05-07-15-PM_PGR-12

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০১৫: তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে এগিয়ে যাবে স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের (পিজিআর)সদস্যরা এমন আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ প্রধানমন্ত্রী রোববার বিকেলে ঢাকা সেনানিবাসে পিজিআর সদর দফতরে স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের ৪০তম বার্ষিকী-২০১৫ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন৷ ভারপ্রাপ্ত কমান্ডডেন্ট কর্নেল মো. জাহাঙ্গীর হারুন এতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন৷প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারিক আহমেদ সিদ্দিক, তিন বাহিনীর প্রধান, প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার, বিশিষ্ট নাগরিকবৃন্দ ও সেনাবাহিনীর কর্মকতর্ারা এতে উপস্থিত ছিলেন৷

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সেনা সদস্যদের সকল কাজে এগিয়ে যাওযার প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেছেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতিটি সদস্য এ উন্নয়ন অগ্রযাত্রার অংশীদার৷ আপনারা সর্বোচ্চ দেশপ্রেম ও কর্তব্যপরায়নতার মাধ্যমে বাংলাদেশকে আরও সামনের দিকে এগিয়ে নেবেন৷ আমার প্রত্যাশা আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি মযর্াদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত করবেন৷তিনি বলেন, আমি আপনাদের কল্যাণ ও উন্নয়নের মাধ্যমে আমার ভাইদের স্বপ্নকে বাসত্মবায়িত করে চলেছি৷ আমার প্রত্যাশা, আপনারা বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে বিশ্বের বুকে একটি মর্যাদাপূর্ণ বাহিনীতে পরিণত করবেন৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, কার্যকর কমান্ড চ্যানেল সেনাবাহিনীতে যে কোন কাজ সমাধানে মুখ্য ভূমিকা রাখে৷ নেতৃত্বের প্রতি সম্পূর্ণ আস্থা রেখে সকল কাজে আপনারা এগিয়ে যাবেন এই আমার প্রত্যাশা৷ একই সাথে আমি আশা করি, সকল কমান্ডারগণও তাদের অধীনস্থদের প্রতি সব সময়ই প্রয়োজনীয় মনোযোগ বজায় রাখবেন৷

05-07-15-PM_PGR-9

শেখ হাসিনা বলেন, নিরাপত্তার দায়িত্ব পালনে প্রশিক্ষণের কোন বিকল্প নেই৷আমরা প্রতিটি ক্ষেত্রে ডিজিটাল বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছি৷ আমি আশা করি, আপনারা তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও পেশাগত অনুশীলন চালিয়ে যাবেন৷স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সকল সদস্যকে আনত্মরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে তিনি বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর স্বনামধন্য ও ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান স্বতন্ত্র প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট’ এর ৪০তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন অনুষ্ঠানে আপনাদের মাঝে উপস্থিত হতে পেরে আমি অত্যনত্ম আনন্দিত৷

প্রধানমন্ত্রী গভীর শ্রদ্ধার সাথে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে স্মরণ করে বলেন, যাঁর দূরদর্শিতা ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে ১৯৭৫ সালের ৫ জুলাই প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট প্রতিষ্ঠিত হয়৷ কালের পরিক্রমায় প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্ট আজ একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান৷ দক্ষ নিরাপত্তা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে এর সুনাম সর্বজনবিদিত৷তিনি বলেন, সরকার প্রধান হিসেবে এ রেজিমেন্টের সাথে আমার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে৷ দায়িত্বপালনকালে প্রতিদিনই গার্ডস সদস্যদের সাথে আমার দেখা হয়৷ রোদ, বৃষ্টি, ঝড় উপেক্ষা করে আপনারা বিশ্বসত্মতা, আনুগত্য, শৃংখলা ও পেশাদারিত্বের সাথে নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করেন৷ এটা আমাকে আশ্বসত্ম করে; মুগ্ধ করে৷ আপনারা সকলেই বিশেষভাবে নির্বাচিত এবং সু-প্রশিক্ষিত৷ আপনাদের কর্মদক্ষতা, কর্তব্যপরায়ণতা ও একাগ্রতাই এর প্রমাণ৷

শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ যখনই সরকার গঠন করেছে তখনই এ রেজিমেন্টের উন্নয়নে কাজ করেছে৷ ১৯৯৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকারই সর্বপ্রথম গার্ডস সদস্যদের ঝুঁকির কথা বিবেচনা করে,’গার্ডস ভাতা’র প্রচলন করে৷ ২০১৩ সালের ৮ এপ্রিল আমরা ঐতিহ্যবাহী এই প্রতিষ্ঠানকে স্বতন্ত্র’ মর্যাদা প্রদান করি৷ একই বছর ৭ অক্টোবর পিজিআর এর নতুন সাংগঠনিক কাঠামোর অনুমোদন দেই যা এখন পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর হয়েছে৷ এরফলে আপনাদের জনবল ২ হাজারে উত্তীর্ণ হয়েছে৷তিনি বলেন, জনবল বৃদ্ধির পাশাপাশি আমরা পিজিআর-এর জন্য প্রয়োজনীয় যানবাহণ, বিভিন্ন ধরনের অস্ত্র, এপিসিসহ আধুনিক সরঞ্জামাদির সরবরাহ বহুগুণে বৃদ্ধি করেছি৷ এরফলে রেজিমেন্টের সামর্থ্য বৃদ্ধি পেয়েছে৷ কর্তব্য পালন সহজ হয়েছে৷ সদস্যদের মনোবল আরও দৃঢ় হয়েছে বলে আমার বিশ্বাস৷

