Rajshahi Drug Crime News 8-7-15

দৈনিকবার্তা-রাজশাহী, ০৮ জুলাই ২০১৫: ঈদকে ঘিরে রাজশাহীর তিনটি উপজেলার সীমান্ত এলাকা দিয়ে ভারত থেকে অবাধে আসছে বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্যের চালান। মাদকের আস্তানা বলে খ্যাত রাজশাহী এখন হয়ে উঠেছে মাদকে ভরপুর। মাদকের এলাকা জেলার গোদাগাড়ী, চারঘাট ও বাঘার সীমান্ত এলাকার অন্তত ১০০টি রুট দিয়ে গত কয়েক দিনে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার মাদক প্রবেশ করছে রাজশাহীতে।

এগুলোর মধ্যে রয়েছে, ফেনসিডিল, গাঁজা, হেরোইন, ইয়াবাসহ বিভিন্ন মাদকদ্রব্য। এরই মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরাও বেশকিছু মাদকদ্রব্য পাকড়াও করেছে। তবে থেমে নেই মরণ নেশাদ্রব্যের আমদানি। ভারত থেকে আনা এসব মাদকদ্রব্য রাজশাহী থেকে যানবহনসহ নানা মাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে। আর ঢাকাসহ বিভিন্ন রুট হয়ে আসছে ইয়াবা।

রাজশাহীর সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে, ঈদকে ঘিরে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে চোরাকারবারী ও মাদক ব্যবসায়ীদের যে দোস্তি সম্পর্ক গড়ে উঠে, সেটি প্রতিবারের মতো এবারো তার ব্যতিক্রম ঘটেনি। বিশেষ করে পুলিশের সঙ্গে মাদক ব্যসায়ীদের লেনদের পরিমাণ এখন বেড়েছে তিন গুন হারে। ফলে চলতি রমজান মাস শুরু হওয়ার পর থেকেই রাজশাহীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে আসতে শুরু করেছে বিভিন্ন মাদক দ্রব্য। এতে করে গত ১৫ দিনে রাজশাহীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অন্তত এক হাজার কোটি টাকার মাদক দ্রব্য প্রবেশ করেছে।

এগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি প্রবেশ করেছে ফেনসিডিল ও হেরোইন। সীমান্ত এলাকার একাধিক সূত্র জানায়, রাজশাহীর সীমান্ত এলাকার ছোট-বড় অন্তত ৫ হাজার নারী-পুরুষ মাদক কেনাবেচায় জড়িত। এই ব্যসায়ীরা এখন গড়ে প্রতিদিন অন্তত কোটি কোটি টাকার মাদক দ্রব্য নিয়ে আসছে ভারত থেকে। এমনিতেই যে কোনো সময় প্রতিদিন অন্তত ৫০-৬০ কোটি টাকার মাদক দ্রব্য আসে ভারত থেকে। আর ঈদ মৌসুমে সেই হার রাতারাতি বেড়ে যায় অন্তত দুইগুণ হারে। আর মাদক কেনার জন্য এই টাকা পাচার করা হচ্ছে হুন্ডির মাধ্যমে। এই মাদকদ্রব্যগুলো রাজশাহী থেকে যানবহনসহ নানা মাধ্যম হয়ে ছড়িয়ে পড়ছে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে।

সরেজমিন অনুসন্ধানে জানা গেছে, মাদক দ্রব্য আনা-নেওয়ার জন্য রাজশাহীর সীমান্ত প্রায় ৫০ কিলোমিটার এলাকা ব্যবহার করছে চোরাচালান কারবারিরা। বিশাল এই সীমান্ত এলাকার মধ্যে যেসব স্পট হয়ে চোরাকারাবারিরা ভারত থেকে মাদক পাচার করে নিয়ে আসছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে, বাঘা উপজেলার মীরগঞ্জ, আলাইপুর ও হরিরামপুর। চারঘাট উপজেলার রাওথা, পিরোজপুর, গোপালপুর, মুক্তারপুর, ও ইউসুফপুর। পবা উপজেলার হরিপুর এলাকার গহমাবনা, বাগানপাড়া, খোলাবনা, বেড়পাড়া, সোনাইকান্দি ও নবগঙ্গা।

নগরীর রাজপাড়া থানা এলাকার হাড়ুপুর, বশড়ি, গুড়িপাড়া, শ্রীরামপুর ও বুলনপুর। নগরীর বোয়ালিয়া থানা এলাকার বড়কুঠি, আলুপট্টি ও পঁঞ্চবটি, তালাইমারী। মতিহার থানা এলাকার কাজলা, ডাসমারী, শাহাপুর, চরশ্যামপুর ও টাঙ্গন। গোদাগাড়ী উপজেলার খেড়াপাড়া, দিয়াড় মানিকচক, সাহেব নগর, কোদালকাটি, উজানপাড়া, আঁচোয়া, মাদারপুর, রেলবাজার, হাটপাড়া, সারাংপুর, সুলতানগঞ্জ, কামারপাড়া ফরিদপুর, বিয়ানাবোনা, নিমতলা, ফারাজপুর, বিদিরপুর ও মহিষালবাড়ী এলাকা।

একাধিক গোয়েন্দা সূত্র জানায়, রাজশাহীর সীমান্ত এলাকার মধ্যে গোদাগাড়ীর মহিষালবাড়ী থেকে শুরু করে একেবারে চাঁপাইনবাবগঞ্জ পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসে হেরোইন। এছাড়া পবা থেকে বাঘা পর্যন্ত সীমান্ত এলাকা দিয়ে আসে ফেনসিডিল। এবার ঈদকে ঘিরেও একই অবস্থা বিরাজ করছে। রাজশাহীর সীমান্ত এলাকা দিয়ে অবাধে মাদক আসছে বলে অভিযোগ করে রাজশাহী রক্ষা সংগ্রামের পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান বলেন, ‘রাজশাহীর সীমান্ত এলাকা এখন আন্তজার্তিক মাদকচক্রের রুট হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে। এটি বন্ধ না হলে এই অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যাবে। এর জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ সমাজের সকল স্তরের মানুষদের এগিয়ে আসা উচিত।’ জানতে চাইলে রাজশাহী মহানগর পুলিশের মূখপাত্র ইফতে খায়ের আলম বলেন, ‘মাদক নিয়ন্ত্রণে পুলিশ কাজ করে যাচ্ছে। ঈদকে ঘিরে যেন মাদকের কেনা-বেচা বেশি না বাড়ে এর জন্য অভিয্না আরো জোরদার করা হয়েছে।’