08-07-15-PM_Parliament-2

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৮ জুলাই ২০১৫: প্রধানমন্ত্রীশেখ হাসিনা বলেছেন, পেট্রোলবোমা হামলার নির্দেশদানকারী হিসেবে বিএনপি চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম খালেদা জিয়ার বিচারে বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠনের পরিকল্পনা রয়েছে৷বুধবার জাতীয় সংসদে টেবিলে উত্থাপিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সেলিনা বেগমের তারকা চিহ্নিত প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এ পরিকল্পনার কথা বলেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, পেট্রোল বোমা হামলার নির্দেশদানকারী খালেদা জিয়া ও তার সহযোগীসহ সব অপরাধীর নামে দায়ের করা মামলাগুলো বিচার করার জন্য সন্ত্রাস বিরোধী আইন-২০০৯ এর ২৭ ধারা অনুযায়ী সন্ত্রাস বিরোধী বিশেষ ট্রাইবু্যনাল গঠনের বিধান রয়েছে৷ ভবিষ্যতে উক্ত আইনের ২৭ ধারা অনুযায়ী ট্রাইবু্যনাল গঠনের পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে৷

তিনি বলেন, ট্রাইবু্যনাল গঠিত না হওয়া পর্যন্ত আইনের অধীন অপরাধসমূহের দ্রুত বিচারকার্য সম্পন্ন করার জন্য দায়রা জজ বা দায়রা কর্তৃক অতিরিক্ত দায়রা জজের নিকট স্থানান্তরিত হওয়ার ক্ষেত্রে, অতিরিক্ত দায়রা জজকে বিচারকার্য সম্পন্ন করার ক্ষমতা দেয়া হয়েছে৷ এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে পেট্রোল বোমা হামালার প্রতিটি ঘটনায় মামলা করা হয়েছে৷ এসব মামলার তদন্ত সুষ্ঠু ও দ্রুততম সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করার জন্য নির্দেশ দেয়া হয়েছে এবং তা যথাযথ প্রতিপালনের বিষয়টি মনিটর করা হচ্ছে৷ এসব মামলার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ মামলাগুলো দ্রুত বিচার ট্রাইবু্যনালে স্থানান্তরের ব্যবস্থা করা হবে৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি-জামায়াত জোটের নেত্রী খালেদা জিয়ার হুকুমে এ বছর ৫ জানুয়ারি থেকে চলমান হরতাল ও অবরোধকালীন এবং গত ২ জুন পবিত্র শবে বরাতের রাতে কুমিল্লায় যাত্রীবাহী বাসে ৬ জনসহ পেট্রোল বোমা ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে ১৩৪ জনকে হত্যা করা হয়েছে৷ তাদের ইসু্যবিহীন কথিত আন্দোলনের নামে সন্ত্রাসী কার্যক্রমের ফলে ১ হাজার ৩৯৫টি যানবাহন, ১৩ দফা ট্রেনে এবং ৬টি লঞ্চে নাশকতা চালানো হয়৷তিনি বলেন, নিহতদের স্বজন ও আহতদের চিকিত্‍সা ও পুনবার্সনের জন্য আর্থিক সাহায্য করা হচ্ছে৷ এটা চলমান থাকবে৷ নিহতদের স্বজন ও আহতদের মধ্যে এ পর্যন্ত ২২০ জনকে প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল থেকে ২০ কোটি ৩৭ লাখ টাকা প্রদান করা হয়েছে৷ এছাড়া আহত ৫ জন ও নিহত আরো ১৩ জনের স্বজনের জন্য ১ কোটি ৩৬ লাখ টাকার চেক প্রস্তুত করা হয়েছে, যা শিগগিরই বিতরণ করা হবে৷ অর্থাত্‍ আহত ও নিহতদের মধ্যে সর্বমোট ২১ কোটি ৭৩ লাখ টাকা বিতরণ শেষের পথে৷