তিনি বলেন, গণভবনে ১৫০ জন গার্ডস সদস্যের জন্য বসবাসযোগ্য একটি ব্যারাক নির্মাণের কাজ শুরম্ন হয়েছে৷ এরফলে গণভবনে আপনাদের দীর্ঘদিনের আবাসিক সমস্যার অনেকটাই সমাধান হবে বলে আমার প্রত্যাশা৷তিনি বলেন, ১৯৯৭ সালের আগ পর্যনত্ম সৈনিকদের দুপুরের খাবারে রম্নটি দেয়া হত৷ আমরা ১৯৯৭ সালে দুপুরে রম্নটির পরিবর্তে ভাত চালু করি৷ সেনাবাহিনীর জেসিও ও অন্যান্য পদবীর সৈনিকদের জন্য ২০১০ সালের ১৫ জানুয়ারি থেকে শুকনা ও তাজা রশদ বৃদ্ধি করে নতুন রেশন স্কেল প্রণয়ন করি৷ আমরা গতবছর পহেলা এপ্রিল থেকে সেনাবাহিনীর জেসিওদের ১ম শ্রেণী (নন ক্যাডার) এবং সার্জেন্টদের ২য় শ্রেণীর পদমর্যাদায় উন্নীত করেছি৷প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা ৫টি সেনানিবাসে আর্মি মেডিক্যাল কলেজ, ৩টি সেনানিবাসে আর্মি ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং ২টি সেনানিবাসে আর্মি ইনস্টিটিউট অব বিজনেস এ্যাডমিনিস্ট্রেশন প্রতিষ্ঠা করেছি৷ আরও ৫টি ডেন্টাল কলেজ ও ৫টি নার্সিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা রয়েছে৷ আর্মি মেডিক্যাল কোরে মহিলা সৈনিক অনত্মর্ভুক্তি সেনাবাহিনীতে নারীর সামর্থ্য বৃদ্ধি করছে৷ সিএমএইচগুলোর আধুনিকায়ন করেছি৷ উন্নত প্রযুক্তির মেডিক্যাল সরঞ্জামাদি সংযোজন করা হয়েছে৷ দক্ষ ও অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞ চিকিত্‍সক নিয়োগ করা হয়েছে৷ এরফলে আপনাদের ও আপনাদের পরিবারের সদস্যরা উন্নত চিকিত্‍সা পাচ্ছেন৷তিনি বলেন, সেনা সদস্যদের বহু প্রতিৰিত আবাসন সমস্যা নিরসনে বিশ্বমানের উন্নত আধুনিক ব্যারাক হাউজ নির্মাণ করেছি৷ দৃষ্টিনন্দন আবাসিক এলাকা গড়ে তুলেছি৷ ফোর্সেস গোল-২০৩০ প্রনয়ণ করেছি৷ ফোর্সেস গোল অনুযায়ী সেনাবাহিনীর উন্নয়ন করা হ”েছ৷ সেনাবাহিনীতে আমরা নতুন নতুন ডিভিশন গঠন করেছি৷ জালালাবাদ সেনানিবাসে ১৭ পদাতিক ডিভিশন এবং পদ্মা সেতুর আনুষঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণ এবং নিরাপত্তার জন্য ৯৯ কমপোজিট ব্রিগেড গঠন করা হয়েছে৷ রামুতে ১০ পদাতিক ডিভিশন এবং এর অধীন ১টি আর্টিলারি ব্রিগেড, ১টি পদাতিক ব্রিগেড, ১টি আর্টিলারি ইউনিট এবং ২টি পদাতিক ব্যাটালিয়ন আমরা প্রতিষ্ঠা করেছি৷ দেশের দৰিণাঞ্চলে আরও ১টি পূর্ণাঙ্গ সেনানিবাস স’াপন করার পরিকল্পনাও আমাদের রয়েছে৷

