wMnmnZb„cU…-o„wg„

দৈনিকবার্তা-সিরাজগঞ্জ,লৌহজং,(মুন্সীগঞ্জ), ৯ জুলাই: পদ্মা সেতু প্রকল্প নদী ভাঙ্গন ও উত্তাল পদ্মার দাপাদাপি ছাপিয়ে পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে৷ তবে নাব্য সঙ্কটে ভারি যানবাহন পদ্মা পাড়ি দিতে না পারায় জাজিরা প্রানত্মে সেতুর কাজে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটছে৷ ইতোমধ্যে মূল সেতুর ১০.৬২ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে৷ অক্টোবরের শেষের দিকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় পদ্মা সেতুর পাইলিং কাজের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন৷ প্রধানমন্ত্রীর আগমন কেন্দ্র করে এখানে নির্মাণ করা হয়েছে বিশেষ কটেজ৷

সেতু প্রকল্প ব্যবস্থাপক ও নির্বাহীপ্রকৌশলী দেওয়ান মোঃ আব্দুল কাদের জানান, পদ্মা সেতুর কাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে চলছে৷ বেঁধে দেয়া সময়ের আগেই প্রতিটি কাজ শেষ হচ্ছে৷ তাই সিডিউল অনুযায়ী কাজ চলমান হচ্ছে ৷ ইতোমধ্যে দশটি টেস্ট (পরীক্ষামূলক) পাইলিংয়ের মধ্যে তিনটি টেস্ট পাইলিংয়ের কাজ শেষ হয়েছে৷ ১২ ভায়াডাক্টের মধ্যে চারটির কাজ শেষ হয়েছে৷ এসব টেস্ট পাইলের ওপর তিন হাজার টন ওজন চাপিয়ে পরীক্ষা করা হচ্ছে৷ তবে পদ্মার বালু অত্যধিক সরু হওয়ায় এ পরীক্ষায় কিছুটা টেকনিক্যাল সমস্যা হচ্ছে৷ তবে এটি খুব বড় কিছু নয়৷ অচিরেই সমাধান হবে৷ ৩ মিটার ডায়ার কনস্টাবিলিটি পাইল ফেব্রিকেশনের কাজ চলছে৷ গত জুনের হিসাব অনুযায়ী এ পর্যনত্ম মূল সেতুর ১০.৬২ ভাগ কাজ সম্পূর্ণ হয়েছে৷ তিনি জানান, নবেম্বরে মূল পাইলিং কাজ শুরম্নর কথা থাকলেও এর আগেই অক্টোবরের শেষের দিকেই তা করার সম্ভাবনা রয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী এ কাজের উদ্বোধন করবেন বলে আশা করা হচ্ছে৷ ইতোমধ্যে পদ্মা সেতু সার্ভিস এরিয়ায় মাওয়ায় ভিভিআইপি কটেজ বরাদ্দ দেয়া হয়েছে৷ ১০ নম্বর কটেজটি প্রধানমন্ত্রীর আগমন উপলক্ষে প্রস্তুত করা হয়েছে৷

এদিকে নাব্য সঙ্কটে ভারি যানবাহন পদ্মা পাড়ি দিতে না পারায় জাজিরা প্রানত্মে সেতুর কাজে সাময়িক ব্যাঘাত ঘটছে৷ তবে ঈদের পূর্বেই তা সমাধান হয়ে যাবে বলে আশা করেছেন নির্বাহী প্রকৌশলী৷ তিনি বলেন, পদ্মার মাঝের চরে পানি কম থাকায় পদ্মা সেতুর কাজে ব্যবহৃত ভাসমান ভারি ক্রেন নদীর ওপারে জাজিরা প্রানত্মে যেতে পারছে না৷ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না মেজর ব্রিজের নিজস্ব ড্রেজারের মাধ্যমে চ্যানেলে ড্রেজিং করে ক্রেনসহ ভারি যন্ত্রপাতিগুলো পদ্মার ওপারে নিয়ে যাওয়া হবে এবং তা ঈদের আগেই সম্পন্ন করা হবে৷

