দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৫ জুলাই ২০১৫: রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণে সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে বিএনপি৷ আপাতত দল পুনর্গঠনের প্রক্রিয়া নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চায় দলটি৷ বিশেষ করে বিপর্যস্ত সাংগঠনিক কাঠামোকে ঢেলে সাজিয়ে শক্তিশালী করে তোলার পাশাপাশি একটি গ্রহণযোগ্য নতুন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি আদায়ের একটি কার্যকরী রাজনৈতিক রণকৌশল নির্ধারণে দলটি কঠিন পরীক্ষার মুখোমুখি৷ বিএনপির নীতি নির্ধারকরাও বলছেন, বিগত সময়ের আন্দোলনে সরকারের দমন নির্যাতনের ধকল এখনো কাটিয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি৷ তাই দল পুনর্গঠনসহ সার্বিক রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড দৃশ্যমান হচ্ছে না৷ তারা বলছেন, আপাতত ঈদের পর বিএনপির প্রথম টার্গেট দলকে ঢেলে সাজানো ও দেশব্যাপী নেতাকর্মীদের মনোবল চাঙ্গা করে তোলা৷ রাজপথের আন্দোলনেও যেতে আরো কিছুটা সময় প্রয়োজন৷ আবারো নভেম্বর-ডিসেম্বরকেই মাঠে নামার লক্ষ্য ধরে দলের ভবিষ্যত্ কর্মপন্থা নির্ধারণের চিন্তাভাবনা চলছে৷ নতুনভাবে আন্দোলনে যেতে সময় নেয়ার কথা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া নিজেই বলেছেন৷ সমপ্রতি গুলশান কার্যালয়ে এক মতবিনিময় সভায় তিনি বলেছেন, বিএনপি সময়ের অপেক্ষায় রয়েছে৷ তিনি আরো বলেন, বিএনপি শেষ হয়ে যায়নি৷ যতই ষড়যন্ত্র হোক বিএনপিকে শেষ করা যাবে না৷ দ্রুতই বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলোকে ঢেলে সাজানোর কথাও জানান তিনি৷
গুলশান কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, প্রতিবারের মতো এবারও বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া পবিত্র রমজানে সৌদি বাদশার আমন্ত্রণে ওমরাহ পালন করতে যাবেন৷ ওমরাহ পালনের জন্য সৌদি আরব সফরের দিনক্ষণ এখনো চূড়ান্ত হয়নি৷ চেয়ারপার্সনের পররাষ্ট্র বিষয়ক কর্মকর্তারা সৌদি আরবের সফরসূচি চূড়ান্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে কাজ শুরু করেছেন৷ সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে ২০ রমজানের মধ্যে খালেদা জিয়া ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্য সৌদি আরব যেতে পারেন৷ জানা গেছে, বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও তার স্ত্রী মেয়েকে নিয়ে সৌদি আরবে আসতে পারেন৷ ওই সময় মা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দল পুনর্গঠনসহ সার্বিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে ভবিষ্যত্ আন্দোলনের কর্মকৌশল নির্ধারণে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হতে পারে৷ ওমরাহ পালন শেষে ঈদের আগেই বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশে ফিরে আসবেন৷ এর পরপরই পুরোদমে দল পুনর্গঠনের কাজে মাঠে নামবেন৷ ঈদ শেষ হলেই দলের নীতি নির্ধারণী ফোরামের বৈঠকও ডাকা হতে পারে৷ নীতি নির্ধারণী ফোরামে আলোচনার পর বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটি পুনর্গঠনের সুনির্দিষ্ট ঘোষণা আসতে পারে৷ বিএনপির হাইকমান্ড মনে করছে এর মধ্যেই দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ কারাগারে আটক নেতারা আদালতের মাধ্যমে জামিন নিয়ে মুক্ত হতে পারবেন৷ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ইতিমধ্যে নাশকতার ৭ মামলায় উচ্চ আদালত থেকে জামিন পেয়েছেন৷ সরকার তার জামিনের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করায় তিনি মুক্তি পাচ্ছেন না৷ আপিলের শুনানিও অনুষ্ঠিত হয়েছে৷
