দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৬ জুলাই ২০১৫: আইসিটি খাতে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ ও সহজ শমেয়াদী ঋর্তে দীর্ঘণ দেওয়ার বিধান রেখে জাতীয় তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি নীতিমালা-২০১৫ এর খসড়ার অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷ সোমবার জাতীয় সংসদ ভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত মন্ত্রিসভার বৈঠকে এ নীতিমালার অনুমোদন দেওয়া হয়৷পাশাপাশি আইসিটি খাতের মাধ্যমে নাগরিক সেবার মান বাড়াতে সুনির্দিষ্ট কর্মপরিকল্পনাও নেওয়া হবে৷চলতি বছরের ২ফেব্রুয়ারি আইসিটি নীতিমালা মন্ত্রিসভায় উপস্থাপন করা হয়৷এরপর মন্ত্রিসভা সেটি পর্যবেক্ষণসহ অনুমোদন দেয়৷ বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সচিবালয়ে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে একথা জানান৷সচিব জানান, এই নীতিমালায় একটি ভিশন, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৪টি কৌশলগত বিষয়বস্তু এবং একটি কর্মপরিকল্পনা রয়েছে৷তিনি জানান, দেশে বর্তমানে ৪ কোটি ৭৪ লাখ ইন্টারনেট ব্যবহারকারী এবং ৫ হাজার ২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার রয়েছে৷
নীতিমালার কর্ম পরিকল্পনা সম্পর্কে সচিব জানান, তিনটি ধাপে কর্ম পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা হবে৷ ২০১৬ সালের মধ্যে স্বল্প মেয়াদী, ২০১৮ সালের মধ্যে মধ্যমেয়াদী ও ২০২১ সালের মধ্যে দীর্ঘ মেয়াদী অর্থাত্ ২০২১ সালের সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশে পৌঁছানো এবং ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পৌঁছানোর ভিশন রয়েছে৷নীতিমালার উদ্দেশ্য সম্পর্কে ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, এতে ১০টি উদ্দেশ্য রয়েছে৷ সেগুলো হলো সামাজিক ন্যায়পরায়ণতা, নীতির প্রতি আস্থা, শিক্ষা ও গবেষণা, রপ্তানি উন্নয়ন, আইসিটি সহায়ক স্বাস্থ্য, পরিবেশ ও জলবায়ু প্রভৃতি৷এছাড়া, কঙ্বাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন -২০১৫ এর খসড়ার চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে মন্ত্রিসভা৷মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা সাংবাদিকদের বলেন, সংশোধিত নীতিমালায় মন্ত্রিসভা সন্তোষ প্রকাশ করেছে৷ নীতিমালায় একটি ভিশন, ১০টি উদ্দেশ্য, ৫৪টি কৌশলগত বিষয়বস্তু এবং ২৩৫টি অ্যাকশন প্ল্যান বা কর্মপরিকল্পনা রয়েছে৷ কর্মপরিকল্পনা থাকায় নীতিমালা বাস্তবায়ন ও পরিবীক্ষণে সুবিধা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷
কর্মপরিকল্পনা তিন মেয়াদে বাস্তবায়িত হবে জানিয়ে তিনি বলেন, ২০১৬ সালের মধ্যে স্বপ্লমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে৷ তবে এর কিছু কিছু কাজ ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে৷ ২০১৮ সালের মধ্যে মধ্যমেয়াদী এবং ২০২১ সালের মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে৷নীতিমালায় আগে ৩০ বছরের ভিশন থাকলেও এখন ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশের সারিতে উন্নীত করার কথা বলা হয়েছে৷ প্রধানমন্ত্রী ২০৪১ সালকে একটা মাইলস্টোন হিসেবে চিহ্নিত করেছেন৷ ওই সময়ের মধ্যে দেশকে উন্নত দেশের কাতারে শামিল করার ভিশন৷রূপকল্পের বর্ণনায় মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, আইসিটির সমপ্রসারণ ও বহুমুখী ব্যবহারের মাধ্যমে একটি স্বচ্ছ, দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিতামূলক সরকার প্রতিষ্ঠা, দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টি, সামাজিক ন্যায়পরায়নতা বৃদ্ধি, সরকারি ও বেসরকারিখাতের অংশীদারিত্বে সুলভে জনসেবা দেওয়া এবং ২০২১ সালের মধ্যে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশ ও ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত দেশে পরিণত করার জাতীয় লক্ষ্য অর্জন করা৷ইতোমধ্যে দেশ নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ২০২১ সালের মধ্যে উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হতে চাই৷
