দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ জুলাই ২০১৫: পর্যবেক্ষণ দিয়ে গম-সংক্রান্ত রিটের নিষ্পত্তি করেছেন হাইকোর্ট৷ পর্যবেক্ষণে বলা হয়েছে, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গমের মধ্যে যা বিতরণ হয়ে গেছে, কেউ তা ফেরত দিতে চাইলে সরকারকে নিতে হবে৷ আর বিতরণ না হওয়া গম কাউকে জোর করে দেওয়া যাবে না
ব্রাজিলের গম নিয়ে কাউকে বাধ্য করা যাবে না উল্লেখ করে কেই পেরত দিতে চাইলে ফেরত নিতে হবে বলে আদেশ দিয়েছে হাইকোর্ট৷ বুধবার এক রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি কাজী রেজা উল হক ও বিচারপতি আবু তাহের মো. সাইফুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছে৷মঙ্গলবার জাতীয় সংসদে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম জানিয়েছেন, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম খাবার উপযোগী কিছু পত্রিকা ও একটি রাজনৈতিক মহল ইচ্ছা করে এ গম নিয়ে ভিত্তিহীন খবর ছড়াচ্ছে৷তবে এ নিয়ে হাইকোর্টে শুনানি চলছে৷ বুধবার শুনানি শেষে হাইকোর্ট এ আদেশ দেয়৷
প্রসঙ্গত: গত রোববার ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম খাওয়ার উপযোগীুএ বিষয়ে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দেয় খাদ্য আধিদপ্তর৷আর রিটকারী আইনজীবী জানান, গম সঠিকভাবে পরীক্ষা করা হয়নি৷ আগামী ৮ জুলাই এ বিষয়ে শুনানি হওয়ার কথা রয়েছে৷আদালতে আবেদনকারী পক্ষে শুনানি করেন ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন৷রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস৷ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন বলেন,খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক তার প্রতিবেদনে বলেছে-গম খাওয়ার উপযোগী অথচ অন্যান্য সংস্থার প্রতিবেদনে দেখা যায়,গমে পোকা আছে এবং সাব স্ট্যাণ্ডার্ড৷ প্রাথমিকভাবে মনে হয়েছে- অধিদপ্তরের বক্তব্য সঠিক নয়৷ব্রাজিল থেকে নিম্নমানের গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী গত ২৮ জুন এ আবেদন করেন৷এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাইকোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়৷ ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না, সে বিষয়ে খাদ্য সচিব ও খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়৷ওই নির্দেশনানুযায়ী, খাদ্য অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের পাঠানো কয়েকটি প্রতিবেদন আদালতে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ৷সমপ্রতি একাধিক দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়, ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম ‘নষ্ট ও পচা’৷ পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআর ( টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খাদ্য) বিভিন্ন কর্মসূচিতে ওই গম বিতরণ করা হয়৷ এ নিয়ে পুলিশ আপত্তিও তুলেছে৷পুলিশের আপত্তির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কাছে পোঁছালে তিনি তদন্তের নির্দেশ দিলেও খাদ্য মন্ত্রণালয় ও খাদ্য অধিদপ্তর এ নিয়ে ‘লুকোচুরি’ শুরু করে বলে একটি প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়৷পচা গম আমদানির অভিযোগ ওঠার পর বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়৷তবে ওই গম পচা নয় দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে জানায়, এ গম সম্পূর্ণ খাবার উপযোগী্ত খাদ্য অধিদপ্তর ও সায়েন্স ল্যাবরেটরির (বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদ) পরীক্ষায় এটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে৷ গমের মান নিয়ে আমি স্যাটিসফায়েড৷