আগামী বুধবার আপিলের রায় দেয়া হবে৷ মির্জা ফখরুলের আইনজীবী অ্যাডভোকেট জয়নাল আবেদিন বলেছেন, শারীরিক অসুস্থতার কথা বিবেচনা করেই হাইকোর্ট বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে অন্তবতর্ীকালীন জামিন দিয়েছেন৷ কিন্তু রাজনৈতিক উদ্দেশে সরকার আপিল করেছে৷ তিনি বলেন, আমরা আশা করছি আপিলের রায়েও জামিন বহাল থাকবে৷বিএনপির মুখপাত্র ড. আসাদুজ্জামান রিপন বলেন, সাংগঠনিকভাবে দলকে শক্তিশালী করতে সব পর্যায়ে কাজ শুরু হয়েছে৷ অঙ্গসংগঠন ও সহযোগী সংগঠনগুলোতে নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনের প্রক্রিয়াও চলছে৷ ঈদের পরপরই আশা করছি পুরোদমে পুনর্গঠনের কাজ শুরু হবে৷ দলকে শক্তিশালী করেই বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের ভোটের অধিকার ফিরিয়ে আনার সংগ্রাম শুরু হবে এবং সরকার বাধ্য হবে জনগণের দাবি মেনে নিতে৷
এদিকে ঈদের পর দল পুনর্গঠন ও দাবি আদায়ে একটি কার্যকর রণকৌশল ও আন্দোলনের রোডম্যাপ নির্ধারণ করতে বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে হবে বলেই মনে করেন কেউ কেউ৷ বিএনপির স্থায়ী কমিটির এক সদস্য জানান, বিগত আন্দোলন করতে গিয়ে সারাদেশে লাখ লাখ নেতাকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন৷ কেন্দ্রীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা জেলে৷ তৃণমূলের নেতাকর্মীরাও স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরতে পারছেন না৷ বিশেষ করে আদালত থেকে জামিন না পাওয়ায় বড় সমস্যায় পড়েছে বিএনপি৷ তাছাড়া অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের নেতাদের মধ্যে নেতৃত্বের প্রতিযোগিতা তো রয়েছে৷ সরকারের পক্ষ থেকেও দল ও জোটে ভাঙনের ষড়যন্ত্র রয়েছে৷ এসব কিছু সামাল দিয়ে দল পুর্নগঠন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা কঠিন চ্যালেঞ্জই হবে৷ জানা গেছে, পুনর্গঠনের অংশ হিসেবে খুব শিগগিরই জাতীয়তাবাদী যুবদলের নুতন কমিটি দেয়া হবে৷ যুবদল ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবক দল, কৃষক দল, মহিলা দল ও জাসাসেরও নতুন কমিটি দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে৷ বিগত দিনের আন্দোলনের আমলনামা যাচাই-বাছাই করেও নেতৃত্ব নির্বাচন করা হবে৷সূত্র জানায়, রমজান মাসে দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি না থাকলেও সংগঠন পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কাজ অব্যাহত রয়েছে৷ বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ পুনর্গঠন প্রক্রিয়ার কার্যক্রম এগিয়ে চলছেইতিহাসের এক বিশেষ সন্ধিক্ষণে বাংলাদেশের রাজনীতিতে জিয়াউর রহমানের আবির্ভাব৷ মুক্তিযোদ্ধা জিয়ার স্বীকৃতি মিলেছিল জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের হাতেই৷ তবে তার ক্ষমতা আরোহণ বিতর্কের ঊধের্্ব ছিল না৷ যদিও ব্যক্তিগত সততার জন্য তিনি ছিলেন প্রশংসিত৷ ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৭৮৷ আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপির৷ জিয়াউর রহমানের মর্মান্তিক মৃতু্য এ দলের অস্তিত্ব হুমকির মধ্যে পড়লেও খালেদা জিয়ার হাত ধরে এগিয়ে যায় বিএনপি৷ একটি পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন তারেক রহমানও৷ চারবার রাষ্ট্রক্ষমতায় যাওয়া দল বিএনপি এখন এক অনিবার্য ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এমন বিপর্যয় দলটি অতীতে কখনোই মোকাবিলা করেনি৷ সামনে কী আছে তা জানেন না বিএনপির কেউই৷ এমনকি রাজনৈতিক পণ্ডিতরাও৷ দলটির জন্য এ এক অনিশ্চিত ঘোর অমানিশার সময়৷ কেন এ বিপর্যয়?
