দৈনিকবার্তা-গাজীপুর, ৪ জুলাই: সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে আধুনিক ও উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে দেশে প্রতি বছর ধান চাষে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (ব্রি) উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করায় দেশের ২৪টি উপজেলায় ধান চাষাবাদে বছরে প্রায় ১৭দশমিক ৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে এবং প্রায় বিশ হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছেন। সেই সঙ্গে কৃষকদের কায়িক শ্রম লাঘব হয়েছে, অপচয় কমেছে এবং আয় বেড়েছে। শনিবার ব্রি’র খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন ও সম্প্রসারণ (এফএমটিডি) প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় এ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
গাজীপুরস্থিত ব্রি’র অডিটোরিয়ামে মহাপরিচালক ড. জীবন কৃষ্ণ বিশ্বাস এর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব শ্যামল কান্তি ঘোষ এবং বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি, পানিসম্পদ ও পল্লী প্রতিষ্ঠান বিভাগের প্রধান সরদার ইলিয়াস হোসেন ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের পরিকল্পনা অণুবিভাগের যুগ্ম প্রধান মো. মনজুরুল আনোয়ার।
অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে আরও বক্তব্য রাখেন ব্রির পরিচালক (প্রশাসন) ড. মো. শাহজাহান কবীর ও পরিচালক (গবেষণা) ড. মো. আনছার আলী। কর্মশালায় গত পাঁচ বছরে প্রকল্পের গবেষণা ও সম্প্রসারণ কাজের ফলাফল সম্পর্কে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ব্রির খামার যন্ত্রপাতি ও ফলনোত্তর প্রযুক্তি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান এবং সংশ্লিষ্ট প্রকল্পের উপ-প্রকল্প পরিচালক ড. মুহাম্মদ আব্দুর রহমান ও প্রকল্পের সমন্বয়কারী মো. কামরুজ্জামান মিলন। এতে বিজ্ঞানী, বিশেষজ্ঞ, সম্প্রসারণবিদ, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের অতিথি এবং কৃষকসহ দুই শতাধিক প্রতিনিধি অংশ নেন।
আয়োজকরা জানান, এফএমটিডি প্রকল্পের উদ্যোগে পরিচালিত সাম্প্রতিক সমীক্ষা থেকে জানা যায়, এফএমটিডি প্রকল্পের মাধ্যমে গত ৫ বছরে ৬০ শতাংশ ভর্তূকিতে বিভিন্ন ধরনের ৫ হাজার ৩৮০টি কৃষিযন্ত্র বিক্রয় করা হয়েছে। এ প্রকল্পের আওতায় কৃষিযন্ত্র বিক্রয়ের পাশাপাশি স্থানীয় যন্ত্রপাতি প্রস্তুতকারকদের কারিগরি সহায়তা প্রদানের মাধ্যমে দেশের ১২টি জেলার ২৪টি উপজেলায় (গোবিন্দগঞ্জ, সাদুল্যাপুর, পাঁচবিবি, জয়পুরহাট সদর, সোনাইমুড়ী, বেগমগঞ্জ, শ্রীপুর, কাপাসিয়া, কুমারখালী, মিরপুর, চুয়াডাঙ্গা সদর, আলমডাঙ্গা, নাটোর সদর, সিংড়া, শিবচর, মাদারীপুর সদর, চাঁদপুর সদর, হাজীগঞ্জ, নগরকান্দা, আলফাডাঙ্গা, নাচোল, গোমস্তাপুর, তানোর, মোহনপুর) এ কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে। শস্য ঝাড়াই, মাড়াই, আগাছা দমন ও কর্তনের কাজে ব্যবহার যোগ্য বিতরণকৃত যন্ত্রগুলো হচ্ছে- ব্রি উইডার, ব্রি দানাদার ইউরিয়া প্রয়োগযন্ত্র, ব্রি রিপার, ব্রি ক্লোজড ড্রাম থ্রেসার, ব্রি ওপেন ড্রাম থ্রেসার এবং ব্রি উইনোয়ার।
এফএমটিডি প্রকল্প এলকার প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, ২৪টি উপজেলায় ব্রির কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার করার ফলে সেখানকার ধান চাষাবাদে বছওে প্রায় ১৭.৪ কোটি টাকা সাশ্রয় হয়েছে। সেই হিসেবে অনুযায়ী সারা দেশে আমন ও বোরো মৌসূম মিলিয়ে প্রায় ১১৫ লাখ হেক্টর জমির ধান চাষে অনুরূপভাবে ১১ হাজার কোটি টাকা সাশ্রয় করা সম্ভব।
ব্রি সূত্র জানায়, ব্রি’র একটি প্রকল্পের উদ্যোগে ৬০ শতাংশ ভর্তূকিতে বিক্রি করা কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহারের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট এলাকার কৃষকরা ব্যাপকভাবে লাভবান হচ্ছেন। এ কার্যক্রম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ১২ জেলার কৃষক পর্যায়ে ইতিবাচক সাড়া জাগিয়েছে। ইতোমধ্যে প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কার্যক্রমের ফলে বিশ হাজার কৃষক উপকৃত হয়েছেন। এ কার্যক্রমের আওতায় কৃষক, মেকানিক, প্রস্তুতকারক ও সম্প্রসারণকর্মীদের কৃষিযন্ত্রপাতি ব্যবহার, আর্থিক ও কারিগরিসুবিধা, যন্ত্রপাতির রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হয়েছে। এ ছাড়া মাঠ প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণ ও কারিগরী সহায়তার মাধ্যমে ব্রি উদ্ভাবিত কৃষিযন্ত্রপাতির ব্যবহার ও উপযোগিতার সম্পর্কে কৃষকদের সচেতন করা হয়েছে। সমীক্ষাধীন এলাকার কৃষকরা জানিয়েছেন, সনাতন পদ্ধতির পরিবর্তে ব্রি উদ্ভাবিত কৃষি যন্ত্রপাতির ব্যবহারের ফলে ধান চাষে তাদের ব্যয় ও কায়িক শ্রম লাঘব হয়েছে, অপচয় কমেছে এবং আয় বেড়েছে।