দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ জুলাই ২০১৫: মুস্তাফিজুর রহমান, নাসির হোসেনের দুর্দান্ত বোলিংয়ে লক্ষ্যটা ছোটই পেয়েছিল বাংলাদেশ। প্রাথমিক বিপর্যয় সামলে সৌম্য সরকার ও মাহমুদউল্লাহর দৃঢ়তভরা ব্যাটিংয়ে দ্বিতীয় ওয়ানেডেতে দক্ষিণ আফ্রিকাকে সহজেই হারিয়েছে মাশরাফি বিন মুর্তজারা। ৭ উইকেটের এই জয়ে সিরিজে ১-১ -এ সমতা ফিরিয়েছে বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপ ম্যাচের পর এই প্রথম দক্ষিণ আফ্রিকাকে কোনো ম্যাচে হারাল টাইগাররা।টানা চারটি আন্তর্জাতিক ম্যাচে হারের পর জয় পেল বাংলাদেশ। সর্বশেষ চার ম্যাচে মাশরাফিদের খেলায় আগ্রাসনের অভাব ছিল। এবার আগ্রাসী মেজাজে খেলেই অসাধারণ এক জয় পেল তারা।রোববার মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ৪ ওভার বাকি থাকতে ১৬২ রানে গুটিয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস।ওয়ানডেতে প্রথমে ব্যাট করে এই প্রথম বাংলাদেশের বিপক্ষে অলআউট হল তারা।জবাবে ২৭ ওভার ৪ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। এই জয়ে মাশরাফিদের চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলা নিয়ে সব ধরনের অনিশ্চয়তা কেটে গেছে।সফল বিশ্বকাপ মিশন, পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ের পর প্রোটিয়াদের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে হেরে বসা টাইগাররা দ্বিতীয় ম্যাচেই জয় তুলে নিয়েছে। ফলে, তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ ১-১ সমতায় রইল।
১৬৩ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাটিংয়ে নামা টাইগাররা তিন উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায়। স্বাগতিকরা ২৭.৪ ওভার খেলেই সহজ জয় তুলে নেয়।ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় অর্ধশতক হাঁকিয়ে অপরাজিত থাকেন সৌম্য সরকার। দলীয় ২৪ রানের মাথায় তামিম-লিটনের বিদায়ের পর জুটি গড়ে তুলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ আর ওপেনার সৌম্য । এ জুটি থেকে আসে ১৩৫ রান। যা প্রোটিয়াদের বিপক্ষে টাইগারদের যেকোনো উইকেটে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড জুটি।অভিষেকের পর থেকেই দুর্দান্ত খেলে চলা সৌম্য ৭৯ বলে ৮৮ রান করেন। তার ইনিংসে ছিল ১৩টি চার আর একটি ছক্কা।আর বিশ্বকাপের চমক জাগানিয়া ব্যাটসম্যান রিয়াদ তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ১৩তম অর্ধশতক হাঁকিয়ে ৬৩ বলে ৫০ রান করে বিদায় নেন।এর আগে দক্ষিণ আফ্রিকার ছুঁড়ে দেওয়া ১৬৩ রানের টার্গেটে ব্যাট হাতে নামেন টাইগার ওপেনাররা। সিরিজে সমতা আনার লক্ষ্যে টাইগারদের হয়ে ওপেনিংয়ে নামেন তামিম ইকবাল এবং সৌম্য সরকার। তবে, এ ম্যাচেও ব্যর্থতার পরিচয় দেন টাইগারদের অভিজ্ঞ ওপেনার তামিম ইকবাল। দলীয় ইনিংসের দ্বিতীয় আর রাবাদার প্রথম বলেই বোল্ড হয়ে ফেরেন ৫ রান করা তামিম।তামিম ইকবাল ফিরে গেলেও সৌম্য সরকার আর লিটন দাশ মিলে টাইগারদের রানের চাকা ঘুরাতে থাকেন। তবে, অভিষেক ম্যাচে ৬ উইকেট নেওয়া রাবাদার দ্বিতীয় শিকারে বিদায় নেন লিটন দাশ। চতুর্থ ওভারে বোল্ড হয়ে ফেরার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৭ রান। লিটন তার ইনিংসটি ১৪ বলে দুটি চার আর একটি ছয়ে সাজান।শক্তিশালী ব্যাটিং লাইনআপের প্রোটিয়ারা যেখানে দলীয় ৩২ ওভারে দলের শতক তুলে নিয়েছিল, সেখানে টাইগাররা মাত্র ১৬.৩ ওভার খেলেই দলীয় শতক তুলে নেয়।এর আগে তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে টাইগার বোলারদের অসাধারণ বোলিংয়ে মাত্র ১৬২ রানেই অলআউট হয়ে যায় দক্ষিণ আফ্রিকা। চার ওভার বাকী থাকতেই গুটিয়ে যায় হাশিম আমলা, ডি কক, জেপি ডুমিনি, ডেভিড মিলার, রিলে রুশো আর ফাফ ডু প্লেসিসদের মতো তারকা নির্ভর ব্যাটিং লাইনআপ।
