দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৪ জুলাই ২০১৫: শনিবার বিক্রির দ্বিতীয় দিনেই আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট হাওয়া। ঘরমুখো মানুষ আগামী ১৬ এবং ১৭ জুলাইয়ের টিকিট কিনতে এসে বিপাকে পড়েন। এই দু’দিনের অধিকাংশ টিকিটই কালোবাজারিদের হাতে চলে গেছে বলে টিকিট সংগ্রহে আসা যাত্রীরা জানান। এসব কারণে নিরাপদে আসন্ন ঈদে বাড়ি ফেরা নিয়ে উদ্বেগ উৎকণ্ঠায় রয়েছেন গ্রামমুখি মানুষ।শনিবার দুপুরে গাবতলীতে গিয়ে যাত্রীদের সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। সরেজমিনে দেখা গেছে, গতকাল শুক্রবার অর্থাৎ প্রথমদিনের মতো ভোররাত থেকে কাউন্টারগুলোতে ভিড় করেন টিকিট ক্রেতারা। কিন্তু ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকেও পাচ্ছেন না তাদের কাঙ্ক্ষিত টিকিট। বিশেষ করে ঈদের আগের দু’দিনের টিকিট একেবারেই হাওয়া। তবে কাউন্টারের লোকজনকে অতিরিক্ত টাকা দিলেই পাওয়া যাচ্ছে গন্তব্যের টিকিট। এতে এটাই প্রমাণ করে টিকিট কালোবাজারে চলে গেছে। এমন অভিযোগ করেন অনেকেই। ঈদুল ফিতর উপলক্ষে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে শুক্রবার থেকে। তাই শনিবার সকাল থেকে শুরু থেকেই ছিল উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বাসের অগ্রীম টিকিট সংগ্রহে ঘড়মুখো মানুষের ভিড়। তবে প্রথম দিন অনেক কাউন্টারেই পাওয়া যায়নি অগ্রিম টিকিট। ফলে দূরপাল্লার বাসের অগ্রিম টিকিট কিনতে এসে সেই চিরাচরিত ভোগান্তী। েেসই সঙ্গে ভাড়া বেশি নেয়ার অভিযোগ তো রয়েছেই। তবে যিনি এসব ভোগান্তী অতিক্রম করে টিকিট পেয়েছেন তার মুখে ছিল হাসির ঝিলিক।
শনিবার রাজধানীর অন্যতম বাস টার্মিনাল গাবতলীতে গিয়ে এমন চিত্রই দেখা যায়। প্রতি ঈদেই বাসের আগাম টিকেট কিনতে সবচেয়ে বেশি ভীড় দেখা যায় এ বাস টার্মিনালেই। টিকেট বিক্রির দ্বিতীয় দিনও এর ব্যতিক্রম দেখা গেলো না। সকাল ৮টা থেকে দেশের উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গের বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়, চলে বিকেল ৪টা পর্যন্ত। তবে অনেক কাউন্টার থেকে দুপুরের আগেই জানানো হয় টিকিট শেষ।দুপুরে গাবতলী বাস টার্মিনাল সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, শ্যামলী ও গাবতলীর উত্তরাঞ্চলে চলাচলকারী সব কোচের কাউন্টারেই অগ্রিম টিকিট কেনার জন্য যাত্রীদের দীর্ঘলাইন। তবে কেউ কেউ টিকিট পেলেও অনেকেই কাঙ্ক্ষিত দিনের টিকিট পাচ্ছেন না। বিশেষ করে ঈদের দু’দিন আগের টিকিট মিলছে না কোনো কাউন্টারেই।
