দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৫ জুলাই: মিরপুরের মন্থর উইকেটে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ১৪৯ রানের লক্ষ্য কঠিন হলেও অসম্ভব ছিল না। কিন্তু ব্যাটিং ব্যর্থতায় তার ধারে কাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে বড় ব্যবধানে হেরে সিরিজ শুরু করেছে স্বাগতিকরা।রোববার বাংলাদেশকে ৫২ রানে হারিয়ে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে দক্ষিণ আফ্রিকা।মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে অধিনায়ক ফাফ দু প্লেসির অপরাজিত অর্ধশতকে ৪ উইকেটে ১৪৮ রান করে দক্ষিণ আফ্রিকা। জবাবে ৭ বল বাকি থাকতে ৯৬ রানে অলআউট হয়ে যায় বাংলাদেশ।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে প্রথম দুই ওভারেই তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকারের বিদায়ে শুরুতেই দিক হারায় বাংলাদেশ। কাইল অ্যাবটের প্রথম ওভারের শেষ বলে লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে উইকেটরক্ষক কুইন্টন ডি ককের গ্লাভসবন্দি হন তামিম। পরের ওভারে কাগিসো রাবাদার বলে সীমানায় জেপি দুমিনিকে ক্যাচ দেন সৌম্য।ব্যাটসম্যানরা পুরোপুরি না পারলেও, বল হাতে দুর্দান্ত নৈপুণ্য দেখিয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার বোলাররা। তাতেই বাংলাদেশের বিপক্ষে প্রথম টুয়েন্টি টুয়েন্টি ম্যাচে ৫২ রানের সহজ জয় পেল প্রোটিয়াসরা। ফলে দুই ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল দক্ষিণ আফ্রিকা।
একই ভেন্যুতে আগামী ৭ জুলাই সিরিজের দ্বিতীয় ও শেষ টি-২০ ম্যাচ অনুষ্ঠিত হবে।জয়ের লক্ষ্য ১৪৯ রান। লক্ষ্যটা এক হিসেবে সহজই ছিলো। কারণ বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের ফর্ম। গেল দু’সিরিজ বিবেচনায় এমন কথা বলাই যায়। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের সামনে যেন, অন্য চরিত্র দেখা গেল বাংলাদেশী ব্যাটসম্যানদের। জয় ছোঁয়ার মত লক্ষ্যের পর মারমুখী শুরুর চেষ্টা তামিম ইকবালের। প্রথম ওভারে ১টি বাউন্ডারি আদায় করে নিলেও, ঐ ওভারের শেষ বলেই তার ইনিংসের যবনিকাপাত ঘটে। ৫ রান করে ফিরেন তিনি।
রানের চাকা সচল করার চেষ্টা করেছিলেন আরেক ওপেনার সৌম্য সরকার। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে ১টি বাউন্ডারি মারা সৌম্য, ঐ ওভারের পঞ্চম বলেই আউট হন। সৌম্য করেন ৭ রান। এরপর দলের স্কোর বোর্ডে রান জড়ো করেছেন সাকিব ও মুশফিকুর রহিম। তাতে ম্যাচ জয়ের পথে ধীরে ধীরেই পরিষ্কার হচ্ছিল। কিন্তু মুশফিকুরকে ব্যক্তিগত ১৭ রানে থামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে চিন্তায় ফেলে দেন দক্ষিণ আফ্রিকার অকেশনাল জেপি স্পিনার ডুমিনি।সেই চিন্তা আরও বাড়ে দলীয় ৫৬ ও ৫৭ রানে সাব্বির রহমান ও নাসির হোসেন প্যাভিলিয়নে ফিরে গেলে। তাতে বাংলাদেশের ম্যাচ জয় অনেকটাই ফ্যাকাসে হয়ে যায়। সাব্বির ৪ ও নাসির ১ রান করেন।