শেখ হাসিনা বলেন,সেনাবাহিনীর জন্য উন্নত অস্ত্র ও সরঞ্জামাদি ক্রয়ের প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে৷ ২০১৬ সালের মধ্যে দুইটি এফএম-৯ সর্ােফস টু এয়ার মিসাইল রেজিমেন্ট বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে সংযোজিত হবে৷ মেইন ব্যাটেল ট্যাংক, সেল্ফ প্রোপেল্ড গান সিস্টেম, উইপন লোকেটিং র্যাডার, এন্টি ট্যাংক গাইডেড উইপন, আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ারসহ অত্যাধুনিক যুদ্ধ সরঞ্জাম আমরা সেনাবাহিনীতে সংযোজন করেছি৷তিনি বলেন, এর ফলে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর নিজস্ব সমর শক্তি বৃদ্ধি পেয়েছে৷ পাশাপাশি জাতিসংঘ শানত্মিরক্ষা মিশনে আরও পেশাগত দক্ষতার সাথে দায়িত্ব পালন করতে পারছে৷ শানত্মিরক্ষা মিশনে শানত্মিরক্ষীর সংখ্যার দিক থেকে বাংলাদেশের স্থান বর্তমানে প্রথম৷ বর্তমানে প্রায় ৯ হাজার ৫৯৩ জন শানত্মিরক্ষী বিশ্বের ১০টি দেশে মিশনে অংশগ্রহণ করছে৷

তিনি বলেন, আমাদের সরকার আপনাদের কল্যাণে এসকল পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে যাতে আপনাদের চাকরি ও পারিবারিক জীবন স্বাচ্ছদময় হয়৷ দেশ ও জাতির সেবায় আপনারা যাতে আরও ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত হন৷শেখ হাসিনা বলেন, শুধু সামরিক বাহিনী নয়,আমরা প্রতিটি সেক্টরে বাংলাদেশকে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছি৷ আমরা ঘোষণা দিয়েছিলাম ২০২১ সালে বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করব৷ তার আগেই আমরা সে লক্ষ্য পূরণ করতে যাচ্ছি৷ বিশ্ব ব্যাংক বাংলাদেশকে নিম্ন-মধ্য আয়ের দেশ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে৷ অর্থাত্‍ আমরা মধ্য আয়ের দেশের কাতারে উঠে গেছি৷ এটি আমাদের বিরাট অর্জন৷ আমরা বাংলাদেশকে আরও অনেক উচ্চতায় তুলে ধরার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছি৷তিনি বলেন, ইতোমধ্যে আমাদের মাধাপিছু আয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ হাজার ৩১৪ মাকিন ডলারে৷ দারিদ্র্যের হার কমে ২২.৭ শতাংশে নেমে এসেছে৷ আমাদের রপ্তানি আয় বেড়েছে ৩০.২ ভাগ৷ বিনিয়োগ বেড়েছে ২৮.৯৭ ভাগ৷ আমাদের রিজার্ভ ২৫ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে গেছে৷ আমরা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পেরেছি৷ এখন খাদ্য উত্‍পাদন ৩ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪৯ হাজার মেট্রিক টন৷

শেখ হাসিনা দেশের বিদু্যত্‍ ক্ষেত্রে উন্নয়নের কথা উল্লেখ করে বলেন,দেশের ৭০ ভাগ মানুষ বিদু্যত্‍ পাচ্ছে৷ দেশের জনগণ তথ্য-প্রযুক্তির সর্বোচ্চ সেবা গ্রহণ করছে৷ ডিজিটাল বাংলাদেশ আজ বাসত্মবতা৷ আমরা ৫২৭৫টি ডিজিটাল সেন্টার গড়ে তুলেছি৷ আমরা এমজিডির ১ থেকে ৬ পর্যনত্ম প্রতিটি ধাপ অর্জন করতে সৰম হয়েছি৷ জাতিসংঘসহ আনত্মর্জাতিক সংস্থা আমাদের ভূয়সী প্রশংসা করছে৷ পুরস্কৃত করছে৷

তিনি বলেন, আমরা সমূদ্রে বিজয় অর্জন করেছি৷ প্রতিবেশী ভারতের সাথে দীর্ঘদিনের অমিমাংসিত স্থল সীমানা চুক্তি বাসত্মবায়ন করার বিষয়ে গুরম্নত্বারোপ করে তিনি বলেন, সেনাবাহিনীর সাথে রয়েছে আমাদের পারিবারিক সম্পর্ক৷ যখনই আপনাদের মাঝে আসি তখন আমার ভাইদের কথা মনে পড়ে যায়৷ আমার দুই ভাই শেখ কামাল ও শেখ জামাল বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সদস্য ছিলেন৷ দশ বছরের শিশু রাসেলও সেনাবাহিনীর অফিসার হবে বলে প্রায়শঃই ইচ্ছা প্রকাশ করতো৷ কিন্তু ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার সে স্বপ্ন নিঃশেষ হয়ে যায়৷প্রধানমন্ত্রী সেনাবিহনীর পূর্বসূরী যাঁরা কর্তব্য পালনকালে সর্বোচ্চ আত্মত্যাগের মাধ্যমে এ রেজিমেন্টের ইতিহাসকে গৌরবোজ্জ্বল করেছেন এবং আমি প্রেসিডেন্ট গার্ড রেজিমেন্টের সকল শহীদদের আত্মার মাগফিরাত কামনা করে বলেন, দেশের রাষ্ট্র প্রধান ও সরকার প্রধানের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে আপনাদের একাগ্রতা ও আত্মোত্‍সর্গের মনোভাব যেন চিরদিন বজায় থাকে এ প্রত্যাশা করছি৷