দৈনিকবার্তা-ঢাকা, ০৩ জুলাই ২০১৫: কুড়িগ্রাম সীমান্তে বাংলাদেশি কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যা মামলায় বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষকে দেওয়া খালাসের রায়ই ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট বহাল রেখেছে৷মহাপরিচালকের অনুমোদন পাওয়ার আনুষ্ঠানিকতা বাকি থাকায় বিএসএফ এখনও রায়ের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করেনি৷তবে ফেলানীর পরিবারের আইনজীবী এবং বিএসএফের একটি সূত্র বলেছেন, বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত শুনানির পর আদালত অমিয় ঘোষকে নির্দোষ বলেই রায় দিয়েছে৷ বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট বা জি এস এফ সি প্রথমে যে রায় দিয়েছিল মি. ঘোষকে নির্দোষ বলে, পুনর্বিবেচনার পরেও সেই রায়ই বহাল রেখেছে তারা৷বাহিনীর একাধিক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে, তবে বি এস এফ আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের কথা ঘোষণা করে নি৷এই রায়কে অবশ্য বাহিনীর মহাপরিচালকের অনুমোদন পেতে হবে৷ভারতের আদালতে ফেলানির পরিবারের কাছে এই রায় চ্যালেঞ্জ করার সুযোগ রয়েছে৷
বৃহস্পতিবার অনেক রাত পর্যন্ত আলোচনা করে কোর্ট মার্শালের সমতূল্য বি এস এফের নিজস্ব আদালত এই রায় দিয়েছে৷পাঁচ সদস্যের আদালতের প্রধান ছিলেন বি এস এফ আধিকারিক সি পি ত্রিবেদী৷ এই পাঁচজনই মূল মামলার শুনানিতে বিচারক ছিলেন৷২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর জি এস এফ সি রায় দিয়েছিল যে অভিযুক্ত বিএসএফ প্রহরী নির্দোষ৷ সেই রায় যথার্থ মনে না হওয়ায় তার পুনর্বিবেচনার আদেশ দিয়েছিলেন বাহিনীর মহাপরিচালক৷পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু করতে প্রায় একবছর লেগেছিল, আর তা তিনবার নানা কারণে স্থগিত হয়ে গিয়েছিল৷এদিকে এ রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেছেন, তার মেয়ের হত্যার ন্যায্য বিচার তিনি পাননি৷
আমি দুই দফা সাক্ষ্য দিলাম৷ অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিত্ ছিল৷ তা না করে ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে আমাদের সাথে৷ আমি ন্যায় বিচারের জন্য আবার আবেদন করব৷২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে বাবার সঙ্গে সীমান্ত পেরোনোর সময়ে গুলিবিদ্ধ হন ফেলানি৷ দীর্ঘক্ষণ তাঁর মৃতদেহ কাঁটাতারেই ঝুলে ছিলরায় পুনর্বিবেচনার কাজ শুরু হয়েছিল গত বছর সেপ্টেম্বর মাসে৷ কিন্তু পাঁচদিন পরে সেই প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়৷নভেম্বরে আবারও পুনর্বিবেচনার প্রক্রিয়া শুরু হয় ১৭ নভেম্বর৷ কিন্তু ২১ নভেম্বর আদালতেই অভিযুক্ত অমিয় ঘোষ জ্ঞান হারানোর কারণে চার মাস পিছিয়ে গিয়েছিল প্রক্রিয়া৷তার রক্তচাপ বেড়ে গিয়েছিল আর তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছিল৷ তার আগে ঘোষের কিডনির সমস্যা দেখা দেয়, যার ফলে নিয়মিত ডায়ালিসিস করতে হয়েছিল৷যদিও পুনর্বিবেচনার সময়ে নতুন করে কারও সাক্ষ্য নেওয়ার নিয়ম নেই, তবুও ফেলানির বাবার সাক্ষ্য নতুন করে নথিভুক্ত করা হয় তখন৷২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে বাবার সঙ্গে নিজের দেশ ু বাংলাদেশে আসছিল ১৬ বছরের ওই কিশোরী ফেলানি খাতুন – তার বিযয়ে ঠিক হয়েছিল৷
কোচবিহার জেলার চৌধুরীহাট সীমান্তে মই বেয়ে কাঁটাতার পেরুনোর সময় বি এস এফের ১৮১ নম্বর ব্যাটালিয়নের সদস্য অমিয় ঘোষ তাঁর ইনসাস ৫.৫৬ মিলিমিটার বন্দুক থেকে গুলি করেন৷ কাঁটাতারের ওপরে ফেলানির দেহ দীর্ঘক্ষণ ঝুলে ছিল৷পরে, বিএসএফ নিজেই বাহিনীর সদস্যের বিরুদ্ধে হত্যার অভিযোগ দায়ের করে মামলা রুজু করে৷ তার বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় হত্যা আর বি এস এফে আইনের ১৪৬ ধারায় মামলা রুজু করা হয়েছিল৷কুচবিহার বিএসএফের ১৮১ ব্যাটেলিয়নের সোনারি ক্যাম্পে বিএসএফের আধিকারিক সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বে ৫ সদস্যের বিচারিক প্যানেলে এই বিচার হয়৷আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার পর ফেলানীর পরিবার ভারতের আদালতে আপিলের সুযোগ পাবে৷এই রায় প্রত্যাখ্যান করে ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম বলেছেন, তার মেয়ের হত্যার ন্যায্য বিচার তিনি পাননি৷আমি দুই দফা সাক্ষ্য দিলাম৷ অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিত্ ছিল৷ তা না করে ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে আমাদের সাথে৷ আমি ন্যায় বিচারের জন্য আবার আবেদন করব৷এ মামলায় ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেন কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন৷তিনি বলেন, এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷ এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে৷অবশ্য কুড়িগ্রাম বিজিবির পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জাকির হোসেন এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি৷তিনি বলেন, আদালতের রায় এখনও অফিসিয়ালি আমরা পাইনি৷ পেলে ঊধর্বতন কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নেবে৷
