0077

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ৪ জুলাই: বিএনপির চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া পবিত্র ওমরাহ পালন করতে আগামী ৮ জুলাই সৌদি আরব যাবেন। একই সময়ে সেখানে যাবেন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে ও বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান।সেখানে তাদের মধ্যে দলের কৌশল ও সম্মেলনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

বিএনপির চেয়ারপারসনের কার্যালয়ের গণমাধ্যম শাখার কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।তিনি জানান, আগামী মঙ্গলবার কিংবা বুধবার খালেদা জিয়ার সৌদি আরবে রওনা হওয়ার কথা রয়েছে। একই সময়ে তারেক রহমানের সঙ্গে তার স্ত্রী ও দুই মেয়েও সৌদি আরব যাবেন। পবিত্র ওমরাহ পালন করতে আগামী ৮ জুলাই সৌদি আরব যাবেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।এসময় দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানও ওমরাহ পালন করতে সৌদি যাবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো জানিয়েছে।

বিএনপি চেয়ারপারসনের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান জানান, বুধবার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে খালেদা জিয়ার রওনা হবেন।প্রতি বছর সৌদি সরকারের আমন্ত্রণে খালেদা জিয়া পবিত্র ওমরা পালন করে থাকেন। জানা গেছে, সৌদি আরবে খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের মধ্যে দলের কৌশল, সম্মেলনসহ গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে। বেগম খালেদা জিয়ার ওমরাহ পালনের সূচির মধ্যে রয়েছে পবিত্র মদিনা মনোয়ারায় ৮, ৯ ও ১০ জুলাই অবস্থান করে মসজিদে নববিতে নামাজ পড়বেন এবং রাসুল (সা.)-এর রওজায় সালাম জানাবেন। পবিত্র মদিনায় ইবাদত সম্পন্ন করে ১১ জুলাই ওমরাহ পালনের উদ্দেশ্যে মক্কায় পৌঁছাবেন।

মক্কায় ১১, ১২ ও ১৩ জুলাই অবস্থান করে ওমরা পালন করবেন, ১৩ জুলাই মক্কা মোকাররমায় পবিত্র লাইলাতুল কদরের নামাজ ও ইবাদতের মাধ্যমে অতিবাহিত করবেন।পবিত্র ওমরা পালন শেষে আগামী ১৪ জুলাই খালেদা জিয়া বাংলাদেশের উদ্দেশে এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে সৌদি আরব ছাড়বেন বলে সূত্রটি জানিয়েচে। খালেদা জিয়া কোনো মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে কে বিএনপির নেতৃত্ব দেবেন, সে বিষয়েও আলোচনা হতে পারে বলে ইউএনবি জানিয়েছে।

এক নেতার বরাত দিয়ে বার্তা সংস্থাটি দাবি করেছে, মামলায় দোষী সাব্যস্ত হলে তারেক রহমানের স্ত্রী জোবাইদা রহমানকে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত প্রধান করার চিন্তা করছেন বেগম খালেদা জিয়া। এ বিষয়ে তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলবেন।১৪ জুলাই খালেদা জিয়া বাংলাদেশের উদ্দেশে এবং সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে সৌদি আরব ছাড়বেন বলে জানা গেছে।প্রসঙ্গত, জটিলতার কারণে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমানকে সহসা দেশে ফিরিয়ে আনতে পারছে না সরকার। তারেক যুক্তরাজ্যে রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ায় এ জটিলতা তৈরি হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র বলছে, চিকিৎসার জন্য লন্ডন যাওয়ার পর তারেক ২০০৮ সালে সর্বশেষ পাসপোর্ট নবায়ন করেন। ওই পাসপোর্টের মেয়াদ শেষ হয় ২০১৩ সালে। কিন্তু চলতি বছর তারেক লন্ডনে বসবাসের জন্য রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়ে বসেন।

