দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ১১ জুলাই ২০১৫: ক্ষমতাসীন দল ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের ছবি সম্বলিত বিলবোর্ড দেখে নিজের অসন্তোষ জানিয়েছেন সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।আগামী সেপ্টেম্বর থেকে বিলবোর্ড সরাতে সাঁড়াশি অভিযান চালানো হবে বলে জানিয়েছেন পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের। বিলবোর্ড নিয়ে তিনি বিরক্তি প্রকাশ করে বলেন, এটি বাংলাদেশে নতুন দুর্ভোগ। নতুন একটা বিরক্তি। ব্যাঙের ছাতার মতো এই বিলবোর্ড গজিয়ে উঠছে।শনিবার সকালে টঙ্গীর চেরাগ আলী মার্কেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে সাংবাদিকদের সেতুমন্ত্রী এ কথা বলেন। এ সময় সড়ক ও জনপথের ঢাকা বিভাগীয় অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী মো. আফতাব উদ্দিন খান, গাজীপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এসএম মোস্তফা কামাল, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সবুজ উদ্দিন খান প্রমূখ উপস্থিত ছিলেন। এসব বিলবোর্ডে ব্যক্তি প্রচারের কারণে সরকারের উন্নয়ন কাজগুলোও চাপা পড়ে যাচ্ছে বলে মনে করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্য।
চট্টগ্রামে গিয়ে বিলবোর্ড নিয়ে অসন্তোষ জানিয়ে আসা ওবায়দুল কাদের শনিবার গাজীপুরে মহাসড়ক পরিদর্শনে গিয়ে আশপাশে বিলবোর্ড দেখে বিরক্তি প্রকাশ করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, বিলবোর্ড আজকে বাংলাদেশে একটা নতুন দুর্ভোগ। আমি মনে করি, এটা নতুন একটা বিরক্তি। ব্যাঙের ছাতার মতো এ বিলবোর্ড গজিয়ে উঠছে। এ অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় বিলবোর্ডে নেতার ছবি, নেতার সঙ্গে পাতি নেতা, উপনেতা, সিকি নেতা, সবার ছবি আছে। এর মধ্যে ছবি আছে অনেক চাঁদাবাজেরও।নেতাদের খুশি করার জন্য চাঁদাবাজরাও এসব বিলবোর্ডে নিজেদের ছবি দেয়। নিজেদের ছবি দেওয়ার জন্যই তারা এসব বিলবোর্ড বিভিন্ন জায়গায় স্থাপন করে। এসব বিলবোর্ডেও বিরুদ্ধে আমাদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।এসব বিলেবোর্ড সৌন্দর্যহানির পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিকেও ক্ষুণ্ণ করছে বলে মনে করেন তিনি। আমাদের অর্জনের সঙ্গে এ বিলবোর্ড মিলে না। আজকে বাংলাদেশের যে অর্জন, বিলবোর্ডগুলো সেটা ঢেকে ফেলছে। এখানে মনে হয়, নেতা উৎপাদনের বিশাল কারখানা এবং এ বিলবোর্ডের মাধ্যমে এ কারখানার উৎপাদন শোভা পাচ্ছে।মহাসড়কের পাশের অবৈধ এসব বিলবোর্ড উচ্ছেদে আগামী সেপ্টেম্বর থেকে সাঁড়াশি অভিযান শুরু হবে বলেও জানান তিনি।মন্ত্রী বলেন, অবৈধ ও অপ্রয়োজনীয় বিলবোর্ডে নেতার ছবি, নেতার সঙ্গে পাতিনেতা, উপনেতা, সিকিনেতা সবার ছবি আছে। এর মধ্যে অনেক চাঁদাবাজদেরও ছবি আছে। চাঁদাবাজরাও এসব বিলবোর্ডে নিজেদের ছবি দেয়। সেপ্টেম্বর থেকে বিলবোর্ড অপসারণে সাঁড়াশি অভিযান চলবে।
