image_124724

দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ জুলাই ২০১৫: লন্ডনে অবস্থানরত কবুল মিয়াই কোকেনের বিশাল চালান চট্রগ্রাম বন্দরে এনেছে।আর এসব কোকেন এখানে খালাস করে পুনরায় ইউরোপে পাঠাতে টাকা বিনিযোগ করেছিলো তার ব্যবসায়িক পার্টনার ভারতে অবস্থানরত রাজুু।খালাস এবং পুনরায় পাচারে সরাসরি সম্পৃক্ত ছিলেন বকুলের নিকট আত্মীয় মোস্তফা কামাল ও আতিকুর রহমান ।গ্রেপ্তারকৃত ৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদেও পর গোয়েন্দা এ তথ্য নিশ্চিত হয়ে এখন বিেিদশ অবস্থানরত দুজনকে গেপ্তারের জন্য ইন্টারপুল ও স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডেও সহায়তা চাইতে যাচ্ছে। ভোজ্যতেলের ছদ্মাবরণে তরল কোকেন আটকের ঘটনায় গ্রেপ্তার চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দিয়েছে গোয়েন্দা পুলিশ। সানফ্লাওয়ার তেলের নামে তরল কোকেন আমদানির ঘটনা অনুসন্ধানে গঠিত কমিটির সদস্যদের সঙ্গে জরুরি বৈঠক করেছেন নগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ ও অভিযান) দেবদাস ভট্টাচার্য এবং উপ-কমিশনার (ডিবি) কুসুম দেওয়ান। বেঠকে রিমান্ডে থাকা চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল নির্ধারণ করা হয়েছে।শনিবার সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সিএমপিতে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

বৈঠকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার ও অনুসন্ধানকারী টিমের প্রধান এস এম তানভির আরাফাত কোকেনের চালান আমদানি, কনটেইনার সিলগালা ও আসামিদের গ্রেপ্তার নিয়ে সামগ্রিক বিষয় বর্ণনা করেন।এরপর গ্রেপ্তার চারজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য বৈঠকে পর্যালোচনা করা হয়। এরপর পূর্ণাঙ্গ তথ্য আদায়ে কী কৌশলে তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে সেটা নিয়ে আলোচনা করেন পুলিশ কর্মকর্তারা।এস এম তানভির আরাফাত বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল নির্ধারণ করেছি। কি প্রক্রিয়ায় কোকেনের চালান বন্দরে শনাক্ত হল সেটার বর্ণনা দিয়েছি।শুক্রবার রাতে সিএমপি কমিশনার মোহা.আব্দুল জলিল মন্ডল ১০ সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করেন। নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ কমিশনার কুসুম দেওয়ান কমিটির কার্যক্রম তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়েছেকমিটির প্রধান করা হয়েছে নগর গোয়েন্দা পুলিশের অতিরিক্ত উপ কমিশনার এস এম তানভির আরাফাতকে।

কমিটিতে অন্যান্যের মধ্যে আছেন পাঁচজন সহকারি কমিশনার মো.কামরুজ্জামান, ফয়জুল ইসলাম, মো.মঈনউদ্দিন, নির্মলেন্দু বিকাশ চক্রবর্তী ও এস এম নূরুল হুদা এবং বন্দর থানার ওসি একেএম মহিউদ্দিন সেলিম, আকবর শাহ থানার ওসি সদীপ কুমার দাশ, নগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক আব্দুর রউফ ও জাহেদুল ইসলাম।সানফ্লাওয়ার তেলের নামে তরল কোকেন আমদানির মামলায় এ পর্যন্ত চারজনকে গ্রেপ্তার করেছে নগর গোয়েন্দা পুলিশ। এরা হলেন, গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রুপের বাণিজ্যিক নির্বাহী আতিকুর রহমান, কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন) এ কে আজাদ, একটি ডেভেলপার কোম্পানির কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল এবং সানফ্লাওয়ার তেলের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খানজাহান আলী লিমিটেডের কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা সোহেল।

এদের মধ্যে আতিকুর রহমান, একে আজাদ ও মোস্তফা কামালকে ১০ দিনের রিমান্ডে এবং সোহেলকে পাঁচদিনের রিমান্ডে পেয়েছে পুলিশ।গত বৃহস্পতিবার (২ জুলাই) আতিকুর, আজাদ ও মোস্তফা কামালের ১০ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর হয়। তাদের ওইদিনই জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নিয়েছে ডিবি।আর সোহেলকে ৩০ জুন রিমান্ডে নেবার আদেশ দেন আদালত। তাকে রোববার (৫ জুলাই) ডিবি নিজেদের হেফাজতে নেবে বলে সূত্র জানিয়েছে।হেফাজতে নেয়া তিনজনকে নগর গোয়েন্দা পুলিশের চার সদস্যের একটি টিম গত বৃহস্পতি ও শুক্রবার জিজ্ঞাসাবাদ করেছে বলে সূত্র জানিয়েছে।নগর পুলিশের কাছ থেকে তথ্য পেয়ে তরল কোকেন সন্দেহে গত ৬ জুন রাতে চট্টগ্রাম বন্দরে একটি কনটেইনার বন্দরে সিলগালা করে শুল্ক গোয়েন্দা কর্মকর্তারা। ৮ জুন এটি খুলে ১০৭টি ড্রামের প্রতিটিতে ১৮৫ কেজি করে সানফ্লাওয়ার তেল পাওয়া যায়। তেলের নমুনা প্রাথমিক পরীক্ষা করে কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া না গেলে উন্নত ল্যাবে কেমিক্যাল পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়।২৭ জুন শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর জানায়, কেমিক্যাল পরীক্ষায় একটি ড্রামে তরল কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়া গেছে।চালানটি নগরীর খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে বন্দরে আনা হয়। কনটেইনারটি সিলগালা করার আগে নগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে খানজাহান আলী লিমিটেডের মালিকানাধীন প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক গোলাম মোস্তফা সোহেলকে গ্রেপ্তার করেছিল।