স্বাধীনতা অর্জনের প্রথম পাঁচ বছর বাংলাদেশের জাতীয় জীবন ছিল চাওয়া-পাওয়ার এক জটিল হিসাব-নিকাশের পর্ব৷ আওয়ামী লীগ তার হিরন্ময় ঐতিহ্য বাঁচাতে চায়নি, ঘাতকের হাতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব সপরিবারে খুন হলেন, আওয়ামী লীগ হঠাত্ ছিটকে পড়লো৷ উত্তরণ ঘটলো নতুন এক রাজনৈতিক শক্তি বিএনপির৷ এই দুই অবস্থার অন্তবর্র্তীকালে স্বাভাবিক গণতন্ত্র নিভে গিয়েছিল, এসেছিল তাঞ্জানিয়ার জুলিয়াস নায়ারের কর্তৃত্বপরায়ণ মডেলের সরকার ব্যবস্থা -বাকশাল৷তাজউদ্দীন আহমেদ ও ড. কামাল হোসেনের মতো বঙ্গবন্ধুর অনেক ঘনিষ্ঠজন হতবিহ্বল আর বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদের ভাষায়, স্বাধীনতার শত্রুরা হয়েছিল উল্লসিত৷ একজন ত্রস্ত বিচলিত কামাল হোসেন লন্ডনে দেশান্তরী হওয়ার আগে বঙ্গবন্ধুর সামনে গিয়ে সাহস করে বলেছিলেন, বঙ্গবন্ধু আমি আপনার মৃতু্যসনদে (বাকশালে সমর্থন) সই দিতে পারি না৷৭৫-এর বিয়োগান্তক পটপরিবর্তন পরবর্তী তিন মাস ছিল বাংলাদেশের ইতিহাসে অস্থির-অনিশ্চয়তাময় এক ঘোর অমানিশা৷ নির্মোহ জীবনদৃষ্টির অধিকারী জিয়াউর রহমান অন্য অনেকের মতোই যুদ্ধ-পরবর্তী সময়ে চলে যান অনেকটাই পেছনের কাতারে৷ কিন্তু তাঁর অবদান ও যোগ্যতার স্বীকৃতি তিনি বঙ্গবন্ধুর হাতেই পেয়েছিলেন৷ বঙ্গবন্ধু জিয়াকে বীরউত্তম খেতাবে ভূষিত করেন৷ জিয়াকে সেনাবাহিনী প্রধান করতে না পারার ক্ষতিও মুজিব পুষিয়ে দিতে বিশেষভাবে উদ্যোগী হন৷ তার প্রমাণ হলো যা উপমহাদেশে কখনও ছিল না, জিয়াকে সম্মানিত করতেই মুজিব সৃষ্টি করেছিলেন সেনা উপপ্রধানের পদ৷ সুতরাং মুজিব পরবর্তী বাংলাদেশেই কেবল জিয়া পাদপ্রদীপে এসেছিলেন তা ঠিক নয়৷ তিনি তাঁর বিশেষত্বের স্বীকৃতি বঙ্গবন্ধুর হাতেই পেয়েছিলেন৷ জিয়াকে জার্মানিতে রাষ্ট্রদূত করার সিদ্ধান্ত নিয়েও শেখ মুজিব তা জিয়ার অনুরোধেই বাতিল করেছিলেন৷ সুতরাং মুজিব-জিয়া সম্পর্কে কোন চিড় নেই৷ সমপ্রতি জিয়ার জন্মদিনের আলোচনায় অধ্যাপক বি. চৌধুরী বেগম খালেদা জিয়ার সামনেই বলেন, শহীদ জিয়া কখনও মুজিবের সমালোচনা করেননি৷ আর আজ বিএনপি নেতারা কি করেন৷আজ যারা মুক্তিযোদ্ধা জিয়াকে নিয়ে প্রশ্ন তোলেন, তারা আসলে প্রকারান্ত রে শেখ মুজিবের প্রজ্ঞাকেও প্রশ্নবিদ্ধ করেন৷ জিয়া মুক্তিযুদ্ধে কি করেছেন, স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে কি করেছেন, তার সবটাই ঘটেছে ১৯৭২ সালে মুজিবের স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের আগে৷ সুতরাং মুজিবের জিয়া মূল্যায়নের তারিখ ও ঘটনাবলী বিবেচনায় নিলে জাতীয় রাজনীতিতে তিক্ততা কিছুটা হলেও দূর হতে পারে৷ অবশ্য জিয়া কি প্রেক্ষাপটে রাষ্ট্র ক্ষমতার শীর্ষে এলেন, সেটা