দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৯ জুলাই: গৃহযুদ্ধ পীড়িত সিরিয়া থেকে ৪০ লাখের বেশি লোক পালিয়ে গেছে। এই বিপুল সংখ্যক মানুষ এখন সিরিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নিয়েছে। এদের মধ্যে শুধু গত ১০ মাসেই ১০ লাখ লোক দেশ ছেড়েছে।বৃহস্পতিবার জাতিসংঘ একথা জানিয়েছে। খবর এএফপি’র।
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক প্রধান কর্মকর্তা অ্যান্টোনিও গুটারেস সতর্ক করে বলেছেন, এক প্রজন্মের মধ্যে কোন একটি যুদ্ধে এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক মানুষের শরণার্থী হওয়ার ঘটনা।তিনি আরো বলেন, ‘বিশ্বকে এই শরণার্থীদের সহায়তা দেয়া প্রয়োজন। কিন্তু এর পরিবর্তে এরা অত্যন্ত শোচনীয় অবস্থায় রয়েছে এবংদারিদ্রের কষাঘাতে জর্জরিত হচ্ছে।জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থা (ইউএনএইচসিআর) জানিয়েছে, তুরস্কে নতুন করে সিরীয় শরণার্থী আসায় পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে দেশটির শরণার্থীর সংখ্যা ৪০ লাখ ১৩ হাজার অতিক্রম করেছে।ইউএনএইচসিআর জানিয়েছে, মাত্র ১০ মাস আগে ২০১৩ সালের আগস্টের শেষ নাগাদ সিরিয়ার নিবন্ধিত শরণার্থী ৩০ লাখে পৌঁছেছিল।সংস্থাটি আরো জানায়, যেভাবে সিরিয়ার বাসিন্দারা দেশত্যাগ করছে তা যদি অব্যাহত থাকে, তাহলে চলতি বছরের শেষ নাগাদ এই সংখ্যা ৪২ লাখ ৭০ হাজারে পৌঁছানোর আশঙ্কা করা হচ্ছে।
ইউএনএইচসিআরর এক নারী মুখপাত্র বলেন, ইতোমধ্যেই সংস্থাটি ২৫ বছরের মধ্যে কোন একটি যুদ্ধে এই বিপুল সংখ্যক শরণার্থী সংকটের সম্মুখীন হয়েছে। ১৯৯২ সালে আফগান শরণার্থীর পর এটাই সবচেয়ে বেশি সংখ্যক শরণার্থীর দেশত্যাগের ঘটনা। ওই সময় আন্তর্জাতিক সংস্থাটি প্রায় ৪৬ লাখ শরণার্থীকে সহায়তা প্রদান করেছিল।২০১১ সালের মার্চ মাসে সিরিয়ায় সরকারবিরোধী বিক্ষোভ শুরুর পর থেকে দেশটিতে ২ লাখ ৩০ হাজারের বেশি লোক মারা গেছে।সিরিয়ার গৃহযুদ্ধের কারণে দেশত্যাগীদের পাশাপাশি ৭৬ লাখ মানুষ দেশটির অভ্যন্তরেই উদ্বাস্তু অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে।
ইউএনএইচসিআর জানায়, এদের অনেককে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হচ্ছে। তারা এমন স্থানে আশ্রয় নিয়েছে যে সেখানে সহায়তার জন্য পৌঁছানো দুঃসাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।সিরিয়ার বাসিন্দারা গৃহযুদ্ধের কারণে সৃষ্ট ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে এতটাই বেপরোয়া হয়ে পড়েছে যে ২০১৫ সালের প্রথমার্ধে যে ১ লাখ ৩৭ হাজার মানুষ বিপদ সংকুল ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইউরোপ পৌঁছেছে, তার এক তৃতীয়াংশই সিরিয়ার বাসিন্দা।
সিরিয়ার আলেপ্পো প্রদেশে সংঘাত সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় সেখান থেকে স্থানীয় বাসিন্দারা ব্যাপকভাবে দেশত্যাগ করতে পারে এই আশঙ্কায় তুরস্ক যখন একটি বড় ধরনের শরণার্থী শিবির স্থাপন করতে যাচেছ, ঠিক সেই সময়ে বৃহস্পতিবারের এই ঘোষণাটি এলো। তুরস্ক ইতোমধ্যেই প্রায় ১৮ লাখ সিরীয় শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছে। দেশটিতে নতুন স্থাপিত হতে যাওয়া ওই আশ্রয় শিবিরে ৫৫ হাজার শরণার্থীর স্থান সংকুলান হবে।
আরো ১১ লাখ ৭০ হাজার সিরীয় শরণার্থী লেবাননে আশ্রয় চেয়েছে।এদিকে জর্দানে ৬ লাখ ২৯ হাজার, ইরানে প্রায় আড়াই লাখ, মিশরে প্রায় ১ লাখ ৩২ হাজার ৫০০ ও উত্তর আফ্রিকার দেশগুলোতে ২৪ হাজারের বেশি সিরীয় শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছে।ইউএনএইচসিআর আরো জানায়, ইউরোপের দেশগুলোতে প্রায় ২ লাখ ৭০ হাজার সিরীয় আশ্রয় চেয়েছে।