5_149300

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১২ জুলাই ২০১৫: ঈদকে কেন্দ্র করে পুলিশের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বাহিনীর মহাপরিদর্শক (আইজিপি) এ কে এম শহীদুল হক।রোববার বিকেলে রাজধানীর গুলশানে পিংক সিটি শপিংমল পরিদর্শনকালে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা জানান।আইজিপি বলেন, রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকায় শপিংমলগুলোতে চাঁদাবাজির ব্যাপারে জিরো টলারেন্স নীতিতে রয়েছে পুলিশ। এমনকি কোনো পুলিশ সদস্য জড়িত থাকলে তাকেও ছাড় দেওয়া হবে না।নিরাপত্তা প্রসঙ্গে একেএম শহীদুল হক বলেন, রমজানের শুরু থেকে এ পর্যন্ত দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। আশা করছি ভবিষ্যতেও তা অব্যাহত থাকবে।ঈদে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার বাসা-বাড়ি ও মার্কেট খালি থাকে। ওই সময় নানা অপরাধ সংগঠিত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। এই আশঙ্কা থেকেই ঈদের আগের দিন, ঈদের দিন এবং এর পরদিন নিরাপত্তা জোরদারে পুরো প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে,বলেন তিনি।এদিকে,পুলিশ বা যে কারো বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া।

রোববার দুপুরে আজিমপুর গার্লস স্কুল অ্যান্ড কলেজে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) পক্ষ থেকে দুস্থদের মাঝে ঈদবস্ত্র বিতরণ শেষে উপস্থিত সাংবাদিকদের তিনি এ কথা জানান।কমিশনার বলেন, চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত পুলিশ সদস্য, পরিবহনের নেতাকর্মী বা রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে আমরা তা আমলে নেবো এবং তদন্তপূর্বক তাৎক্ষণিকভাবে অভিযুক্তের ব্যাপারে কঠোর ব্যবস্থা নেবো।অভিযুক্ত ব্যক্তি পুলিশ সদস্য হলেও তাকে বিন্দুমাত্র ছাড় দেওয়া হবে না বলেও জানান তিনি।আছাদুজ্জামান মিয়া আরো বলেন, চাঁদাবাজির অভিযোগ নেই, সেটা বলবো না। তবে সাম্প্রতিককালে এটি খুবই নগণ্য। কারণ, আমরা দীর্ঘদিন চাঁদাবাজির বিরুদ্ধে লড়াই করে যাচ্ছি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, রাস্তা ও দোকান থেকে যেন চাঁদাবাজি না করা হয়, সেজন্য আমাদের পোশাকি পুলিশের বাইরেও সাদা পোশাকে গোয়েন্দা পুলিশ কাজ করছেন। যখনই অভিযোগ পাবো, সে যেই হোক না কেন আমরা তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেবো।তিনি জানান, গত এক মাসে চাঁদাবাজ, ছিনতাইকারী, ভুয়া ডিবি, র‌্যাব, অজ্ঞান ও মলম পার্টির বিপুল সংখ্যক সদস্য গ্রেফতার হয়েছেন। এ কারণে এবার ঈদকে কেন্দ্র করে ডাকাতি, খুন, ছিনতাই, অজ্ঞান পার্টির দৌরাত্ম্য কম। অজ্ঞান পার্টির খপ্পরে পড়ে এর আগে অনেকেই প্রাণ হারাতেন। কিন্তু এখন সেগুলো নেই।সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি প্রত্যেকটি থানা ও পুলিশের কর্মকর্তার কর্মকাণ্ড গভীরভাবে নজরদারি ও খোঁজ-খবর রাখি। কোনো ধরনের চাঁদাবাজির আলামত বা অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করি।তিনি আরো বলেন, চাঁদাবাজি দু’একটা চুপিসারে হতে পারে। সেগুলোও আমাদের নজরে এলেই তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নিয়ে থাকি।

