ড.-আসাদুজ্জামান-রিপন

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ১১ জুলাই ২০১৫: গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত হরতাল-অবরোধে নাশকতার ঘটনার জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করেছে বিএনপি। ওই তিন মাসে গাড়িতে পেট্রোল বোমা ছুড়ে এবং আগুন ধরিয়ে মানুষ হত্যার জন্য খালেদা জিয়ার বিচার ট্রাইব্যুনালে করার পরিকল্পনা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানানোর প্রতিক্রিয়ায় এই দাবি করেছে দলটি।শনিবার দুপুরে রাজধানী নয়াপল্টন বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলটির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও দলের মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন একথা জানান।নির্দলীয় সরকারের অধীনে মধ্যবর্তী নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জোটের তিন মাসের আন্দোলনে নাশকতায় শতাধিক মানুষের মৃত্যু হয়, ধ্বংস হয় বহু গাড়ি। ওই সব ঘটনায় পুলিশের করা মামলায় খালেদা জিয়াসহ বিএনপি নেতা-কর্মীদের আসামি করা হয়েছে।অন্যদিকে বিএনপি চেয়ারপারসন দায় স্বীকার করে পুলিশকে দায়ী করেছেন।এর মধ্যেই গত বুধবার সংসদে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বোমা মেরে, আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার হুকুমদাতা হিসেবে খালেদা জিয়ার বিচারে সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন হবে।

বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, যে অভিযোগটি প্রধানমন্ত্রী ও সরকারের তরফ থেকে প্রায়ই তোলা হচ্ছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা প্রথম থেকেই একটি আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবি করে আসছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণার পরিপ্রেক্ষিতে আমরা আজ ওই দাবিটি পুনর্ব্যক্ত করছি।আন্তর্জাতিক তদন্ত দাবির কারণ ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, সরকার বলছে, ওইসব ঘটনার নির্দেশদাতা বেগম খালেদা জিয়া। আমরা বলছি, এটা বিএনপি করেনি, এর সঙ্গে আমাদের সংশ্লিষ্টতা নেই।সুতরাং এটা প্রমাণ করার জন্য বর্তমানে দলীয় প্রভাবাধীন প্রশাসন ও তদন্তকারী যে সংস্থা রয়েছে, তাদের কাছ থেকে প্রকৃত ন্যায়ভিত্তিক একটি ফলাফল প্রত্যাশা করা যায় না। সেজন্য আমরা দাবি করেছি, জাতিসংঘের তত্ত্বাবধানে একটি আন্তর্জাতিক সংস্থার মাধ্যমে ঘটনার তদন্ত করা হোক, কারা ওসবের সঙ্গে দায়ী।পুলিশকে দায়ী করে খালেদা জিয়ার বক্তব্যের বিষয়ে রিপন বলেন, উনার মতো গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় বা পদে থাকা ব্যক্তিরা দায়িত্বের বাইরে কোনো কথা বলেন না। আমার দলের নেত্রী যে অভিযোগটি করেছেন, নিজ দায়িত্ব নিয়েই কথা বলেছেন।স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব থেকে সরানোর কারণ হিসেবে নতুন প্রকল্প নিয়ে সরকারের সঙ্গে সৈয়দ আশরাফের দ্বন্দ্বের কথা উল্লেখ করেছে বিএনপি। গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, একনেক’র একটি প্রকল্প হাতে নিয়েছে সরকার, প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য প্রতিটি সংসদ সদস্যকে ২০ কোটি টাকা করে দেওয়া হবে। যেখানে আশরাফের আপত্তি ছিল। এ কারণে তিনি গত একনেক সভায় উপস্থিত ছিলেন না। নৈতিকভাবে তিনি এটা ঠিক করেছেন।

সৈয়দ আশরাফকে সরানোর প্রসঙ্গে বিএনপির এ মুখপাত্র বলেন, আওয়ামী লীগের এটা নিজস্ব বিষয়। তবে আমার জানা মতে মন্ত্রী হওয়ার জন্য তার কোন আগ্রহ ছিল না। তবে তার মন্ত্রণালয় থেকে অব্যাহতি প্রসঙ্গে সরকার ও সৈয়দ আশরাফুল ইসলামকে বিষয়টি স্পষ্ট করা উচিত বলেন মনে করেন তিনি।গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত হলে অশুভ শক্তি আসতে পারে- সৈয়দ আশরাফুলের এ বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ বক্তব্যের জন্য তাকে ধন্যবাদ জানাই। তবে অশুভ শক্তির উদ্ভব গড়বে কিনা জানি না, তবে বিকল্প শক্তির উত্থান হতে পারে।আওয়ামী লীগ এ পর্যন্ত কোন নির্বাচন বয়কট করেনি- আশরাফুল ইসলামের এ বক্তব্যের তীব্র সমালোচনা করে রিপন বলেন, আমার মনে হচ্ছে রাজনীতি সম্পর্কে আশরাফুলের কম ধারণা রয়েছে। কারণ আওয়ামী লীগ ১৯৮৮ সালে নির্বাচনে যায়নি এবং ২০০১ সালে বিএনপির অধীনে যে নির্বাচন হয়েছিল সেখানে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েও নির্বাচনে অংশ নেননি।সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার জিয়াউর রহমান, সহ সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, সহ দপ্তর সম্পাদক আসাদুল করিম শাহীন উপস্থিত ছিলেন।