দৈনিকবার্তা-মংলা, ৮ জুলাই: বুধবার দিনভর ভারী বর্ষণের ফলে মংলা শহরসহ পৌর এলাকার অধিকাংশ আবাসিক এলাকা পানিতে তলিয়ে গেছে। পর্যাপ্ত ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকা, শহরের মধ্যে তিনটি খালে স্লুইস গেট নির্মাণ ও ড্রেনের মুখ বন্ধ থাকায় বৃষ্টির পানি নামতে না পেরে এলাকায় দেখা দিয়েছে স্থায়ী জলাবদ্ধতা। এ অবস্থায় পানি বন্দি হয়ে পড়েছে প্রায় লক্ষাধিক জনগোষ্ঠি।
শহরতলীর নিম্মাঞ্চলসহ বিভিন্ন আবাসিক এলাকার বসত বাড়ী ঘরে পানিতে থৈ থৈ করছে। কোন কোন এলাকার বসত ঘরের মধ্যেও হাটু পরিমাণ পানি বিরাজ করছে। ফলে পানি বন্দি হাজার হাজার পরিবারের দুর্ভোগ চরমে পৌঁছেছে। পৌর কর্তৃপক্ষ পানি নিস্কাশনের তেমন কোন কার্যকরী ব্যবস্থা না নেয়ায় এসব এলাকায় জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকার রুপ নিয়ে মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটাচ্ছে। এদিকে টানা বৃষ্টিপাত ও জলবদ্ধতার কারণে খেটে খাওয়া দরিদ্র লোকজন কাজে যেতে না পারায় তাদের মাঝে চাল বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে স্থানীয় প্রশাসন।
গত কয়েক দিন বিশেষ করে বুধবার দিনভর মংলা এলাকায় প্রচন্ড ভারী বৃষ্টিপাত হয়। বৃষ্টির ফলে পৌরসভার অধিকাংশ এলাকা পানিতে ডুবে লোকজন পানি বন্দি হয়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকায় জমে থাকা পানি নামতে না পেরে তা জলাবদ্ধতায় রুপ নিয়েছে। শহরের কুমারখালী, ঠাকুর রানী ও কাইনমারী খালে স্লুইস গেট নির্মাণ কাজ চলার ফলে খালের উপর বাধ দিয়ে রাখা হয়েছে।
এতে বৃষ্টিতে জমা হওয়া পৌর এলাকার পানি নিস্কাশন হতে পারছে না। বাধের মধ্যে ছোট আকারে পাইপ দেয়া হলেও তা দিয়ে পানি নামতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া শহরের বিভিন্ন সড়ক নির্মাণ কাজ চলায় অধিকাংশ ড্রেন বন্ধ করে রাখা হয়েছে। এ কারণেও বৃষ্টির পানি নামতে পারছে না। অপরদিকে পৌর সভার বিভিন্ন আবাসিক এলাকায় এখন পর্যন্ত কোন ড্রেন নির্মাণ করা হয়নি। এসব এলাকায় জমা হওয়া বৃষ্টির পানি কোন অবস্থাতেই নিস্কাশন হতে পারছে না।
শহরতলীর শেলাবুনিয়া, কুমারখালী, মিয়া পাড়া, জয় বাংলা, চরকানা, সিগনাল টাওয়ার, পূর্ব কবরস্থান রোডসহ অধিকাংশ আবাসিক এলাকার মানুষ পানি বন্দি হয়ে অবর্ণণীয় দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন। অনেক এলাকার রাস্তা ঘাট পানিতে ডুবে থাকায় পথচারিসহ যানবাহন চালকরা অহরহ দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। আবাসিক এলাকার পুকুর, বাড়ির ওঠানসহ সব কিছু পানিতে ডুবে রয়েছে।
রান্না করার জায়গা পর্যন্ত নেই অনেক জায়গাতে। গৃহ পালিত পশু ও হাঁস মুরগী নিয়ে পরিবারের ভোগান্তি শেষ থাকছে না। পৌরবাসী পানি নিস্কাশনে পৌর কর্তৃপক্ষের ভূমিকা নিয়ে নানা অভিযোগ করে আসছে। বুধবার দিনভর ভূক্তভোগী পৌরবাসীকে পানি নিস্কাশনের ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পৌর কার্যালয়ে ধর্ণা দিতে দেখা গেছে। ভূক্তভোগীরা অভিযোগ করেছেন, পৌর কর্তৃপক্ষের কাছে পানি নিস্কাশনের আবেদন নিবেদন জানিয়েও কোন সাড়া পাচ্ছে না। অনেক ওয়ার্ড কাউন্সিলকেই খুজে পাওয়া যাচ্ছিল না। এ দিকে পানি জমে থেকে জলাবদ্ধতা স্থায়ী আকারে রূপ নেয়ায় অধিকাংশ এলাকায় মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটছে। এসব এলাকায় ইতিমধ্যে নানা রোগের প্রার্দুভাব দেখা দিয়েছে।
এ ব্যাপারে মংলা পোর্ট পৌরসভার মেয়র জুলফিকার আলী বলেন, পানি নিস্কাশনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পৌরসভার প্যানেল মেয়র ও ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর মো: আলাউদ্দিন বলেন, বুধবার সকালে আমি জলাবদ্ধ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখে এসেছি। পানি নামানোর জন্য পাইপ বসিয়ে কিংবা ড্রেন কেটে পানি সরোনোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, খালের বাধ থাকা পানি নামতে পারছে না। পানি নামানোর যে পাইপ রয়েছে জোয়ারের সময় তা দিয়ে পানি ঢুকে পড়ায় জলাবদ্ধতা কমছে না।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুহাম্মদ আলী প্রিন্স জানান, টানা বৃষ্টিপাত ও বৃষ্টির পানিতে এলাকা বিভিন্ন এলাকায় জলাবদ্ধতার সৃষ্টি হওয়ায় দরিদ্র লোকজন কাজ কর্ম করতে পারছে না। তাই পানি বন্দী গরীব লোকজনের মধ্যে ইতিমধ্যে ৫ টন চাল বিতরণ করা হয়েছে। আরো ত্রাণ সহায়তা প্রদাণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে। বরাদ্দ পেলেই তা দ্রুত দরিদ্রদের মাঝে বিতরণ করা হবে।
এদিকে,উত্তর পশ্চিম বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমী লঘু চাপের কারণে মংলা সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্কতা সংকেত দেখিয়ে যেতে বলেছে আবহাওয়া অফিস। লঘুচাপের প্রভাবে বঙ্গোপসাগরে সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টির হয়েছে। যার ফলে বুধবার ভোর থেকে মংলাসহ আশপাশ উপকূলীয় এলাকার উপর দিয়ে দমমা ঝড়ো হাওয়া ও বৃষ্টিপাত বয়ে যাওয়া অব্যাহত রয়েছে। এদিকে দূর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে মংলা বন্দরের জেটি, পশুর চ্যানেল ও বহিনঙ্গরে অবস্থানরত সকল দেশী-বিদেশী জাহাজের পণ্য বোঝাই-খালাস কাজ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। এদিকে টানা বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে স্বাভাবিক জীবনযাপন। এছাড়া বঙ্গোপসাগর উত্তাল থাকায় সাগর-নদী ও সুন্দরবনে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা ট্রলার ও নৌকা নিয়ে সুন্দরবনের বিভিন্ন নদী-খালে নিরাপদে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানিয়েছে বনবিভাগ।