দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৬ জুলাই: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরীর মৃত্যুদন্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিলে আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক পেশ মঙ্গলবারের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশ দিয়েছে সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগ।প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে চার বিচারপতির বেঞ্চ সোমবার এ আদেশ দেয়। বেঞ্চের অন্য বিচারপতিরা হলেন- বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন ও বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।আদালতে আপিল শুনানির দ্বাদশতম দিনে সাকা চৌধুরীর পক্ষে দ্বিতীয় দিনের মতো যুক্তিতর্ক পেশ করেন আইনজীবী এডভোকেট এএসএম শাহজাহান। তিনি সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে ট্রাইব্যুনালে নয়টি অভিযোগের বিষয়ে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।
এর আগে গত ১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করে। ওই দিন এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম মানবতাবিরোধী অপরাধে সাকা চৌধুরীকে ট্রাইব্যুনালে দেয়া মৃত্যুদন্ড বহাল থাকা ন্যায় ও অতি প্রয়োজন দাবী করে যুক্তি পেশ করেন। তিনি বলেন, যুদ্ধের সময় সাকা চৌধুরী পাকিস্তানি বাহিনী ও নিজস্ব বাহিনীকে সঙ্গে নিয়ে তান্ডব চালিয়েছে। একই দিনে চার স্থানে পর্যন্ত তান্ডব চালানো হয়। ৭১এর এপ্রিল থেকে জুলাই পযর্ন্ত এসব অপরাধ হয়েছে। বিশেষ করে সংখ্যালঘুদের ওপর বেশি হামলা করা হয়। যেন তারা দেশ ছেড়ে চলে যান। এসব অপরাধের চারটি অভিযোগে ট্রাইব্যুনাল এ আসামিকে মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দিয়েছে। এ দন্ড বহাল রাখার আর্জি পেশ করে রাস্ট্রপক্ষ।
গত ১৬ জুন শুনানি শুরু করে ৮ কার্যদিবস ট্রাইব্যুনালের রায়, সাক্ষীদের সাক্ষ্য-জেরা এবং রায় সংক্রান্ত নথিপত্র (পেপারবুক) উপস্থাপন করে আসামিপক্ষ। গত ৩০ জুন ও ১ জুলাই রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক পেশ করা হয়।জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদের চূড়ান্ত রায়ে মৃত্যুদন্ড বহাল রাখার পর পরই গত ১৬ জুন শুরু হয় আপিল বিভাগে আসা ট্রাইব্যুনালের রায়ের বিরুদ্ধে পঞ্চম আপিলের শুনানি। মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড রায়ের বিরুদ্ধে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর আপিল আবেদনটি আপিল বিভাগে পঞ্চম আপিল মামলা। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় এডভোকেট অন রেকর্ড জয়নাল আবেদীন ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর এ আপিল দায়ের করেন।
এটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে রাস্ট্রপক্ষ আপিল করেনি। তবে আপিলে আসামীপক্ষের শুনানির বিপরিতে রায় বহাল রাখার পক্ষে আর্জি পেশ করে যুক্তি উপস্থাপন করা হয়েছে। ২০১৩ সালের ১ অক্টোবর ট্রাইব্যুনালÑ১এর তৎকালীন চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের বিচারিক প্যানেল সাকা চৌধুরীকে মুক্তিযুদ্ধকালীন মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় মৃত্যুদন্ড দিয়ে রায় দেয়।রায়ে বলা হয়, সাকা চৌধুরীর বিরুদ্ধে আনীত ২৩টি অভিযোগের মধ্যে ৯টি সন্দেহাতিতভাবে প্রমাণ করতে সক্ষম হয়েছে প্রসিকিউশন।
এর মধ্যে ৩,৫,৬ ও ৮ নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে মৃত্যুদন্ড. ২,৪ ও ৭নং অভিযোগের প্রতিটিতে তাকে ২০ বছর করে জেল এবং ১৭ ও ১৮ নং অভিযোগে তাকে ৫ বছর করে জেল দিয়ে রায় ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল-১।মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ২০১২ সালের ৪ এপ্রিল তার বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট ২৩টি অভিযোগে চার্জ গঠন করা হয়। সাকা চৌধুরীকে ২০১০ সালের ১৫ ডিসেম্বর রাতে হরতালে গাড়ী পোড়ানো ও ভাংচুরের এক মামলায় গ্রেফতার করা হয়। তদন্তের স্বার্থে এক আবেদনের প্রেক্ষিতে ওই বছরের ১৯ ডিসেম্বর মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেফতার দেখানো হয়। সে থেকে তিনি কারাগারে রয়েছেন।