2015-07-09_5_94544

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৯ জুলাই ২০১৫: সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার কাছে টুয়েন্টি টুয়েন্টির প্রথম পরীক্ষায় হারের স্বাদ পেয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। সেই তিক্ত স্বাদ সাথে নিয়েও ওয়ানডেতে প্রোটিয়াসদের সামনে উজ্জীবিত বাংলাদেশ। হারের পরও কেন উজ্জীবিত? এমন প্রশ্ন ঘুরপাক খাওয়াটাই স্বাভাবিক। কিন্তু এই ওয়ানডে ফরম্যাটেই এখন অনেক বেশি সাহসী টাইগাররা। সাম্প্রতিক পারফরমেন্স তেমন কথাই বলছে। সেই সব পারফরমেন্স থেকে উজ্জীবিত হয়ে সাহসী রুপেই আগামীকাল তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে সফরকারী দক্ষিণ আফ্রিকার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ। মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে বেলা ৩টায় শুরু হবে বাংলাদেশ ও দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ওয়ানডে।বিশ্বকাপের আগে নিজেদের ঝালিয়ে নেয়ার উপলক্ষ হিসেবে দেশের মাটিতে জিম্বাবুয়েকে সামনে পায় বাংলাদেশ। সেখানে জিম্বাবুয়েকে ৫-০ ব্যবধানে হারিয়ে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। এই জয়কে পুঁিজ করেই বিশ্বকাপের মত মঞ্চে ব্যাট-বল হাতে লড়াই করতে শামিল হয় মাশরাফির বাংলাদেশ। সেখানে পারফরমেন্সে ঝলমল ছিলো মাহমুদুল্লাহ-রুবেলরা। ফলে বিশ্বকাপে প্রথমবারের মত কোয়ার্টারফাইনালে নাম লেখায় বাংলাদেশ।

শেষ আটে ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে নিজেদের উজার করে দিতে উন্মুখ হয়েছিলো বাংলাদেশ। ম্যাচের শুরু থেকে সে পথেই হাটচ্ছিলো টাইগাররা। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আম্পায়ারদের ইচ্ছছাকৃত ভুলে বির্তকিতভাবে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকেই বাংলাদেশকে বিদায়ের টিকিট ধরিয়ে দেয়া হয়। তাতে কি, বাংলাদেশ তো ঠিকই প্রশংসার জোয়ারে ভেসেছে। বাংলাদেশ তো ঠিকই বা-হ-বা পেয়েছে বিশ্ব ক্রিকেটের মঞ্চে।প্রশংসার জোয়ারে ভাসলেও, পারফরমেন্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার জিদ ঠিকই মনের মধ্যে ছিলো মাশরাফি-মুশফিক-সাব্বিরদের। বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানকে দেশের মাটিতে পেয়েই ৩-০ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নেয় বাংলাদেশ। তাতে নিন্দুকেরা সুর তুলেছিলো, ‘হঠাৎ করে একটি সিরিজ জিততেই পারে।নিন্দুকদের ঐ কথায় ভড়কে যায়নি বাংলাদেশ। নিজেদেরকে আরও উচ্চতায় নেয়ার লক্ষ্যে বিশ ক্রিকেটের সবচেয়ে প্রভাবশালী দল ভারতকে হারের লজ্জা দেয় টাইগাররা। দাপটের সাথে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে মাশরাফি বাহিনী। এই ছিলো ওয়ানডে ফরম্যাটে গেল সাত মাসে বাংলাদেশের পারফরমেন্সের গ্রাফ।পারফরমেন্সের গ্রাফের উচ্চতায় বসেই দেশের মাটিতে দক্ষিনণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ শুরু করে বাংলাদেশ। দু’টি টি-২০ ম্যাচে লড়াই ছাড়াই সিরিজ হেরে বসে টাইগাররা। সেই স্মৃতি নিয়ে এবার ওয়ানডে ফরম্যাটের লড়াইয়ে নামবে বাংলাদেশ। কিন্তু এই ফরম্যাটে নিজেদের নিয়ে মোটেও চিন্তিত নয় স্বাগতিকরা। কারন এই ফরম্যাটে তো এখন সাহসী যোদ্ধার এক দল বাংলাদেশ।

