001_148665

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ জুলাই ২০১৫: বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের চিকিৎসায় নতুন করে মেডিকেল বোর্ড গঠনের আদেশ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। একই সঙ্গে রাজধানীর পল্টন থানায় দায়ের করা নাশকতার তিন মামলায় তার জামিনের বিষয়ে আদেশ পিছিয়ে আগামী সোমবার (১৩ জুলাই) পুননির্ধারণ করা হয়েছে।বৃহস্পতিবার সকালে প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার সদস্যের পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।এর আগে ফখরুলের অসুস্থতার বিষয়ে মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দেয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। আদেশ দেওয়া হয়। প্রাপ্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মির্জা ফখরুলের যে শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তার সুচিকিৎসা দেশেই করা সম্ভব, দেশের বাইরে যাওয়ার প্রয়োজন নেই।প্রতিবেদন উপস্থাপন করে শুনানিতে রাষ্ট্রপক্ষে অংশ নেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। মির্জা ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন। ফের মেডিকেল বোর্ড গঠন করে আগামী রোববার আদালতে পুনরায় মেডিকেল প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে। সোমবার এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে।

গত ২১ জুন ওই তিন মামলায় ফখরুলকে জামিন দেন বিচারপতি মো. রেজা-উল হক ও বিচারপতি মো. খসরুজ্জামানের হাইকোর্ট বেঞ্চ। গত ২৯ জুন জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদনটি করেন রাষ্ট্রপক্ষ। পরে সেটি পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে পাঠিয়ে দেন চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর আদালত।গত ২ জুলাই শুনানি শেষে ফখরুলের জামিন বিষয়ে আদেশের জন্য ৫ জুলাই দিন ধার্য করেন আপিল বিভাগ। কিন্তু ওই দিন আদেশ না দিয়ে বুধবার (০৮ জুলাই) আদেশের দিন পুননির্ধারণ করেন। একই দিনের মধ্যে ফখরুলের অসুস্থতার বিষয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে মেডিকেল প্রতিবেদন দাখিল করতে বলেন। বুধবার মেডিকেল রিপোর্ট না আসায় আপিল বিভাগ বলেছিলেন, মেডিকেল রিপোর্ট এলে এ বিষয়ে আদেশ দেওয়া হবে। ফলে নাশকতার তিন মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব ফখরুলের জামিন থাকবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত আগামী সোমবার পর্যন্ত ঝুলে গেল। ১৩ জুলাই বিষয়টি আবার আপিল বেঞ্চের কার্যতালিকায় আসবে বলে আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে। ফখরুলকে হাই কোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে রাষ্ট্রপক্ষের করা আবেদনের বিষয়ে সর্বোচ্চ আদালতের সিদ্ধান্ত তখনই জানা যাবে।

ছয় মাস ধরে কারাবন্দি ফখরুল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়েই চিকিৎসাধীন। ওই হাসপাতালেই গত ৫ মে ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর ছয় সদস্যের মেডিকেল বোর্ড জানিয়েছিল, তার সমস্যা গুরুতর নয়।কিন্তু এর এক মাসের মাথায় ফখরুল কাশিমপুর কারাগারে অসুস্থ হয়ে পড়লে আদালতের নির্দেশে ১৩ জুন তাকে বঙ্গবন্ধু মেডিকেলের প্রিজন ওয়ার্ডে ভর্তি করা হয়।এরপর পল্টন থানায় নাশকতার তিন মামলায় গত ২১ জুন হাই কোর্ট মির্জা ফখরুলের অন্তর্র্বতীকালীন জামিন দেয়। কিন্তু সেই জামিনের জন্য চিকিৎসকদের যেসব নথি তার আইনজীবীরা আদালতে দিয়েছিলেন, তা পুরনো দাবি করে চেম্বার আদালতে জামিন স্থগিতের আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।চেম্বার বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিষয়টি শুনানির জন্য আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে পাঠিয়ে দিলে গত ৫ জুলাই প্রধান বিচারপতি নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চে শুনানি হয়। সর্বোচ্চ আদালত তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ডে’ ফখরুলের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে প্রতিবেদন দিতে বলে। সে অনুযায়ী বঙ্গবন্ধু মেডিকেলে স্বাস্থ্য পরীক্ষার প্রতিবেদন আদালতে জমা দেওয়ার পর বৃহস্পতিবার তার আপিল বেঞ্চে উপস্থাপন করা হয়।

আদালতে ফখরুলের পক্ষে শুনানি করেন খন্দকার মাহবুব হোসেন। তার সঙ্গে ছিলেন জয়নুল আবেদীন ও সগির হোসেন লিওন। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম। তার সঙ্গে ছিলেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মোমতাজউদ্দিন ফকির।খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, তিন সদস্যের মেডিকেল বোর্ড’ স্বাস্থ্য পরীক্ষার যে প্রতিবেদন দিয়েছে তাতে ফখরুলের কিছু সমস্যার পরীক্ষা হয়নি।এরপর আপিল বিভাগ কার্ডিওলজির একজন, ভাস্কুলার সার্জারির দুইজন, রেসপিরেটরি মেডিসিনের একজন এবং জেনারেল সার্জারির একজন বিশেষজ্ঞ নিয়ে মেডিকেল বোর্ড গঠন করে পূর্ণাঙ্গ স্বাস্থ্য পরীক্ষার এই নির্দেশ দেয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের বর্ষপূর্তি ঘিরে বিএনপির আন্দোলনের মধ্যে ৬ জানুয়ারি জাতীয় প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনের পর গ্রেপ্তার হন ফখরুল। এরপর নাশকতার সাতটি মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।বিচারিক আদালতে এসব মামলায় জামিন না পেয়ে হাই কোর্টে যান ফখরুলের আইনজীবীরা। এর মধ্যে পল্টন থানায় গাড়ি পোড়ানো, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের এক মামলায় গত ১৬ এপ্রিল হাই কোর্ট থেকে ছয় মাসের জামিন পান মির্জা ফখরুল।এরপর পল্টন থানার দুটি এবং মতিঝিল থানার এক মামলায় ১৮ জুন পুলিশ প্রতিবেদন দাখিল পর্যন্ত তাকে জামিন দেয় হাই কোর্ট। আর পল্টন থানার এই তিন মামলায় অন্তবর্তীূকালীন জামিন মঞ্জুর হয় ২১ জুন।রাষ্ট্রপক্ষ ১৮ জুনের আদেশ স্থগিতে আপিল বিভাগে গেলে সেখানেও ফখরুলের জামিন বহাল থাকে। বর্তমানে ২১ জুনের আদেশের বিষয়টি আপিল আদালতের বিবেচনাধীন।