এদিকে সংসদে ষষ্ঠ অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে শেখ হাসিনা বলেন, দেশ যখন অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, আনত্মর্জাতিক ক্ষেত্রে বিভিন্ন স্বীকৃতি অর্জন করছে, তখন বেগম খালেদা জিয়া ইফতার পার্টির নামে মিথ্যাচার করে যাচ্ছে৷শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা যখন দেশকে অর্থনৈতিকভাবে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কাজ করছি, তখন ২০১৪ সালে নির্বাচন ঠেকানোর নামে এবং ২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি থেকে আন্দোলনের নামে বিএনপি-জামায়াত কমর্ীরা বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে পেট্রোল বোমায় মানুষকে পুড়িয়ে হত্যা করেছে৷ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে দেশের অর্থনীতিকে পেছনের দিকে নিয়ে যাওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে৷ দেশের মানুষ তা দৃঢ়তার সঙ্গে মোকাবিলা করেছে৷ অথচ বেগম খালেদা জিয়া এখন নিজের দোষ অন্যের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করছেন৷ তিনি আমাদের নামে মিথ্যাচার করার পাশাপাশি যে পুলিশ বাহিনী দেশের শানত্মি-শৃংখলা রক্ষায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে, তাদের ওপর দোষ চাপানোর চেষ্টা করছে৷তিনি বলেন, রমজান সংযমের মাস আত্মশুদ্ধির মাস৷ অথচ এ রমজানে ইফতারের সময় বেগম খালেদা জিয়ার মিথ্যাচারে আমি তাজ্জব হয়েছি৷ এ সময় প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াতের কমর্ীদের আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকান্ডের ছবি সংসদে উপস্থাপন করেন৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, বেগম খালেদা জিয়া বলেছিলেন সরকার উত্‍খাত না করে তিনি ঘরে ফিরে যাবেন না৷ অথচ এতিমের টাকা মেরে খাওয়া মামলায় হাজিরা দিতে ৯৩ দিন পর আদালতে আত্মসমর্পণ করে বাড়িতে ফিরে যান৷গ্রামে খাবার নেই বেগম খালেদা জিয়ার এ বক্তব্যের প্রেক্ষিতে তিনি বলেন, গ্রামের একজন দিনমজুর একদিনে যা আয় করেন, তা দিয়ে ১০ থেকে ১২ কেজি চাল কিনতে পারেন৷ হতদরিদ্রের হার হ্রাস পেয়েছে৷ হতদরিদ্রদের সরকার বিনামূল্যে খাদ্য দিচ্ছে৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ সরকারের আমলে ৫ কোটি মানুষ নিম্ন আয়ের থেকে মধ্যম আয়ে উন্নীত হয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, মাদক চোরাচালান রোধ, বসত্মিবাসীদের পুনর্বাসন, ঘরে ফেরা কর্মসূচি, গৃহায়ণ কর্মসূচি, ভেজাল বিরোধী অভিযান, যানজট নিরসনসহ জনগণের যানমালের নিরাপত্তা দিতে সরকার সদা সচেষ্ট ছিল এবং রয়েছে৷ তিনি বলেন, এ সময়ে ১ কোটি ৮ হাজার মানুষের চাকরির ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ যুবকদের কর্মসংস্থানে বহুমুখী কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে৷ মালয়েশিয়ায় সাড়ে ৬ লাখ এবং সৌদিতে সাড়ে ৮ লাখ অবৈধ অভিবাসীকে বৈধ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে৷তিনি বাজেট অধিবেশনে সহযোগিতা করার জন্য স্পিকার, ডেপুটি স্পিকার, মন্ত্রী, সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে থাকতে চাই না, আমরা উন্নত অর্থনীতিতে যেতে চাই৷সংসদে বাংলাদেশ নিম্নআয়ের দেশ থেকে নিম্নমধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ জানানোর জন্য আনীত প্রসত্মাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এ কথা বলেন৷ সরকারি দলের সদস্য মো. আব্দুর রাজ্জাক ১৪৭ বিধিতে প্রসত্মাবটি উত্থাপন করলে এর ওপর আলোচনা শেষে সর্বসম্মতভাবে ধন্যবাদ প্রসত্মাব গৃহীত হয়৷