রিট আবেদনকারীর আইনজীবী প্রথম দিনের শুনানিতে সংবাদপত্রে প্রকশিত একাধিক প্রতিবেদন তুলে ধরে বলেন, আমদানি করা গমের ‘মান খারাপ৷এদিকে, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি), বাংলাদেশ শিল্প বিজ্ঞান গবেষণা পরিষদ (বিসিএসআইআর), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও খাদ্য অধিদপ্তরের নিজস্ব ল্যাবের টওতিবেদন তুলে ধরে রাষ্ট্রপক্ষে বলা হয়, গম পাঠানোর পর ৫৬টি জেলা থেকে আবার নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে৷ সংবাদপত্রে খবর প্রকাশের আগেই সরকার পরীক্ষার পদক্ষেপ নেয়৷ এসব টওতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই গম মানসম্মত৷ কোথাও বলা হয়নি গম খাওয়ার উপযোগী নয়৷এর আগে, ৩০ জুন ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম খাওয়ারের উপযোগী কিনা তা পরীক্ষা করে আগামী ৭২ ঘন্টার মধ্যে রিপোর্ট জমা দিতে নির্দেশ দেয় হাইকোর্ট৷
ব্রাজিল থেকে চারশ কোটি টাকায় আমদানি করা গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী’ বলে খাদ্য অধিদপ্তর প্রতিবেদন দিলেও ওই গম নিতে কাউকে বাধ্য না করার নির্দেশনা দিয়েছে হাই কোর্ট৷ইতোমধ্যে পুলিশ, বিজিবি, আনসার, জেলখানা, বিভিন্ন ডিলার ও আটা কল ছাড়াও টিআরদ্য) (টেস্ট রিলিফ) ও কাবিখাসহ (কাজের বিনিময়ে খা বিভিন্ন কর্মসূচিতে বিতরণ করা ওই গম কেউ ফেরত দিতে চাইলে তা ফেরত নিতে বলেছে আদালত৷ আদেশের পর ডেপুটি অ্যার্টনি জেনারেল তাপস কুমার বিশ্বাস বলেন, খাদ্য অধিদপ্তরের জমা দেওয়া প্রতিবেদনের ভিত্তিতে আদালত বলেছেন, গম, খাওয়ার উপযোগী নয়- এ কথা কোথাও বলা হয়নি৷ অর্থাত্, ওই গম খাওয়ার উপযোগী্৷
ব্রাজিল থেকে আমদানি করা ওই গম নষ্ট ও পচা বলে পুলিশের পক্ষ থেকে আপত্তি তোলার খবর গণমাধ্যমে এলে আলোচনা শুরু হয়৷ পচা গম আমদানির অভিযোগে বিএনপির পক্ষ থেকে খাদ্যমন্ত্রীর পদত্যাগও দাবি করা হয়৷তবে ওই গম পচা নয় দাবি করে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম সংসদে বলেন, এ গম সম্পূর্ণ খাবার উপযোগী; মান নিয়ে তিনি সন্তুষ্ট৷এরপর ‘নিম্নমানের গম আমদানি ও সরবরাহের অভিযোগ দুদককে দিয়ে তদন্তের আদেশ চেয়ে পাভেল মিয়া নামের এক আইনজীবী গত ২৮ জুন এই রিট আবেদন করেন৷এ বিষয়ে প্রাথমিক শুনানি করে ৩০ জুন হাই কোর্ট রুলসহ আদেশ দেয়৷ ওই গম মানুষের খাওয়ার উপযোগী কি-না,সে বিষয়ে খাদ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে ৭২ ঘন্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়৷ সে অনুযায়ী, খাদ্য অধিদপ্তরের মহা পরিচালকের পাঠানো প্রতিবদন গত ৫ জুলাই আদালতে জমা দেয় রাষ্ট্রপক্ষ৷ব্রাজিল থেকে আমদানি করা গম চুক্তিপত্রের নির্দেশ অনুসারে গ্রহণীয় সীমার মধ্যে থাকায় মানুষের খাওয়ার উপযুক্ত বলে খাদ্য অধিদপ্তর হতে প্রত্যয়ণ করা হল৷আমদানি করা দুই লাখ পাঁচ হাজার ১২৮ মেট্রিক টন গমের মধ্যে এক লাখ ৭৪ হাজার ৯২৬ মেট্রিক টন ইতোমধ্যে বিতরণ করা হয়েছে বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়৷