sangshad-bhaban-inside

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ জুলাই ২০১৫: পাচারকারীরা বাংলাদেশকে মানবপাচারের অন্যতম ট্রানজিট হিসাবে ব্যবহার করছে বলে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল। সোমবারের জাতীয় সংসদে এক লিখিত প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন দেশে মানবপাচারের বিষয়টি মিথ্যা নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বাংলাদেশ মানব পাচারের ট্রানজিট হিসেবেও ব্যবহৃত হচ্ছে।এপ্রিলের শেষ দিকে থাইল্যান্ডের জঙ্গলে পাচারকারীদের একটি পরিত্যক্ত আস্তানায় গণকবর পাওয়ার পর আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সাগর পথে মানবপাচার নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়।এরপর মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ড উপকূলে সাগরে ভাসমান অবস্থায় পাচারকারীদের কয়েকটি নৌকা থেকে তিন হাজারের বেশি মানুষকে উদ্ধার করা হয়েছে, যারা বাংলাদেশি ও মিয়ানমারের রোহিঙ্গা বলে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের তথ্য।মিয়ানমারে সরকারের নির্যাতনের শিকার রোহিঙ্গারা গত কয়েক বছর ধরেই সমুদ্রপথে ঝুঁকি নিয়ে প্রতিবেশী মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও থাইল্যান্ডে যাওয়ার চেষ্টা করছেন। বাংলাদেশ থেকেও কাঠের নৌকা বা মাছ ধরার ট্রলারে করে নিয়মিত মালয়েশিয়ায় যাওয়ার চেষ্টার ঘটনা ঘটছে।প্রতিমন্ত্রী বলেন, উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি পুরুষ চাকরির মিথ্যা আশ্বাসে বিদেশে পাড়ি জমায় এবং শ্রম বা ঋণ-দাসের মতো ভয়াবহ শোষণের অমানবিক পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়।মানবপাচার রোধে প্রতি দুই মাস অন্তর জাতীয় কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথাও স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী উল্লেখ করেন।

আরেক প্রশ্নের জবাবে মানবপাচারের সঙ্গে জড়িত সিন্ডিকেটকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলেও জানান তিনি।মানব পাচারের বিরুদ্ধে আমরা অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রেখেছি। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা এদের চিহ্নিত করেছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছি, ব্যবস্থা নিচ্ছি। আমরা মানবপাচার রোধে যথেষ্ট পরিমাণ ব্যবস্থা নিয়েছি।মানবপাচার বৃদ্ধি এবং থাইল্যান্ড ও মালেয়শিয়ায় গণকবরের সন্ধান ও অভিবাসীদের নির্যাতনের ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী।এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, মানবপাচারের মত জঘন্যতম অপরাধ দমন বর্তমান সরকার সবসময়ই ‘জিরো টলারেন্স নীতি অনুসরণ করছে। পাচারের শিকার বাংলাদেশিদের দ্রুত প্রত্যাবাসনের জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।মানবপাচার রোধে বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের একটি প্রাতিষ্ঠানিক ব্যবস্থা (টাস্ক ফোর্স) আছে। এর আওতায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে।পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, সম্প্রতি মালয়েশিয়া থেকে ৬১, ইন্দোনেশিয়া থেকে ১০৭, মিয়ানমার থেকে ১৮৭ ও থাইল্যান্ড থেকে চারজনসহ মোট ৩৫৯ জন বাংলাদেশি অভিবাসন প্রত্যাশীকে ফিরিয়ে আনা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, পহেলা বৈশাখে টিএসসি এলাকায় নারী লাঞ্ছনাকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। ইতোমধ্যে এদের অনেককেই আটক করা হয়েছে।তিনি সংসদে স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকীর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।প্রতিমন্ত্রী বলেন, পহেলা বৈশাখে আইন-শৃংখলা বাহিনীর পক্ষ থেকে কতগুলো বিধিনিষেধ, নিয়মকানুনের কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু এতো বেশি মানুষের সমাগম হয় যে, এসব নিয়মকানুন পালন করা সম্ভব হয়নি। পুলিশও নিরাপত্তা দিতে হিমশিম খাচ্ছিল। এই সুযোগেই দুর্বৃত্তরা ঘটনাটি ঘটিয়েছে।তিনি বলেন, ‘নারী লাঞ্ছনার ঘটনা অবশ্যই দুঃখজনক। সেদিনের ঘটনা আমরা পুরোপুরি বিশ্লেষণ ও পর্যবেক্ষণ করেছি। ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের চিহ্নিত করে কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে। যারা চিহ্নিত হয়েছে, অপকর্ম করেছে, তাদের সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে। যারা এসব অপকর্ম করেছে তাদের আইনের কাছে পৌঁছে দিয়েছি। বাকি দুই একজনকেও আটক করা হবে। আইজিপি’র পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে। ভবিষ্যতে যেন এ ধরনের ঘটনা না ঘটে এ ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্ভন করা হবে।