স্বজনদের সঙ্গে ঈদের আনন্দ ভাগ করে নিতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনেছেন অনেকেই। খুলনা যাওয়ার জন্য ১৬ জুলাইয়ের টিকিট কিনতে আসা জসিম সিকদার জানান, ভোর ৫টার সময় তিনি ঈগল পরিবহন কাউন্টারের সামনে এসে লাইনে দাঁড়িয়েছেন। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় ৭০ থেকে ১০০ টাকার মতো বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।ঈগল পরিবহনের কাউন্টার মাস্টার মোহাম্মদ বশির লেন, ঈদ উপলক্ষে ভাড়া বেশি নেয়া হচ্ছে না। আমরা সরকারের নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছি। যাত্রীরা যা বলছেন- তা আসলে না জেনেই বলছেন। কারণ স্বাভাবিক দিনে বাস মালিক কর্তৃপক্ষ সরকার নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নেন যাত্রীদের কাছ থেকে। সরকারের বেঁধে দেয়া ভাড়া শুধু ঈদের সময় আদায় করার কারণে যাত্রীরা মনে করছেন বেশি ভাড়া নেয়া হচ্ছে।হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে একই চিত্র। কাউন্টার মাস্টার রতন মিয়া বলেন,‘টিকিটের জন্য যাত্রীদের ভীড় খুব। তবে সমস্যা নেই আরো চারদিন টিকিট বিক্রি করা হবে। আমাদের পর্যাপ্ত গাড়ি আছে।’টিকিট-০৩এছাড়া এসআর ট্রাভেল, শ্যামলী পরিবহন, নাবিল পরিবহন, কেয়া, আল-হামরা, রোজিনা, বালু পরিবহনের কাউন্টারেও টিকিটের জন্য বেশ ভীড় লক্ষ্য করা গেছে। তবে ভাড়া যথারীতি অনেক বেশি। ঢাকা-ঠাকুরগাঁওয়ের ভাড়া এমনিতে ৬০০ টাকা। কিন্তু ঈদ উপলক্ষে রাখা হচ্ছে ৯০০ টাকা। তারপরও অনেক কাউন্টারে এক ঘণ্টার মধ্যেই শেষ হয়ে যায় টিকিট। মূলত যারা সকালে এসেছিলেন তারাই টিকিট পেয়েছেন।
অন্যদিকে টিকিট কিনতে এসে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি তে পড়েছেন নারীরা। কোনো কাউন্টারেই নারীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা না থাকায় পুরুষদের সঙ্গে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে টিকিট কিনতে হয়েছে তাদের। কাক্ষিত টিকিট পেলেও বাড়তি ভাড়া নেয়ায় ক্ষোভ টওকাশ করেছেন তারাও।গাবতলী টার্মিনাল ও মাজার রোড থেকে বিক্রি হচ্ছে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের অগ্রিম টিকিট। আর উত্তরবঙ্গের অগ্রিম টিকিট বিক্রি হচ্ছে গাবতলী বালুর মাঠ থেকে। এছাড়া কলাবাগান, ফকিরাপুল, কমলাপুর, মালিবাগ কাউন্টারগুলোতে বিক্রি করতে দেখা গেছে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, সিলেট, বরিশাল, পটুয়াখালী, খুলনাসহ বিভিন্ন অঞ্চলের বাসের টিকিট।উল্লেখ, গত ২৯ জুন বাংলাদেশ বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের গাবতলী কার্যালয়ে এক বৈঠকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। বাস মালিকরা অবশ্য ১২ রমজান থেকে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রিতে আগ্রহী ছিলেন। তবে ১২ রমজান মঙ্গলবার হওয়ায় তা পেছানো হয়। এক্ষেত্রে ৩ জুলাই শুক্রবার থেকে উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ৬০টির বেশি রুটে ঈদের অগ্রিম টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।