শেখ হাসিনা বলেন, ২০০৭ সালে জরম্নরি অবস্থা ঘোষণার পর তিনি যখন কারাবন্দী ছিলেন, পরবতর্ীতে দেশের দায়িত্বে এলে কিভাবে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন তার পরিকল্পনা তখনই করেন৷ সে অনুযায়ী ২০০৯ সালে তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনা প্রণয়ন করে তা বাসত্মবায়ন করেন৷ সে সময়ই রূপকল্প-২০২১ প্রণয়ন করা হয়৷তিনি বলেন, আমরা ২০২০ সালে জাতির পিতার জন্ম শতবার্ষিকী ও ২০২১ সালে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়নত্মী পালনের সময়ে উচ্চ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে চাই৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ নিম্ন আয়ের দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে৷ এজন্য যে ধন্যবাদ প্রসত্মাব আনা হয়েছে, এ ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য বাংলাদেশের জনগণ৷ এদেশের জনগণের সমর্থন ও সহযোগিতা পেয়েছি বলেই বাংলাদেশকে আমরা এ পর্যায়ে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি৷তিনি বলেন, বাংলাদেশ আমাদের মহান নেতা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে স্বাধীন হয়েছে৷ জাতির পিতা দেশ স্বাধীন করেছেন এ দেশের দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানোর জন্য৷ যে দেশের মানুষ দু\’বেলা পেট ভরে খেতে পারতো না, যাদের গায়ে পড়ার মতো কাপড় ছিল না, যাদের মাথা গোঁজার ঠাঁই ছিল না, ঘরে চাল ছিল না, পানি পড়ত, অসুখে রোগে-ভুগে মায়ের কোলে শিশু মারা যেত বিনা চিকিত্‍সায় ওষুধের অভাবে৷ রাসত্মা-ঘাট ছিল না৷ বঙ্গবন্ধু দেশ স্বাধীনের পর যুদ্ধবিধ্বসত্ম দেশের দায়িত্ব নেন৷ তাঁর জীবনের একটাই লক্ষ্য ছিল, এ দুঃখী মানুষের হাসি ফোটানো এবং মানুষকে একটি সুন্দর জীবন দেয়া৷

শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু যখন দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে এগিয়ে নিয়ে যা”িছলেন, তখন ‘৭৫-এর ১৫ আগস্ট তাঁকে সপরিবারে হত্যা করা হয়েছিল৷ ২১ বছর দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের চাকা থেমেছিল৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ বিশ্বের কাছে দুর্ভিক্ষের, দুর্যোগের, ঘূর্ণিঝড়ের, জলো”ছ্বাস, বন্যা, সাহায্য ও ভিক্ষা চেয়ে চলার দেশ হিসেবে পরিচিত ছিল৷ এসব দেখে দুঃখ হতো৷ যে দেশ লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি৷ সেদেশ বিশ্ব সভায় মাথা উঁচু করে চলবে বিজয়ী জাতি হিসেবে৷ অর্থনৈতিক উন্নয়নের ক্ষেত্র এ দেশ আরো উন্নত হবে, এটাই সকলের কাঙ্ক্ষিত ছিল৷তিনি বলেন, ছোট বেলা থেকে জাতির পিতার দর্শনকে হৃদয়ে ধারণ করে দেশের মানুষের জন্য তিনি কি করতে চেয়েছিলেন, এটা নিয়ে ভাবতাম৷ তিনি দেশকে কোথায় নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন৷ দেশ কোথায় যাচ্ছে৷ যেহেতু বড় সনত্মান ছিলাম, সেহেতু পিতার পাশে থেকে তাঁর কাছ থেকে এদেশের মানুষের সুখ-দুঃখের কথা শুনতাম এবং কিভাবে দেশের মানুষের দুঃখ দূর করা যায়, তা নিয়ে চিনত্মা করতাম বলেই সব সময় মনে একটা পরিকল্পনা ছিল৷ যদি কখনও দেশ সেবার সুযোগ পায় তাহলে দেশ কিভাবে উন্নত করা যায় তা নিয়ে ভাবতাম৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, ৯৬ সালে সরকার গঠনের পর সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়৷ অবকাঠামো উন্নয়ন, খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন, বিদু্যত্‍ উত্‍পাদন বৃদ্ধি, সাক্ষরতার হার বৃদ্ধি পায়৷ কিন্তু ৫ বছর সময় চলে যায়, দেশ আবার অমানিশার অন্ধকারে নিমজ্জিত হয়৷ দুনর্ীতি, হত্যা, খুন, লুন্ঠন, অর্থ পাচার, দুঃশাসন ও অব্যবস্থাপনা আবারও দেশকে গ্রাস করে৷

