্ষা করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ রোববার আদালতে প্রতিবেদন দেয়।সোমবার আপিল আদালতে ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন মওদুদ আহমদ ও জয়নুল আবেদীন।অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও মোমতাজউদ্দিন ফকির এবং ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল একরামুল হক টুটুল ও খন্দকার দিলিরুজ্জামান।
আদেশের পর জয়নুল আবেদীন বলেন, মির্জা ফখরুলের বিরুদ্ধে সাতটি মামলার সবগুলোতেই জামিন হয়েছে। তার মুক্তিতে আর কোনো আইনগত বাধা নেই। খন্দকার মাহবুব বলেন, মেডিকেল রিপোর্টে বলা হয়েছে, মির্জা ফখরুলের উন্নত চিকিৎসা দরকার। ফলে চিকিসার জন্য তার বিদেশে যেতে এই মুহূর্তে বাধা নেই।
অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা বলেন, মির্জা ফখরুলের মেডিকেল রিপোর্ট পর্যালোচনা করে আপিল বিভাগ ছয় সপ্তাহের জামিন দিয়েছেন। এই সময়ের মধ্যে তিনি বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিতে পারেন। এরপর তাকে নিম্ন আদালতে আত্মসমর্পণ করতে হবে।স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় এই জামিন হওয়ায় ফখরুল অন্য কোনো কর্মকাণ্ডে অংশ নেওয়ার সুযোগ পাবেন না বলে মনে করেন রাষ্ট্রের এই আইন কর্মকর্তা।গত ২১ জুন ওই তিন মামলায় ফখরুলকে জামিন দেন বিচারপতি মো. রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ২৯ জুন জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করেন রাষ্ট্রপক্ষ। পরে সেটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত।
গত ২ জুলাই শুনানি শেষে ফখরুলের জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য ৫ জুলাই দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। কিন্তু ওই দিন আদেশ না দিয়ে ৮ জুলাই আদেশের দিন পুনর্ন্ধিারণ করেন। একই দিনের মধ্যে ফখরুলের অসুস্থতার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। ৮ জুলাই মেডিকেল প্রতিবেদন না আসায় আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মেডিকেল প্রতিবেদন এলে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।৯ জুলাই ফখরুলের অসুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। প্রতিবেদনে বলা হয়, মির্জা ফখরুলের যে শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তার সুচিকিৎসা দেশেই করা সম্ভব, দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।এরপর ফখরুলের চিকিৎসায় নতুন করে মেডিকেল বোর্ড গঠন ও রোববার (১২ জুলাই) পুনরায় প্রতিবেদন দেওয়ার আদেশ দেন আদালত। একইসঙ্গে তার জামিনের বিষয়ে আদেশ ফের পিছিয়ে সোমবার পুনর্র্নিধারণ করেন।গত ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাব থেকে মির্জা ফখরুলকে গ্রেফতার করে পুলিশ। বর্তমানে তিনি আদালতের নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে কারাবন্দি অবস্থায় চিকিৎসাধীন।
এদিকে, নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে হাইকোর্টের দেয়া জামিন আদেশ বহাল রাখায় তিনি বিদেশে চিকিৎসার জন্য যেতে পারবেন বলে মন্তব্য করেছেন অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন।তিনি বলেন, ফখরুল শারীরিকভাবে অসুস্থ হওয়ায় আদালত তাকে জামিন দিয়েছেন। আদালতের জামিন আদেশ পাওয়ায় পর তিনি চিকিৎসার জন্য বিদেশে যেতে পারবেন।সুপ্রিমকোর্টের আদেশের পর আদালত থেকে বেরিয়ে তিনি সাংবাদিকদের কাছে এ মন্তব্য করেন।এদিকে ফখরুলের জামিনের বিষয়ে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট মুরাদ রেজা বলেন, এই আদেশের ফলে আমি মনে করি ফখরুল ইসলাম আলমগীর শুধু চিকিৎসা সেবা ছাড়া অন্য কোনো অ্যাক্টিভিটিসে তার জড়ানোর সুযোগ নেই।