২৮ জুন নগরীর বন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ওসমান গনি বাদি হয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনের ১৯ এর ১(খ) ধারায় জাহান আলী লিমিটেডের চেয়ারম্যান নূর মোহাম্মদ ও সোহেলকে আসামি করে একটি মামলা দায়ের করেন। পরে ওই মামলায় সোহেলকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।এই কমিটি গঠনের কথা শনিবার কে জানিয়েছেন চট্টগ্রম নগর গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার কুসুম দেওয়ান।কুসুম দেওয়ান নিজেই ১০ সদস্যের এই কমিটির প্রধান। তার সঙ্গে আরও রয়েছেন কয়েকজন অতিরিক্ত উপকমিশনার, সহকারী কমিশনার ও পরিদর্শক।বন্দর নগরীর খাতুনগঞ্জের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান খান জাহান আলীর নামে সূর্যমুখী তেলের ড্রামে কোকেন আনা হয়েছিল। খান জাহান আলীর মালিক নুর মোহাম্মদ এই মামলার আসামি, তবে তিনি পলাতক।গ্রেপ্তার অন্য তিনজন হলেন- আতিকুর রহমান খান, এ কে আজাদ ও মোস্তফা কামাল। ঢাকায় গ্রেপ্তার এদের ১০ দিন পুলিশি হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদের আদেশ গত বৃহস্পতিবার দেয় চট্টগ্রামের আদালত।আতিক গার্মেন্ট পণ্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান মণ্ডল গ্রপের বাণিজ্যিক নির্বাহী, আজাদ কসকো বাংলাদেশ শিপিং লাইনস লিমিটেডের ব্যবস্থাপক (করপোরেট, বিক্রয় ও বিপণন)। মোস্তফা কামালের আত্মীয় যুক্তরাজ্যে বসবাসরত বাংলাদেশি বকুল মিয়া এই মাদক পাচারের হোতা বলে গোয়েন্দাদের সন্দেহ।বন্দরে আসা কন্টেইনারের নমুনা পরীক্ষার আগেই গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে জুন মাসের প্রথম সপ্তাহে প্রাইম হ্যাচারির ব্যবস্থাপক সোহেলকে আটক করে পুলিশ। গত ২৮ জুন নমুনা পরীক্ষায় কোকেনের অস্তিত্ব মেলার পর মামলা করে সোহেলকে ওই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানো হয়। কোকেন পাচারের এই ঘটনা তদন্তে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।

এই কোকেন পাচারে যুক্তরাজ্য, বলিভিয়া, ভারত ও বাংলাদেশের মাদক পাচারকারীরা জড়িত বলে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তারা মনে করছেন।তারা বলছেন, সূর্যমুখী তেলের কন্টেইনারে তেলের সঙ্গে মিশিয়ে এই কোকেন ভারতে পাচারের উদ্দেশ্যে চট্টগ্রাম বন্দরে নামানো হয়েছিল।বলিভিয়া থেকে আনা এই ভোজ্য তেল জাহাজে তোলা হয়েছিল উরুগুয়ের মন্টিভিডিও বন্দর থেকে। সিঙ্গাপুর হয়ে গত ১২ মে কনটেইনারটি এসে পৌঁছায় চট্টগ্রাম বন্দরে।চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জের খান জাহান আলী লিমিটেডের নামে কনটেইনারটি আমদানি করা হলেও বন্দরে আসার পর এর মালিকানা কেউ দাবি করেনি।৭ জুন চট্টগ্রাম বন্দরের ইয়ার্ডে থাকা কনটেইনারটি সিলগালা করে দেয় শুল্ক গোয়েন্দা অধিদপ্তর। ৮ জুন বন্দরে কায়িক পরীক্ষায় ১০৭টি ড্রামের কোনোটিতে কোকেনের অস্তিত্ব না পাওয়ার পরও পুলিশের চাপে নমুনা পাঠানো হয় ঢাকায়।এরপর গত ২৮ জুন কন্টেইনারে ১০৭টি ড্রামের মধ্যে ৯৬ নম্বরটির তরলের পরীক্ষায় কোকেনের অস্তিত্ব পাওয়ার কথা জানায় শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর।ওই ড্রামটির ১৮৫ কেজি সানফ্লাওয়ার তেলের এক-তৃতীয়াংশই তরল কোকেন বলে পরীক্ষায় নিশ্চিত হন গোয়েন্দারা। এরপর চট্টগ্রাম বন্দর থানার এসআই ওসমান গণি মামলা করেন।