বিচার্য৷ অনেকের মতে জিয়া যদি কোন কারণে ক্ষমতায় না গিয়ে আওয়ামী লীগকে দ্রুত ক্ষমতায় বসাতে সক্ষম হতেন, বিএনপি গঠন না করতেন, তাহলে জিয়া আওয়ামী লীগের অনেক বেশি প্রিয়ভাজন হতেন৷ কিন্তু কোটি টাকা দামের প্রশ্ন হলো, জিয়ার হাতে যখন ক্ষমতা এসেছিল তখন আওয়ামী লীগ সরকারিভাবে লুপ্ত ছিল৷ আর বাকশাল পুনরুজ্জীবন যে সম্ভব ছিল না, তার প্রমাণ হলো আওয়ামী লীগ নিজেই কখনও আর বাকশাল হতে চায়নি৷মাত্স্যন্যায় যুগের অবসান ঘটিয়ে অষ্টম শতকে দেশবাসী বঙ্গের শাসক নিযুক্ত করেছিলেন একজন সাধারণ গোপালকে৷ হতাশায় বিপর্যস্ত মানুষ সিপাহী-জনতার বিপ্লবের নামে নতুন ডত্যয়ের প্রকাশ ঘটিয়ে নিজেদের নেতা নির্বাচন করেন জিয়াউর রহমানকে৷ ঘটনা পরম্পরায় তিনি হয়ে উঠেন এক অনিবার্য চরিত্র৷ অধ্যাপক বি. চৌধুরী মনে করেন বাংলাদেশ ও বাঙালি জাতীয়তাবাদের মধ্যে কোন সংঘাত নেই৷ জিয়া একে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিরুদ্ধে দাঁড় করাতে চাননি৷ এ বিষয়ে তারা পুস্তিকা করেছিলেন যা তারা বিলিয়েছেন৷ সাধারণত জাতীয়তাবাদ হয় নৃ ও ভাষানির্ভর৷ কিন্তু বাংলাদেশে একাধিক জাতিগোষ্ঠী বাস করে, আবার পশ্চিমবঙ্গের বাঙালি আবাস্থলের কারণেও রাষ্ট্রীয় সীমানা নির্ভর একটা জাতীয়তাবাদের দরকার পড়েছিল৷ ভারতীয় বাঙালির স্বাধীনতা আর বাংলাদেশী বাঙালির স্বাধীনতা এক নয়৷ ওপারের বাঙালির রাষ্ট্র নেই৷ এপারের বাঙালির রাষ্ট্র আছে৷ তাই তিনি নৃ, ভাষা ও ধর্মের ঊধের্্ব গিয়ে তিনি ভূখণ্ডকেন্দ্রিক জাতীয়তাবাদের দর্শনকে প্রতিষ্ঠিত করেন৷ তিনি বুঝতে পেরেছিলেন একটি নতুন স্বাধীনতপ্রাপ্ত দেশের জন্য জাতীয়তাবাদী চেতনা প্রয়োজন৷ সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মে দিবসের শ্রমিক সমাবেশের বক্তব্যে জিয়া তার জাতীয়তাবাদের দর্শন স্পষ্ট করেন৷ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ পাশ্চত্য যেমনি, তেমনি ইসলামি বিশ্ব আবার চীনের সঙ্গে বিশেষ সম্পর্ক গড়ে তিনি পররাষ্ট্রনীতিতে পরিবর্তন আনেন৷
মুসলিম বিশ্বের রাষ্ট্রপ্রধানদের মনোযোগ তিনি আকর্ষণ করতে রেপেরেছিলেন৷ বিদেশে শ্রমবাজার সৃষ্টিতে যার বিরাট প্রভাব পড়েছিল৷ সার্ক এবং ইরান-ইরাক যুদ্ধে মধ্যস্থতার একটা উদ্যোগ নিয়ে তিনি প্রশংসিত হয়েছিলেন, সেটা সফল না হলেও বাংলাদেশ পরিচিতি লাভ করেছিল৷ দেশে শ্রমিক ও মুক্তিযোদ্ধাসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার মানুষের সঙ্গে বৈঠক করে দেশের মানুষকে স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব ও মৌলিক ইস্যুতে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে নিজের রাজনৈতিক অবস্থান তৈরি করেন৷ ৭৭-এর ২১শে এপ্রিল ভগ্নস্বাস্থ্যের কারণে