সূত্রটি বলছে,বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রাজনৈতিক আশ্রয় চাওয়ায় সে দেশের সরকার চাইলেও তাকে ফেরত পাঠাতে পারবে না। যতক্ষণ পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের আদালত তার নিরাপত্তার বিষয়ে সন্তুষ্ট হবেন। আর বিষয়টি চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত তারেককে ফেরত আনা যাবে না।অপরদিকে, বাংলাদেশের সঙ্গে ব্রিটিশ সরকারের এ বিষয়ে কোনো বিশেষ চুক্তি না থাকায় স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আসামি হস্তান্তরের জন্য আবেদন করতে হবে সরকারকে।

তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার বিষয়টি কী পর্যায়ে- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বাংলানিউজকে বলেন, তাকে ফিরিয়ে আনতে জটিলতা রয়েছে। ওই দেশে তিনি রাজনৈতিক আশ্রয় চেয়েছেন। তবে তারেককে ফিরিয়ে আনার জন্য রেডএলার্ট জারি করা হয়েছে।এক/এগারোর সেনাসমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হন বিএনপির সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমান। বছরখানেক কারাবাসের পর ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বরে অসুস্থতার চিকিৎসার জন্য তিনি জামিনে মুক্তি নিয়ে স্ত্রী-সন্তানসহ লন্ডন পাড়ি জমান। এরপর আর দেশে ফেরেননি তারেক রহমান।

লন্ডনে অবস্থান নেওয়ার পর থেকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে বিতর্কিত বিভিন্ন বক্তব্য দিয়ে আসছেন তারেক রহমান। এ প্রেক্ষিতে বিভিন্ন মামলার আসামি তারেককে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচার করার দাবি জানানো হয় আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনগুলোর পক্ষ থেকে।তারেক রহমানকে ফিরিয়ে আনার দাবির প্রেক্ষিতে সরকারের তরফে বলা হয়, তাকে দেশে ফিরিয়ে এনে বিচারের মুখোমুখি করা হবে। তবে অভিযোগ রয়েছে, সরকারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে জোর তৎপরতা লক্ষ্য করা যায়নি।

বিভিন্ন মামলায় আদালতে সাজা হলেও তারেক রহমানকে ফেরাতে আনুষ্ঠানিক কোনো পদক্ষেপ নজরে না পড়লেও উপরন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে অভিযোগ রয়েছে, তাকে দেশে আসতে দেওয়া হচ্ছে না।২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগ সভাপতি ও তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা শেখ হাসিনার সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় দু’টি মামলা করে পুলিশ। একটি হত্যা ও আরেকটি বিস্ফোরণ দ্রব্য আইনে।

বর্তমান সরকারের আমলে এ দু’টি মামলার সম্পূরক অভিযোগপত্রে তারেক রহমানকে আসামি করা হয়।২০০৯ সালের ২৬ অক্টোবর ক্যান্টনমেন্ট থানায় তারেক রহমান ও তার ব্যবসায়িক অংশীদার গিয়াস উদ্দিন আল মামুনের বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচারের অভিযোগে মামলা করে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ঢাকা বিশেষ জজ আদালত-৩-এ বিচারাধীন রয়েছে মামলাটি। একই আদালতে থাকা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতির মামলায় মায়ের সঙ্গে আসামি রয়েছেন তারেক রহমান।

গত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতারের পর তারেক রহমানের বিরুদ্ধে মোট ১২টি মামলা হয়। এগুলোর মধ্যে আটটি চাঁদাবাজির মামলা। ২০০৭ সালে বিভিন্ন ব্যক্তি বাদী হয়ে গুলশান, কাফরুল, শাহবাগ ও ধানমন্ডি থানায় মামলাগুলো করেন।এছাড়া, কাফরুল থানায় জরুরি ক্ষমতা আইনে পুলিশের একটি মামলা, একই থানায় অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) একটি মামলা এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর’র আয়কর ফাঁকির একটি মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে।তারেক রহমানের বিরুদ্ধে সর্বশেষ মামলা হয় গত বছরের ২ অক্টোবর। ঋণখেলাপির অভিযোগে মামলাটি দায়ের করে সোনালী ব্যাংক।