সাহসের দিক দিয়ে টগবগ করছে বাংলাদেশ। পাকিস্তান-ভারতের মত দলকে যেভাবে হারিয়েছে বাংলাদেশ, সেই ধারাবাহিকতা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে বজায় রাখাই প্রধান লক্ষ্য টাইগারদের। সেই ধারাবাহিকতা যদি অব্যাহত থাকে, তবে বিশ্ব ক্রিকেটে আরও একটি বড় দলের জন্য লজ্জা অপেক্ষামান। দক্ষিণ আফ্রিকাকে সেই লজ্জা দিতে পুরোপুরিভাবে প্রস্তত বাংলাদেশ।সেই সাথে সিরিজের প্রথম ম্যাচেই দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দ্বিতীয় জয়ের স্বাদ পেতেও প্রস্তুত বাংলাদেশ। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম জয়ের দেখা পেয়েছিলো টাইগাররা। গায়ানার ঐ ম্যাচে প্রোটিয়াসদের ৬৭ রানে হারিয়েছিলো সেসময়কার অধিনায়ক হাবিবুল বাশারের বাংলাদেশ।সাহসী বাংলাদেশ দলকে বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখছে দক্ষিণ আফ্রিকাও। তবে টি-২০ সিরিজ জয়ে অনেক আত্মবিশ্বাসী হয়ে উঠেছে প্রোটিয়াসরা। ওয়ানডের আগে টি-২০ সিরিজ হওয়ায় নিজেদের ভালোভাবেই মানিয়ে নিয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তাই এই ছোট্ট অভিজ্ঞতাকে ওয়ানডে সিরিজে কাজে লাগিয়ে ভালো ফল করতে উন্মুখ হাশিম আমলার দল। নিয়মিত অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স দেশে ফিরে যাওয়ায়, ওয়ানডে সিরিজে দলকে নেতৃত্ব দেবেন আমলাই। তাতে কিছুটা হলেও সুবিধা হয়েছে বাংলাদেশের। কারণ ডি ভিলিয়ার্সের মত বিশ্ব মানের খেলোয়াড় দলে থাকাটা যেকোন প্রতিপক্ষের জন্য অনেক বড় চিন্তার কারণ।

চিন্তা যাই থাকুক বা না থাকুক, চিন্তার রেখা কিন্ত ঠিকই কপালে জায়গা করে নিয়ে বাংলাদেশের। কারণ ২০১৭ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত্বব্য আইসিসি চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলতে হলে, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র‌্যাংকিং-এ শীর্ষ আট দলের মধ্যে থাকতে হবে বাংলাদেশকে। সেই নিয়ম অক্ষরে অক্ষরে পালন করে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র‌্যাংকিং-এ শীর্ষ আটে থাকাটা নিশ্চিত করেছিলো বাংলাদেশ (পাকিস্তান-ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয়ে বাংলাদেশের শীর্ষ আটে থাকা নিশ্চিত হয়েছিলো)।কিন্তু হঠাৎ করেই ষড়যন্ত্র করে বসেছে র‌্যাংকিং-এ শীর্ষ আটে থাকতে না পারার শংকায় পড়া পাকিস্তান ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আর তাতে বাংলাদেশের সমীকরণটা কিছুটা হলেও যদি উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে। তারপরও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে তিন ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ একটি জয় তুলে নিতে পারলেই, ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্র মুখ থুবড়ে পড়বে। তাতে মাথা উঁচু করেই চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে খেলবে বাংলাদেশ। পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে সিরিজ জয় এখন স্মৃতি, তারপরও সেই স্মৃতি এখনো টাটকা বাংলাদেশের কাছে। তাই ঐ দু’টি সিরিজ থেকেই নিজেদের আত্মবিশ্বাসের ভান্ডারটা ভরপুর করে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজেও ভালো করার প্রত্যয় ব্যক্ত করলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা, ‘পাকিস্তান-ভারতের মত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ওয়ানডে সিরিজে ভালো করাই প্রধান লক্ষ্য।