বাস-ট্রাক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি ও শ্যামলী পরিবহনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক রমেশ চন্দ্র ঘোষ বলেন, ৩ জুলাই অর্থাৎ ১৫ রমজান সকাল থেকে বাসের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে। তবে কোনো কোম্পানি আগ্রহী থাকলে আগে পরেও টিকিট বিক্রি শুরু করতে পারে। এক্ষেত্রে সরকার নির্ধারিত যে ভাড়া আছে, তাই নেয়া হবে। এর চেয়ে বেশি ভাড়া আদায় করা হবে না। যদি কেউ বেশি ভাড়া নেয়, তাহলে সমিতির পক্ষ থেকে ব্যবস্থা নেয়া হবে।এদিকে সকাল ৮টা থেকে টিকিট বিক্রি শুরু হলেও টিকিট সংগ্রহের উদ্দেশ্যে অনেকে সেহেরি খেয়েই কাউন্টারের সামনে এসে লাইনে দাঁড়ান। গাবতলী বাস টার্মিনালে ঈগল, হানিফ, সোহাগ, শ্যামলী, একে ট্রাভেলস, এস আলমসহ বিভিন্ন পরিবহন কাউন্টারে মানুষের দীর্ঘ লাইন।
তবে যাত্রীরা অভিযোগ করে বলেন, অগ্রিম টিকিট কয়েক দিন ধরে বিক্রি হওয়ার কথা, কিন্তু বিক্রির দ্বিতীয় দিনেই টিকিট শেষ। এটা কেমন কথা? রংপুরগামী যাত্রী মো. মিয়াজান জানান, অধিকাংশ কাউন্টারের টিকিট কালোবাজারে চলে গেছে! বেশি টাকা দিলেই কাউন্টারের লোকজন অন্যস্থান থেকে টিকিট এনে দেয়।বরিশালগামী যাত্রী মো. আসাদ মিয়া জানান, সাকুরা পরিবহনের টেকনিক্যাল কাউন্টার থেকে সকাল ৭টায় টিকিট বিক্রি শুরু হয়। কিন্তু সাড়ে ৮টার দিকেই কাউন্টার থেকে জানানো হয় টিকিট শেষ। তবে অনেক অনুরোধে এবং বাড়তি টাকায় কেউ কেউ টিকিট পেয়েছেন।গাবতলীতে গিয়ে কথা হয় রেজাউল ইসলামের সঙ্গে। তিনি নাটোরের টিকিট কিনতে এসেছিলেন। কিন্তু টিকিট সংগ্রহ করতে পারেননি। বাংলামেইলকে তিনি বলেন, একদিকে কাউন্টার থেকে বলা হচ্ছে টিকিট নেই। অন্যদিকে বাড়তি টাকা দিলে পাওয়া যাবে বলে জানানো হয়। তাছাড়া নাটোরের ভাড়া ৩৫০ টাকা। কিন্তু নেয়া হচ্ছে ৫৬০ টাকা। তারপরও টিকিট নেই।’
ঢাকা-খুলনাগামী একে ট্রাভেলস কাউন্টারের কর্মকর্তা আরিফুল ইসলাম জানান, কাউন্টারে ও অনলাইনে একযোগে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। এ কারণে একটু এদিক-সেদিক হতে পারে। তবে কাউন্টারের লোকজন সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে সুষ্ঠুভাবে টিকিট বিক্রির জন্য।কল্যাণপুর কাউন্টারে কথা হয় সৈয়দপুরগামী মো. আওয়ালের সঙ্গে। তিনি বলেন, হানিফ, নাবিল পরিবহন কিংবা শ্যামলী কোনোটাতেই টিকিট নেই। তবে শেষ পর্যন্ত বাসের টিকিট না পেলে ট্রেনের জন্য কমলাপুর স্টেশনে লাইন দিতে হবে।কল্যাণপুরে নাবিল পরিবহনের কাউন্টার থেকে জানানো হলো, ই-মেইলেই প্রচুর টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। হানিফ পরিবহনেও একই অবস্থা। যারা ই-মেইলে টিকিট কিনেছেন তাদের ভোগান্তি কম। যারা লাইনে দাঁড়িয়েছেন তাদের দুর্ভোগের যেন শেষ নেই। এক কাউন্টারে টিকিট না পেলে অন্য কাউন্টারে লাইন দিতে হয়।অতিরিক্ত ভাড়া প্রসঙ্গে টিকিট বিক্রেতারা জানান, ভাড়া কিছুটা বেশি নেয়া হচ্ছে। অন্যান্য সময়ের চেয়ে টিকিট প্রতি ৭০ থেকে ১০০ টাকা বেশি নেয়া হচ্ছে। তবে যাত্রীদের অভিযোগ, তিন থেকে সাড়ে তিনশ টাকা প্রতি টিকিটে অতিরিক্ত ভাড়া দিতে হচ্ছে।
