Thakurgaon Vermicelli Pic-1

দৈনিকবার্তা-ঠাকুরগাঁও, ০৪ জুলাই ২০১৫: আসন্ন ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখে ঠাকুরগাঁওয়ে গড়ে উঠেছে ভেজাল ও নিম্নমানের সেমাই তৈরির অর্ধ শতাধিক কারখানা। বিএসটিআই এর অনুমোদন ছাড়াই যেখানে সেখানে গড়ে উঠেছে এসব কারখানা। অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে তৈরী এসব ভেজাল সেমাই ভোক্তাদের বিপদ ডেকে আনার আশংকা করছেন বিশেষজ্ঞরা।রোজার শুরু থেকে ঠাকুরগাঁওয়ে ব্যাঙের ছাতার মতো গড়ে উঠেছে বেশ কিছু সেমাই তৈরির কারখানা । ঠাকুরগাঁও বিসিক শিল্প নগরী ও আশপাশের এলাকা জুড়ে গড়ে ওঠা এসব কারখানায় খাদ্যদ্রব্য তৈরীর জন্য বিএসটিআই-এর কোন অনুমোদন নেই। স্টিল, প¬াস্টিক, লোহাসহ বিভিন্ন কারাখানার ২/১টি রুম অস্থায়ী সেমাই তৈরীর কারখানা হিসেবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এক শ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী ওইসব মৌসুমী কারখানা গড়ে তুলে ভেজাল ও নিম্নমানের লাচ্ছাসহ নানা ধরনের খাবার প্রস্তুত ও বিপনন করে চলেছেন। এখানে পণ্যের গুণগত মানের বিষয়টিও সংরক্ষন করা হয়না।

Thakurgaon Vermicelli Pic-2

উৎপাদনে যাওয়া এসব অস্থায়ী কারখানায় গড়ে দৈনিক ২৫ থেকে ৮০ খাঁচি (প্রতি খাঁচিতে ১৮ কেজি) সেমাই উৎপাদন হচ্ছে। স্থায়ী কারখানাগুলোতে উৎপাদিত হচ্ছে গড়ে প্রায় ১০০ থেকে ১৫০ খাঁচি। এসব কারখানায় উৎপাদিত লাচ্ছা ও সেমাই রাতের আধারে চলে যাচ্ছে ঠাকুরগাঁও জেলাসহ বিভিন্ন বাজারের খুচরা ও পাইকারি দোকানগুলোতে। সেখানে প্রতি খাঁচি লাচ্ছা বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৪০০ টাকা থেকে দেড় হাজার টাকায়। পরে তা সেখান থেকে বিভিন্ন এলাকার ছোট ছোট দোকানে চলে যাচ্ছে।খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ কারখানাগুলোতে খুব গোপনে সেমাই তৈরি করা হচ্ছে। যারা সেমাই তৈরীর কাজ করে তাদের পোশাক আশাক ময়লাযুক্ত। কাজের সময় শ্রমিকদের হাতে গে¬াবস ব্যবহারের নিয়ম থাকলেও কোন শ্রমিককে গে¬াবস ব্যবহার করতে দেখা যায় না। কাজ করতে করতে অনেকের ঘাম খামিরে প্রায় ঝড়ে পড়ে। এছাড়াও খোলা আকাশের নীচে সেমাই শুকানোর কারনে উড়ন্ত পাখির মলমূত্রও অনেক সময় সেমাইয়ে মিশে যাওয়ার সম্ভাবনা ব্যাপক।

Thakurgaon Vermicelli Pic-3

পামওয়েল বা ব্যবহৃত তেলে ভাজা হয় সেমাই। এতেই শেষ নয়, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে উৎপাদিত এসব লাচ্ছা ও সেমাই ভোক্তাদের কাছে আকষর্নীয় করে তুলতে মেশানো হচ্ছে মানবদেহের ক্ষতিকারক রং।শহরের বসিরপাড়া মহল¬ার বাসিন্দা কাশেম আলী জানান, ভেজাল সেমাই খেলে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়। এদিকে সরকারপাড়া মহল¬ার বাসিন্দা ইয়াসমিন আক্তার বলেন, বিএসটিআই অনুমোদন ছাড়া শহরে অনেক ভেজাল সেমাই কারখানা গড়ে উঠেছে এবং সেখানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে সেমাই তৈরি করা হয়। তাই সাধারণ মানুষের দাবি এসব অবৈধ কারখানা দ্রুত বন্ধ করা হোক।অবশ্য ঠাকুরগাঁও থ্রি ষ্টার ফুড লিঃ এর ম্যানেজার তৌহিদুল ইসলাম বাবু জানান, শ্রমিকদের কাজের সময় ব্যবহার করার জন্য সকল প্রকার সামগ্রী দেওয়া আছে। কিন্তু একনাগাড়ে ৫/৭ ঘন্টা গে¬াবস পড়ে কাজ করলে অনেক সময় ডালডা ও তেল ভেতরে ঢুকে শ্রমিকদের চামড়ার ক্ষতি করে । তাই তারা মাঝে মাঝে গে¬াবস ছাড়া কাজ করে।

এদিকে শহরের বিসিক এলাকায় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে ভেজাল ও নিুমানের সেমাই তৈরীর অভিযোগে ভ্রাম্যমান আদালত সম্প্রতি একটি সেমাইকারখানাকে জরিমানা করে। তারপরও বন্ধ হচ্ছেনা ভেজাল ও নিু মানের সেমাই তৈরীর মহোৎসব।এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও সিভিল সার্জন ডা: নজরুল ইসলাম জানান, রং ও অন্যান্য কেমিক্যাল মানুষের শরীরের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর। খাদ্য দ্রব্যে মেশানো রং মানুষের পেটে গেলে তা গ্যাষ্ট্রিক, আলসার থেকে ক্যান্সারের কারন হতে পারে। এছাড়াও যাদের হার্টের সমস্যা রয়েছে তাদের হার্টের আরো বাড়তে পারে । যাদের কিডনীর সমস্যা রয়েছে তাদের কিডনী ডেমেজ হতে পারে এবং ব্রেনেরও ক্ষতির পাশাপাশি অকাল মৃত্যু ডেকে আনতে পারে।অপরদিকে জেলা প্রশাসক মূকেশ চন্দ্র বিশ্বাস জানান, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়ে এসব ভেজাল কারখানায় নিয়মিত অভিযান চালানো হচ্ছে এবং জরিমানা করা হচ্ছে।