ওবায়দুল কাদের বলেন, ঢাকা-গাজীপুর সড়ক আগের যেকোনো সময়ের চেয়ে ভালো এবং দেশে সড়ক-মহাসড়কের অবস্থাও ভালো। জয়দেবপুর-ময়মনসিংহ, ঢাকা-চট্টগ্রাম চার লেনের কাজ প্রায় শেষের পথে।এ সময় বৃষ্টিতে কিছু কিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে জানিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, এ জন্য আমরা সবাই রাস্তায়। আমাদের সচিব, চিফ ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সব কর্মকর্তা শুক্রবার এবং শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও ঘরে ছিলাম না। আমরা রাস্তায় ছিলাম। এবার রাস্তায় যদিও সংকট নেই, এর পরও ঈদ পর্যন্ত ইঞ্জিনিয়ার, কর্মকর্তা, মনিটরিং টিম সবাই আমরা রাস্তায় আছি। কোনো অবস্থাতেই জনগণের দুর্ভোগ, ভোগান্তি হতে দেওয়া যাবে না।এবার ঈদে অতিরিক্ত ৫০৬টি বিআরটিসির বাস স্পেশাল সার্ভিসে যুক্ত করা হয়েছে। ৫৫টি বাস আপত্কালীন সমস্যার জন্য রাখা হয়েছে বলে মন্ত্রী জানান।ঈদের আগে গাজীপুরের টঙ্গীর চেরাগআলী মার্কেট এলাকায় ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক পরিদর্শন করেন সড়কমন্ত্রী।সারাদেশে সড়ক-মহাসড়ক বর্তমানে আগে যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো অবস্থায় আছে বলে দাবি করেন তিনি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে নিজের চেষ্টার কথাও তিনি বলেন। সাম্প্রতিককালে বর্যা-বৃষ্টিতে কিছু কিছু রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এজন্য আমরা সবাই রাস্তায়। আমাদের সচিব, চিফ ইঞ্জিনিয়ার থেকে শুরু করে সকল কর্মকর্তা শুক্রবার এবং শনিবার সরকারি ছুটির দিনেও ঘরে ছিলাম না। কোনো অবস্থাতেই জনগণের দুর্ভোগ, ভোগান্তি হতে দেওয়া যাবে না- এই পণ নিয়েই আমরা রাস্তায় বেরিয়েছি। যে কোনো মূল্যে মানুষের বাড়িতে যাওয়া এবং ফেরত আসা স্বস্তিদায়ক করতে হবে।
মন্ত্রী জানান, এবার ঈদে বিআরটিসির বিশেষ সার্ভিসে আরও ৫০৬টি বাস যুক্ত হচ্ছে। সেইসঙ্গে ৫৫টি বাস রাখা হয়েছে আপদকালীন সমস্যার জন্য।ঈদে বাসে অতিরিক্ত ভাড়া নিয়ে যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, অতিরিক্ত ভাড়া আদায় কিছু কিছু ক্ষেত্রে হয়। এ ক্ষেত্রে মালিক শ্রমিকরা বলেন, আমাদের গাড়ি যখন ফেরত আসে তখন খালি আসে।মহাসড়কে চাঁদাবাজির কিছু অভিযোগ পেয়েছেন জানিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে তা কঠোর হাতে দমনের আহ্বান জানান ওবায়দুল কাদের।আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর এই সদস্যের কাছে দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে দপ্তরবিহীন মন্ত্রী করার বিষয়েও জানতে চান সাংবাদিকরা। তিনি বলেন, বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর এখতিয়ার। তিনি কখন, কাকে কোথায় কাজে লাগাবেন, কাকে কখন রাখবেন, কাকে বাদ দিবেন তা সম্পূর্ণ তার এখতিয়ার।আমি আজকে মন্ত্রী হিসেবে বক্তব্য দিচ্ছি। প্রধানমন্ত্রী না চাইলে আগামীকাল আমাকেও চলে যেতে হবে। কাজেই এটার সঙ্গে দলের অভ্যন্তরীণ কোনো যোগ আছে কি না, এটা আবিষ্কার আমার মনে হয় কল্পকাহিনী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ রয়েছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, এখানে কোনো প্রকার বিভেদ, কোন্দল ও দ্বন্দ্ব এ যাবত কেউ লক্ষ্য করেনি।