439

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ জুলাই ২০১৫: বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদি দল বিএনপি প্রশ্ন রেখে বলেছে, পুলিশ বাহিনী কী শুধু আওয়ামী লীগের।পুলিশ বাহিনী তাদের ভাবমুর্তির স্বার্থে সংবেদনশীল এবং সংযম প্রদর্শন করবেন বলে প্রত্যাশা দলটির। তাছাড়া, রাজনীতিবিদদের মতো কথা বলা পুলিশের দায়িত্ব নয় বলে মনে করে বিএনপি।সোমবার দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন দলটির মুখপাত্র ও আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. আসাদুজ্জামান রিপন।বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে দায়িত্বশীল বক্তব্য দিতে পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল (আইজিপি) একে এম শহীদুল হকের দেয়া বক্তব্যের প্রেক্ষিতে এ কথা বলেন রিপন।শহিদুল হকের পরামর্শকে অনাকাঙ্খিত ও অনভিপ্রেত হিসেবে অভিহিত করেন তিনি।

শনিবার সুপ্রিমকোর্ট আইনজীবী সমিতির এক ইফতার মাহফিলে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার বক্তব্যে বলেন পুলিশই আমাদের আন্দোলনের সময় পেট্রোলবোমা মেরেছে। শুধু বোমা নয়, বাসে আগুনও দিয়েছে তারা।এর প্রতিবাদ করে রোববার এক অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার বক্তব্যকে ‘দুঃখজনক’ বলে মন্তব্য করেন পুলিশ মহাপরিদর্শক এ কে এম শহীদুল হক। বিএনপি চেয়ারপারসনকে বক্তব্য দেয়ার ক্ষেত্রে আরও দায়িত্বশীল হওয়ারও পরামর্শ দেন পুলিশের আইজি।আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানকে এই ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত থেকে আরও দায়িত্বশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়ে রিপন বলেন, এ কথা বলে তিনি কি ইঙ্গিত করেছেন জানি না। তবে আমাদের দলের অবস্থান হচ্ছে, আন্দোলনের সময়ে সৃষ্ট নাশকতার সঙ্গে বিএনপির কোনো নেতাকর্মীর সংশ্লিষ্টতা নেই। এটি বিএনপি প্রধান অনেক আগেই স্পষ্টভাবে উল্লেখ করেছেন।রিপন বলেন, পুলিশ প্রধানের কাছ থেকে যখন এই ধরনের বক্তব্য আসে, তখন স্বাভাবিকভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বাহিনীর অন্য সদস্যরা প্রধানের মনোভাবে প্রভাবিত হয়ে চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে তাদের সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন কঠিন হয়ে পড়ে।বিএনপির এই মুখপাত্র বলেন, আমরা প্রত্যাশা করি, আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের রাজনৈতিক দলের বিরুদ্ধে কথা বলা উচিত নয়। এতে বাহিনীর অধস্তনরা ওই দলের প্রতি আরও বিরূপ মনোভাবাপন্ন হয়। তখন গণতান্ত্রিক স্পেস তো দূরের কথা, লাইফ স্পেসও সংকটাপন্ন হয়ে যায়। আমরা আতঙ্কিত হয়ে যাই।

পুলিশ প্রধান হিসেবে একজন দায়িত্বশীল নাগরিকের মতো বক্তব্য দিতে শহীদুল হকের প্রতি আহ্বান জানিয়ে রিপন বলেন, একজন প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী ও রাজনৈতিক দলের প্রধানকে লক্ষ্য করে পুলিশ প্রধানের এই ধরনের বক্তব্য শোভন নয়। বিএনপি প্রধান নাশকতার জন্য সব পুলিশকে দায়ী করেননি। তিনি বলেছেন, কিছু কিছু সদস্য এই কাজ করেছে। একজন রাজনীতিবিদ হিসেবে নিশ্চয়ই এর পক্ষে তার পর্যবেক্ষণ ও প্রমাণ আছে। তার বক্তব্যের বিপরীতে কোনো বক্তব্য থাকলে তা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের দায়িত্বে যিনি আছেন বা প্রধানমন্ত্রী বলতে পারতেন। তাহলে বুঝতাম বিষয়টি রাজনৈতিক বাদানুবাদ। কিন্তু আইন প্রয়োগকারী সংস্থার প্রধানের দেয়া বক্তব্য দৃষ্টিকটু।পুলিশ প্রধান এ কে এম শহীদুল হকের বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সোমবার এক সংবাদ সম্মেলনে এই আশঙ্কার কথা জানান বিএনপির মুখপাত্র আসাদুজ্জামান রিপন।তিনি বলেন, পত্রিকায় দেখলাম শহীদুল হক সাহেব বলেছেন, কারা পেট্রোল বোমা মেরেছে, গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যা করেছে, তা সূর্যের আলোর মতো স্বচ্ছ।এরকম বক্তব্য দিয়ে আইজিপি কী বোঝাতে চেয়েছেন, আমরা তা জানি না। উনি যদি বিরোধী দলকে উদ্দেশ্য করে ওই কথা বলে থাকেন। তাহলে আমরা মনে করি, পুলিশ প্রধানের মুখ থেকে যখন এই ধরনের বক্তব্য আসে, তখন স্বাভাবিকভাবে তদন্ত প্রক্রিয়া প্রভাবিত হওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। অধস্তন কর্মকর্তারা যখন বাহিনী প্রধানের মনোভাব অনুধাবন করেন, তখন সেখান নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করাটা কঠিন হয়ে যায় চাকরি বাঁচানোর স্বার্থে।

বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলের অবরোধ-হরতালে গাড়িতে আগুন দিয়ে মানুষ হত্যার অনেক মামলা রয়েছে। এসব মামলায় খালেদাসহ বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের আসামি করেছে পুলিশ। তবে বিএনপি নাশকতায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে।দলীয় প্রধানের বক্তব্যের পক্ষে রিপন বলেন,বেগম খালেদা জিয়া যেই অভিযোগটি করেছেন, তার পেছনে নিশ্চয়ই যুক্তি আছে, তার পর্যবেক্ষণ আছে। তবে তার ওই বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ প্রধানের বক্তব্য একেবারেই অনভিপ্রেত, অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দলের প্রধানকে যখন সরকারের কোনো বাহিনী প্রধান বলেন, তিনি (খালেদা জিয়া) বক্তব্য দেবেন দায়িত্বশীল হয়ে। এটা কী খুব শোভন? আমি এই প্রশ্নটি জনাব শহীদুল হক সাহেবকে করতে চাই।

শহীদুল হকের রাজনৈতিক বক্তব্যে রাষ্ট্রীয় পুলিশ বাহিনী বিরোধী দলের উপর খড়গহস্ত হয়ে উঠতে পারেন বলেও শঙ্কার কথা জানান বিএনপি নেতা।আইন প্রয়োগকারী সংস্থা যদি বিরোধী দলের প্রতি বিরূপ মনোভাপন্ন হয়ে ওঠেন, তাহলে গণতান্ত্রিক স্পেস তো দূরের কথা, লাইভ স্পেসই সংকটে পড়ে যাবে। এতে আমরা আতঙ্কিত।পুলিশসহ রাষ্ট্রীয় যে কোনো বাহিনীর প্রধানরা বক্তব্যের ক্ষেত্রে দায়িত্বশীল হবেন বলেও প্রত্যাশা করেন রিপন।রাজনীতিকদের মতো কথা-বার্তা বলা তাদের জন্য শোভন নয়। তাদের দেখভাল করার জন্য মন্ত্রী আছেন। তাদের সঙ্গে রাজনীতিকদের বাহাস হবে। কেন পুলিশ প্রধান বাহাসে জড়িয়ে যান, তা আমাদের বোধগম্য নয়।একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি জটিলতা নিয়ে শিক্ষা সচিব নজরুল ইসলাম খানের বক্তব্যের সমালোচনাও করেন বিএনপি নেতা রিপন। তিনি বলেন, একজন মন্ত্রী হচ্ছেন মন্ত্রণালয়ের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা, সচিব নন। অথচ আমরা দেখলাম শিক্ষামন্ত্রীর সামনে একজন সচিব টি-টোয়ান্টি, ছক্কা মারার কথা বলেন, জিরোতে আউট, রান আউটের কথা বলেন। একটা অদ্ভুত দেশে আমরা বাস করছি। আমরা জানতে চাই, মন্ত্রীর সামনে একজন সচিবের এধরনের বক্তব্য দেওয়া সরকারি চাকরিবিধির মধ্যে পড়ে কি না।সচিবের সমালোচনা করলেও ভর্তি জটিলতার জন্য দুঃখ টওকাশ করায় শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদকে সাধুবাদ দিয়েছেন বিএনপির মুখপাত্র।তবে তিনি সেই সঙ্গে বলেন, বিনা ভোটের এমপি-মন্ত্রীরা সরকারি কর্মকর্তাদের ওপর আইনানুগ কর্তৃত্ব প্রয়োগ করতে পারছেন না। এজন্য একটা হ-য-ব-র-ল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।নয়া পল্টনে দলীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে বিএনপি নেতা সাখাওয়াত হোসেন জীবন, জন গোমেজ, আসাদুল করীম শাহিন, সেলিম রেজা হাবিব, সুলতানা আহমেদ, শামসুল আলম তোফা উপস্থিত ছিলেন।