দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ০৮ জুলাই ২০১৫: মুড়ি ছাড়া ইফতার হয় না। ধনী-গরিব শ্রেণীর মানুষের ইফতারে মুড়ি অপরিহার্য। ফলে রমজানে এ পণ্যটির চাহিদা ব্যাপক। রমজানকে কেন্দ্র করে ব্যস্ত এখন মুড়ির জন্য বিখ্যাত ঠাকুরগাঁওয়ের মহব্বতপুর, হরিনারায়নপুর, আকচা ও গিলাবাড়ি গ্রাম।
রমজান মাস এলেই তাদের ব্যস্ততা বেড়ে যায়। এই এলাকার শিশু থেকে বৃদ্ধা সবাই এখন মুড়ি ভাজার কাজে ব্যস্ত রমজানের আগেই তারা মুড়ি ভেজে মজুত রেখে বাড়তি আয় করেন। চাহিদা এবং জনপ্রিয়তায় তাদের যাতে কোনো সঙ্কট না হয় এ জন্য তারা মুড়ি ভাজায় ব্যস্ত রয়েছে।অর্ধ শতাব্দীকালেরও অধিক সময় ধরে মুড়ি ভেজে জীবনধারণ করে আসছে ঠাকুরগাঁওয়ের এই কয়েকটি গ্রামের ৫ শতাধিক পরিবার। আগে এর সংখ্যা আরো বেশি থাকলেও নানান সীমাবদ্ধতায় এই পেশা ছেড়ে দিয়েছে অনেকে।
গিলাবাড়ি গ্রামের মুড়ি উৎপাদনকারী পরিবারের সদস্য সুশীল চন্দ্র মহন্ত জানান, সারা বছরই মুড়ির চাহিদা থাকে। তবে রমজান এবং শীতকালে মুড়ির চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। তিনি বলেন, সবাই প্রায় মুড়ি তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে। কিন্তু মুড়ির ব্যবসায় টিকে থাকা এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। এ ব্যবসায় আয় কম। কিন্তু সংসারে খরচ অনেক বেশি। তাই পুঁজি হারিয়ে অনেকেই ইতিমধ্যে দেউলিয়া হয়ে পড়েছে। এ বছরেও মুড়িকে আকর্ষণীয় ও আকারে বড় করতে ব্যবসায়ীরা ব্যবহার করছে ক্ষতিকারক হাইড্রোস। আর এই অসাধু ব্যবসায়ীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টিকতে পারছে না ঠাকুরগাঁওয়ের মুড়ির গ্রাম মহব্বতপুর, হরিনারায়নপুর, আকচা ও গিলাবাড়ির পাঁচ শতাধিক নারী ব্যবসায়ী।
গিলাবাড়ি গ্রামের মুড়ি ব্যবসায়ী গীতা রানী বলেন, রমজানে মুড়ির চাহিদা অনেক। কিন্তু পুঁজির অভাবে ঠিকমতো মুড়ি সরবরাহ করতে পারছি না। জয়তী রানী জানান, ভোর থেকে মুড়ি ভাজি, সকাল সাড়ে ৬ টায় বাড়ি থেকে বের হই। শহরের বিভিন্ন পাড়া, মহল্লায় মুড়ি বিক্রি করি। হরিনারায়ণপুরের সাবিতা সেন জানান, মুড়ির চাল কিনে বাড়িতে পানিতে ধুয়ে পরিষ্কার করি। এরপর লবণ দিয়ে রাখি। তার পর রোদে শুকিয়ে হাতে ভাজতে হয়।
আর মেশিনে যারা মুড়ি ভাজে তারা হাইড্রোস মিশিয়ে মুড়ি বড় ও সাদা করে কম দামে বিক্রি করে। এদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে টেকা কষ্টকর। সুব্রত চন্দ্র রায় জানান, ঠাকুরগাঁওয়ের বেশির ভাগ মুড়ির চাহিদা হরিনারায়ণপুর ও গিলাবাড়ি থেকে মেটানো হয়। অনেক কষ্টে মুড়ি ভেজে হেঁটে মুড়ি বিক্রি করি। ৩ থেকে ৪ দিন মুড়ি বিক্রি করে লাভ হয় ৪০০ টাকা। প্রতি কেজি মুড়ি বিক্রি হচ্ছে ৫৫ থেকে ৬০ টাকা।
এ দিকে রজমানকে সামনে রেখে মুড়ির কারখানা গুলোতে অসাধু ব্যবসায়ীরা মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক হাইড্রোজ নামে একধরনের পাউডার। মানবদেহে এটি ক্ষতিকারক জেনেও ব্যবসা করার জন্যই তা মেশাচ্ছেন বলে জানান ব্যবসায়ীরা। ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর দুটি মুড়ির কারখানাতেই দেদারছে মুড়িতে মেশাচ্ছে ক্ষতিকারক ইউরিয়া -হাইড্রোস । ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্পনগরীর জেড এন্ড জেড মুড়ির কারখানা মালিক রবিউল হোসেন জানান, মুড়িতে হাইড্রোজ মেশানো স্বাস্থের পক্ষে ক্ষতিকর। কিন্তু জনসাধারন পরিষ্কার মুড়ি ও আকারে বড় না হলে কিনছেনা। তাই হাইড্রোজ মেশানো হচ্ছে।
ঠাকুরগাঁও স্যানিটারি কর্মকর্তা গোলাম ফারুক বলেন, মুড়িতে হাইড্রোস মেশানো কথা শোনেন নি,তবে মুড়িতে হাইড্রোস মেশালে মুড়ি সাদা ও আকারে বড় হয় বলে জানান। এটি স্বাস্থ্যের জন্য মারাতœক ক্ষতিকার বলে জানান তিনি। ঠাকুরগাঁওয়ের সিভিল সার্জন নজরুল ইসলাম বলেন, যে কোনো রাসায়নিক পদার্থ কোনভাবেই হজম হয়না। সেগুলো পরবর্তীতে মানুষের দেহে এলার্জি, শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়াসহ কিডনীর রোগের সহায়ক হিসাবে কাজ করে।