সামাজিক ন্যায়পরায়নতা, নীতির প্রতি দায়বদ্ধতা, সার্বজনীন প্রবেশযোগ্যতা, শিক্ষা ও গবেষণা, কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, রপ্তানি উন্নয়ন, আইসিটি সহায়ক স্বাস্থ্যসেবা, পরিবেশ,জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং উত্পাদনশীলতা বৃদ্ধি করাই নীতিমালার উদ্দেশ্য৷নীতিমালায় কিছু প্রণোদনার বিষয় রয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, আইসিটি খাতে উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণায় উত্সাহ দিতে যুক্তিসঙ্গত পরিমাণ বাজেট বরাদ্দ ও সহজ শর্তে স্বপ্ল সুদে দীর্ঘমেয়াদী ঋণ দেওয়া, ডেটা সংযোগের ক্ষেত্রে নেটওয়ার্ক যন্ত্রপাতিতে হ্রাসকৃত হারে ভ্যাট ও শুল্ক নির্ধারণ করা৷ এটা মাথায় রেখে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড অর্থবিল আইনের খসড়া তৈরি করবে৷এছাড়া পুরাতন পিসি ও আইসিটি যন্ত্রপাতি থেকে মূল্যবান ধাতু সংগ্রহ করে পুর্নব্যবহারের জন্য উত্সাহিত করা, এটা মধ্যমেয়াদী পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে৷নীতিমালায় তথ্যপ্রযুক্তির সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়গুলো হালনাগাদ করা হয়েছে জানিয়ে মোহাম্মদ মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা বলেন, বর্তমানে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৩ লাখ, ইন্টারনেট ব্যবহারকারী ৪ কোটি ৭৪ লাখ৷ ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের সংখ্যা রয়েছে ৫ হাজার ২৭৫টি৷এর আগে ২০০৯ সালে প্রণীত নীতিমালা হালনাগাদ করে আইসিটি বিভাগ স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা, আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করে ২০১১ সালের ১১ মার্চ মন্ত্রিসভায় নিয়ে আসে৷নীতিমালায় কীভাবে, কী প্রক্রিয়ায় আইসিটি ব্যবহার হবে তার দিকদর্শন রয়েছে বলে ওই সময় জানিয়েছিলেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷বৈঠক শেষে সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভুইঞা সাংবাদিকদের বলেন, একটি পর্যটন নগরী হিসেবে কঙ্বাজারের গুরুত্ব ও সম্ভাবনা অনেক৷ এর উন্নয়নের বিশাল সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু এখানে বর্তমানে অপরিকল্পিত নগরায়ন হচ্ছে ফলে তা আকর্ষণীয় হতে পারছে না৷এ অবস্থার উত্তরণে কঙ্বাজারকে পরিকল্পিত নগরায়নের অধীনে আনতে আইনের মাধ্যমে একটি কর্তৃপক্ষ গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় সরকার৷ রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ এবং চট্রগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের আদলে কঙ্বাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ গঠন করা হবে বলে জানান মন্ত্রিপরিষদ সচিব৷একটি পরিকল্পিত পর্যটন নগরী গড়ে তোলার জন্য সমীক্ষা, জরিপ, মাস্টার প্ল্যান এবং নগর পরিকল্পনা তৈরি করবে এই কর্তৃপক্ষ৷
মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ভূমির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করাই এ কর্তৃপক্ষের কাজ হবে৷ মাস্টারপ্ল্যানের বাইরে কেউ যেন ভূমি ব্যবহার করতে না পারে সেটি হবে কর্তৃপক্ষের মূল কাজ৷ উন্নয়নমূলক কাজ যেন নিয়মতান্ত্রিকভাবে হয় তার নিয়ন্ত্রক হিসেবেও কাজ করবে এই কর্তৃপক্ষ৷তিনি বলেন, ভবন নির্মাণ বা উন্নয়নমূলক কাজ করতে এই কর্তৃপক্ষের অনুমতি নিতে হবে এবং অনুমতি ছাড়া এসব কাজ করা যাবে না৷ কোনো কাজে অনুমতি দিলে পরবর্তীতে তা বাতিল করার ক্ষমতাও কর্তৃপক্ষকে দেয়া হয়েছে৷আইনের অধীনে কঙ্বাজারের উন্নয়নে কর্তৃপক্ষের সার্বক্ষণিক একজন চেয়ারম্যান এবং প্রশাসন, উন্নয়ন ও পরিকল্পনার জন্য তিন জন সদস্যকে নিয়োগ দেবে সরকার৷বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের প্রতিনিধিসহ কর্তৃপক্ষের মোট সদস্য সংখ্যা হবে ১৫ জন৷ এদের মধ্যে ৩ জন বিশিষ্ট নাগরিক থাকবেন যাদের একজন হবেন নারী৷অপরিকল্পিত নগরায়ন প্রতিহত এবং অবৈধ দখল উচ্ছেদেও এ কর্তৃপক্ষ কাজ করবে জানিয়ে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এ আইন ভঙ্গ করলে প্রচলিত আইনে বিচার হবে৷মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান, ভবন নির্মান, জলাধার ভরাট বা পাহাড় কাটা ইত্যাদি কাজ বন্ধে কর্তৃপক্ষ আদেশ দিতে পারে, যদি এই আদেশ কেউ অমান্য করে তাহলে কর্তৃপক্ষ অনধিক এক বছরের কারাদণ্ড বা অনধিক ৫ লাখ টাকা জরিমানার করতে পারবেন৷এ আইনে মোবাইল কোর্টে শাস্তি দেয়ার এখতিয়ারও রাখা হয়েছে৷