ম্যাচের শুরু থেকেই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরে টাইগাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকে সফরকারীরা। টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজুর ও নাসির হোসেন তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। দু’টি উইকেট পান রুবেল হোসেন আর একটি করে উইকেট দখল করেন মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ।ম্যাচের শুরু থেকেই প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানদের চেপে ধরে টাইগাররা। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট খোয়াতে থাকে সফরকারীরা। টাইগারদের হয়ে মুস্তাফিজুর ও নাসির হোসেন তিনটি করে উইকেট তুলে নেন। দু’টি উইকেট পান রুবেল হোসেন আর একটি করে উইকেট দখল করেন মাশরাফি, মাহমুদুল্লাহ।কার্টার স্পেশালিস্ট মুস্তাফিজুর রহমানের বাউন্সে দলীয় পঞ্চম ওভারের প্রথম বলেই ফেরেন দক্ষিণ আফ্রিকান ওপেনার কুইন্টন ডি কক। বামহাতি এ ওপেনার সাব্বির রহমানের তালুবন্দি হয়ে আউট হওয়ার আগে মাত্র দুই রান করেন। এর আগে ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে মাশরাফির করা একটি বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যান হাশিম আমলা।দলীয় ১৬ রানের মাথায় ডি কককে বিদায় করে সফরকারীদের কিছুটা চাপের মধ্যেই রাখে টাইগার বোলাররা। উইকেটে থেকে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন ফাফ ডু প্লেসিস এবং হাশিম আমলা। তবে, ইনিংসের ১৩তম ওভারের প্রথম বলেই রুবেল স্ট্যাম্প উড়িয়ে দেন আমলার। এ জুটি থেকে আসে ২৯ রান। আমলা আউট হওয়ার আগে করেন ৩৭ বলে ২২ রান।দলীয় ৪৫ রানের মাথায় দুই ওপেনারকে ফিরিয়ে দেন মুস্তাফিজ এবং রুবেল হোসেন। দলের রানের চাকা সচল রাখার চেষ্টা করেন ডু প্লেসিস এবং রিলে রুশো। তবে, ইনিংসের ১৯তম ওভারে নাসির আক্রমণে এসে প্রথম বলেই রিলে রুশোকে বোল্ড করেন। আউট হওয়ার আগে ২৪ বল মোকাবেলা করে রুশো করেন মাত্র ৪ রান।
টপঅর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে প্রোটিয়াদের এগিয়ে নিতে থাকেন প্লেসিস-মিলার। ইনিংসের ২৪তম ওভারে শর্টফাইন লেগে দাঁড়ানো মাশরাফির দারুণ এক ক্যাচে সাজঘরের পথ ধরতে বাধ্য হন মিলার। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের বলে আউট হওয়ার আগে মিলার করেন ২৪ বলে মাত্র ৯ রান।আগের ওভারে ডেভিড মিলারকে ফিরিয়ে দেওয়া মাহমুদুল্লাহ নিজের পরের ওভারে দারুণ এক ঘূর্ণিতে কাবু করেন টাইগারদের গলার কাঁটা হয়ে উঠা প্লেসিসকে। আম্পায়ার আউট না দেওয়ায় রিভিউ নেন টাইগার দলপতি। তাতে ব্যর্থ হতে হয় টাইগার বাহিনীকে। টপঅর্ডারের চার ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে এগুতে থাকে প্রোটিয়ারা। তবে, সফরকারীদের বেশ ভালোই চেপে ধরে টাইগার বোলাররা। ইনিংসের ২৯তম ওভারে ক্রমেই টাইগারদের গলার কাঁটা হয়ে থাকা ডু প্লেসিসকে ফিরিয়ে দেন নাসির হোসেন। সৌম্যর তালুবন্দি হয়ে প্লেসিস আউট হওয়ার আগে করেন ৪১ রান।ফেভারিট হয়েই দ্বিতীয় ওয়ানডেতে সিরিজ নিশ্চিত করতে চাওয়া দ. আফ্রিকার দলীয় শতক হওয়ার আগেই টপঅর্ডারের পাঁচ ব্যাটসম্যান সাজঘরে ফেরেন।