প্রেসিডেন্ট সায়েম দায়িত্ব ছেড়ে জিয়াউর রহমানকেই মনোনীত করেন নতুন কর্ণধার৷ জনগণই সকল ক্ষমতার উত্স’ এ চিন্তা থেকে তিনি একটি রাজনৈতিক প্লাটফর্ম তৈরির উদ্যোগ নেন৷ তারই পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি সাত্তারকে আহ্বায়ক করে ‘৭৮-এর ২২শে ফেব্রুয়ারি গঠন করেন জাতীয়তাবাদী গণতন্ত্রী দল (জাগদল)৷ মে মাসে জিয়াউর রহমানকে চেয়ারম্যান করে ন্যাপ (ভাসানী), ইউপিপি, মুসলিম লীগ, লেবার পার্টি ও তফশিলি জাতীয় ফেডারেশনের সমন্বয়ে জাগদল রূপান্তরিত হয় জাতীয়তাবাদী ফ্রন্ট’-এ৷ সে বছরই আনুষ্ঠানিক নির্বাচনে জেনারেল ওসমানীকে পরাজিত করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন জিয়াউর রহমান৷ বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে খুবই গুরুত্বপূর্ণ একটি সময় বিএনপি গঠনের এ প্রাকপ্রস্তুতি পর্ব৷ ১লা সেপ্টেম্বর ১৯৭৮৷ বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আনুষ্ঠানিক জন্মদিন৷ জাগদলের আনুষ্ঠানিক বিলুপ্তির মাধ্যমে রাজধানী ঢাকার প্রাণকেন্দ্র রমনা পার্কের খোলা চত্বরে ১৯ দফার ভিত্তিতে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)’ নামে প্রেসিডেন্ট জিয়া নতুন রাজনৈতিক দলের ঘোষণা দেন৷ এর রাজনৈতিক দর্শন ছিল বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদ৷ জিয়াউর রহমানকে আহ্বায়ক করে গঠিত বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির প্রথম কলেবর ছিল ৭৬৷ যা এখন বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৮৬ জনে৷ কিন্তু রাজনৈতিকভাবে কতটুকু সফল ও সমপ্রসারিত হয়েছে বিএনপি? ২০০৬ সালের শেষ দিকে ক্ষমতা হস্তান্তরের পর থেকে বিএনপিকে অব্যাহতভাবে একটি প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতি সামাল দিতে হচ্ছে৷ অনেকে বলছেন, এর আগে তারেক রহমান বগুড়ায় যে মডেলে দল গোছানো শুরু করেছিলেন এবং পরে যদিও তা পরিত্যাগ করেছিলেন, তাকেই আবার চাঙ্গা করা যায় কি না৷ তারেক রহমান গোপন ব্যালটে ভোটাভুটির মাধ্যমে গ্রাম ও ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠনের উদ্যোগ নিয়েছিলেন৷উল্লেখ্য যে, ১৯৭৪-এর ২৮শে ডিসেম্বর, জনগণের যেসব মৌলিক অধিকার স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছিল, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে তা দ্রুত ফিরিয়ে দিতে সচেষ্ট হন৷ চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে বন্ধ হয়ে যাওয়া গণমাধ্যম মুক্ত করেন, বিধিনিষেধ রহিত করেন, বিচারালয়ের স্বাধীনতা বিশেষ করে সুপ্রিমকোর্টের বিচারকদের একটি নোটিশ দিয়ে বরখাস্ত করার মতো বিধান বাতিল করেন৷ নিম্ন আদালতের বিচারকদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে সুপ্রিমকোর্টের পরামশের্র বিধান প্রবর্তন করেন, যা সংবিধানে আজও টিকে আছে, যে বিধানের কারণে জাতি মাসদার হোসেন মামলার ঐতিহাসিক রায় পেয়েছে৷