স্বতন্ত্র সদস্য মো.রুস্তম আলী ফরাজীর অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানবপাচারকারীদের চিহ্নিত করা হয়েছে। গোয়েন্দা সংস্থা পাচারকারী চক্র চিহ্নিত করেছে। ইতোমধ্যে কিছু পাচারকারীকে আটক করা হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে অত্যন্ত সজাগ দৃষ্টি রাখছে।নুরুল ইসলাম মিলনের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, মানবপাচার বন্ধে আইন রয়েছে এবং এতে গুরুদন্ডের ব্যবস্থাও রয়েছে। আইন যথেষ্ট শক্তিশালী। মানবপাচার বন্ধে কোস্ট গার্ডসহ সব বাহিনী কাজ করে যাচ্ছে।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, আসন্ন ঈদে দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সরকার যথেষ্ট তৎপর রয়েছে।তিনি ে সংসদে জাতীয় পার্টির সদস্য বেগম মাহজাবীন মোরশেদের এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন।প্রতিমন্ত্রী বলেন, আসন্ন ঈদ-উল ফিতর উপলক্ষে দেশবাসীকে নিরাপত্তা দিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর। আশা করছি অন্যবারের মতো এবারও দেশবাসী সুন্দরভাবে ঈদ উদযাপন করতে পারবেন।তিনি বলেন, ঈদকে সামনে রেখে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যা যা করণীয় তা করছে। আইজিপি’র নেতৃত্বে ইতোমধ্যে এ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। ঈদে যে সব সমস্যা হয় তা চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়ার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

আসাদুজ্জামান খাঁন বলেন, দেশবাসীর নিরাপত্তা নিশ্চিতে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী সার্বক্ষণিক ব্যবস্থা নিচ্ছে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষকে স্বস্তি দিতে এবং মহাসড়কে যেন যাত্রীদের ভোগান্তিতে পরতে না হয়, সেজন্য হাইওয়ে পুলিশ, জেলা পর্যায়ে জেলা পুলিশ এবং মহানগরীতে নগর পুলিশ কাজ করছে। এছাড়া আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী ছিনতাই, মলম পার্টিসহ এ ধরনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।স্বতন্ত্র সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিমের অপর এক সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যানজট নিরসনে ঢাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কাজ করা হচ্ছে। রাস্তা যাতে সচল রাখা যায় এ জন্য প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন বলেছেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ১১ হাজার ৯২৫ জন বিদেশী নাগরিক কাজ করছে।তিনি সংসদে সরকারি দলের সদস্য গোলাম দস্তগীর গাজীর এক প্রশ্নের জবাবে একথা বলেন।স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, ভারতের ৪ হাজার ৪৬ জন, চীন ১ হাজার ৪৮২, শ্রীলংকা ১ হাজার ৩৭৩, পাকিস্তান ৭১২ জন, ইংল্যান্ড ৬১৯, ফিলিপাইন ৫২৩, আমেরিকা ৩৩৮, দক্ষিণ কোরিয়া ৩৩৪, থাইল্যান্ড ২৭৫ জাপান ২৩৫, তুরস্ক ১৭০, ইন্দোনেশিয়া ১৪৩, ফ্রান্স ১৩৩, অস্ট্রেলিয়া ১১২, কানাডা ১০৯, জার্মানী ৮৩, নেদারল্যান্ডস ৮২, ইতালি ৮০, ইউক্রেন ৭৮, সুইডেন ৫৩, স্পেন ৬৬, মিশর ৪২, মরিশাস ৩৯, উজবেকিস্তান ৩৭, নিউজিল্যান্ড ২৫, ভুটান ২৪ ও অন্যান্য দেশের ৭১২ জন রয়েছে।তিনি বলেন, অবৈধভাবে অবস্থানরত বিদেশী নাগরিকদের বিরুদ্ধে ১৯৪৬ সালের ফরেনার্স এ্যাক্ট মোতাবেক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাছাড়া যেসব বিদেশী নাগরিক ভিসার মেয়াদ উত্তীর্ণের পরেও বাংলাদেশে অবস্থান করছেন তাদের অবস্থান ও কার্যকলাপের প্রতি স্পেশাল ব্রাঞ্চসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে নজরদারি অব্যাহত রয়েছে।