তারপরও বাংলাদেশের আশার প্রদীপ হয়ে জ্বলে ছিলেন সাকিব। কিন্তু পারেননি। ৩০ বলে ২৬ রান করে থামতে হয় তাকে। তাতেই বাংলাদেশের হারটা একরকম নিশ্চিতই হয়ে যায়। সাথে হারের ব্যবধানটাও বড় হবার শংকাটা জাগে। কিন্তু অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা লিটন চেষ্টা করেন হারের ব্যবধানটা কমানোর। শেষ পর্যন্ত ২২ রানে থামেন লিটন। দলীয় ৯৪ রানে নবম ব্যাটসম্যান হিসেবে লিটন আউট হবার পর ৭ বল হাতে রেখেই ৯৬ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশের ইনিংস। দক্ষিণ আফ্রিকার পক্ষে ডুমিনি, ওয়াইস ও রাবাদা ২টি করে উইকেট নেন। ম্যাচের সেরা হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার ডু-প্লেসিস।
এর আগে, মিরপুর শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্বান্ত নেন দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক ফাফ ডু-প্লেসিস। টস জিততে না পারলেও, বুদ্ধিদীপ্তি অধিনায়কত্ব দেখিয়েছেন বাংলাদেশের দলপতি মাশরাফি বিন মর্তুজা। প্রতিপক্ষের স্পিন ভীতির কথা চিন্তা করে উইকেটের দুই প্রান্ত দিয়েই স্পিনের ঝাল বুনেন মাশরাফি। উইকেট শিকার করে দলপতির আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন দুই স্পিনার আরাফাত সানি ও নাসির হোসেন।ইনিংসের প্রথম ওভার করতে আসা সানি, ষষ্ঠ বলেই সাজঘরে ফেরত পাঠান মেইকশিপ্ট ভয়ংকর ওপেনার এবি ডি ভিলিয়ার্সকে।
২ রান করেন ডি ভিলিয়ার্স। আর চতুর্থ ওভারের শেষ বলে আরেক ওপেনার কুইন্টন ডি কককে প্যাভিলিয়নে ডি ভিলিয়ার্সের সঙ্গী বানান নাসির। ৮ বলে ১২ রান করেন কক। ফলে সানি ও নাসিরের ৪ ওভার থেকে ২ উইকেটের বিনিময়ে ৩১ রান তুলতে পারে দক্ষিণ আফ্রিকা।শুরুতে কিছুটা চাপে পড়া দক্ষিণ আফ্রিকাকে এরপর খেলায় ফেরান অধিনায়ক ডু-প্লেসিস ও জেপি ডুমিনি। বলের সাথে পাল্লা দিয়ে রান তুলছিলেন তারা। তবে ধীরে ধীরে ভয়ংকর হয়ে উঠা এই জুটিতে ভাঙ্গন ধরান প্রথম উইকেট শিকার করা সানি। ১৮ রান করে ডুমিনিকে নিজের দ্বিতীয় শিকার বানান সানি।সানি ও নাসিরের ঘূর্ণিতে যেহেতু অস্বাচ্ছন্দ্য দক্ষিণ আফ্রিকা, সেহেতু তৃতীয় বোলার হিসেবে স্পিনার সাকিব আল হাসানকে আক্রমণে আনেন মাশরাফি। শুরুতে হতাশ করলেও, নিজের তৃতীয় ওভারেই অধিনায়ককে উইকেট উপহার দিয়েছেন সাকিব। তাতে মাত্র ১ রানেই প্যাভিলিয়নে ফিরেন ডেভিড মিলার।
ফলে ৪ উইকেটে ৯০ রানে পরিণত হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। তখনো ইনিংসের ৪০ বল বাকী ছিলো সফরকারীদের। তাতে প্রতিপক্ষের রান লাগামের মধ্যে রাখার পথেই ছিলো বাংলাদেশের বোলাররা। কিন্তু পঞ্চম উইকেটে অনবদ্য ৫৮ রানের জুটি গড়ে দলের স্কোর ৪ উইকেটে ১৪৮ রানে নিয়ে যান ডু-প্লেসিস ও রোসৌ।দলকে ভালো অবস্থায় পৌঁছে দিতে ৭৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেন ডু-প্লেসিস। তার ৬১ বলের ইনিংসে ৮টি বাউন্ডারির মার ছিলো। রোসৌ অপরাজিত থাকেন ২১ বলে ৩১ রান করে। তার ইনিংসে ২টি করে চার ও ছক্কা ছিলো। বাংলাদেশের পক্ষে সানি ২টি, নাসির ও সাকিব ১টি করে উইকেট শিকার করেন।