জিয়া মুজিব সরকারের অনুসৃত জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের নীতি বজায় রাখেন৷ দুই পরাশক্তির মধ্যে পাশ্চত্যের দিকে ঝোঁকটা একটু বেশি রেখেও সোভিয়েত ব্লককে একেবারে দূরে ঠেলে দেননি৷ জিয়াউর রহমানের আমলেই ভারতের সঙ্গে দীর্ঘদিনের ঝুলে থাকা গঙ্গার পানি বন্টনে ৫ বছর মেয়াদি একটি স্থায়ী চুক্তি করা সম্ভব হয়৷ নদী বিশেষজ্ঞরা একমত যে, ফারাক্কা পয়েন্টে ন্যূনতম পানিপ্রবাহের ব্যাপারে যেভাবে গ্যারান্টি ক্লজ যুক্ত করা হয়েছিল, সেটা ১৯৯৬ সালের চুক্তিতে রাখা সম্ভব হয়নি৷ সমুদ্রসীমা ও তালপট্টি নিয়ে ভারতের সঙ্গে যৌথ আলোচনা আগে থেকেই চলছিল৷ অফশোর ব্লক মার্কিন তেল কোম্পানিকে ইজারা দেয়ার পরে ভারত বঙ্গোপসাগরে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছিল শেখ মুজিব বেঁচে থাকতেই৷ জিয়ার আমলে তালপট্টি নিয়ে বিরোধ দেখা দিলেও বাস্তবে শক্তি প্রয়োগ এড়ানো সম্ভব হয়েছিল৷ যৌথ জরিপের মাধ্যমে তালপট্টি সমস্যার শান্তিপূর্ণ সমাধানে ও সমঝোতায় পৌঁছা সম্ভব হয়েছিল৷ মিয়ানমারের সঙ্গে সীমান্তরেখা নির্ধারণ ও শরণার্থী সমস্যা আলোচনার উদ্যোগ, জাপানের মতো শক্তিশালী প্রতিপক্ষকে টপকে দিয়ে নিরাপত্তা পরিষদের অস্থায়ী সদস্যপদ লাভ, ওআইসির অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ আল কুদস কমিটি, জোটনিরপেক্ষ ব্যুরো ও ওআইসি কাঠামোর মধ্যে যুদ্ধরত ইরান ও ইরাকের সঙ্গে আলোচনার জন্য প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান শান্তি কমিটির একক প্রতিনিধি নির্বাচিত হন৷ ফলে তার সময়ে বহিঃসম্পদ প্রবাহ বেড়ে দাঁড়ায় ৬.৭৭২ মিলিয়ন ডলার৷ জিয়াউর রহমানই দক্ষিণ এশীয় দেশগুলোর সমন্বয়ে সার্কের গোড়াপত্তন করেন, সমপ্রতি ঢাকায় এসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেছেন৷
রাজনীতিতে এসে জিয়াউর রহমান জাতীয়তাবাদী দর্শনের ভিত্তিতে জন্ম দেন বিএনপির৷ তিনি মানুষকে বোঝাতে সক্ষম হন, বিএনপি একটি উদার ও মধ্যপন্থি রাজনৈতিক দল৷ ফলে মানুষ দলে দলে বিএনপিতে যোগ দেয়৷ স্বল্প সময়েই বিএনপি পরিণত হয় একটি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দলে৷ তখনকার সময়ে গণমাধ্যমের উপস্থিতিও ছিল সীমিত৷ টেলিভিশন বলতে ছিল শুধু বিটিভি৷ পত্রিকা ছিল মাত্র কয়েকটি৷ তার পরও জিয়াউর রহমানের একক প্রচেষ্টায় জাতীয়তাবাদী ও মধ্যপন্থি রাজনীতির উন্মেষ ঘটেছিল দেশজুড়ে৷ কারণ সাধারণ মানুষ অংশগ্রহণ করেছিল৷ বিএনপি বাংলাদেশের বাস্তবতায় ধর্মনিরপেক্ষতার