দলীয় শতক করতে ৩২ ওভার লাগে প্রোটিয়াদের। দলীয় ১০০ রানের মাথায় মুস্তাফিজের বলে শর্টকাভারে সাব্বিরের তালুবন্দি হয়ে ফেরেন ডুমিনি। আউট হওয়ার আগে তার ব্যাট থেকে আসে ১৩ রান। এটি ছিল মুস্তাফিজের দ্বিতীয় শিকার।রুবেল হোসেনের দারুণ এ ডেলিভারিতে এলবি’র ফাঁদে পড়ে বিদায় নেন ক্রিস মরিস। সাত ব্যাটসম্যানকে হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়ে সফরকারীদের ব্যাটিং লাইনআপ। মাত্র ১১৬ রানের মাথায় নাসির, মুস্তাফিজ, মাহমুদুল্লাহ, রুবেল ফিরিয়ে দেন প্রোটিয়াদের সাত ব্যাটসম্যানকে।৪১তম ওভারের শেষ বলে রাবাদাকে বোল্ড করে আবারো টাইগার ভক্তদের মাতিয়ে তোলেন মুস্তাফিজ। এটি ছিল বাঁহাতি বোলারের তৃতীয় শিকার। এর আগে দলীয় ১১৬ রানের মাথায় সফরকারীদের সাত ব্যাটসম্যানকে ফিরিয়ে দেন টাইগার বোলাররা। দ. আফ্রিকার টেলএন্ডার ব্যাটসম্যান রাবাদাকে নিয়ে এগুনোর চেষ্টা করেন বেহারদিয়েন।এ জুটি থেকে আসে ২২ রান।দলীয় ৪৫তম ওভারে নাসির হোসেনের তৃতীয় শিকারে সাজঘরের পথ ধরেন কাইল অ্যাবোট। টাইগার এ অলরাউন্ডারের দারুণ এক ঘূর্ণিতে কাবু হয়ে এলবির ফাঁদে পড়েন অ্যাবোট। আর মাশরাফির বলে নাসির হোসেনের তালুবন্দি হয়ে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে ফেরেন ৩৬ রান করা বেহারদিয়েন।দক্ষিণ আফ্রিকার ইনিংস দেড়শ’ পার হয় অলরাউন্ডার ফারহান বেহারদিনের দৃঢ়তায়।৩৬ রান করা এই ব্যাটসম্যানকে সীমানায় নাসিরের ক্যাচে পরিণত করে অতিথিদের সব মিলিয়ে দ্বিতীয়বারের মতো অলআউট করতে অবদান রাখেন মাশরাফিও। কোনো উইকেট না পেলেও ভালো বোলিং করেন সাকিব। ১০ ওভারে ৩০ রান দেন এই বাঁহাতি স্পিনার। ম্যাচ সেরা হয়েছেন সৌম্য সরকার। আগামী বুধবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হবে তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে।এদিকে, দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিনম্যাচ ওডিআই সিরিজে দ্বিতীয়টিতে দুর্দান্ত জয় পাওয়ায় বাংলাদেশ ক্রিকেট দলকে প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো: আব্দুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াএবং স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।পৃথক এক বিবৃতিতে তারা বলেন, দেশের ক্রিকেটের উন্নয়নে সরকারের সর্বোচ্চ আন্তরিকতা এবং খেলোয়াড়দের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ ক্রিকেট আজ বিশ্বের বুকে মর্যাদাপূর্ণ অবস্থানে অধিষ্ঠিত হয়েছে।তারা আশা করেন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল আগামীতেও বিজয়ের এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখবে।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:দক্ষিণ আফ্রিকা: ৪৬ ওভারে ১৬২ (আমলা ২২, ডি কক ২, দু প্লেসি ৪১, রুশো ৪, মিলার ৯, দুমিনি ১৩, বেহারদিন ৩৬, মরিস ১২, রাবাদা ১০, অ্যাবট ৫, তাহির ১*; নাসির ৩/২৬, মুস্তাফিজ ৩/৩৮, রুবেল ২/৩৪, মাহমুদউল্লাহ ১/১৩, মাশরাফি ১/১৭) বাংলাদেশ: ২৭.৪ ওভারে ১৬৭/৩ (তামিম ৫, সৌম্য ৮৮*, লিটন ১৭, মাহমুদউল্লাহ ৫০, সাকিব ০*; রাবাদা ২/৪৫, অ্যাবট ১/২২ ) ।