অন্যদিকে,প্রতি বছর ঈদ আসলেই বেড়ে যায় পকেটমার,অজ্ঞান পার্টি ও ছিনতাইকারীদের অপতৎপরতা। এবার এসব পকেটমার, অজ্ঞানপার্টির সদস্য আর ছিনতাইকারীদের চিহ্নিত করতে ক্রেতা বেশে গোয়েন্দা নজরদারি করতে মাঠে নেমেছে ঢাকা মহানগর মহিলা গোয়েন্দা পুলিশের কয়েকটি বিশেষ টিম। কেনাকাটার সময় ভিড়ের সুযোগে নারী,পুরুষের পকেট বা ব্যাগ থেকে টাকা মোবাইল বা মূল্যবান সামগ্রী হাতিয়ে নিয়ে যায় পকেটমার ও চোর চক্রের সদস্যরা। এছাড়া কখনো জিনিসপত্র কেনার নামে দোকান থেকেও হাতিয়ে নেয় মূল্যবান সামগ্রী।ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম বলেন, ঈদ বাজারে সাদা পোশাকে আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর পুরুষ সদস্যরাও যেমন গোয়েন্দা নজরদারি করছেন তেমনি নারী পুলিশ সদস্যরাও ক্রেতাবেশে মার্কেটে মার্কেটে ঘুরছেন। বিশেষ করে নিউমার্কেট এলাকা, এলিফ্যান্ট রোড, বসুন্ধরা সিটি, গুলিস্তান এবং মিরপুর এলাকায় বেশ কয়েকটি টিম কাজ করছে। বেশ কয়েকজন পকেটমার ও চোর চক্রের সদস্যকে ইতোমধ্যেই আটক করা হয়েছে বলে জানান তিনি। গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ঈদের কেনাকাটা বাড়তে থাকার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে পকেটমার, চোর ও অজ্ঞান পার্টির সদস্যদের তৎপরতা। এ সব চক্রে যেমন পুরুষ সদস্য রয়েছে তেমনি রয়েছে নারী সদস্যও।

সূত্রে আরো জানা যায়,সাধারণভাবে এদের দেখে বোঝার কোন উপায় নেই তারা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত।হাতে শপিং ব্যাগ নিয়ে কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকার ভান করে তারা। এছাড়া কখনো একা একা আবার কখনো দলবদ্ধভাবে অপকর্ম সংঘটন করে তারা। গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, চক্রের নারী সদস্যরা মূলত টার্গেট করে ভিড়ের মধ্যে কেনাকাটা করতে আসা নারীদের। বিশেষ করে যেসব নারীর কোলে বা সঙ্গে সন্তান থাকে তাদের পিছু নেয় এরা। সন্তান সামলানোর সময় কাঁধের ব্যাগ একটু আলগা হয়ে এলেই চেইন খুলে নগদ টাকা কিংবা মোবাইল ফোন নিয়ে সটকে পড়ে তারা।এছাড়া কখনো কখনো দলবদ্ধভাবে জটলা পাকিয়ে ব্যাগ থেকে পার্স হাতিয়ে নেয়ার সুযোগ সৃষ্টি করে এসব চক্রের সদস্যরা।গোয়েন্দা পুলিশের একটি সূত্র জানায়, পকেটমার বা চোর চক্রের সদস্যরা কেউ ধরা পড়লে নিজেদের দলের সদস্যরা এগিয়ে গিয়ে তর্ক জুড়ে দেয়। এ সময় কৌশলে তারা পার্স বা মোবাইল ফোনটি দূরে সরিয়ে দেয়। আবার দলবদ্ধভাবে কোনও দোকানে গিয়ে ব্যস্ততার ভাব দেখায় চক্রের সদস্যরা।

এক সঙ্গে অনেক জিনিস দেখতে চেয়ে দোকন কর্মচারীদের ব্যস্ততার সুযোগে কৌশলে হাতিয়ে নেয় মূল্যবান সামগ্রী।এ রকম বেশ কয়েকটি চক্র প্রতিদিন সকালে সাভার থেকে এসে রাজধানীর বিভিন্ন মার্কেটে পকেটমারি ও চুরি করে বলে জানা গেছে। গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার শেখ নাজমুল আলম বলেন, গোয়েন্দা পুলিশের একাধিক টিম মার্কেটগুলোতে নজরদারি করায় এবার তুলনামূলকভাবে পকেটমার ও চুরির ঘটনা কম ঘটছে। চাঁদ রাত পর্যন্ত পুলিশের টিম মার্কেটগুলোতে টহল দেবে বলেও জানান তিনি।সূত্র জানায়, পকেটমার বা চোর চক্রের পাশাপাশি ঈদ সামনে রেখে তৎপর অজ্ঞান পার্টির সদস্যরাও। সাধারণত একলা আসা ক্রেতাদের টার্গেট করে তারা। উপযাচক হয়ে আলাপের মাধ্যমে থাতির জমিয়ে কোনও কিছু খাইয়ে বা নাকে চেতনানাশক ওষুধ ধরে শিকারকে অচেতন করে তারা। পরে নিজেরাই স্বজন সেজে হাসপাতালে নেয়ার কথা বলে সর্বস্ব লুটে হতভাগ্য ব্যক্তিকে রাস্তায় ফেলে যায় তারা।এ সস্পর্কে রমনা জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শিবলী নোমান বলেন, ঈদ উপলক্ষ্যে গোয়েন্দা পুলিশের বেশ কয়েকটি টিম ছদ্মবেশে কাজ করছে। এর বাইরেও র‌্যাব এবং এসবির দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বিভিন্ন সময় অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। প্রতিদিনই প্রায় ২০ থেকে ২৫টি ছিনতাই ও পকেটমারের ঘটনা থানায় আসছে। তবে আগের থেকে এদের উপস্থিতি এখন অনেক কম।