আলোচনায় আরো অংশ নেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিত, বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ, কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, তথ্য যোগাযোগ ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, সরকারি দলের সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত, অধ্যাপক আলী আশরাফ, আব্দুল মান্নান, ডা. দীপু মনি, মো. আব্দুস শহীদ, মাহবুবুল আলম হানিফ, আব্দুল মতিন খসরু, ড. হাছান মাহমুদ, মোহাম্মদ ফারুক খান, আ খ ম জাহাঙ্গীর, তাজুল ইসলাম, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, শেখ ফজলে নুর তাপস, নুরুল ইসলাম সুজন, নজরুল ইসলাম বাবু, এডভোকেট তারানা হালিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, নুরম্নজ্জামান আহমেদ, বেগম ওয়াসিকা আয়শা খান, আমাতুল কিবরিয়া কেয়া চৌধুরী, জাতীয় পার্টির সদস্য কাজী ফিরোজ রশীদ, ফখরুল ইমাম, পীর ফজলুর রহমান, বেগম মাহজাবিন মোরশেদ, জাসদের মইনউদ্দিন খান বাদল, ওয়ার্কার্স পার্টির সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, তরিকত ফেডারেশনের সদস্য নজিবুল বশর মাইজভান্ডারী ও স্বতন্ত্র সদস্য রসত্মম আলী ফরাজী৷প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য বেগম হোসনে আরা লুত্‍ফা ডালিয়ার এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, নৌ-দুর্ঘটনা রোধে সরকার বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে৷শেখ হাসিনা বলেন, অভ্যনত্মরীণ নৌপথে ঝুঁকিমুক্ত নৌ-পরিবহন ব্যবস্থা সমুন্নত রাখার জন্য বিআইডবি্লউটিএ ‘অভ্যনত্মরীণ নৌ-চলাচল অধ্যাদেশ, ১৯৭৬’ (২০০৫ সালে সংশোধিত) এবং ‘বাংলাদেশ অভ্যনত্মরীণ নৌ-পরিবহন বিধি-১৯৭০’ এর বিধি-বিধান মোতাবেক প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করে থাকে৷

তিনি বলেন, ঢাকা নদীবন্দরসহ দেশের গুরুত্বপূর্ণ নদীবন্দরসমূহে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হয়ে থাকে৷ এছাড়াও নদী কেন্দ্রিক ৪৭টি জেলার জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন সংশ্লিষ্ট লঞ্চঘাট এলাকায় অবৈধ যাত্রীবাহী নৌযান চলাচল বন্ধ করার জন্য মোবাইল কোর্ট পরিচালিত হচ্ছে৷ তাছাড়া প্রতিটি লঞ্চ বন্দর ত্যাগের পূর্বে ভয়েজ ডিক্লারেশন প্রদান বাধ্যতামূলক করা হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, বর্তমান সরকার দেশের দারিদ্র্য বিমোচন ও জনগণের কাঙ্ক্ষিত প্রত্যাশা পূরণে বহু সাফল্য অর্জন করেছে৷প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মো. মনিরুল ইসলামের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন৷শেখ হাসিনা বলেন, বৈশ্বিক সংস্থা ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিঙ্ অ্যান্ড পিস কর্তৃক সমপ্রতি প্রকাশিত বৈশ্বিক শানত্মি সূচক-২০১৫তে এর প্রতিফলন লক্ষ্য করা যায়৷ বিশ্বের ১৬২টি দেশের বিভিন্ন প্রকার ২৩টি সূচক বিবেচনা করে এই তালিকা