37989_195

দৈনিকবার্তা-ময়মনসিংহ, ১২ জুলাই: ময়মনসিংহে যাকাতের কাপড় নিয়ে গিয়ে পদদলিত হয়ে ২৭ জন নিহতদের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় আট আসামিকে তিন দিন করে রিমান্ডে দিয়েছে আদালত।রবিবার দুপুরে জেলার সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাবিব এই আদেশ দেন।আসামিরা হলেন-নূরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরীর মালিক মোহাম্মদ শামিম, তার পুত্র হেদায়েত, ম্যানজার ইকবাল, আরমান, আলমগীর, কর্মচারী আসাদুল, আব্দুল হামিদ ও গাড়িচালক পারভেজ।

এর আগে আটজনকে আদালতে হাজির করে সাতদিন করে রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। শুনানি শেষে আদালত তিন করে রিমান্ড মঞ্জুর করে।মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মুশফিকুর রহমান জানান, জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজনে হত্যা মামলার আট আসামির প্রত্যেকের বিরুদ্ধে এই রিমান্ড প্রার্থনা করা হয়েছে।এদিকে মালিকসহ আসামিদের মুক্তির দাবিতে নূরানী জর্দ্দা ফ্যাক্টরির শ্রমিকরা আদালত পাড়ায় বিক্ষোভ মিছিল করেছেন।নূরানি জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক শামীম তালুকদার ও তার ছেলেসহ আট আসামির মুক্তির দাবিতে আদালত প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ করেছে ফ্যাক্টরির কয়েকশ কর্মচারী ও স্বজনেরা। তারা অবিলম্বে শামীম তালুকদারের মুক্তি দাবি করেনরিমান্ড আবেদন শুনানির জন্য শামীম তালুকদারকে আদালতে আনার খবরে রোববার সকাল থেকে আদালত প্রাঙ্গণে জড়ো হতে থাকে কর্মচারী ও স্বজনেরা।

আদালতের গারদখানার সামনে তারা বিক্ষোভ করে। এ সময় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়ে। শামীম তালুকদারের মুক্তির জন্য অনেককে দুই হাত তুলে মোনাজাত করতেও দেখা যায়। এক পর্যায়ে পুলিশ এসে বিক্ষোভকারীদের আদালত প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে দেয়। বেলা সাড়ে ১২টার দিকে শামীম তালুকদার ও তার ছেলেসহ আট আসামির ৩ দিনের রিমান্ড মুঞ্জুর করেন ময়মনসিংহের ১নং আমলি আদালতের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আহসান হাবিব।রিমান্ডে নেয়ার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে আদালত প্রাঙ্গণে আবারো বিক্ষোভ শুরু করে কারখানার শ্রমিক কর্মচারী ও তাদের স্বজনেরা। পরে সেখান থেকেও পুলিশ বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিলে তারা জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নিয়ে সেখানেও বিক্ষোভ শুরু করে। সেখান থেকেই পুলিশ তাদের সরিয়ে দেয়।

1436685328

শহরের আকুয়া ৩৬ বাড়ি কলোনির বাসিন্দা ঝর্ণা বেগম জানান, শামীম সাহেব আমাদের মা-বাপ। তার সাহায্যেই আমরা শত শত গরীব বেঁচে আছি। আমি এ ঘটনার প্রত্যক্ষ সাক্ষী। শামীম সাহেব বার বার বলছিলেন তোমরা ধৈর্য ধরো। তোমাদের কাপড় কম পড়লে আমি আরেক ট্রাক কাপড় এনে তোমাদের দিব। তারপরও মানুষ কথা শুনেনি। যারা মারা গেছে তাদের নিজের দোষেই তারা মারা গেছে।

এখন দোষ পড়ছে মালিকের ওপর। আমাদের মাটির মতো মানুষকে রিমান্ডে নিছে। এটা আল্লার গায়েও সইবে না। আমরা আমাদের মালিকের মুক্তি চাই।বিক্ষোভে অংশ নেতা আকবর আলী জানান, নূরানি জর্দা ফ্যাক্টরির মালিক মানুষ মারার জন্য যাকাত দেয়নি, তিনি ৩৫ বছর ধরে যাকাত দিতেছেন। হঠাৎ একটি দুর্ঘটনায় এতো লোক মারা গেছে। তিনি জেলে গেলে কারখানা বন্ধ থাকবে। শত শত অসহায় কর্মচারী চাকরি হারাবে। আমাদের না খেয়ে থাকতে হবে। তার চেয়ে আমাদের মালিকের সাথে জেলে পাঠিয়ে দেন।

যাকাত ট্র্যাজেডিতে ২৭ প্রাণহানির ঘটনায় গ্রেপ্তার হওয়া শামীম তালুকদারসহ আট আসামিকে রিমান্ড শুনানি শেষে কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে কারাগারে পাঠানো হয়।উল্লেখ্য, ১০ জুলাই ভোরে ময়মনসিংহ জেলা শহরের অতুল চক্রবর্তী রোডের নূরানি জর্দা ফ্যাক্টরি থেকে জাকাতের কাপড় সংগ্রহ করতে গিয়ে পদপিষ্ট হয়ে ২৭ জনের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরো অন্তত ২০ জন। এ ঘটনায় ফ্যাক্টরি মালিক ও তার ছেলেসহ আট জনকে আটক করে পুলিশ। ওইদিনই সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ কোতোয়ালি মডেল থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রফিকুল ইসলাম বাদী হয়ে ফ্যাক্টরি মালিকসহ ৮ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেন। দায়েরকৃত মামলায় ওই ৮জনকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।