পদ্মা সেতু প্রকল্পের কনস্ট্রাকশন এলাকায় নদীর ভাঙ্গন দেখা দিলেও তা সেতুর কাজে তেমন কোন বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি৷ ভাঙন ঠেকাতে ইতোমধ্যে ১ লাখ ৫৬ হাজার জিও ব্যাগভর্তি বালু নদীতে ফেরা হয়েছে৷ ঈদের আগে সাড়ে তিন লাখ জিও ব্যাগ পদ্মায় ফেলা হবে৷ আপাতত ওই এলাকায় ভাঙ্গন নেই৷ তার পরেও ভাঙ্গনের গতিবিধি আগামী তিন মাস পর্যবেক্ষণ করা হবে৷ সেজন্য এক লাখ জিও ব্যাগ প্রসত্মুত রাখা হয়েছে৷ আপত্‍কালীন সময়ে এজিও ব্যাগ দিয়ে ভাঙ্গন মোকাবেলা করা হবে৷

এদিকে পদ্মা পাড়ে স্বপ্নের ঝিলিক মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে শুরু করেছে৷ উন্মোচিত হতে শুরু করেছে সম্ভাবনার দ্বার৷ সেতুর দুই প্রানত্মে হংকংয়ের মতো আধুনিক নগরী গড়ে তুলতে সরকার হাতে নিয়েছে মহাপরিকল্পনা৷ বেশ কয়েকটি স্টেডিয়ামের সমন্বয়ে গড়ে তোলা হবে অলিম্পিক ভিলেজ৷ থাকবে ক্রিকেট স্টেডিয়াম ও বিশ্বমানের আধুনিক স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও মেডিক্যাল কলেজের মতো বড় বড় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান৷ গড়ে তোলা হবে আধুনিক শিল্পনগরী৷ পর্যটকদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা দিতে গড়ে তোলা হবে বিশ্বমানের পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র৷ বাদ যাবে না মসজিদ-মাদ্রাসাও৷ আনত্মর্জাতিক মানের কনভেনশন সেন্টার তৈরির মাধ্যমে ভবিষ্যতে আনত্মর্জাতিক বাণিজ্যমেলাও এ পদ্মা পাড়ের নগরীতে করার পরিকল্পনা করছে সরকার৷ আর এ সকল কিছুই হচ্ছে দেশের সর্বাধিক গুরম্নত্বপূর্ণ পদ্মা সেতুকে ঘিরে৷ গংশিস্নষ্ট সূত্রে জানা যায়, পদ্মা পাড়ে সরকার ভিন্ন ভিন্ন নগরী গড়ে তোলার মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ জনসাধারণের বসবাসের জন্য গড়ে তোলা হবে আধুনিক আবাসিক শহর৷ আবার শিল্প প্রতিষ্ঠানের জন্য গড়ে তোলা হবে আধুনিক অসংখ্য ইন্ডাস্ট্রিয়াল জোন৷ শিল্প ও নগরায়ন শুধু ঢাকাকেন্দ্রিক থাকবে না৷

ঢাকা শহরকে আরও বড় আকারে ছড়িয়ে দিতে সরকার এ মহাপরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ ভিন্ন ভিন্ন শহরে সকল ধরনের আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ থাকবে মসজিদ-মাদ্রাসা৷ পদ্মাপাড়ে গড়ে তোলা হবে পর্যটন ও বিনোদন কেন্দ্র৷ এসব কেন্দ্রে থাকবে দৃষ্টি নন্দন লেক, পুকুর৷ আর এসব ঘিরে সৃষ্টি হবে বিপুল কর্ম সংস্থানের৷ তাই পদ্মা সেতুর কাজের পাশাপাশি পদ্মা পাড়ের এ শহর ও সেতু এলাকায় দ্রুত যাতায়াতের জন্য সরকার রাজধানী ঢাকার শানত্মিনগর ও জিরো পয়েন্ট থেকে বাবুবাজার ব্রিজ হয়ে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল আবাসিক এলাকার ঢাকা-মাওয়া মহাসড়ক পর্যনত্মফ্লাইওভার নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে৷ এ ফ্লাইওভার হলে ঢাকাবাসী পদ্মাপাড়ের এ শহরে আসতে তথা দক্ষিণাঞ্চলের ২৩ জেলার মানুষকে ঢাকায় যেতে আর যানজটে পড়তে হবে না৷ তাছাড়া রেললাইনও তৈরি হচ্ছে পদ্মা সেতুকে ঘিরে৷ দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে রেলপথে সরাসরি যোগাযোগের ক্ষেত্রে পদ্মা সেতুতে রাখা হয়েছে রেল যাতায়াত ব্যবস্থা৷ সরকারের কথা অনুযায়ী ২০১৮ সালের মধ্যে পদ্মা সেতু খুলে দিলে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের ভোগান্তির অবসান ঘটবে৷ দেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধি আরেক দাপ এগিয়ে যাবে৷