কাউন্টারের বাইরের লোকেদের কাছ থেকে বাড়তি টাকায় টিকিট সংগ্রহ করছেন অনেকে। অথচ দীর্ঘ সময় লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও টিকিট পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।টিকিটের জন্য দীর্ঘ সময় ধরে কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা শরিফুল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অভিযোগ করলেও কোনো লাভ হচ্ছে না। আমরা লাইনে থেকেও টিকিট পাচ্ছি না। টিকিট শেষ বলে কাউন্টার থেকে জানানো হচ্ছে। অথচ কাউন্টারের বাইরে টিকিট বিক্রি করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ভোড় ৫টা থেকে টিকিটের জন্য লাইনে দাঁড়িয়ে আছি। একটা মানুষ কতক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে পারে! ঈদে বাড়ি যেতে হবে তাই যেভাবেই হোক টিকিট টওয়োজন।সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, হানিফ, শ্যামলী, টিআর, এসআর, কেয়া, নাবিল পরিবহনসহ বেশ কয়েকটি পরিবহনের টিকিট কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বিপুলসংখ্যক যাত্রী।কয়েকটি কাউন্টারে মহিলাদের জন্য আলাদা লাইনের ব্যবস্থা থাকলেও তা নেই অধিকাংশ কাউন্টারে।
এসআর পরিবহনের সহকারী ব্যবস্থাপক মো. তারিকুল ইসলাম বলেন, এবার যাত্রীদের কাছে টিকিটের দাম বেশি রাখা হচ্ছে না। তবে ঈদ উপলক্ষে টিকিটের ডিসকাউন্ট বন্ধ রাখা হয়েছে।এদিকে আল-হামরা পরিবহনের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বেশ কয়েকজন অভিযোগ করে বলেন, লাইন ছাড়াই অনেকেই কাউন্টারের ভিতরে ঢুকে টিকিট নিয়ে যাচ্ছেন।পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপনের প্রত্যাশায় হানিফ এন্টারপ্রাইজের কাউন্টারে টিকিট কিনতে এসেছেন চামেলী আক্তার। তিনি বলেন, মহিলাদের জন্য আলাদা কোনো লাইনের ব্যবস্থা নেই এই কাউন্টারে। টিকিট ক্রয়ের জন্য পুরুষদের সঙ্গে গাদাগাদি করেই লাইনে দাঁড়াতে হচ্ছে
পরিবারের সঙ্গে ঈদের আনন্দ উপভোগ করতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে ঘরমুখো মানুষ। রমজান শেষে কর্মক্ষেত্রে ছুটি ঘোষণা হওয়ার সাথে সাথে যেন বাড়ির উদ্দেশে রওয়ানা হওয়া যায় সেই জন্য বাসের টিকেট ক্রয়ে তাদের এ ব্যস্ততা।টিকেট কাউন্টারগুলোতে প্রচন্ড ভিড় দেখা গেলেও দ্বিতীয় দিন শনিবার ভিড় কিছুটা কমেছে। কাউন্টারের বাইরে টিকেট প্রত্যাশীদের লম্বা লাইন না থাকলে কাউন্টারগুলোতে কমেনি টিকেট বিক্রি।বেশ কয়েকটি বাস কাউন্টারে কথা বলে জানা গেছে, ১৪, ১৫, ১৬ জুলাইয়ের টিকেট বিক্রি শেষ। তবে ১৩ জুলাই সকালের এবং ১৭ জুলাই বিকেলের টিকেট পাওয়া যাচ্ছে।এদিকে শনিবার দুপুরের রাজধানী গাবতলীর বাস কাউন্টারগুলোতে অনেক ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। এদের মধ্যে বিভিন্ন সরকারি- বেসরকারি কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ও কর্মজীবীরাও এসেছেন টিকেট সংগ্রহ করতে।