প্রণয়ন করা হয়৷ গত বছর বাংলাদেশ এই তালিকার ৯৮ ক্রমিকে ছিল৷ এ বছর আমাদের অবস্থান ৮৪তে উন্নীত হয়েছে৷ উল্লেখ্য, বাংলাদেশ এই উপমহাদেশে আফগানিস্তান, পাকিস্তান, ভারত এবং শ্রীলংকার চেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ এমনকি বিশ্বের অন্যতম সম্পদশালী দেশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চেয়ে এগিয়ে রয়েছে৷ এ বছরের বৈশ্বিক শানত্মি সূচক তালিকায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ৯৪, শ্রীলংকা ১১৪, ভারত ১৪৩, পাকিসত্মান ১৫৪ এবং আফগানিসত্মান ১৬০তম অবস্থানে রয়েছে৷শেখ হাসিনা বলেন, সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে ধারাবাহিকভাবে উন্নয়ন বাজেটে সরকারি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেয়েছে, যা ২০১৫-১৬ অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৭ হাজার কোটি টাকায় উন্নীত করার প্রসত্মাব করা হয়েছে৷ টাকার অংকে এ যাবত্‍কালের সর্ববৃহত্‍ বিনিয়োগ পরিকল্পনা৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বাংলাদেশের সঙ্গে ২২টি চুক্তি, সমঝোতা স্মারক ও প্রটোকল স্বাক্ষরিত হয়েছে৷

প্রধানমন্ত্রী সংসদে তাঁর জন্য নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে সরকারি দলের সদস্য মো. আয়েন উদ্দিনের এক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন৷শেখ হাসিনা বলেন, ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে খুবই ফলপ্রসূ ও গঠনমূলক দ্বি-পাক্ষিক আলোচনা হয়েছে৷তিনি বলেন, ‘আমরা পরস্পরের উদ্বেগ এবং অগ্রাধিকারের জায়গাগুলো বুঝেছি৷দ্বি-পাক্ষিক সম্পর্কের সব বিষয় নিয়েই খোলামেলা আলোচনা হয়েছে, যার মধ্যে ছিল নিরাপত্তা, সীমানত্ম ব্যবস্থাপনা, বিদু্যত্‍ ও জ্বালানি, আনত্মঃসংযোগ ও উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা, তিসত্মাসহ অভিন্ন নদীসমূহের পানি বন্টন ও পানি সম্পদ ব্যবস্থাপনা, ব্যবসা-বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা, আনত্মর্জাতিক ও আঞ্চলিক সহযোগিতা, জনযোগাযোগ ও সাংস্কৃতিক সহযোগিতা৷

প্রধানমন্ত্রী বলেন, সফরের সময় দু’দেশের মধ্যে ‘এঙ্চেঞ্জ অব ইনস্ট্রুমেন্টস অব রেটিফিকেশন অব ১৯৭৪ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট এন্ড ইটস ২০১১ প্রটোকল’, ‘এঙ্চেঞ্জ অব লেটারস অন মডালিটিজ ফর ইমপ্লেমেন্টেশন অব ১৯৭৪ ল্যান্ড বাউন্ডারি এগ্রিমেন্ট এন্ড ইটস ২০১১ প্রটোকল’, ‘বাইলেটারেল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (রিনিউয়াল), ‘এগ্রিমেন্ট অন কোস্টাল শিপিং বিটুইন বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া’, ‘প্রটোকল অন ইনল্যান্ড ওয়াটার ট্রানজিট এন্ড ট্রেড (রিনিউয়াল)’, ‘বাইলেটারেল কো-অপারেশন এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ড এন্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই) এন্ড বু্যরো অব ইন্ডিয়ান স্ট্যান্ডার্ডস (বিআইএস) অন কো-অপারেশন ইন দি ফিল্ড অব স্ট্যান্ডার্ডাইজেশন’, ‘এগ্রিমেন্ট অন ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস এন্ড ইটস প্রটোকল’, ‘এগ্রিমেন্ট অন কলকাতা-ঢাকা-আগরতলা বাস সার্ভিস এন্ড ইটস প্রটোকল’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন প্রিভেনশন অব হিউম্যান