দেশের মাটিতে গত এপ্রিলে পাকিস্তানকে তিন ম্যাচের ওয়ানডেতে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। এরপর জুনে ভারতের বিপক্ষে ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নেয় টাইগাররা। এইসব অর্জন স্মৃতির পাতায় চলে গেলেও, বাংলাদেশের কাছে এগুলো এখনো টাটকা। কারণ ঐ দু’সিরিজ থেকে নিজেদের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে নিচ্ছে বাংলাদেশ।ঐ দু’সিরিজের আত্মবিশ্বাসটা দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজে কাজে লাগিয়ে ভালো ফল করতে উন্মুখ বাংলাদেশ বলে জানালের দলের দলপতি মাশরাফি, ‘পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে শেষ দু’সিরিজে আমরা দারুন পারফরমেন্স করেছি। ঐ দু’সিরিজের মত দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষেও ভালো পারফর্ম করতে পারলে সিরিজ জয় সম্ভব হবে। তবে দক্ষিণ আফ্রিকা অনেক শক্তিশালী দল। তাই তাদের বিপক্ষে তিন বিভাগেই আমাদের ভালো পারফরমেন্স করতে হবে।তিন বিভাগেই ভালো করার কথা বলেছেন মাশরাফি। এজন্য সবার আগে নিজেদের পরিকল্পনাগুলো ম্যাচে ভালোভাবে বাস্তবায়ন করার কথাও জানালেন ম্যাশ, ‘তিন বিভাগ নিয়ে আমাদের পরিকল্পনা রয়েছে। তাই তিন বিভাগেই পরিকল্পনাগুলোর বাস্তবায়ান করতে হবে আমাদের। পরিকল্পনাগুলো ঠিকভাবে বাস্তবায়ন হলে জয় পাওয়া সম্ভব। আমাদের সেরা খেলার ব্যাপারেই অনেক বেশি মনোযোগী হতে হবে। তবে ফল আমাদের অনুকূলে আসবে।ষড়যন্ত্রকারীদের ষড়যন্ত্রে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি চিন্তাটা কপালে রয়েছে বাংলাদেশের। আর এটি নিয়ে মাশরাফির ভাবনাটাও খুব কমই। এ বিষয়ে তিনি বলেন, চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফি নিয়ে এখনই ভাবছি না। আমাদের আসল চিন্তা প্রথম ওয়ানডে নিয়ে। শুক্রবারের ম্যাচটিতে ভালো পারফরমেন্স করতে চাই। আমাদের পুরো ফোকাসটা কালকের ম্যাচ নিয়েই।

অন্যদিকে, তিন ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগে স্বাগতিক বাংলাদেশকে সমীহ করেই মাঠে নামবে দক্ষিণ আফ্রিকা-এমনটা জানিয়েছেন প্রোটিয়া অধিনায়ক হাশিম আমলা। শুক্রবার (মিরপুরে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশ-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজের প্রথম ওয়ানডে।বৃহস্পতিবার ম্যাচ পূর্ববর্তী সংবাদ সম্মেলনে আমলা বলেন, গেল কয়েকটি মাস ধরে বাংলাদেশ ভালো করছে। আমি ব্যক্তিগতভাবে শেষ দু’টি সিরিজ দেখেছি। আমি জানি, বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টির চেয়ে ওয়ানডেতে খুব ভালো খেলে। তাই আমরা বাংলাদেশের প্রতি প্রাপ্র্য সম্মান রেখেই ওয়ানডে সিরিজ শুরু করব। তাদের সমীহ করতেই হবে।প্রোটিয়া অধিনায়ক মনে করেন, বাংলাদেশ সফরে আসার ফলে উপমহাদেশে খেলার অভিজ্ঞতা অর্জন করবে তাদের ক্রিকেটাররা। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এখানে একাধিকবার এসেছি। আমি ভাগ্যবান যে, বাংলাদেশের সঙ্গে আমার ব্যাটিং গড় ভালো। আশা করি, সেই অভিজ্ঞতা এই সিরিজে কাজে লাগাতে পারব। দলের ছেলেরা টি-টোয়েন্টি সিরিজে ভালো খেলেছে। তাদের আত্মবিশ্বাসও বেড়েছে। সব মিলিয়ে ভালো একটা সিরিজের আশায় আছি।নিজ দলের বোলিং আক্রমণ নিয়ে আশাবাদী আমলা, নতুন অনেক বোলারই দলে এসেছে। রাবাদা, মরিসদের মতো বোলাররা দলে রয়েছে। তাদেরকে নিয়ে আমি আশাবাদী। তারা সুযোগ কাজে লাগাতে চেষ্টা করবে। আশা করি, এ সিরিজে তাদের কাছে কয়েকটি ভালো পারফরম্যান্স দেখতে পারব।