বেসরকারি একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম টিকেট ক্রয় করতে এসেছেন গাবতলীর হানিফ পরিবহনের কাউন্টারে।বগুড়ায় পরিবারের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে যাবেন বলে জানান তিনি। তিনি বলেন, গতকাল এসেছিলাম টিকেট নেওয়ার জন্য কিন্তু দীর্ঘ লাইনে থেকেও টিকেট পাইনি। তাই আজ আবার এসেছি। কিন্তু কাউন্টার থেকে বলছে ১৪ থেকে ১৬ জুলাই এর কোনো টিকেট নেই। এ কারণে বিপাকে পড়েছি।এদিকে যানজট ও বিভিন্ন স্থানে রাস্তার বেহাল দশার (খানা-খন্দ) কারণে ঈদ উপলক্ষে কোনো রিজার্ভ বাস সার্ভিস নামাচ্ছে না পরিবহন মালিকরা।
শনিবার ভোরে মহাখালী, সায়দাবাদ বাস টার্মিনাল এবং কমলাপুর রেলস্টেশন ঘুরে টিকিটের জন্য মানুষের দেখা মিলেনি। তবে গাবতলী বাস টার্মিনালে সংগ্রহের জন্য অনেককেই দেখা গেছে।আগামী ৮ জুলাই থেকে মহাখালী বাস টার্মিনালে টিকিট বিক্রি শুরু করার ঘোষণা আগেই দেওয়া আছে। ফলে মধ্যরাতে মহাখালী বাস টার্মিনালের কিশোরগঞ্জগামী অনন্যা, উজান ভাটি, ভৈরবের চলন বিল, ময়মনসিংহের এনা, ঢাকা-টাঙ্গাইলের ঝটিকা, উত্তরা পরিবহন কাউন্টারে ছিল একেবারে নিরবতা।আগামী ৯ জুলাই থেকে ট্রেনের অগ্রিম টিকেট বিক্রির ঘোষণা থাকায় একই চিত্র কমলাপুর রেল স্টেশনে। সেখানে গিয়ে দেখা যায়, টিকিট কাউন্টারের সামনের জায়গায় ভাসমান লোকেরা ঘুমের জায়গা করে নিয়েছে। আট জুলাই রাত থেকে হয়তো বা সেটি দখলে থাকবে টিকিট ক্রেতাদের!
সায়দাবাদ বাস টার্মিনালে কয়েকটি কাউন্টার খোলা থাকলেও বেশিরভাগই ছিল বন্ধ। কেননা সেখানেও টিকিট বিক্রি শুরু হয়নি।মহাখালী বাস টার্মিনাল ঘুরে কথা হয় অনন্যা পরিবহনের স্টাফ জহিরের সঙ্গে। তিনি বলেন, ২০ রোজার পর থেকেই শুরু হবে আমাদের ব্যস্ততা। তখন তো ঘুমাবারও সময় পাবো না’।মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘সরকারের সঙ্গে কথা বলেই ৮ জুলাই থেকে টিকিট বিক্রির সিদ্ধান্ত হয়েছে। বেশি আগে টিকিট বিক্রি হলে কালোবাজারীরা তা দ্রুত কিনে ফেলে। এতে সাধারণ যাত্রীরা হয়রানির শিকার হন।মহাখালী ও সায়েদাবাদ এ দুই বাস টার্মিনাল থেকে কখনই অগ্রিম টিকেট দেওয়া হয় না। যাত্রীরা সরাসরি টিকেট কেটে বিভিন্ন গন্তব্যে যেতে পারেন।এসব বাস টার্মিনাল এখন কিছুটা নিরব থাকলেও ঈদ যতই কাছে আসবে ততই ঘরমুখো মানুষের প্রচণ্ড ভিড়ে মুখরিত হবে চারিদিক। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের নির্দেশ থাকার পরও টিকিট বিক্রির না করার কারণ সম্পর্কে মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বলেন, ‘মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেই আমরা এ সিদ্ধান্ত নিয়েছি। টিকিট বাণিজ্য বন্ধে ১৯৮৪ সালে টার্মিনাল টওতিষ্ঠার পর থেকেই এ কৌশল অবলম্বন করছি আমরা।তিনি বলেন, রোজার মাঝে অগ্রিম টিকিট বিক্রি হলে কালোবাজারিরা তা দ্রুত কিনে ফেলে। পরবর্তীতে সে টিকিট অধিক দামে বিক্রি করেন তারা। ফলে পরিবহণের সুনাম নষ্ট হয়।