ট্রাফিকিং’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন প্রিভেনশন অব স্মাগলিং এন্ড সার্কুলেশন অব ফেক কারেন্সি নোটস’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন বাংলাদেশ এন্ড ইন্ডিয়া এন্ড ফর এঙ্টেনডিং এ নিউ লাইন অব ক্রেডিট (এলওই) অব ইউএস ডলার ২ বিলিয়ন বাই গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া টু গভর্নমেন্ট অব বাংলাদেশ’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন বস্নু ইকোনোমি এন্ড মেরিটাইম কো-অপারেশন ইন দি বে অব বেঙ্গল এন্ড দি ইন্ডিয়ান ওসেন’ ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন ইউজ অব চিটাগং এন্ড মংলা পোর্টস’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং ফর এ প্রজেক্ট আন্ডার আইইসিসি (ইন্ডিয়ান এনডোমেন্ট ফর ক্লাইমেট চেঞ্জ) অব সার্ক’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং অন ইন্ডিয়ান ইকোনোমিক জোন’, ‘কালচারাল এঙ্চেঞ্জ প্রোগ্রাম ফর ২০১৫-১৭’, ‘স্টেটমেন্ট অব ইনটেন্ট অন বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া এডুকেশন কো-অপারেশন (এডপটেশন)’, ‘এগ্রিমেন্ট বিটুইন বাংলাদেশ সাব-মেরিন ক্যাবল কোম্পানি লিমিটেড (বিএসসিসিএল) এন্ড ভারত সঞ্চার নিগাম লিমিটেড (বিএসএনএল) ফল লিজিং অব ইন্টারন্যাশনাল ব্যান্ডউইডথ অব ইন্টারনেট আখাউড়া’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন ইউনিভার্সিটি অব ঢাকা, বাংলাদেশ এন্ড কাউন্সিল অব সায়েন্টিফিক এন্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিসার্চ, ইন্ডিয়া অব জয়েন্ট রিসার্চ অন ওসেনোগ্রাফি অব দি বে অব বেঙ্গল’, ‘মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং বিটুইন ইউনিভার্সিটি অব রাজশাহী, বাংলাদেশ এন্ড ইউনিভার্সিটি অব জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া, ইন্ডিয়া’ এবং ‘হ্যান্ডিং ওভার অব কনসেন্ট লেটার বাই ইন্সু্যরেন্স ডেভেলপমেন্ট এন্ড রিগুলেটরি অথরিটি (আইডিআরএ), বাংলাদেশ টু লাইফ ইন্সু্যরেন্স কো-অপারেশন (এলআইসি), ইন্ডিয়া টু স্টার্ট কো-অপারেশনস ইন বাংলাদেশ৷তিনি বলেন, স্থল সীমানা চুক্তি ১৯৭৪ ও এর ২০১১ এর প্রটোকলটি অনুসমর্থনের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের সীমানা নির্ধারণী বহুমুখী সমস্যার এবং ছিটমহলবাসীর মানবিক সমস্যার চিরস্থায়ী সমাধান হতে যাচ্ছে৷শেখ হাসিনা বলেন, ২০১৫ সালের ২৫ মে ভারতের পক্ষে সে দেশের রাষ্ট্রপতি শ্রী প্রণব মুখার্জি এবং ২০১৫ সালের ৫ জুন আমি বাংলাদেশের পক্ষে এ সংক্রানত্ম ‘ইনস্ট্রুমেন্টস অব রেটিফিকেশন’ স্বাক্ষর করি৷ আমরা চুক্তিটি বাস্তবায়নের জন্য কি কি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে সেগুলো ঠিক করেছি এবং দ্রুত বাসত্মবায়নের লক্ষ্যে সময়সীমা নির্ধারণ করেছি৷ প্রধানমন্ত্রী বলেন, মোদি অভিন্ন নদীর পানি বন্টনের বিষয়টির মানবিক দিকে প্রাধান্য দিয়েছেন৷ একে রাজনীতির ঊধের্্ব স্থান দিয়েছেন ও তিসত্মার পানি বন্টন চুক্তি শিগগিরই সম্পাদনের আশ্বাস দিয়েছেন৷ তিনি সীমানত্ম হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনারও প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন৷ তিনি ভারত থেকে বাংলাদেশে আরো বিদু্যত্‍ রপ্তানিসহ বিদু্যত্‍ ও জ্বালানি খাতে দু\’দেশের সহযোগিতা আরও বৃদ্ধিতে সম্মতি জ্ঞাপন করেছেন৷