পথে হাঁটেনি তেমনি ধর্মীয় চরমপন্থাকেও সমর্থন করেনি৷ লক্ষণীয় হলো, জিয়া রাষ্ট্রধর্ম ঘোষণার দিকে যাননি, যা এরশাদ করেছেন৷ রাষ্ট্রপরিচালনায় দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর ধর্মীয় ও সামাজিক মূল্যবোধ ও বিশ্বাসের প্রতিফলনের মাধ্যমে একটি গণতান্ত্রিক সামাজিক ন্যায়বিচার সমৃদ্ধ একটি কল্যাণমূলক রাষ্ট্র গড়ার নির্দেশনা রয়েছে বিএনপির গঠনতন্ত্রে৷ ফলে বিএনপির দলীয় কর্মসূচি কিংবা রাষ্ট্রপরিচালনা সবখানেই দেশের অধিকাংশ মানুষের ধর্মবিশ্বাস ইসলামী অনুশাসনের প্রতিফলন দেখতে পাওয়া যায়৷ আবার জিয়া ও তাঁর অনুসারীরা কখনও শরিয়া আইন চালুর চিন্তাও করেননি৷ আশির দশকে বাংলাদেশের কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের মাঝে ছড়িয়ে পড়েছিল জাতীয়তাবাদী ও মধ্যমপন্থি রাজনীতি৷ কিন্তু ‘৯০-এর দশকের পরের প্রজন্ম অর্থাত্ আজকে যাদের বয়স বিশ থেকে পঁচিশ-তাদের মধ্যে বিকাশ ঘটেনি জাতীয়তাবাদী ও মধ্যপন্থি রাজনীতির৷আন্দোলন-সংগ্রামের মাধ্যমে দেশের রাজনীতিতে শক্ত অবস্থান তৈরির পাশাপাশি দলটি দীর্ঘ সময় পরিচালনা করেছে রাষ্ট্রক্ষমতা৷ তিন যুগের রাজনৈতিক ইতিহাসে চারবার (স্বল্পকালীন ষষ্ঠ সংসদসহ) বাংলাদেশের রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়েছে বিএনপি৷ প্রথমবার প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের নেতৃত্বে এবং পরের তিনবার তারই সহধর্মিণী বিএনপির বর্তমান চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে৷ প্রধান বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করেছে দুইবার৷ উন্নয়নের রাজনৈতিক লক্ষ্য নিয়ে গঠিত হয়েছিল বিএনপি৷ আর বাংলাদেশ যখন স্বনিভর্রতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখনই নিহত হন জিয়া৷ বাংলাদেশ নিপতিত হয় এক দীর্ঘমেয়াদি স্বৈরশাসনের কবলে৷ এরশাদের পতনের পর ‘৯১ সালের নির্বাচনে বিএনপি চমক সৃষ্টি করে বিজয়ী হয়৷ কারণ মিডিয়া এবং প্রায় সকল বিশ্লেষকরা ধরেই নিয়েছিলেন, শেখ হাসিনা সরকার গঠন করতে যাচ্ছেন৷
বিএনপি সরকার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেনি ফুলবাড়ি কয়লাখনি, কানসাট ও শনির আখড়ার বিদ্যুত্-পানির আন্দোলন৷ এ সময় দেশব্যাপী জঙ্গি সন্ত্রাসের উত্থান, একযোগে ৬৩ জেলায় বোমা বিস্ফোরণ, ২১শে আগস্ট গ্রেনেড হামলা, অর্থমন্ত্রী কিবরিয়া, আহসান উল্লাহ মাস্টার এমপি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪ জন শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটে৷ এই পর্বে বিএনপির বড় সীমাবদ্ধতা ছিল নাইন-ইলেভেন পরবর্তী বদলে যাওয়া বিশ্ব রাজনীতিতে তথাকথিত ইসলামী সন্ত্রাসবাদের প্রতি সৃষ্ট