২০১১ সালের ৭ জানুয়ারি কুড়িগ্রামের অনন্তপুর সীমান্তে পঞ্চদশী ফেলানীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ ১৮১ ব্যাটালিয়নের চৌধুরীহাট ক্যাম্পের এক সদস্য৷ফেলানীর বাবা নাগেশ্বরী উপজেলার দক্ষিণ রামখানা ইউনিয়নের বানার ভিটা গ্রামের নুরুল ইসলাম ১০ বছর ধরে দিলি্লতে কাজ করতেন৷ তার সঙ্গে সেখানেই থাকতো ফেলানী৷ দেশে বিয়ে ঠিক হওয়ায় বাবার সঙ্গে ফেরার পথে সীমান্ত পার হওয়ার সময় কাঁটাতারের বেড়ায় কাপড় আটকে যায় ফেলানীর৷ এতে ভয়ে সে চিত্কার দিলে বিএসএফ তাকে গুলি করে হত্যা করে এবং পরে লাশ নিয়ে যায়৷কাঁটাতারের বেড়ায় ফেলানীর ঝুলন্ত লাশের ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে বিশ্বজুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি হয়৷ বাংলাদেশ সরকার ও মানবিকার সংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে কড়া প্রতিবাদ জানানো হয়৷ বাংলাদেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিজিবির পক্ষ থেকেও বিএসএফের সঙ্গে বিভিন্ন বৈঠকে ফেলানী হত্যার বিচারের জন্য চাপ দেয়া হয়৷এরপর ২০১৩ সালের ১৩ অগাস্ট অমিয় ঘোষের বিচার শুরু হয়৷ ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩০৪ ধারায় অনিচ্ছাকৃত খুন এবং বি এস এফ আইনের ১৪৬ ধারায় অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে৷সিপি ত্রিবেদীর নেতৃত্বাধীন বিচারিক প্যানেলই ২০১৩ সালের ৬ সেপ্টেম্বর এ মামলার প্রথম রায়টি দেয়, যাতে আসামি অমিয় ঘোষকে বেকসুর খালাস দেওয়া হয়৷ওই রায়ের পর বাংলাদেশে তীব্র প্রতিক্রিয়া হয়৷ ফেলানীর পরিবারসহ বিজিবির পক্ষ থেকে রায় নিয়ে প্রকাশ করা হয় ক্ষোভ৷
এরপর বিএসএফ মহাপরিচালক সেই রায় পুনর্বিবেচনার আদেশ দিলে ২০১৪ সালের ২২ সেপ্টেম্বর নতুন করে শুনানি শুরু হয়৷ নতুন করে নথিভুক্ত করা হয় ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলামের সাক্ষ্য৷পুনর্বিবেচনাতেও খালাসের রায় বহাল থাকায় হতাশা প্রকাশ করে পশ্চিমবঙ্গের মানবাধিকার সংগঠন সেই মাসুমের প্রধান কিরিটী রায় বলেছেন, আদালতে আগেই রায় ঠিক করে রেখেছিল৷ এ বিচার লোক দেখানোকুড়িগ্রাম সীমান্তে কিশোরী ফেলানী খাতুন হত্যার পুর্নবিচারেও অভিযুক্ত বিএসএফ সদস্য খালাস পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম নুরু৷তিনি বলেছেন, ভারত সরকার বিচারের নামে তামাশা করেছে৷
মামলার পুর্নবিচারে বৃহস্পতিবার গভীর রাত পর্যন্ত শুনানির পর বিএসএফের হাবিলদার অমিয় ঘোষকে দেওয়া খালাসের রায়ই বহাল রাখে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের নিজস্ব আদালত জেনারেল সিকিউরিটি ফোর্সেস কোর্ট৷মহাপরিচালকের অনুমোদন পাওয়ার পর বিএসএফের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে রায়ের বিষয়টি জানানো হবে৷রায়ের খবরে হতাশা প্রকাশ করে ফেলানীর বাবা শুক্রবার সকালে বলেন, বিএসএফের আদালতে তিনি ন্যায় বিচার পাননি৷এ রায় আমরা প্রত্যাখ্যান করছি৷ অমিয় ঘোষের ফাঁসি হওয়া উচিত্ ছিল৷ এ মামলায় দুই দফা কোচবিহারে গিয়ে সাক্ষ্য দেন ফেলানীর বাবা নুরুল ইসলাম৷ ন্যায় বিচারের জন্য আবারও ভারত সরকারের কাছে আবেদন করবেন বলে জানান তিনি৷এ মামলায় ফেলানীর পরিবারকে আইনি সহায়তা দেয়া কুড়িগ্রাম জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর আব্রাহাম লিংকন জানান, আনুষ্ঠানিক রায় ঘোষণার পর ফেলানীর পরিবার ভারতের আদালতে আপিলের সুযোগ পাবে৷ তবে এ ক্ষেত্রে মানবাধিকার সংগঠনগুলোর সহায়তা প্রয়োজন হবে৷রায়ের প্রতিক্রিয়ায় তিনি বলেন, এই রায় ভারতীয় বিচার ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে৷ এর ফলে সীমান্ত হত্যার ক্ষেত্রে বিএসএফ আরও বেপরোয়া হয়ে উঠবে৷ যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করবে৷এই রায় মানবাধিকার ও ন্যায়বিচারের পরিপন্থি বলেও তিনি মন্তব্য করেন৷