দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ জুলাই ২০১৫: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে (ঢাবি) দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার নির্দেশনা চেয়ে দায়ের করা রিট আবেদনটি খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট৷ ফলে ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ বাতিলে কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত নিয়েছিল তা বহাল থাকলো৷বুধবার বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি কাজী মো. ইজারুল হক আকন্দের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন৷
বুধবার আদালতে রিট আবেদনের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন, অ্যাডভোকেট সুব্রত চৌধুরী৷ অপরদিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট এএফএম মেজবাহ উদ্দিন৷ এর ফলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আর দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ হচ্ছে না বলে বিশ্ববিদ্যালয়ের আইনজীবী এ এফ এম মেসবাহ উদ্দিন জানিয়েছেন৷
অর্থাত্,চলতি বছর যারা এইচএসসি পাস করবে, কেবল তারাই ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকে ভর্তির জন্য পরীক্ষায় বসার সুযোগ পাবে৷ এ বছর পাস করা কোনো শিক্ষার্থী আর আগামী বছর এ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা দিতে পারবে না৷এর আগে মঙ্গলবার ঢাবিতে দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ কেন দেয়া হবে তা জানতে চেয়ে জারি করা রুলের শুনানি শেষ হয়৷গত ১৬ মার্চ এক রিট আবেদনের প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট রুল জারি করেন৷ রুলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা দেয়ার সুযোগ বাতিলে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্তকে কেন বেআইনি ঘোষণা করা হবে না- তা জানতে চাওয়া হয়৷
একইসঙ্গে কর্তৃপক্ষের ওই সিদ্ধান্ত বাতিল করে আগের মত দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষার সুযোগ কেন দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, রেজিস্ট্রার, অনলাইন ভর্তি কমিটির আহ্বায়ক, পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক, পরীক্ষা কমিটির সম্পাদক, সহকারী রেজিস্ট্রার (একাডেমিক-২), ইউজিসি চেয়ারম্যান ও শিক্ষা সচিবকে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়৷ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীরা এতোদিন টানা দু’বার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার সুযোগ পেতেন৷বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গত ১৪ অক্টোবর সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু চলতি বছরে এইচএসসিতে উত্তীণর্রাই অংশ নিতে পারবে৷ অর্থাত্ আগের বছরে (২০১৪) উত্তীর্ণরা নয়৷ সে হিসেবে চলতি বছরের (২০১৫) ভর্তি পরীক্ষা থেকেই ওই সিদ্ধান্ত কার্যকর হওয়ার কথা৷
ওই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ভর্তিচ্ছু শিক্ষার্থীরা সে সময় টানা কয়েক দিন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ, সমাবেশ ও অনশনের মতো কর্মসূচি পালন করেন৷ পরে কর্তৃপক্ষের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে দ্বিতীয়বার ভর্তিচ্ছু ২৬ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবক ১২ মার্চ হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন৷ মেসবাহ উদ্দিন বলেন, আমরা ২০০৯ সাল থেকে রেদখে আসছি, দ্বিতীয়বার ভর্তির সুযোগ দেওয়ার কারণে অনেক আসন শূণ্য থাকে৷ এটি জাতীয় ক্ষতি৷ হাই কোর্ট রুল খারিজ করে দিয়েছেন৷ এর ফলে দ্বিতীয়বার ভর্তি পরীক্ষা না নেওয়ার সিদ্ধান্ত বহাল রয়েছে৷
রিট আবেদনকারীদের আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, হাই কোর্টের এই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন কি না, আবেদনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করে তা ঠিক করা হবে৷রিট আবেদনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে কয়েকজন রায়ের সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন৷ রুল খারিজের পর তাদের কাউকে কাউকে হতাশা ও কান্নায় ভেঙে পড়তে দেখা যায়৷এইচএসসি উত্তীর্ণরা এতোদিন টানা দুইবার ভর্তি পরীক্ষায় বসার সুযোগ পেলেও গতবছর তা সীমিত করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷ বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষায় জালিয়াতি ঠেকাতেই কর্তৃপক্ষের এ সিদ্ধান্ত৷বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক গতবছর ১৪ অক্টোবর ওই সিদ্ধান্তের বিষয়টি জানিয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষ থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষায় শুধু ওই বছর এইচএসসিতে উত্তীর্ণরাই অংশ নিতে পারবে; পুরনোরা নয়৷ দেশে উচ্চ শিক্ষার সবচেয়ে বড় ও ঐতিহ্যবাহী বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছয় হাজার ৫৮২ আসনের বিপরীতে গতবছর পরীক্ষা দেন তিন লাখ এক হাজার ১৩৮ জন পরীক্ষার্থী৷