ভয়ানক সংবেদনশীলতা বুঝতে না পারা৷২০০৪ সালে অপারেশন ক্লিনহার্টের সুবাদে ক্রসফায়ার শব্দটির বিরাট নেতিবাচক প্রচার পায়৷ যদিও বিএনপি সরকারই চিহ্নিত জঙ্গিদের গ্রেপ্তারের মাধ্যমে বিচারের মুখোমুখি করেছিল৷ কিন্তু রাজশাহীতে বিএনপির কিছু নেতা বাংলাভাইকে গণসংবর্ধনা দিয়েছিল, ঢাকার রাস্তায় বাংলা হবে আফগান স্লোগান উঠেছিল৷ আরও তথ্য প্রকাশ পেয়েছিল যে, জঙ্গি নেতাদের কারও কারও সঙ্গে জামায়াত ইসলামীর পুরনো সম্পর্ক ছিল৷ জামায়াত নেতারা এ কথাও বলেছিলেন, এসব মিডিয়ার সৃষ্টি৷ বিএনপি বুঝতে পারেনি যে, এসব ঘটনা আন্তর্জাতিক সমপ্রদায়কে সন্ত্রস্ত ও সন্দিগ্ধ করেছিল৷ তবে সাফল্য হিসেবে দলটি দাবি করতে পারে, নকলমুক্ত শিক্ষাঙ্গন, দুর্নীতি দমন কমিশন গঠন, পরিবেশ দূষণ হ্রাস, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও রেমিটেন্স বৃদ্ধি, সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা৷ আমদানি, রপ্তানি, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, প্রবাসী-আয়, খেলাপি ঋণ, মুদ্রা সরবরাহ, সরকারি ব্যয় অর্থনীতির প্রায় সব সূচকই ভাল ছিল৷ তার পরও সীমিত আয়ের মানুষের জীবনে দুর্ভোগ এনেছে মূল্যস্ফীতি৷ বিএনপির গত শাসনামলে তাদের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা ছিল নেতিবাচক প্রচার-অপপ্রচারের দিকে মনোযোগ না দেয়া৷ কাজ পেতে হলে বিশেষ বিশেষ স্থানে কমিশন দিতে হয়, এটাই প্রচার হয়েছিল সাধারণ মানুষের মুখে মুখে৷ সেটা প্রতিষ্ঠা করেছিলেন মন্ত্রী-এমপি ও ব্যবসায়ী মিলে হঠাত্ ধনী কিছু প্রভাবশালী মানুষ৷ ফলে জঙ্গিবাদী রাষ্ট্রসহ নানাভাবে বিশ্বের কাছে বাংলাদেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি রাজনৈতিক দল হিসেবে বিপর্যয় এবং নানা প্রশ্নের মুখে পড়েছে দলটি৷ রাজনীতিবিদদের বিরুদ্ধে সত্য-মিথ্যা রটনা ঘটনা, একটা কিছু হয়েই থাকতে পারে৷ তবে যতটা পারা যায় রাজনীতিবিদদের সবসময় সতর্ক থাকতে হয়৷ কিন্তু নেতিবাচক প্রচারণার ব্যাপারে দলটির অমনোযোগের কারণে সম্ভবত সবচেয়ে বড় মূল্য দিতে হয় তৃণমূল সম্মেলনের মাধ্যমে ভবিষ্যত্ কর্ণধার হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেতে চলা তারেক রহমানকে৷ শারীরিক, মানসিক নির্যাতনের পাশাপাশি তাকে বাধ্য করা হয় দেশত্যাগে৷ ওয়ান-ইলেভেনের সে সূত্র ধরে এখনও প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিস্থিতির বিরুদ্ধে লড়াই করছে বিএনপি৷ বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে নানা ক্রান্তিকাল বিএনপি পার করে এসেছে৷ কিন্তু সব মিলিয়ে বর্তমানে বিএনপি একটি অনিবার্য ক্রান্তিকালে দাঁড়িয়ে৷ সামপ্রতিক সময়ে সে লড়াই হয়ে উঠেছে কঠিন থেকে কঠিনতর৷